ভাষা নিয়ে বিজ্ঞান কল্প কাহিনী
লিখেছেন লিখেছেন উদীয়মান লেখক ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১১:৫৭:৪৭ সকাল
অনেক দিন পরের কথা। ঘানার একটি ব্যাস্ত তম চলন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছেন ভাষা বিজ্ঞানী ও গবেষক ডক্টর জাঙ্গাইল। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় অত্তাধুনিক সাজে সেজেছে পুরো পৃথিবী। তার থেকে বাদ পরেনি আফ্রিকার এই ছোট্ট দেশটিও। এখানে আর সেকেলে গাড়ী ব্যবহার হয়না। অত্তাধুনিক বৈদ্যুতিক রাস্তাই নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বিজ্ঞানী জাঙ্গাইল বেশ চিন্তিত মনে রাস্তায় দ্বারিয়ে আছেন। কারন একটাই, দীর্ঘ দিন ধরে ভাষা নিয়ে গবেষণা করলেও একটা কাজ এখনো করা হয়নি। এর সেটা হল যে দেশের মানুষ ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন সে দেশেই যাওয়া হয়নি। অথচ সে দেশে না গেলে ভাষা নিয়ে গবেষণা কখনই পূর্ণতা লাভ করবে না।
যেই ভাবা সেই কাজ। পর দিনই উড়ন্ত রিক্সায় করে উড়তে উড়তে বাংলাদেশে চলে এলেন বিজ্ঞানী জাঙ্গাইল। ঘানা থেকে আসতে দীর্ঘ ৩ ঘন্টা লেগেছে ভাষা গবেষক ও বিজ্ঞানী জাঙ্গাইলের। স্পেস বাস হলে মাত্র ১ ঘন্টার মধ্যে বাংলাদেশে পৌঁছে যেতেন তিনি। বাংলার মাটিতে পা রাখলেন ভাষা বিজ্ঞানী। রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে বৈদ্যুতিক রাস্তা দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি। একটু এগুতেই একজন বাংলাদেশী যুবকের সাথে দেখা হলো বিজ্ঞানীর। তালি মারা প্যান্ট, চোখে সানগ্লাস পড়া ছেলেটি হিন্দি গান গাইতে গাইতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। ভাষা নিয়ে গবেষণা করার ফলে পৃথিবীর প্রায় ৫০ টিরও বেশী ভাষা রপ্ত করেছেন তিনি। বিজ্ঞানী যুবকের সাথে কথা বলার জন্য ডাক দিয়ে বললেন,
> আপনার সাথে একটু কথা বলোতে পারি?
যুবকটি না সোনার ভান করে চলে যেতে লাগলো। ডক্টর জাঙ্গাইল খেয়াল করলেন যুবকটির কানে হেডফোন লাগানো। তাই হয়তো ওনার কথা শুনতে পায়নি যুবকটি। তাই বাধ্য হয়েই যুবকটির কানের হেডফোন খুলে ফেললেন তিনি। বিজ্ঞানীর এরূপ আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে যুবকটি বাংলা , হিন্দি, আরবী ফারসী বিভিন্ন ভাষা মিলিয়ে কি যেন বলে চলেগেল। আরো কয়েকজনের সাথে দেখা হলো বিজ্ঞানীর , তারা কেউই শুদ্ধ বাংলা বলতে পারে নি। শুধু তাই নয় মানুষজন ওনার কথা ভালভাবে বুঝতেই পারছেনা। বিজ্ঞানী ঝামেলায় পড়ে গেলেন। উনিকি সত্তিই বাংলাদেশে এসেছেন, নাকি রিক্সার পাইলট ওনাকে ভুল জায়গাতে নিয়ে এসেছে। এমন সময় এক বৃদ্ধের সাথে দেখা হলো বিজ্ঞানীর।
>আপনার সাথে কি আমি কিছু কথা বলতে পারি? বললেন বিজ্ঞানী
বৃদ্ধ অবাক নয়নে কিছুখন বিজ্ঞানীর দিকে তাকিয়ে রইলেন। চোখ থেকে চশমা খুলতে খুলে বললেন
> আপনি দেখছি স্পষ্ট বাংলা বলছেন?
> আমি একজন ভাষা গবেষক ও বিজ্ঞানী। বাংলা ভাষা সম্পর্কে জানতে ঘানা থেকে এসেছি । কিন্তু এখানকার মানুষের সাথে কথা বলে মনে হচ্ছে কেউ বাংলা জানেনা। বাংলা ভাষার এ করুণ পরিণতি কিভাবে হলো?
> আপনি ঠিকই ধরেছেন। এমন পরিণতির জন্য আসলে আমরা নিজেরাই দায়ী। একসময় আমরা অতি আধুনিকতা দেখানোর জন্য বাংলা,হিন্দী ইংরেজী ভাষা মিশিয়ে কথা বলেছি। আমাদের কাছথেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমানের ছেলেরাও বিভিন্ন ভাষা মিশিয়ে কথা বলে। এখন এই সংকর জাতের ককটেল ভাষাই বাংলাভাষায় রূপ নিয়েছে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন বিজ্ঞানী জাঙ্গাইল।
> অথচ দেখুন আপনাদের ভাষার গৌরব ও সম্মান সবচেয়ে বেশি। নিজেদের ভাষাটাকে আপনারা নিজেরাই নষ্ট করে ফেলেছেন। কিন্তু আপনি এত সুন্দর বাংলা বলেন কিভাবে? জানতে চাইলেন ডক্টর জাঙ্গাইল
> আমি একজন বাংলা শিক্ষক। তাই বাংলা বলতে ও বুঝতে আমার কোনো কষ্ট হয়ন।
বিজ্ঞানী ভাবছেন, যে বাংলার মানুষেরা মায়ের ভাষার জন্য প্রাণ দিইয়েছিলেন শত বছর আগে, সে বাংলা ভাষার আজ এই করুণ পরিণতি ।
এখন আর কিছুই করার নেই। এখন শুধু রয়েছে দীর্ঘশ্বাস।
একটা রিক্সা ওনার দিকে এগিয়ে আসছে। এখানে বসেথেকে লাভ নেই। রিকশার পাইলটের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে রিকশায় উঠে পরলেন তিনি। রিকশার পাইলট ইংরেজি গান গাইতে গাইতে উড়ে চলতে লাগলো।
(গল্পটি কেমন লাগলো তা অবশ্যই জানাবেন)
কোন এডমিন যদি কপি পেস্ট করেন তবে অবশ্যই লেখকের নাম ও ব্লগ নাম দিবেন।
বিষয়: বিবিধ
১২৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন