আমরা কি আসলে মুসলমান? [১ম পর্ব]

লিখেছেন লিখেছেন ইঞ্জিঃ আবুল হোসেন রহমতুল্লাহ ১৫ জুন, ২০১৩, ০৪:৪৩:৫২ রাত





শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

আমরা যারা নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবী করি তারা সবাই কি আসলে মুসলমান? আমাদের কি ঈমান আছে? এমন কথা বললে অনেকেই রেগে গিয়ে বলবেন এ আবার কেমন প্রশ্ন? যেহেতু আমরা কলেমা “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” মুখস্ত পড়তে পারি, আল্লাহ রাসুল আখেরাত সব কিছু বিশ্বাস করি, তাই অবশ্যই আমরা ঈমানদার এবং যেহেতু ঈমান আছে তাই নিশ্চয়ই আমরা মুসলমান। আসলে এ ধারনা কি ঠিক? তা হলে আল্লাহ কি বলেন শুনুন, কুরআন শরীফ খুললেই সূরা ফাতিহার পর সূরা বাক্বারার প্রথমেই মু’মিন মুসলমান ও কাফেরের পরিচয় দিয়ে ৮ম আয়াতে মুসলমান নামধারীদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেনঃ “মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা বলে, ‘আমরা আল্লাহর উপর ও আখেরাতের বিচার দিনের উপর ঈমান রাখি’, অথচ তারা আসলেই মু’মিন (মুসলমান) নয়”। (সূরা বাক্বারাঃ ৮)। কুরআন শরীফে আল্লাহ আরও বলেনঃ “তাদের অধিকাংশই আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে, কিন্তু তারা মুশরিক"[b]।[/b] (সূরা ইউসূফঃ ১০৬)

কি সাংঘাতিক কথা! যার ঈমান আছে তাকেই তো মু’মিন বলা হয়, আর যে মু’মিন সেই তো মুসলমান। তারপরও আল্লাহ এমন কথা কেন বললেন? উপরের ঐ দুটি আয়াতে আল্লাহ নিজেই যখন বললেনঃ আল্লাহ ও আখেরাতের উপর ঈমান আছে একথা বললেই মুসলমান হওয়া যায় না এবং যারা আল্লাহ, রাসুল ও আখেরাতের উপর ঈমান রাখে তাদের মধ্যে অধিকাংশই মুশরিক অর্থাৎ মুসলমানই না। এরপরও কি করে আমরা নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবী করতে পারি? আর কলেমা পড়া লোকদের মধ্যে অধিকাংশ লোক যদি মুশরিক হয়, তাহলে তো খুব কম লোকই মুসলমান। এ অতি কম সংখ্যক মুসলমানের তালিকায় আমরা আছি কিনা তার নিশ্চয়তা কোথায়? কিভাবে তা জানবো? অতি কম সংখ্যক মুসলমানের তালিকায় সত্যিই যদি আমরা না থাকি তা হলে আমাদের পরিনতি কি হবে? মৃত্যর পর কবরে ভয়াবহ আযাব যা কেয়ামতের আগ পর্যন্ত চলতে থাকবে এবং কেয়ামতের পর চিরকাল জাহান্নামে অতি কঠিন ও ভয়াবহ আযাব ভোগ করতে হবে যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নাই। একবারও কি আমরা ভেবে দেখেছি? আসুন আমরা জানার চেষ্টা করি কেন আল্লাহ এমন কথা বললেন।

আল্লাহর কলেমার দাওয়াত, আল্লাহর একত্ববাদ এবং মুহম্মাদ (স) কে সর্বশেষ নবী ও রাসুল মেনে নিয়ে সব অবস্থায় আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহর (স) আনুগত্যঃ

আরবী “কালাম” শব্দের অর্থ “উচ্চারন করে কথা বলা” এবং এ কালাম শব্দ থেকেই “কলেমা” শব্দ এসেছে যার অর্থ “উচ্চারন করে যা বলা হয় এমন বাক্য”। কুরআন শরীফে আল্লাহ দুই প্রকার কলেমা উল্লেখ করেছেন- (১) একটি হল “কলেমা তৈয়েবা” যার বাংলা অর্থ “উত্তম পবিত্র বাক্য”, আর একটি হল (২)“কলেমা খবিছা” যার বাংলা অর্থ “নিকৃষ্ট অপবিত্র বাক্য”। “কলেমা তৈয়েবা” আল্লাহর তৈরী সর্বোত্তম পবিত্র বাক্য এবং “কলেমা খবিছা” হল শয়তানের তৈরী সর্বনিকৃষ্ট অপবিত্র বাক্য। কুরআন শরীফে আল্লাহ বলেনঃ “তুমি কি লক্ষ্য কর না কিভাবে আল্লাহ কালেমা তাইয়েবার উদাহরন দিয়েছেন? এর উদাহরন হচ্ছে যেমন একটি পবিত্র গাছ, যার মূল বা শিকড় মজবুত ভাবে মাটির গভীরে স্থাপিত এবং শাখা-প্রশাখা আকাশে বিস্তার করে আছে, আর প্রতি মুহূর্তে নিজের রবের (পালনকর্তার) হুকুমে সে ফলদান করে। এ উদাহরন আল্লাহ এ জন্য দেন যাতে লোকেরা এর সাহায্যে জ্ঞান লাভ ও চিন্তা-ভাবনা করে। অন্যদিকে কলেমা খবিছার উদাহরন হচ্ছে, একটি নোংরা অপবিত্র গাছ, যার মূল মাটির উপর থেকে উপড়ে ফেলা হয়েছে, ফলে তার কোন স্থায়িত্ব নেই”। (সূরা ইবরাহীমঃ ২৪- ২৬)

ইসলাম বিরোধী কাফের মুশরিক ও তাদের অনুগত মুসলমান নামধারী মুনাফিকরা কলেমা তৈয়েবার অনুসারীদেরকে যারা ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক ও রাজনৈতিক সবক্ষেত্রে আল্লাহর আদেশ নিদেশ মেনে চলে তাদেরকে মৌলবাদী বলে গালি দেয়, আর আমরা কলেমার অর্থ না জানার কারনে নিজেরা লজ্জাবোধ করি এবং পাল্টা উত্তর দেই- আমরা মৌলবাদী নয়। ওদের এ মৌলবাদী গালাগালির জবাব আল্লাহ কত সুন্দর ভাবে দুইটি গাছের উদাহরন দিয়ে দুই বিপরীত ধর্মী কলেমার পার্থক্য তুলে ধরেছেন। ওরা আমাদেরকে মৌলবাদী বলে গালি দিলে আমরা লজ্জা পাব কেন? আর হীনমন্যতায় ভুগবোই বা কেন? বরং নিজেদেরকে মৌলবাদী বলে পরিচয় দিতে আমাদের ধন্য ও গর্বিত মনে করা উচিত, কারন আমরাই মূলের উপর আছি এবং আমাদের ঈমান ও আমল পবীত্র গাছের মূলের মতই মজবুত, তাই আমরা মৌলবাদী । আর ওদের কোন মূল নাই, পরগাছার মত ওদের মূল উপড়ানো, তাই ওরা অমৌলবাদী অর্থাৎ ছিন্নমূল। ঈমানদার মুসলমানদের স্বভাব চরিত্র উত্তম, তাই তারা পবীত্র এবং ফলবান বৃক্ষের মতই তাদের দ্বারা মানব জাতি উপকৃত হয়। আর যারা আমাদেরকে মৌলবাদী বলে গালি দেয় তাদের মুখ থেকে অশ্রাব্য ভাষায় যা কিছু বের হয় তা তো অপবিত্র এবং ওদের কার্যকলাপেও মিথ্যা বলা ও প্রতারনা, মিথ্যা নির্বাচনী ওয়াদা, দু্র্নীতি, সন্ত্রাস, আলেম ওলামা ও ইসলাম ভক্ত লোকদেরকে নির্যাতন ও হত্যা ইত্যাদি সব ধরনের অপবিত্র চরিত্রে ভরা, ওদের কাছ থেকে মানুষ কখনো উপকার পেতে পারে না, বরং উপড়ানো বৃক্ষে যেমন পঁচন ধরে চারিদিকে দুর্গন্ধ ছড়ায়, ওদের অপবিত্র কথা ও কাজে ঠিক তেমনি সমাজ কলুষিত হয় এবং মানুষের অনেক অপকার ও ক্ষতি হয়।

সুতরাং ইসলাম বিরোধী কাফের মুশরিক ও তাদের অনুগত মুসলমান নামধারী মুনাফিকদের মৌলবাদী গালিতে লজ্জিত ও হীনমন্যতায় না ভুগে বীর দর্পে, উচ্চ কন্ঠে ও জোড়ালোভাবে আমরা ঘোষনা করবো যা আল্লাহ কুরআন শরীফে রাসুলুল্লাহকে (স) উদ্দেশ্য করে এভাবে বলেছেনঃ “(হে নবী!) আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরন সবকিছুই বিশ্ব-প্রতিপালক একমাত্র আল্লাহরই জন্য, তাঁর কোন অংশীদার নেই। আর আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে আমি ঘোষনা করছি যে, আমি প্রথম আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পনকারী মুসলমান”। (সূরা আনআমঃ ১৪) “(হে নবী!) আপনি বলুনঃ আল্লাহর পথই একমাত্র সঠিক ও নিভুর্ল পথ এবং তাঁর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে নির্দেশ এসেছে, বিশ-জাহানের প্রভুর সামনে আত্মসমর্পন কর”। (সূরা আনআমঃ ৭১)

একইভাবে ইবরাহীম (আ) সবার সামনে প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়েছিলেন যা আল্লাহ কুরআন শরীফে এভাবে উদাহরন দিয়েছেনঃ “ইবরাহীম বললোঃ হে আমার জাতির লোকেরা! তোমরা যাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করো তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি তো একনিষ্ঠভাবে নিজের মুখ তাঁর দিকে ফিরিয়ে নিয়েছি যিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই”। (সূরা আনআমঃ ৭৮-৭৯)

আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পন করা মানে হল আল্লাহর নিকট মাথা নত করার মত নিজের খেয়াল খুশী ও ইচ্ছা অনিচ্ছা সব কিছু বিসর্জন দিয়ে নিজেকে একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছা ও নির্দেশের অধীন করে নেওয়া। সুতরাং মুসলমান হতে হলে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ঘোষনা ও আল্লাহর নিকট সম্পূর্ণ আত্মসমর্পনকারী মুসলমান হিসাবে নিজেকে সবার সামনে প্রকাশ্যে ঘোষনা দিতে হয়। একজন লোক যখন মুসলমান হয় তখন তাকে যে কলেমা মুখে উচ্চারন করে ঘোষনা দিতে হয় তা হল- "আশহাদু আন লা-ইলাহা ইল্লা আল্লাহু ওয়াদাহু লা-শরীকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ"। এই কলেমা সংক্ষেপে আমরা পড়ি- “লা-ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ”।

বাপ দাদা মুসলমান আর তাই মুসলমানের ঘরে জন্ম নিলাম বলেই মুসলমান হয়ে গেলাম এমন ধারনা সম্পূর্ন ভুল। বাস্তবে এমন লোকও দেখা যায় যে, আলেমের ঘরে জন্ম নিয়েও কোন সৃষ্টিকর্তাকে সে বিশ্বাস করে না, আবার সে যে নাস্তিক তাও ঘোষনা দেয় না এবং মারা গেলে মুসলমান পরিচয়েই তার দাফন কাফন করা হয়। তাই জন্মসূত্রে কোন দেশের নাগরিক হওয়া যায়, উত্তারাধিকার সম্পত্তি পাওয়া যায়, রাজার ছেলে রাজা কিংবা পীরের সন্তান পীর হওয়া যায়, কিন্তু জন্মসূত্রে কখনো মুসলমান হওয়া যায় না, মুসলমান হতে হলে আল্লাহর কলেমা বিশ্বাস করতে হয়, কলেমা মুখে উচ্চারন করে ঘোষনা দিতে হয় এবং কলেমা অনুযায়ী কাজ করতে হয় অর্থাৎ কলেমা অনুযায়ী নিজের জীবন গড়ে তুলে সেভাবে জীবন চালাতে হয়। আমরা যে কলেমা পড়ে মুসলমান দাবী করি সেই কলেমা “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর অর্থ এবং এ কলেমার মর্ম জানি কি? যদি জানতাম তা হলে বুঝতে পারতাম আল্লাহ কেন বললেন এমন কথা?

আরবী ‘ইলাহ’ শব্দের বাংলা অর্থ করা হয় উপাস্য অথবা মা’বুদ, কিন্তু ‘ইলাহ’ শব্দের অর্থ অনেক ব্যাপক যা বাংলায় একটিমাত্র শব্দে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ‘ইলাহ’ শব্দের অর্থ উপাস্য, মা’বুদ (প্রভূ বা মনিব), সার্বভৌম ক্ষমতাবান, সৃষ্টি কর্তা, রিযিক দাতা, আইন ও শাসন কর্তৃত্বের মালিক, আসমান ও জমিনের অধিপতি, সমস্ত রাজত্বের মালিক এভাবে আল্লাহর যতগুলি গুনবাচক নাম ও সত্ত্বা আছে সবগুলির সমন্বয় হল ‘ইলাহ’ এবং যেকোন একটি গুনবাচক নাম ও সত্ত্বার সাথে অন্যকে শিরকী (অংশীদারিত্ব) করলেই কিংবা কোন একটির সাথে কুফরী (অস্বীকার) করলেই তার আর ঈমান থাকে না। আমরা সবাই কলেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ মুখস্থ পড়ি, কিন্তু ‘ইলাহ’ শব্দের সঠিক অর্থ না জানার কারনে আমরা আল্লাহর অন্যান্য গুন ও সত্ত্বার সাথে মনের অজান্তে শিরকী ও কুফরী করে ফেলি। ব্যাপক অর্থবোধক এমন একটি শব্দের শুধু খণ্ডিত অর্থ দ্বারা কলেমার মর্ম বুঝা সম্ভব নয়।

‘ইলাহ’ শব্দের অর্থ ও ব্যাখ্যা আল্লাহ নিজেই কুরআন শরীফে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন, অন্য আর কারো ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয় না। যেমন আয়াতুল কুরসি যা আমরা বহু ফজিলতের নিয়তে অর্থ ছাড়াই পড়ি সেই আয়াতুল কুরসিতেই ‘ইলাহ’ শব্দের অর্থ ও ব্যাখ্যা আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন এবং এই আয়াতুল কুরসি কুরআন শরীফের কোন সূরায় আর কোন আয়াতে আছে তাও আমরা অনেকে জানি না। জিজ্ঞাসা করলে অনেকেই বিজ্ঞের মত বলে বসে, কেন আয়াতুল কুরসি তো একটি দোয়া। দোয়া মানে তো আল্লাহর কাছে চাওয়া, আয়াতুল কুরসিতে আল্লাহর কাছে কি চাওয়া হচ্ছে? আমিও আগে যখন মুর্খ ছিলাম তখন তাই জানতাম। কুরআন হাদীসের জ্ঞান না থাকা মানেই মূর্খ, যতই সে অন্য বিষয়ে সর্বোচ্চ ডক্টরেট ডিগ্রীধারী হোক না কেন, এমনকি নামের সাথে ডাক্তার বা ইঞ্জিনীয়ার কিংবা বিদ্যাসাগর ও অন্য যত পদবী থাক না কেন। যেমন আবু জেহেলের আসল নাম ছিল ‘আবুল হাকাম’ অর্থ ‘জ্ঞানের বাবা’ অর্থাৎ ‘মহাজ্ঞানী’ এবং ঐ যুগে আরবের সবচেয়ে বড় জ্ঞানী, বুদ্ধিজীবি ও পণ্ডিত ছিল। কিন্তু তার এ জ্ঞানের অহঙ্কারে যখন সে মহানবী যিনি ছিলেন অক্ষর জ্ঞানহীন তাঁর (স) নবুয়াত ও আল্লাহর ওহী কুরআনকে অস্বীকার করলো তখন হয়ে গেল ‘আবু জেহেল’ অর্থাৎ ‘মহামূর্খ’। এ কারনেই আমি বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা ইঞ্জিনীয়ার হলেও ক্লাশ ওয়ান পাশ করা একজন যার কুরআন হাদীসের জ্ঞান আমার চেয়ে অনেক বেশী তিনি আমার চেয়েও উচ্চ শিক্ষিত ও অনেক বড় জ্ঞানী মনে করি। কুরআন হাদীসের জ্ঞান ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে ইঞ্জিনীয়ার হয়েছি, তাই আমিও মূর্খ ছিলাম।

সূরা বাক্বারার ২৫৫ আয়াতই হল ‘আয়াতুল কুরসি’। আসুন জেনে নেই আয়াতুল কুরসিতে কি আছে? “আল্লাহ ছাড়া অন্য আর কোন ইলাহ নেই যিনি চিরন্তন (চির জীবিত) সবকিছুর ধারক (সমগ্র বিশ্ব-জাহানের দায়িত্বভার বহন করছেন)। তিনি ঘুমান না এবং তন্দ্রাও (ঝিঁমুনি) তাঁকে স্পর্শ করে না। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর। কে আছে এমন যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? যা কিছু (মানুষ ও অন্যান্য সৃষ্ট জীবের) দৃষ্টির সামনে এবং দৃষ্টির আড়ালে আছে সবই তিনি জানেন। তাঁর অসীম জ্ঞান রাশির সীমানা থেকে তারা কোন কিছুই পরিবেষ্টন বা আয়ত্ব করতে পারে না যতটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া। তাঁর মহাকর্তৃত্ব ক্ষমতা সমস্ত আকাশ ও পৃথিবী ব্যাপী। আর এগুলোর রক্ষণাবেক্ষন তাঁকে মোটেই ক্লান্ত পরিশ্রান্ত করে না। তিনিই সর্বোচ্চ ও অতি মহান”। (সূরা বাক্বারাঃ ২৫৫)

পাঠক! লক্ষ করুন উপরের ঐ ‘আয়াতুল কুরসি’তে “আল্লাহ ছাড়া অন্য আর কোন ইলাহ নেই” এভাবে ‘ইলাহ’ শব্দ দিয়ে শুরু করে “যিনি” শব্দটি যোগ করে পুরা আয়াতে আল্লাহর কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও গুনাবলী বর্ননা সহ আল্লাহ কত সহজভাবে ‘ইলাহ’ শব্দের অর্থ ও ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন। এ আয়াতে কুরসি শব্দ থাকায় আয়াতটির নাম হয়েছে ‘আয়াতুল কুরসি’। কুরসি শব্দের বাংলা অর্থ চেয়ার, আসন, গদি এবং অনেক এলাকায় বাংলায় কুরসিও বলা হয়। রাজা বাদশাহ ও ক্ষমতাসিন শাসকরা যেহেতু কুরসি বা গদীতে বসে শাসন কর্তৃত্ব চালায় তাই কুরসি বা গদী বলতে শুধু বসার আসন বুঝায় না, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বুঝায়। আর তাই এ আয়াতেও কুরসি বলতে বসার স্থান বুঝায় না, আল্লাহর মহাকর্তৃত্ব ক্ষমতা বুঝায় যিনি আকাশ ও পৃথিবী ব্যাপী সর্বময় ক্ষমতা, শাসন কর্তৃত্ব, আইন ও বিধান এবং বিচারের মালিক যে ক্ষমতাগুলি কুরআন শরীফের অন্যান্য আয়াতগুলিতে আল্লাহ আরও বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন।

এখন এ আয়াতুল কুরসিতে ‘ইলাহ’ শব্দের অর্থ যতটুকু আমরা বুঝলাম ততটুকু কি বাস্তবে আমরা মানি? প্রথম অর্থটিই তো আমরা অমান্য করে চলছি, তাও আবার রাজনৈতিকভাবে। যেমন- আয়াতুল কুরসির শুরুতে “আল্লাহ ছাড়া অন্য আর কোন ইলাহ নেই যিনি চিরন্তন (চির জীবিত), সবকিছুর ধারক (সমগ্র বিশ্ব-জাহানের দায়িত্বভার বহন করছেন)”, অথচ আমরা আল্লাহর সৃষ্টি আগুনের শিখাকে ‘শিখা চিরন্তন’ বানিয়ে যারা অগ্নি পূজা করে তাদের মতই সামনে দাড়িয়ে সম্মান ও সামরিক কায়দায় স্যালুট করি এবং রাজনৈতিক দল ও সরকার কর্তৃক আইন করে সাধারন ঈমানদার মুসলমানদেরকে তা করতে বাধ্য করা হয়। বলুন তো এতে করে আমরা যে কলেমা পাঠ করি সেই কলেমায় আল্লাহকে কতটুকু ‘ইলাহ’ মানি? আল্লাহর সাথে আগুনের শিখাকে শেরেকী (সমভাগী) করা হল নয় কি? তাতে কি ঈমান থাকলো? ঈমান যদি নাই থাকলো, কি করে নিজেকে মুসলমান দাবী করতে পারি?

এবার ঐ একই আয়াতুল কুরসিতে ‘ইলাহ’ শব্দের আর একটি অর্থ আমরা কিভাবে অমান্য করে চলছি তা বলতে চাই। আয়াতুল কুরসিতে ‘কুরসি’ শব্দ থাকায় ঐ আয়াতটির নাম হয়েছে ‘আয়াতুল কুরসি’, অথচ এই ‘আয়াতুল কুরসি’র মূল ‘কুরসি’ শব্দের অর্থই তো আমরা অমান্য করে চলছি এবং এখানেও ঐ প্রথমটির মতই রাজনৈতিকভাবে অমান্য করে চলছি। ‘কুরসি’ শব্দের অর্থ আল্লাহর মহাকর্তৃত্ব ক্ষমতা বুঝায় যিনি আকাশ ও পৃথিবী ব্যাপী সর্বময় ক্ষমতা, শাসন কর্তৃত্ব, আইন ও বিধান এবং বিচারের মালিক। আল্লাহর এ মহাকর্তৃত্ব ক্ষমতা সম্পর্কে আল্লাহ নিজেই কুরআন শরীফের অন্যান্য আয়াতগুলিতে আরও বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।

যেমন- কুরআন শরীফে আল্লাহ বলেন, “ইন্নাল্লাহা আলা কুল্লা শাইয়িন ক্বাদির” অর্থাৎ “অবশ্যই আল্লাহ সার্বভৌম (সবকিছুর উপর) ক্ষমতার মালিক”। (সূরা বাক্বারাঃ ২০ এবং কুরআন শরীফের আরো অনেক আয়াত)। অথচ আমরা রাজনৈতিক নেতাদের কথায় “জনগনই সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক” বলে আল্লাহর এই সার্বভৌম ক্ষমতাকে অস্বীকার করে কুফরী ও শিরকী করে চলছি। “জনগনই সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক” এভাবে যদি আমরা বলি তা হলে আরবীতে কি দাড়ায়? “ইন্নাল ইনসানা আলা কুল্লা শাইয়িন ক্বাদির” যা কুরআন শরীফের ঐ আয়াতটির বিপরীত। (নাউযুবিল্লাহ!) যারা “জনগনই সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক” বলেন তারা কি তবে কুরআন শরীফের ঐ আয়াত সংশোধন করতে চান? ভেবে দেখুন। এভাবে কেউ কুফরী ও শিরকী করলে সে আদৌ মুসলমান থাকতে পারে না, যদিও সে নিজেকে মুসলমান বলে দাবী করে।

তাহলে জনগনের ক্ষমতা কতটুকু? তাও আল্লাহ কুরআন শরীফে নির্ধারিত করে দিয়েছেন, কোন কিছুই আল্লাহ বাদ রাখেন নাই। আল্লাহ মানুষকে এ দুনিয়ায় তাঁর ‘খলিফা’ অর্থাৎ ‘প্রতিনিধি’ হিসাবে সৃষ্টি করে পাঠিয়েছেন। পৃথিবীতে প্রথম মানুষ আদমকে (আ) সৃষ্টির পূর্বে ফেরেস্তাদেরকে আল্লাহ তাঁর এ ইচ্ছার কথা কুরআন শরীফে এভাবে বলেছেন, “আমি পৃথিবীতে খলীফা (অর্থাৎ প্রতিনিধি) পাঠাতে চাই”। (সূরা বাক্বারাঃ ৩০)। কুরআন শরীফে আল্লাহ বলেন, “ইনিল হুকমু ইল্লা লিল্লাহি” অর্থাৎ “শাসন ও কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর (অন্য কোন মানুষের নয়)” (সূরা ইউসুফঃ ৪০)। ‘হুকুম’ শব্দের অর্থ ‘শাসন, কর্তৃত্ব, নির্দেশ’ এবং এ ক্ষমতা কোন মানুষ বা কোন দল কিংবা কোন সংসদকে আল্লাহ দেন নাই, সব আল্লাহ নিজের এখতিয়ারে রেখেছেন। অতএব জনগনের ক্ষমতা হল আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে এমন লোক ও দলকে সমর্থন ও ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসাবে যারা নিজেদের তৈরী আইন অনুযায়ী কারো উপর কর্তৃত্ব ও শাসন না করে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে আল্লাহর আইন অনুযায়ী শাসন পরিচালনা করবে।

পাঠক! লক্ষ করুন এখানে ‘আয়াতুল কুরসি’র যে ২ টি শব্দের কথা অমান্য করে আমরা শেরেকী ও কুফরী গুনাহতে লিপ্ত হয়ে ঈমান হারা হয়ে যাচ্ছি, সে দুটিই কিন্তু রাজনৈতিক। অথচ একদল বুদ্ধিজীবি ও রাজনীতিবিদরা কুরআন হাদীস এবং রাসুলুল্লাহ (স) ও তাঁর সাহাবাদের (রা) রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে না জেনেই বলেন, “ধর্ম আর রাজনীতি আলাদা, রাজনীতির ভিতর ধর্মকে টেনে আনা যাবে না”। আর আমরা সাধারন জনগন কুরআন হাদীসের জ্ঞান ছাড়া মূর্খের মত তাদের কথা বিশ্বাস করে কিভাবে ঈমান হারা হয়ে যাচ্ছি টেরও পাচ্ছি না। আমিও কুরআন হাদীসের জ্ঞান ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইজ্ঞিনীয়ারিং পাশ করার পরও ছিলাম মূর্খ এবং তাই বিশ্বাস করতাম।

পাঠক! এখন দেখলেন তো “ধর্ম আর রাজনীতি আলাদা নয়, বরং রাজনীতি ধর্মেরই অধীন”, কেননা মানুষের জীবনে খাওয়া পরা, আয় রোজগার, ব্যবসা বানিজ্য, ঘর সংসার, সমাজ রাষ্ট্র সব কিছুই চলবে ধর্মের অধীনে যা আল্লাহর নিজের কথা, কোন মোল্লা মৌলভীর কথা নয়। এ কারনেই ‘আয়াতুল কুরসি’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আয়াত এবং ‘আয়াতুল কুরসি’র অনেক ফজিলত। অথচ অর্থ না জেনে ফজিলতের আশায় মুখস্ত পড়ে যাচ্ছি, আর ওদিকে আয়াতুল কুরসি’র কথাগুলিকে অমান্য করে শেরেকী গুনাহতে লিপ্ত হয়ে ঈমান হারা হয়ে যাচ্ছি টেরও পাচ্ছি না।

সূরা হাশরের অনেক ফজিলত বয়ান করা হয় এবং ফজিলতের আশায় আমরা অনেকেই ফজরের নামাযের পর সূরা হাশর পাঠ করি। সূরা হাশরের ২২ থেকে ২৪ আয়াতেও আল্লাহ “ইলাহ” শব্দের অর্থ ও ব্যাখ্যা এভাবে বর্ননা করেনঃ “তিনিই আল্লাহ যিনি ছাড়া আর কোন “ইলাহ” নাই; তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে অদৃশ্যমান এবং প্রকাশ্যে উপস্থিত দৃশ্যমান সবকিছুই জানেন, তিনি পরম দয়ালু, অসীম দাতা। তিনিই আল্লাহ যিনি ছাড়া আর কোন “ইলাহ” নাই। তিনিই একমাত্র মালিক (বাদশাহ), অতি পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, সর্বজয়ী (সবার উপর বিজয়ী), মহাশক্তিধর হিসাবে নির্দেশ কার্যকরী করতে সক্ষম এবং সবার চেয়ে বড় ও বিরাজমান থাকতে সক্ষম, তিনি সেই সব শিরক থেকে পবিত্র যা লোকেরা তাঁর সাথে অন্যকে অংশীদার করে। তিনিই আল্লাহ, স্রষ্টা, পরিকল্পনাকারী, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের র্নিদেশ দানকারী ও রূপদানকারী, উত্তম নাম সমূহ তাঁরই। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সবাই তাঁর তাসবীহ (গুনগান) করে। তিনিই পরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী”। (সূরা হাশরেঃ ২২-২৪)

পাঠক! লক্ষ করুন আয়াতুল কুরসির মত সূরা হাশরেও ২২ তম আয়াতে “তিনিই আল্লাহ যিনি ছাড়া আর কোন ‘ইলাহ’ নাই” এভাবে ‘ইলাহ’ শব্দ দিয়ে শুরু করে আল্লাহর কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও গুনাবলী বর্ননা সহ আল্লাহ কত সহজভাবে ‘ইলাহ’ শব্দের অর্থ ও ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন। আয়াতুল কুরসিতে আল্লাহর যেসব কর্তৃত্ব ও গুনাবলী আমরা যেভাবে বাস্তব জীবনে অমান্য করে চলছি, সেই একইভাবে সূরা হাশরেও আল্লাহর কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও গুনাবলী আমরা বাস্তব জীবনে অমান্য করে চলছি। যেমন- সূরা হাশরে আমরা পড়ি “তিনি (আল্লাহ) লোকচক্ষুর আড়ালে অদৃশ্যমান এবং প্রকাশ্যে উপস্থিত দৃশ্যমান সবকিছুই জানেন”, অথচ আমরা পীর অথবা গণকের কাছে যাই অদৃশ্য বিষয় জানতে, যেমন ভবিষ্যত ও ভাগ্য জানতে এবং তারা অদৃশ্য বিষয় জানে তা বিশ্বাস করি। সূরা হাশরে আমরা পড়ি “তিনিই একমাত্র মালিক (বাদশাহ)”, যিনি সারা দুনিয়ার এবং আসমান ও জমিনের মালিক (বাদশাহ) তাঁর স্বার্বভৌমত্ব অস্বীকার করে “জনগনই স্বার্বভৌম ক্ষমতার মালিক” বলে বিশ্বাস করি এবং যারা আল্লাহর নাযিল করা কুরআনের আইন ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিজেদের তৈরী আইন দ্বারা রাস্ট্র ও বিচার চালায় তাদেরকে সমর্থন ও ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসাই। সূরা হাশরের শেষে আমরা পড়ি “আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সবাই তাঁর (আল্লাহর) তাসবীহ (গুনগান) করে”, অথচ আমরা আল্লাহর গুনগান না করে দলের প্রতিষ্ঠাতা মৃত নেতার গুনগান করতে থাকি, কিংবা কোন মৃত পীর বুজুর্গের গুনগান করতে থাকি। এভাবে আমরা ফজিলতের নিয়তে সূরা হাশর পাঠ করে আল্লাহর কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও গুনাবলী বাস্তব জীবনে অমান্য করে চলছি এবং আল্লাহর কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও গুনাবলীর সাথে অন্যকে অংশীদার করে শিরক করে চলছি, অথচ ঐ সূরা হাশরেই পড়ি “তিনি সেই সব শিরক থেকে পবিত্র যা লোকেরা তাঁর সাথে অন্যকে অংশীদার করে”। পাঠক! লক্ষ করুন আয়াতুল কুরসির মত সূরা হাশরেও আল্লাহর যে কয়টি কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও গুনাবলী বাস্তব জীবনে অমান্য করে আমরা শেরেকী ও কুফরী গুনাহতে লিপ্ত হয়ে ঈমান হারা হয়ে যাচ্ছি, তার কয়েকটিই হল রাজনৈতিক।

ফজিলতের নিয়তে আয়াতুল কুরসি ও সূরা হাশর পাঠ করে এভাবে আল্লাহর কলেমার সাথে এবং আল্লাহর কিতাব কুরআনের আয়াতের সাথে এমন দ্বিমুখী আচরন করার পর কি করে ফজিলত লাভের আশা করা যায়? আর একারনেই কুরআন শরীফে সূরা ফাতিহার পর সূরা বাক্বারার প্রথমেই মু’মিন মুসলমান ও কাফেরের পরিচয় দিয়ে ৮ম আয়াতে মুসলমান নামধারীদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেনঃ “মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা বলে, ‘আমরা আল্লাহর উপর ও আখেরাতের বিচার দিনের উপর ঈমান রাখি’, অথচ তারা আসলেই মু’মিন (মুসলমান) নয়”। (সূরা বাক্বারাঃ ৮) আল্লাহ আমাদেরকে মাফ করুন, তিনি যেন আমাদেরকে ঐ দলে না ফেলেন।

আল্লাহ সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক একথা বিশ্বাস করার সাথে সাথে তৌহিদ অর্থাৎ আল্লাহর একত্ববাদকে বিশ্বাস করা জরুরী। আল্লাহর একত্ববাদকে বিশ্বাস না করা পর্যন্ত ঈমান কবুলই হবে না। আল্লাহর একত্ববাদ অর্থ আল্লাহ একক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোন তুলনা বা সমতুল্য কেউ নাই এবং তাঁর কোন শরীক (অংশীদার বা ভাগীদার) নাই। কিভাবে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করতে হবে তা আল্লাহ কুরআন শরীফে সূরা ইখলাসে এভাবে বর্ণনা করেছনঃ “বল, তিনি আল্লাহ যিনি একক , আল্লাহ কারোর উপর নির্ভরশীল নন, তাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিনি কারো সন্তান নন এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই”। (সূরা ইখলাসঃ ১-৪)

আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করার পর আল্লাহর সত্ত্বা, ক্ষমতা ও গুনবলীর সাথে অন্যকে শিরক (অংশীদার, ভাগীদার) করলে আর ঈমান থাকে না। কারন তৌহিদের বিপরীত হল শিরক। এমন কি আল্লাহকে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মেনে নিয়ে সামান্য এক ফোঁটা ক্ষমতার মালিক অন্যকে মনে করলেও আল্লাহর সাথে শিরক করা হয়। একটা উদাহরন দিয়ে বিষয়টা বুঝাতে চাই- যারা আরব দেশগুলিতে বিভিন্ন কোম্পানীতে চাকরী করেন তারা দেখবেন আরবীতে কোম্পানীকে ‘শিরকা’ বলা হয় যার অর্থ অংশীদারি প্রতিষ্ঠান যেখানে একের অধিক কয়েকজন মালিক থাকেন এবং এ মালিকদের সবার শেয়ার সমান নাও থাকতে পারে, ১০ জন মালিকের মধ্যে একজন মালিকের শেয়ার ৯৯% এবং বাকী ৯ জনের ১% শেয়ার থাকলে প্রত্যেকর ভাগে ০.১% যা প্রথম জনের তুলনায় অতি সামান্য। এ অবস্থায় প্রথমজন যার শেয়ার ৯৯% তাকে ঐ কোম্পানীর পুরা একক মালিক কি বলা যায়? ঐ কোম্পানীর সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী কি তাকে বলা যায়? ঐ মালিকের ৯৯% শেয়ারের সাথে অন্য ১০ জনের সামান্য শেয়ার শিরক (অংশীদার, ভাগীদার) করার ফলেই সে আর ঐ কোম্পানীর একক ও একচ্ছত্র মালিক হিসাবে স্বীকৃতি পেতে পারে না।

চলবে >>> [পরবর্তি পর্ব-২]

বিষয়: বিবিধ

৪৪৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File