আজ ১লা বৈশাখ পান্তা ইলিশ বর্জন করে তুর্কী স্যাণ্ডউইচ + চা দিয়ে সকালে নাস্তা করলাম
লিখেছেন লিখেছেন ইঞ্জিঃ আবুল হোসেন রহমতুল্লাহ ১৪ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:৪৯:৫৫ রাত
কারণঃ
১) বাংলা সন ইসলামী হিজরী চন্দ্র বর্ষ সন থেকে উৎপত্তি, প্রজাদের কৃষি কাজে দিন পঞ্জির সুবিধার জন্য হিজরী চন্দ্র বর্ষকে সৌর বর্ষে রূপান্তর করে সম্রাট আকবর নতুন বাংলা সন চালু করেলেন। তখন পৌত্তলিক আর্য ব্রাহ্মণরা শকাব্দ সন ব্যবহার করত। শকাব্দ সন বিলুপ্ত হওয়ায় মুসলমাদের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার দীর্ঘ পরিকল্পনার একটি অংশ ১লা বৈশাখ পৌত্তলিক আর্য ব্রাহ্মণদের সংস্কৃতি চাঁপিয়ে দেয়া হয়েছে যা সম্পূর্ণ শিরক ও ঈমান ধ্বংসকারী। যেমন- আল্পনা, গালে উল্কি আকা, মঙ্গল শোভা যাত্রা।
কুরআন শরীফে আল্লাহ বলেনঃ “হে ঈমানদারগণ ! যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করেছে তোমরা যদি তাদের ইশরায় অনুসরন করে চলো, , তাহলে তারা তোমাদের উল্টোদিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে (ইসলাম থেকে কুফরীর দিকে)এবং তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” (সূরা আল ইমরানঃ ১৪৯)
হাদীসে রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কোন জাতির অনুসরন করবে, সে ঐ জাতিরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।” (আবু দাউদ)
২) গ্রাম বাংলার দরীদ্র জনগণের ফ্রিজ না থাকায় রাতে খাবার পর পাতিলে থাকা অবশিষ্ট ভাত ভাল রাখার জন্য পানি মিশিয়ে পান্তা করা হয় এবং আগে ধাতব থালা বাটি ও হাড়ি পাতিলের দাম বেশী থাকায় মাটির খোরা বাসন ও মাটির হাড়ি পাতিল ব্যবহার করত। ১৯৭১ সালের পূর্বে রাজশাহীর পদ্মা নদী সহ সব নদীতে প্রচুর ইলিশ মাছ পাওয়া যেত এবং অন্যান্য মাছের তুলনায় সবচেয়ে সস্তা ছিল। ঐ সময় আমি বরিশালের আশেপাশের নদী থেকে ধরা বরফ ছাড়া সবচেয়ে বড় সাইজের চকচকে তাজা ইলিশ মাছ ১ টাকারও কমে ১০ আনা থেকে ১২ আনায় কিনেছি, ঐ সাইজের বড় ইলিশ এখন আর চোখে পড়ে না। অন্যান্য মাছের তুলনায় ইলিশ মাছ সবচেয়ে সস্তা ছিল এবং সব সময় অনেক নদীতেই প্রচুর ইলিশ পাওয়া যেত বলে ইলিশ মাছকে গরীবের মাছ বলা হত এবং এ কারনেই ইলিশ মাছ আমাদের জাতীয় মাছ।
