কোন দলকে সমর্থন করে যেন আমরা ঈমান হারিয়ে আল্লাহর অভিশাপ প্রাপ্ত না হই [পর্ব-২]
লিখেছেন লিখেছেন ইঞ্জিঃ আবুল হোসেন রহমতুল্লাহ ০৭ মার্চ, ২০১৪, ০৭:৫২:৪৯ সকাল
[পর্ব-১ এর পর]
[ধারাবাহিকতার জন্য পূর্বে প্রকাশিত পর্ব-১ পড়ার অনুরোধ করছি]
“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” আল্লাহর এ কলেমা বিরোধী শিরক এবং কুফরী পাপ এতই মারাত্মক ও ভয়ঙ্কর যে, আল্লাহ অন্য যে কোন পাপ ক্ষমা করলেও শিরক এবং কুফরী পাপ কখনো ক্ষমা করেন না এবং শাস্তিও সবচেয়ে বেশী ও ভয়াবহ যা আল্লাহ কুরআন শরীফে এভাব বলেনঃ
“আল্লাহ অবশ্যই শিরক করার পাপ মাফ করেন না, এ ছাড়া অন্যান্য যত পাপ আছে সব তিনি যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেন৷। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে আর কাউকে শরীক করেছে সেতো এক বিরাট মিথ্যা রচনা করেছে এবং কঠিন পাপের কাজ করেছে।” (সূরা নিসাঃ ৪৮)
“নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনার পর (মুসলমান হয়ে) আবার কুফরী করেছে, অতঃপর সেই কুফরী কাজ আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে, তাদের তওবা কখনো কবুল হবে না ৷ এ ধরনের লোকেরাই পথভ্রষ্ট। নিশ্চয়ই যারা কুফরী করেছে এবং কুফরীর অবস্থায় মারা গেল, তাদের মধ্য থেকে কেউ যদি নিজেকে শাস্তি থেকে বাঁচাবার জন্য সারা পৃথিবী পরিমান স্বর্ন ফিদিয়া দেয় (বিনিময় দান) তবুও তা গ্রহণ করা হবে না। এদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি এবং নিজেদের (সে শাস্তি থেকে) বাঁচার জন্য কোন সাহায্যকারীও পাবে না।” [সৃরা আল ইমরানঃ ৯০-৯১]
পাঠক! লক্ষ করুন। উপরের ঐ আয়াতে সাধারন কাফিরদের কথা বলা হয় নাই, আল্লাহর কলেমায় ঈমান আনার পর মুসলমান হয়েও যারা আল্লাহর আইন অমান্য করে কুফরী করা অবস্থায় মারা গিয়েছে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে । আরও লক্ষ করুন, উপরে ‘আয়াতুল কুরসি’র যে ২ টি শব্দের কথা অমান্য করে আমরা শেরেকী ও কুফরী গুনাহতে লিপ্ত হয়ে ঈমান হারা হয়ে যাচ্ছি, সে দুটিই কিন্তু রাজনৈতিক। অথচ একদল বুদ্ধিজীবি ও রাজনীতিবিদরা কুরআন হাদীস এবং রাসুলুল্লাহ (স) ও তাঁর সাহাবাদের (রা) রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে না জেনেই বলেন, “ধর্ম আর রাজনীতি আলাদা, রাজনীতির ভিতর ধর্মকে টেনে আনা যাবে না”। আর আমরা সাধারন জনগন কুরআন হাদীসের জ্ঞান ছাড়া মূর্খের মত তাদের কথা বিশ্বাস করে কিভাবে ঈমান হারা হয়ে যাচ্ছি টেরও পাচ্ছি না। আমিও কুরআন হাদীসের জ্ঞান ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইজ্ঞিনীয়ারিং পাশ করার পরও ছিলাম মূর্খ এবং তাই বিশ্বাস করতাম।
পাঠক! এখন দেখলেন তো “ধর্ম আর রাজনীতি আলাদা নয়, বরং রাজনীতি ধর্মেরই অধীন”, কেননা মানুষের জীবনে খাওয়া পরা, আয় রোজগার, ব্যবসা বানিজ্য, ঘর সংসার, সমাজ রাষ্ট্র সব কিছুই চলবে ধর্মের অধীনে যা আল্লাহর নিজের কথা, কোন মোল্লা মৌলভীর কথা নয়। এ কারনেই ‘আয়াতুল কুরসি’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আয়াত এবং ‘আয়াতুল কুরসি’র অনেক ফজিলত। অথচ অর্থ না জেনে ফজিলতের আশায় মুখস্ত পড়ে যাচ্ছি, আর ওদিকে আয়াতুল কুরসি’র কথাগুলিকে অমান্য করে শেরেকী গুনাহতে লিপ্ত হয়ে ঈমান হারা হয়ে যাচ্ছি টেরও পাচ্ছি না।
সূরা হাশরের অনেক ফজিলত বয়ান করা হয় এবং ফজিলতের আশায় আমরা অনেকেই ফজরের নামাযের পর সূরা হাশর পাঠ করি। সূরা হাশরের ২২ থেকে ২৪ আয়াতেও আল্লাহ “ইলাহ” শব্দের অর্থ ও ব্যাখ্যা এভাবে বর্ননা করেনঃ “তিনিই আল্লাহ যিনি ছাড়া আর কোন “ইলাহ” নাই; তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে অদৃশ্যমান এবং প্রকাশ্যে উপস্থিত দৃশ্যমান সবকিছুই জানেন, তিনি পরম দয়ালু, অসীম দাতা। তিনিই আল্লাহ যিনি ছাড়া আর কোন “ইলাহ” নাই। তিনিই একমাত্র মালিক (বাদশাহ), অতি পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, সর্বজয়ী (সবার উপর বিজয়ী), মহাশক্তিধর হিসাবে নির্দেশ কার্যকরী করতে সক্ষম এবং সবার চেয়ে বড় ও বিরাজমান থাকতে সক্ষম, তিনি সেই সব শিরক থেকে পবিত্র যা লোকেরা তাঁর সাথে অন্যকে অংশীদার করে। তিনিই আল্লাহ, স্রষ্টা, পরিকল্পনাকারী, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের র্নিদেশ দানকারী ও রূপদানকারী, উত্তম নাম সমূহ তাঁরই। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সবাই তাঁর তাসবীহ (গুনগান) করে। তিনিই পরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী”। (সূরা হাশরঃ ২২-২৪)
পাঠক! লক্ষ করুন। আয়াতুল কুরসির মত সূরা হাশরেও ২২ তম আয়াতে “তিনিই আল্লাহ যিনি ছাড়া আর কোন ‘ইলাহ’ নাই” এভাবে ‘ইলাহ’ শব্দ দিয়ে শুরু করে আল্লাহর কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও গুনাবলী বর্ননা সহ আল্লাহ কত সহজভাবে ‘ইলাহ’ শব্দের অর্থ ও ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন। আয়াতুল কুরসিতে আল্লাহর যেসব কর্তৃত্ব ও গুনাবলী আমরা যেভাবে বাস্তব জীবনে অমান্য করে চলছি, সেই একইভাবে সূরা হাশরেও আল্লাহর কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও গুনাবলী আমরা বাস্তব জীবনে অমান্য করে চলছি। যেমন- সূরা হাশরে আমরা পড়ি “তিনি (আল্লাহ) লোকচক্ষুর আড়ালে অদৃশ্যমান এবং প্রকাশ্যে উপস্থিত দৃশ্যমান সবকিছুই জানেন”, অথচ আমরা পীর অথবা গণকের কাছে যাই অদৃশ্য বিষয় জানতে, যেমন ভবিষ্যত ও ভাগ্য জানতে এবং তারা অদৃশ্য বিষয় জানে তা বিশ্বাস করি। সূরা হাশরে আমরা পড়ি “তিনিই একমাত্র মালিক (বাদশাহ)”, যিনি সারা দুনিয়ার এবং আসমান ও জমিনের মালিক (বাদশাহ) সেই আল্লাহর স্বার্বভৌমত্ব অস্বীকার করে “জনগনই স্বার্বভৌম ক্ষমতার মালিক” বলে বিশ্বাস করি এবং যারা আল্লাহর নাযিল করা কুরআনের আইন ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিজেদের তৈরী আইন দ্বারা রাস্ট্র ও বিচার চালায় তাদেরকে সমর্থন ও ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসাই। সূরা হাশরের শেষে আমরা পড়ি “আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সবাই তাঁর (আল্লাহর) তাসবীহ (গুনগান) করে”, অথচ আমরা আল্লাহর গুনগান না করে দলের প্রতিষ্ঠাতা মৃত নেতার গুনগান করতে থাকি, কিংবা কোন মৃত পীর বুজুর্গের গুনগান করতে থাকি। এভাবে আমরা ফজিলতের নিয়তে সূরা হাশর পাঠ করে আল্লাহর কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও গুনাবলী বাস্তব জীবনে অমান্য করে চলছি এবং আল্লাহর কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও গুনাবলীর সাথে অন্যকে অংশীদার করে শিরক করে চলছি, অথচ ঐ সূরা হাশরেই পড়ি “তিনি সেই সব শিরক থেকে পবিত্র যা লোকেরা তাঁর সাথে অন্যকে অংশীদার করে”। পাঠক! লক্ষ করুন আয়াতুল কুরসির মত সূরা হাশরেও আল্লাহর যে কয়টি কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও গুনাবলী বাস্তব জীবনে অমান্য করে আমরা শেরেকী ও কুফরী গুনাহতে লিপ্ত হয়ে ঈমান হারা হয়ে যাচ্ছি, তার কয়েকটিই হল রাজনৈতিক।
ফজিলতের নিয়তে আয়াতুল কুরসি ও সূরা হাশর পাঠ করে এভাবে আল্লাহর কলেমার সাথে এবং আল্লাহর কিতাব কুরআনের আয়াতের সাথে এমন দ্বিমুখী আচরন করার পর কি করে ফজিলত লাভের আশা করা যায়? আর একারনেই কুরআন শরীফে সূরা ফাতিহার পর সূরা বাক্বারার প্রথমেই মু’মিন মুসলমান ও কাফেরের পরিচয় দিয়ে ৮ম আয়াতে মুসলমান নামধারীদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেনঃ “মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা বলে, ‘আমরা আল্লাহর উপর ও আখেরাতের বিচার দিনের উপর ঈমান রাখি’, অথচ তারা আসলেই মু’মিন (মুসলমান) নয়”। (সূরা বাক্বারাঃ ৮) আল্লাহ আমাদেরকে মাফ করুন, তিনি যেন আমাদেরকে ঐ দলে না ফেলেন।
অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে জনগন যদি সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক না হয় তাহলে জনগনের ক্ষমতা কতটুকু? জনগনের ক্ষমতা কতটুকু তাও আল্লাহ কুরআন শরীফে নির্ধারিত করে দিয়েছেন, কোন কিছুই আল্লাহ বাদ রাখেন নাই। আল্লাহ মানুষকে এ দুনিয়ায় তাঁর ‘খলিফা’ অর্থাৎ ‘প্রতিনিধি’ হিসাবে সৃষ্টি করে পাঠিয়েছেন। পৃথিবীতে প্রথম মানুষ আদমকে (আ) সৃষ্টির পূর্বে ফেরেস্তাদেরকে আল্লাহ তাঁর এ ইচ্ছার কথা কুরআন শরীফে এভাবে বলেছেন, “আমি পৃথিবীতে খলীফা (অর্থাৎ প্রতিনিধি) পাঠাতে চাই”। (সূরা বাক্বারাঃ ৩০)।
অতএব জনগনের ক্ষমতা হল আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে এমন লোক ও দলকে সমর্থন ও ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসাবে যারা নিজেদের তৈরী আইন অনুযায়ী কারো উপর কর্তৃত্ব ও শাসন না করে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে আল্লাহর আইন অনুযায়ী শাসন পরিচালনা করবে এবং পৃথিবীতে আল্লাহর কর্তৃত্ব ও স্বার্বভৌম প্রতিষ্ঠা করবে অর্থাৎ মেনে চলবে।
কুরআন শরীফে আল্লাহ বলেন, “ইনিল হুকমু ইল্লা লিল্লাহি” অর্থাৎ “শাসন ও কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর (অন্য কোন মানুষের নয়)” (সূরা ইউসুফঃ ৪০)। ‘হুকুম’ শব্দের অর্থ ‘শাসন, কর্তৃত্ব, নির্দেশ’ এবং এ ক্ষমতা কোন মানুষ বা কোন দল কিংবা কোন সংসদকে আল্লাহ দেন নাই, সব আল্লাহ নিজের এখতিয়ারে রেখেছেন।
এভাবে কুরআন শরীফের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ নিজেই ‘ইলাহ’ শব্দের অর্থ ও ব্যাখ্যা বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। যখন কেউ উচ্চারন করে কলেমা পড়ে “আশহাদু আন লা-ইলাহা ইল্লা আল্লাহু ওয়াদাহু লা-শরীকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ” তখন “আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহু” এ অংশটা পড়ার সময় সে মনে প্রানে বিশ্বাস করে ও শপথ করে বলে, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি (অর্থাৎ ঘোষনা করছি) যে, আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে প্রভূ মানি না, আল্লাহ ছাড়া আর কারো আইন ও বিধান মানি না, আল্লাহ ছাড়া আর কারো শাসন কতৃত্ব মানি না, আল্লাহ ছাড়া আর কারো আনুগত্য মানি না, আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে রিজিকদাতা মানি না, আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভবিষ্যতের অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী মানি না, আল্লাহ ছাড়া আর কারো আদেশ নিষেধ মানি না, আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মানি না, ………” এইভাবে ‘ইলাহ’ শব্দের সবগুলি অর্থ এখানে চলে আসবে।
চলবে ইনশাআল্লাহ >>> পরবর্তি পর্ব-৩
বিষয়: বিবিধ
২১০৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বি.দ্র. পোস্ট আরো একটু ছোট হলে পড়তে ভালো লাগে।
May allah give us the realization.
thanks for write up.
মন্তব্য করতে লগইন করুন