কি ছিল হাফেযে কোরআন প্রেসিডেন্ট ডঃ মুরসির অপরাধ?

লিখেছেন লিখেছেন ইঞ্জিঃ আবুল হোসেন রহমতুল্লাহ ০৪ জুলাই, ২০১৩, ১১:২৮:৫৩ রাত



কি ছিল হাফেযে কোরআন প্রেসিডেন্ট ডঃ মুরসির অপরাধ? তাঁর অপরাধ হলঃ

১) ইসরাইল কে ধমকি দিয়েছিল, মুসলমানদের উপর হামলা বন্ধ কর , যদি ফিলিস্তিনের উপর আবারও আক্রমন হয় তাহলে আমরা তোমাদের উপর হামলা করব !

২) ইসরাইল কে হাতের মুঠুই এনে হামাসের সাথে শান্তি চুক্তি করতে বাধ্য করে ছিল।

৩) দুর্নীতি বাজ হুসনী মুবারকের বড় বড় জেনারেল দের আইনের আওতায় এনে আত্মসাতের কোটি কোটি ডলার রাষ্ট্রীয় কুষাগারে জমা করে ছিল।

৪) আমেরিকা ইউরূপ সহ মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে হামলা কারীদের চোখে চোখ ডেলে হুংকার দিয়েছিল।

৫) ইসলামী শরীয়াহ মুতাবেক দেশ পরিচালনার আইন বানিয়ে ছিল।

৬) মদ ও নাইট ক্লাবের উপর নিষেদাগ্গা আরোপ করেছিল।

৭) মুহাম্মাদ (সাHappy কে নিয়ে ব্যঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কাঠুর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন।এবং জাতিসংঘে বক্তৃতা করে মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করে ছিলেন।

৮) নারীদের রাস্তায় অর্ধ উলঙ্গ পোশাক পড়ে স্পর্শ কাতর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রদর্শন করে চলাফেরা বন্ধ করেছিলেন।

৯) টিভি চ্যানেল গুলিতে অশ্লীল নাঁচ গান বন্ধ করেছিলেন এবং মহিলা ঘোষক ও খবর পাঠিকাদের অশালিন পোষাক পড়া বন্ধ করে মাথায় ওড়না বা হিজাব পড়ার নিয়ম চালু করেছিলেন।

১০) আমি সৌদি আরব আসার পর দেখলাম হোসনী মোবারকের শাসনকালে আমার মিসরী বন্ধুরা ছুটিতে ওদের দেশে যাওয়ার সময় পুরুষরা দাড়ি কামিয়ে ফেলতো এবং মহিলারা বিমানে উঠে বোরকা খুলে ফেলে ফেলতো। কারণ জিজ্ঞাসা করলে বলতো পুরুষরা দাড়ি রেখে এবং মহিলারা বোরকা পড়ে গেলে মিসরের বিমান বন্দরে প্রবেশ করা মাত্র জেলখানায় ঢুকাবে। এ কালো আইনটি চালু করেছিল কুখ্যাত জামাল আবদুল নাসের যে সাঈদ কুতুব, হাসানুল বান্না সহ হাজার আলেম ওলামা ও ইসলামী নেতাদেরকে তথাকথিত অপরাধ ট্রাইবুনালে মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দিয়ে ইসলামী দল নিষিদ্ধ করে দেয় এবং যেসব মাদ্রাসায় আলেম তৈরী হয় সেগুলিকে জঙ্গী তৈরীর কারখানা আখ্যায়িত করে বন্ধ করে দেয়। মুরসি ক্ষমতায় আসার পর আমার ঐ সব মিসরী বন্ধুরা নির্ভয়ে দাড়ি রেখে এবং মহিলারা নির্ভয়ে বোরকা পরে ওদের দেশে যেতে পারতো।

১১) মিশরে মসজিদে নামায পড়া সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ করা হতো, ঈমাম সাহেবরা স্বাধীনভাবে খুৎবা দিতে পারতেন না। এমন কি সেখানে দীনের তালিম, ইসলামী আলোচনা, ওয়াজ মাহফিল, তাফসীর মাহফিল, তাবলীগ জামাতের গাস্ত ও চিল্লা সব নিষিদ্ধ ছিল। মুরসি ক্ষমতায় আসার পর আবার সব চালু হল এবং মসজিদে স্বাধীনভাবে নামায ও খুৎবা চালু হয়।

১২) মিশরে পুরুষদের দাড়ি রাখা নিষেধ ছিল, তাই আলেম ওলামারা দাড়ি রাখতে পারতো না। মুরসি ক্ষমতায় আসার পর আলেম ওলামারা নির্ভয়ে দাড়ি রাখা শুরু করেছেন।

১৩) বিশ্ববিখ্যাত প্রাচীনতম আল আজহার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে ধর্মনিরপেক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিনত করা হয় এবং ওখানকার ইসলামী পণ্ডিত ও আলেম ওলামারা দাড়ি রাখতে পারতো না। মুরসি ক্ষমতায় আসার পর আল আজহার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে এবং ইসলামী পণ্ডিত ও আলেম ওলামারা নির্ভয়ে দাড়ি রাখা শুরু করতে পেরেছেন।

১৪) মুরসির একটা বড় অপরাধ ছিল বাংলাদেশে তথাকথিত যুদ্ধঅপরাধ ট্রাইবুনালে আলেম ওলামা ও ইসলামী নেতাদের প্রহসনের বিচার বন্ধ করতে বিবৃতি দিয়ছিলেন এবং আলেম ওলামা ও তোহিদী জনতার উপর নির্যাতন ও গনহত্যা বন্ধের দাবী জানিয়েছিলেন।

১৫) মুরসির মূল অপরাধ আল্লাহ কুরআন শরীফে এভাবে বলেছেনঃ “ওই ঈমানদারদের সাথে তাদের শত্রুতার এ ছাড়া আর কোন কারণ ছিল না যে (তাদের অপরাধ) তারা সেই আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল যিনি মহাপরাক্রমশালী এবং নিজের সত্তায় নিজেই প্রশংসিত, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর রাজত্বের অধিকারী ৷ আর সেই আল্লাহ সবকিছু দেখছেন। যারা মু’মিন পুরুষ ও নারীদের ওপর জুলুম নিপীড়ন চালিয়েছে, তারপর তা থেকে তওবা করেনি, নিশ্চিতভাবেই তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব এবং আগুনে আরো তীব্রতর জ্বালা যন্ত্রনা”। (সূরা বুরুজঃ ৮-১০)

আমাদের বাংলাদেশেও ইসলাম বিরোধী তাগুতী শক্তি মিসরের কুখ্যাত জামাল আবদুল নাসের ও হোসনী মোবারকের পদাঙ্ক অনুসরন করে ধর্মহীন দেশে পরিনত করতে চায় যার কিছু আলামত ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে।

গত বছর বাংলাদেশে পাসপোর্ট অফিসে ডিজিটাল পাসপোর্ট করতে গিয়ে আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে, ওখানে পুরুষদের রাসুলুল্লাহর (স) সুন্নত সাদা লম্বা পোষাক ও মাথায় টুপি পরে ছবি তোলা নিষেধ এবং মহিলাদের আল্লাহর ফরজ নির্দেশ মেনে মাথা ও কান ঢেকে মাথায় ওড়না বা স্কার্ফ পরা নিষেধ, শুধু তাই নয় মহিলাদের ছবি পুরুষরাও তোলে, যদিও দুএকজন মহিলা থাকে সেখানে। কয়েক জনকে দেখলাম লম্বা সাদা পোষাক খুলে অন্যের কাছ থেকে রঙ্গীন সার্ট ধার নিয়ে ছবি তুলতে এবং আমাকে মাথার সুন্নতী টুপি খুলে ফেলতে বাধ্য করা হয়েছে। ব্রিটেন, আমেরিকা ও অন্যান্য অমুসলিম দেশে পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয় পত্রে পুরুষরা লম্বা পোষাক ও মাথায় টুপি পরে ছবি তুলতে পারে এবং মহিলারা মাথা ও কান ঢেকে মাথায় ওড়না বা স্কার্ফ পরে ছবি তুলতে পারে, অথচ ৯০% মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। আর যারা নিষিদ্ধ করলো তারা নামে মুসলমান এবং এ নিষিদ্ধ আইন শুধুমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের জন্য, হিন্দু ও বৌদ্ধদের জন্য নয়। কারণ ঐ দিন আমি পাসপোর্ট অফিসে দুইজন বৌদ্ধ ভিক্ষুকে গেরুয়া রঙের চাদরের মত ধর্মীয় পোষাকে দেখেছি, তাদেরকে তাদের এ ধর্মীয় পোষাকে ছবি তুলতে বাধাঁ দেওয়া হয় নাই। অনেক হাজি হজ্জের জন্য পাসপোর্ট করতে গিয়ে আমার মত একইভাবে নাজেহালের শিকার হন। তাবলীগ জামাতের এক মুরব্বী যিনি একজন আলেম ও মসজিদের ইমাম তাঁর পর্দানশীল স্ত্রী সহ হজে যাওয়ার উদ্দেশ্য পাসপোর্ট করতে গিয়ে আমার মত নাজেহাল হওয়ার কথা বর্ণনা করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। এ কোন আজব দেশে বাস করি আমরা! ফরজ হজ পালন করতে গিয়ে আল্লাহর ফরজ পর্দার নির্দেশ এবং রাসুলুল্লাহর সুন্নত পোষাক অমান্য করতে হয়। ভয়ে কেউ এ অন্যায়ের প্রতিবাদও করতে পারছে না, আর যারা প্রতিবাদ করছেন তাদেরকে রাস্তায় লাঠি পেটা করে এবং বুটের আঘাতে পদদলিত ও রক্তাক্ত করে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে ঢুকানো হচ্ছে। আমাদের লজা করা উচিৎ।

আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা, বুদ্ধিজীবিরা এবং মিডিয়াগুলিতে গনতন্ত্র রক্ষার পক্ষে এবং সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলে মুখে ফেঁনা তুলে ফেলে? মিসরে আজ গনতন্ত্র হত্যা করে সামরিক শাসন চালু হলো, এখন তাঁরা চুপ কেন? কেউ কেউ আবার খুব উল্লাস প্রকাশ করে বলে ফেললো মৌলবাদীদের পতন হয়ে শান্তির সুবাতাস বইছে!!! বাহ! ধিক তাদের গনতন্ত্র প্রেমের নমুনা! মৌলবাদীদের পতন যদি ঘটাতেই হয়, তাই বলে অগনতান্ত্রিক উপায়ে সামরিক শাসনের মাধ্যমে? জনসমর্থন নিয়ে গনতান্ত্রিক উপায়ে ভোটের মাধ্যমে মৌলবাদীদের পতন ঘটানো কি যেত না? আসলে তাদের প্রেম গনতন্ত্রের প্রতি নয়, তাদের প্রেম শয়তানের প্রতি এবং বিদ্বেষ ও শত্রুতা ইসলামের প্রতি, যদিও নামে ও পরিচয়ে তারা মুসলিম। তাই তো আল্লাহ কুরআন শরীফে বলেছেনঃ

“মানুষের মাঝে এমন অনেক লোক আছে যারা বলে, আমরা আল্লাহর উপর ও আখেরাতের উপর ঈমান এনেছি, অথচ তারা আসলে মু’মিন (মুসলমানই) নয়। তারা আল্লাহর সাথে ও ঈমানদার মুসলমানদের সাথে ধোঁকাবাজি করেছে ৷ কিন্তু আসলে তারা নিজেদেরকেই ধোঁকা দিচ্ছে যা তারা উপলব্দি করতে ( বুঝতে) পারছে না। তাদের হৃদয়ে একটি রোগ আছে, আল্লাহ সে রোগ আরো বেশী বাড়িয়ে দিয়েছেন, আর যে মিথ্যা তারা বলে তার বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি”। (সূরা বাক্বারাঃ ৮- ১০)

বিষয়: বিবিধ

১৭৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File