১৯৭১ সালের পর আমাদের পরম বন্ধু (!) ভারত কতৃক ফারাক্কা বাধেঁর কারণে রাজশাহীর পদ্মা নদী ও অন্যান্য শাখা নদীগুলি শুকিয়ে যাওয়ায় আগের মত আর ইলিশ মাছ পাওয়া যায় না। আমার গ্রামের বাড়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রামের বাড়ী টুঙ্গীপাড়ার পাশেই, ঐ টুঙ্গীপাড়ার কাছেই পদ্মার একট শাখা খরস্রোতা মধুমতি নদীতে আমার দাদা ও চাচারা ইলিশ মাছ ধরতো। ফারাক্কা বাধেঁর কারণে সেই নদীর অনেক অংশ মরে গিয়ে সরু খাল হয়ে গিয়েছে এবং ইলিশ মাছের বদলে সেখানে এখন পুঁটি মাছ ধরা হয়, এমন কি পদ্মার ইলিশ নামে বিখ্যাত সেই ইলিশ এখন আর পদ্মা নদীতে পাওয়া যায় না।
এভাবে ফারাক্কা বাধেঁর কারণে নদীগুলিতে তেমন ইলিশ না পাওয়ায় এবং যাও কিছু পাওয়া যায় তাও ভারতে পাচার হয়ে যায়। আমার এক আত্মীয় ভারতের কলিকাতা ঘুরে এসে বললো সেখান ইলিশ মাছ বাংলাদেশের চেয়ে অর্ধেক দামে সস্তায় বিক্রয় হয় এবং সেখানের হোটেলে তৃপ্তি করে বাংলাদেশের ইলিশ মাছ দিয়ে ভাত খেয়ে এসেছে। আমার ঐ আত্মীয় রসিকতা করে বলেছিল, মজা করে ইলিশ মাছ খেতে হলে ভারত যান। ইলিশ মাছের অভাবে তাই এখন উচ্চ দামে হাজার হাজার টাকায় ইলিশ মাছ কিনে পান্তা ইলিশ খাওয়ার সামর্থ গ্রাম বাংলার দরীদ্র জনগণের নাই। অতএব ১লা বৈশাখ চড়া দামে পান্তা ইলিশ খাওয়া মানেই এই সব দরীদ্র জনগণের সাথে উপহাস করা।
৩) ইসলাম বাঙ্গালী কিংবা পাঞ্জাবী ভাষা ভিত্তিক কোন সংকীর্ণ গণ্ডি এবং সাদা কালো চামড়ার কোন বর্ন বা গোষ্ঠির মধ্যে সীমাবদ্দ নয়, সারা বিশ্বের সকল ভাষা ও বর্নের জন্য। তাই বিশ্বের যে কোন এলাকার হালাল খাদ্য হিসাবে তুর্কী স্যাণ্ডউইচ + চা দিয়া ১লা বৈশাখ সকালের নাস্তা সারলাম।
৪) যারা সারা বছর বিদেশী ঢঙ ও চালচলনে চলতে পছন্দ করে আর ১লা বৈশাখে একদিন বাঙ্গালীপনার ভান করে তাদের মত চড়া দামে পান্তা ইলিশের পিছনে হাজার হাজার টাকা খরচ না করে অতি সস্তা দামে পুষ্টিমানের খাবার খেয়ে যে টাকা বেঁচে যাবে তা দিয়ে গরীব ক্ষুধার্ত শিশুরা যারা দুবেলে পেট ভরে খেতে না পেরে অনাহারে দিন কাটায় তাদেরকে খাওয়ালে এবং ইসলামী শাসন কায়েমের জন্য ব্যয় করলে আল্লাহ অনেক খুশী হবেন। বনরুটির মত লম্বা রুটির ভিতর ডিম ভাজি, লেটুস পাতা, কাঁচা মরিচ, পিয়াজ, শসা, শুকনা মরিচের সস ইত্যাদি ঢুকিয়ে সবচেয়ে সস্তায় ঘরে বসে নিজেই তুর্কী স্যাণ্ডউইচ বানিয়েছি। আর সাথে লম্বা স্লাইচ করা আলুর টুকরা ভাজি তাও সবচেয়ে সস্তা।
বিষয়: বিবিধ
৩৩২৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিশ্বের যে কোন এলাকার তুর্কী হালাল খাদ্য দিয়া ১লা বৈশাখ সকালের নাস্তা সারলাম।
এখন আমার কি হপে.
“হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা সত্যিই আল্লাহর ইবাদাতকারী হয়ে থাকো, তাহলে যে সমস্ত পাক-পবিত্র জিনিস আমি তোমাদের দিয়েছি সেগুলো নিশ্চিন্তে খাও এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর যদি কোন নিষেধাজ্ঞা থেকে থাকে তাহলে তা হচ্ছে এই যে, মৃত পশু পাখি খেয়ো না, রক্ত ও শূকরের গোশত থেকে দূরে থাকো ৷ আর এমন কোন জিনিস খেয়ো না যার উপর আল্লাহ ছাড়া আর কারোর নাম নেয়া হয়েছে” (সূরা বাক্বারাঃ ১৭২- ১৭৩)
“(নবী) তাদের জন্য পাক পবিত্র জিনিসগুলো হালাল ও নাপাক জিনিসগুলো হারাম করে” (সূরা আরাফঃ ১৫৭)
সুতরাং হাতে গোনা এ কয়েকটি হারাম খাবার ছাড়া পৃথিবীতে হাজার হাজার লাখ লাখ যত ধরনের খাবার আছে সবই হালাল। পৃথিবীর যে অঞ্চলে যে খাবার সহজে উৎপন্ন হয় এবং সহজ লভ্য সেই খাবারই সে অঞ্চলের প্রধান খাদ্য যা নিয়মিত অভ্যাস হয়ে যায়। আমাদের দেশে চাল উৎপন্ন হয় বেশী হয় তাই আমাদের প্রধান খাদ্য ভাত এবং প্রতিদিন ভাত খাওয়া আমাদের অভ্যাস, তেমনি ভারতের পশ্চিম অঞ্চল ও পাকিস্তানে গম উৎপন্ন হয় বেশী তাই তাদের প্রধান খাদ্য রুটি এবং প্রতিদিন রুটি খাওয়া তাদের অভ্যাস, আরব দেশে খেঁজুর উৎপন্ন হয় বেশী হয় তাই আরব দেশের প্রধান খাদ্য খেঁজুর এবং প্রতিদিন খেঁজুর খাওয়া তাদের অভ্যাস। রাসুলুল্লাহ (স) আরব দেশে জন্ম গ্রহন করেছিলেন বলেই আরব দেশের অভ্যাস অনুযায়ী খেঁজুর খেতেন, বাংলাদেশে জন্ম গ্রহন করলে বাংলাদেশের অভ্যাস অনুযায়ী ভাতই খেতেন, ইওরোপ আমেরিকায় জন্ম গ্রহন করলে ঐসব দেশের অভ্যাস অনুযায়ী স্যাণ্ডউইচ ও বীফ বার্গার খেতেন।
“স্যাণ্ডউইচ নবীর বাপও শুনেনি” এভাবে রাসুলুল্লাহ (স) কে কটাক্ষ করে এবং তাঁর প্রিয় খাবার খেজুর খোরমা মধু নিয়ে ব্যাঙ্গ করে কথা বললে ঈমান থাকে না, কাফের হয়ে যেতে হয় তা কি জানেন? নবী শব্দ উচ্চারন করার সময় মুহম্মদ (স) এর বেলায় (সল্লাল্লাহু আলাইয়েসসালাম) এবং অন্য নবীদের বেলায় (আলাইয়েসসালাম) উচ্চারন করে সম্মান করতে হয়, আপনি তা না করে উল্টা ব্যাঙ্গ ও কটাক্ষ করেছেন। আল্লাহর কাছে বিনিতভাবে তওবা করে মাফ চান, আল্লাহ অসীম দয়ালু ও অতীব ক্ষমাশীল, মাফ করে দেবেন। আর যদি আপনি মুসলমান নাম ব্যবহার করে ছদ্মবেশে ভিন্ন ধর্মী কেউ ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমে থাকেন, তাহলে আমার কিছুই বলার নাই, মহান আল্লাহর সিদ্ধান্তর উপর ছেড়ে দিলাম।
মন্তব্য করতে লগইন করুন