ক্ষুধা
লিখেছেন লিখেছেন আত্নসমর্পণ ১০ মার্চ, ২০১৩, ০৭:৪৯:৪০ সন্ধ্যা
আমার বড় আপা একটা গ্রামে প্রাইমারী স্কুলে পড়ায়।ও একদিন আমাকে ওর এক ছোট ছাত্রীর কথা বলল।ওর সে ছাত্রী সেদিন ক্লাসে পড়া করে আসেনি।আপা জিজ্ঞাস করল যে,তুমি বাসায় পড়নি কেন? ছাত্রী উত্তর দিল: ''ম্যাডাম,কাল সারাদিন কিছু খাইনি তো,তাই ক্ষুধাতে পড়তে পারিনি''। আপা আমাকে বলল, জানিস, এই কথা শুনে আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি।সমস্ত শরীর শক্তিহীন হয়ে এলো।টিচার্স রুমে যেয়ে অনেকক্ষণ ঝিম ধরে বসে থাকলাম।এই দুধের শিশু বলে কি? এইটুকন মেয়ে কাল সারাদিন খেতে পায়নি?!
এরকম অনেক নির্মম কষ্টকর সত্য ছড়িয়ে আছে আমাদেরই চারপাশে।যখন এই সত্য গুলো আমার চোখের সামনে ভাসে আমার আর কিছু ভাল লাগেনা। এই দেশে অনেক মা আছেন যিনারা তাঁদের সন্তানদেরকে পুরো বৎসরে গোশত খাওয়াতে পারেন না,তাই কুরবানির ঈদে বোরখা গায়ে দিয়ে বেড়িয়ে পড়েন বাড়ি বাড়ি থেকে গোশত ভিক্ষার জন্য।বোরখা পড়েন লোক লজ্জার ভয়ে।এ লজ্জা কি ঐ মায়েদের নাকি আমার মত এই সম্ভ্রান্তদের ভেবে পাই না। আমি এও ভেবে পাই না যে,এই মায়েরা তো তাও বোরখা পড়ে এ সমাজ থেকে লজ্জা বাঁচালো কিন্তু আমি কাল বিচারের দিন কোন বোরখা পড়ে বিধাতার সামনে দাঁড়াব?
এমন অনেক শিশু আছে যারা মায়ের ভাত রান্না দেখলে এমন খুশি হয় যেমন আমাদের সন্তানরা কোন বিশেষ শখ পূরণ হলে খুশি হয়। এগুলো সবই বাস্তব সত্য।একটু চোখ মেললেই আমরা এই নির্মম,মানবতার জন্য চরম লজ্জাকর সত্য গুলিকে আমাদের আশেপাশেই দেখতে পারবো।আমরা এমন এক পৃথিবীতে বাস করছি যেখানে প্রতি ৪ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ শুধুমাত্র ক্ষুধার কারণে মারা যাচ্ছে।অর্থাৎ প্রতি মিনিটে ১৫ জন।একবার ভাবুন এই লিখাটা পড়তে এই পৃথিবীতে কয়জন মানুষ না খেতে পেরে মারা গেল? আর এও ভাবুন যে , এই মানুষগুলির কোন দায়ভার কি কোনভাবেই আমাদের উপর আসে না? শেষ করছি আমার পছন্দের এক কবির তার কবিতার শেষের দু'টি লাইন দিয়ে-
"এ পৃথিবীর একটি শিশুও যদি অনাহারে মারা যায়
তার দায়ভার আমার কাঁধেও বর্তায়"
বিষয়: বিবিধ
১৪৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন