পুলিশ সম্পর্কে শেরে বাংলার ভাবনা
লিখেছেন লিখেছেন ইঞ্জিঃ আবুল হোসেন রহমতুল্লাহ ২৪ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৩:৩৯:১২ দুপুর
ব্রিটিশ ভারতে হিন্দু ব্রাক্ষণ জমিদারদের শোষন ও নির্যাতনে বাংলার মুসলিম প্রজারা চরম দুঃখ কষ্টে দিন কাটাত। মুসলিম প্রজাদেরকে ম্লেচ্ছ, যবন, নেড়ে ইত্যাদি গালি দেওয়া হতো এবং তারা হিন্দু ব্রাক্ষণদের কাছে যাওয়া তো দূরে, তাদের ছায়াও মাড়াতে পারতো না। এমন কি কোন মুসলিম প্রজা ভুলে কোন হিন্দু ব্রাক্ষণের বাড়ীতে ঢুকে পড়লে সেই জায়গা গোবর দিয়ে লেপে পবীত্র করা হতো এবং মুসলিম প্রজাদেরকে খুব ঘৃনা করা হতো। এই যখন অবস্থা তখন মুসলিম প্রজাদের শিক্ষার তো কোনই সুযোগ ছিল না, আর সব স্কুল ছিল হিন্দু এলাকায় এবং মুসলিম এলাকায় কোন স্কুল ছিল না। এমন কঠিন অবস্থার মধ্যে ভাগ্য ক্রমে অনেক চেষ্টা সাধনা ও প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করে হাতে গোনা দু একজন মুসলিম প্রজা কেবল শিক্ষা লাভ করতে পেরেছিল। শেরে বাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হক ছিলেন এমনি একজন ভাগ্যবান মুসলিম প্রজা।
ব্রিটিশ ভারতে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া এলাকা থেকে আমার বাবা , আমার চাচা এবং শেখ মুজিবুর রহমান (বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতা) ভাগ্য ক্রমে ঐ এলাকার মুসলিমদের মধ্যে শিক্ষিত হতে পেরেছিলেন। তাঁরা কেহই এখন বেঁচে নাই। তখন কোন মুসলমান মেট্রিক (বর্তমানের S.S.C) পাশ করলে পাচঁ সাত গ্রামের লোকেরা তাকে দেখার জন্য ভীড় করতো, আর এখনকার মত এত শিক্ষা বোর্ড ছিল না, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হিন্দুদের সাথে প্রতিযোগিতা করেই মেট্রিক পাশ করতে হতো। তখন টুঙ্গীপাড়া ছিল কোটালীপাড়া থানার অধীনে একটি গ্রাম যা ১৯৭২ সালের পর থানা হয়। কিভাবে অতি কষ্ট করে লেখা পড়া শিখতে হয়েছে তা ইনশাআল্লাহ পরে বর্ননা করবো।
শেরে বাংলা তখন (১৯৩৭ থেকে ১৯৪৩ পর্যন্ত) ব্রিটিশ ভারতে মুসলিম জনগনের ভোটে নির্বাচিত অবিভক্ত বাংলা প্রদেশের (বর্তমান বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিম বঙ্গ একত্রে) মুখ্য মন্ত্রী (Chief Minister)। কলিকাতা ছিল অবিভক্ত বাংলা প্রদেশের রাজধানী। তিনি বুঝতে পারলেন বাংলার অবহেলিত মুসলিম জনগনের উন্নতি ও মুক্তি লাভ করতে হলে সর্বপ্রথম দরকার তাদেরকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা, আর এ উদ্দেশ্যেই মুখ্য মন্ত্রী হওয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অন্য কাউকে না দিয়ে নিজের হাতে রাখলেন এবং বাংলার মুসলমানদের জন্য স্কুল কলেজ তৈরী করতে লাগলেন। তার এ অবদানে পরবর্তিতে মুসলমানদের মধ্য থেকে অনেক শিক্ষিত নেতা, সরকারী কর্মকর্তা, শিক্ষক, অধ্যাপক, ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার তৈরী হওয়া সম্ভব হয়েছে এবং আমরা একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক। তা না হলে আমাদের অবস্থা হত ভারতের অধীনে কাস্মীরের মত।
অবিভক্ত বাংলার মুখ্য মন্ত্রী থাকা অবস্থায় একবার তাঁর জন্ম স্থান চাখার গ্রামের আত্মীয় সহ কিছু লোক শেরে বাংলাকে অনুরোধ করলো- “হুজুর আপনি এখন সারা বাংলার মুখ্য মন্ত্রী, আমাদের চাখার গ্রামকে থানা করে দেন।” তিনি জবাবে বরিশালের ভাষায় বললেন, “ও মনু! মুখ্য মন্ত্রী হওনের আগে মুই ওকালতি হরতাম, থানা বানাইলে তোমরা হারা জনম নিজেগো মধ্যে কাইজ্যা (ঝগড়া) আর কেউন্যা কুন্যি (মারামারি) হরবা আর দারোগা পুলিশ, মামলা মোকাদ্দমা লইয়া থাকবা হেইয়া কি মুই বুঝি না? হেইয়ার লাইগ্যা মুই কই থানার কাম নাই, চাখারে একটা কলেজ বানাইয়া দিমু, তোমাগো পোয়া মাইয়ারা লেহাপড়া হইরা বিএ এমএ পাশ করুক।”
বাংলাদেশে পুলিশ যে কত খারাপ হতে পারে তা আর কেউ না বুঝলেও আজ থেকে ৭০ বছর আগে শেরে বাংলা বুঝতে পেরেছিলেন। আর তাই তাঁর জন্ম স্থান চাখার গ্রামটি আজ পর্যন্ত থানা হয় নাই এবং প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মারামারি হানাহানি ও ছাত্র হত্যার ঘটনা ঘটলেও তাঁর প্রতিষ্ঠিত চাখার এ কে ফজলুল হক কলেজে এমন ঘটনা ঘটতে শুনা যায় নাই।
বিষয়: বিবিধ
১৭৩৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন