তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ হরতালে গাড়ী ভাংচুর ইসলাম সম্মত কিনা?

লিখেছেন লিখেছেন আত্নসমর্পণ ০৪ মার্চ, ২০১৩, ০৭:৪৮:২৪ সন্ধ্যা

আপনি আমার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন।আমি মসজিদ থেকে বের হতেই আপনি আমাকে ধরে ফেললেন।মিটিমিটি হেসে প্রশ্ন করলেন: ওরা নাকি ইসলামী দল! আচ্ছা হরতালের সময় গাড়ি ভাংচুর কি ইসলাম সম্মত?

আমার ইসলামের প্রতি ভালোবাসা আছে সত্য।কিন্তু আমার অতটা জ্ঞান নেই।আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে আপনাকে এ প্রশ্নের উত্তর দিবার আগে চলুন ঘুরে আসি আমাদের প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগের এক ঘটনা থেকে।

দ্বিতীয় হিজরীর রজব মাস। নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী নাখলা নামক স্থানে আটজনের একটি বাহিনী পাঠান।কুরাইশদের গতিবিধি ও তাদের ভবিষ্যৎ সংকল্প সম্পর্কে তথ্যাদি সংগ্রহ করার দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পণ করেন।যুদ্ধ করার কোন অনুমতি তাদেরকে দেননি।কিন্তু পথে তারা কুরাইশদের ছোট এক বাণিজ্যিক কাফেলার মুখোমুখি হয়।কোন এক কারণে এই কাফেলার সাথে সাহাবীদের সংঘর্ষ হয়।এতে কাফেলার একজন নিহত হয়।এ সময়টি ছিল রজব মাস।রজব মাস ছিল হারাম মাস।এ মাসে যুদ্ধ করা এবং মানুষ হত্যা করা নিষিদ্ধ ছিল।এ ঘটনায় কুরাইশরা,ইহুদি ও মুনাফিকরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে থাকে এই বলে যে, হাঁ,এরা বড়ই আল্লাহওয়ালা হয়েছে।অথচ হারাম মাসেও রক্তপাত করতে কুণ্ঠিত হয় না।তারা নবীকে প্রশ্ন করে বসেছিল,নিষিদ্ধ মাসে যুদ্ধ করার অনুমতি আল্লাহ দিয়েছেন কি? তখন আল্লাহ সুবহানুতালা সুরা বাকারার ২১৭ নং আয়াত নাজিল করে দিলেন।চলুন দেখি আল্লাহ বারি তালা কি বললেন এই আয়াতে।

"লোকেরা তোমাকে হারাম মাসে যুদ্ধ করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছে।বলে দাও: ঐ মাসে যুদ্ধ করা অত্যন্ত খারাপ কাজ।কিন্তু আল্লাহর পথ থেকে লোকদেরকে বিরত রাখা, আল্লাহর সাথে কুফরী করা, মসজিদে হারামের পথ আল্লাহ-বিশ্বাসীদের জন্য বন্ধ করে দেয়া এবং হারাম শরীফের অধিবাসীদেরকে সেখান থেকে বের করে দেয়া আল্লাহর নিকট তার চাইতেও বেশী খারাপ কাজ।আর ফিতনা হত্যাকাণ্ডের চাইতেও গুরুতর অপরাধ।"

এ আয়াতে তাদের এ আপত্তির জবাব দেয়া হয়েছে।জবাবের সার নির্যাস হচ্ছে: হারাম মাসে লড়াই করা নিঃসন্দেহে বড়ই গর্হিত কাজ।কিন্তু এর বিরুদ্ধে আপত্তি করা তাদের জন্য শোভা পায় না, যারা শুধুমাত্র এক আল্লাহর ওপর ঈমান আনার কারণে তেরো বছর ধরে তাদের অসংখ্য ভাইয়ের ওপর জুলুম নির্যাতন চলিয়ে এসেছে।তাদেরকে এমনভাবে বিধ্বস্ত করেছে যে,তারা স্বদেশ ভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে।তারপর এখানেই তারা ক্ষান্ত হয়নি।তাদের ঐ সব ভাইদের মসজিদে হারামে যাবার পথও বন্ধ করে দিয়েছে।অথচ মসজিদে হারাম কারোর নিজস্ব সম্পত্তি নয়।কাজেই এ ধরনের কলঙ্কিত চরিত্রের অধিকারী জালেমরা কোন মুখে অন্যায় অন্যায়,হারাম মাসে যুদ্ধ করা পাপ পাপ বলে হৈ চৈ করে বেড়াচ্ছে।

এবার ফিরি আপনার প্রশ্নে।হা, নিরীহ ,নিরাপরাধ মানুষের গাড়ি ভাংচুর করা অবশ্যই ইসলাম সম্মত না।যদি তারা এমন কাজ করে থাকে তবে তারা অবশ্যই অন্যায় করেছে।কিন্তু

- আল্লাহ এবং তাঁর রসূল কে অশ্লীল ভাষায় গালি দেওয়া এর থেকে বড় অন্যায়

-আর আল্লাহ এবং তাঁর রসূল কে গালি দেওয়া সেই কুলাঙ্গারকে প্রশ্রয় দেয়া, তাকে 'শহীদ' উপাধি দেওয়া এর থেকে বড় অন্যায়

-সংবিধান থেকে আল্লাহর নাম তুলে দেওয়া এর থেকে বড় অন্যায়

-৯০% মুসলিম দেশে ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম থেকে সরিয়ে আল্লাহতে অবিশ্বাসী* ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ চাপিয়ে দেয়া এর থেকে বড় অন্যায়

-দেশে বিচারের নামে প্রহসন সাজানো এর থেকে বড় অন্যায়

-দেশকে তথাকথিত  পক্ষের শক্তি বিপক্ষের শক্তিতে বিভক্তি করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশকে পিছিয়ে দেবার ষড়যন্ত্র করে দেশ কে নৈরাজ্য আর ফিতনার দিকে ঠেলে দেওয়া এর থেকে বড় অন্যায়

-এর চেয়ে বড় অন্যায় নিরীহ কিশোরদের গুলি করে মেরে ফেলা

-এক প্রতিবাদী পক্ষকে দিনের পর দিন রাস্তা বন্ধ করে চিল্লাপাল্লা করার অবাধ সুযোগ দান আর অন্য প্রতিবাদী পক্ষকে গুলি করে মেরে ফেলা অবশ্যই এর থেকে বড় অন্যায়

-এক আবুলের জন্য পদ্মা সেতু ডুবিয়ে দেওয়া এর থেকে বড় অন্যায়

-শেয়ার বাজারে কারসাজি করে হাজার হাজার মানুষকে নিঃস্ব করা এর থেকে বড় অন্যায়

-কলেজ ভার্সিটিতে সন্ত্রাসী করা, হোস্টেলে হোস্টলে,পথে-ঘাটে নারীদেরকে ধর্ষণ করা এর থেকে বড় অন্যায়

-বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে হত্যা করা এর থেকে বড় অন্যায়

-জাতির বিবেক সাংবাদিক দম্পতি সাগর রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া এর থেকে বড়ে অন্যায় ............কয়টা বড় অন্যায়ের কথা বলব বলেন?আপনি কি এইসব বড় অন্যায়কারী অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পেরেছেন? পেরেছেন কখনো জিজ্ঞেস করতে এই কাজগুলি ইসলাম সম্মত কিনা? আপনি রসুলের সেই হাদিস তো সম্ভবত জানেন। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-

"জালিম স্বৈরাচারী শাসকের সামনে হক কথা বলা সর্বোত্তম জিহাদ।" **


আপনি কি এই বড় অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পেরেছেন?কিম্বা যারা প্রতিবাদ করে বা করছে তাদের কি আপনি অন্তত সমর্থনটুকও দিয়েছেন? আপনি তা পারেন নি-কেননা আপনি জালিমদের গোলাম,কেননা আপনি কাপুরুষ।

পাদটীকাঃ

* ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ বা সেকুলারিজম(Secularism): ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদকে ইংরেজিতে সেকুলারিজম(Secularism) বলে। এই সেকুলারিজ আসলে কি? এই সেকুলারিজম শব্দটা প্রথম ব্যবহার করেন ব্রিটিশ লেখক জর্জ জ্যাকব হলিওক।তিনি এই সেকুলারিজম(Secularism) কে সংজ্ঞায়িত করেন নিম্নোক্তভাবে:

Secularism is a code of duty pertaining to this life, founded on considerations purely human, and intended mainly for those who find theology indefinite or inadequate, unreliable or unbelievable. Its essential principles are three: (1) The improvement of this life by material means. (2) That science is the available Providence of man. (3) That it is good to do good. Whether there be other good or not, the good of the present life is good, and it is good to seek that good. ---Source:en.wikipedia.org/wiki/Secularism

উপরের এই লাইনকে বিশেষ করে লক্ষ্য করুন। "intended mainly for those who find theology indefinite or inadequate, unreliable or unbelievable"-অর্থাৎ সেকুলারিজম প্রধানত তাদের জন্যই যারা ধর্মকে অনিশ্চিত অথবা অনুপযুক্ত, অনির্ভরযোগ্য অথবা অবিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে।

ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত ধর্ম।তাই কেউ যদি এই ধর্মকে অনুপযুক্ত, অনির্ভরযোগ্য, অবিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে তাহলে তো সে আল্লাহকেই অবিশ্বাস করল।তাই আমি বলেছি 'আল্লাহতে অবিশ্বাসী ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ'।

**হযরত আবু আব্দুল্লাহ তারেক বিন শিহাব রা বর্ণনা করেন,একদা রাসুলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সওয়ারীর পাদানিতে(রেকাবে) পা রাখছিলেন ঠিক এমন সময় এক ব্যক্তি তাঁর কাছে প্রশ্ন করলো: " সর্বোত্তম জিহাদ কোনটি?' তিনি বললেন: 'জালিম স্বৈরাচারী শাসকের সামনে হক কথা বলা'(সর্বোত্তম জিহাদ)। --- রিয়াদ-উস-সালেহীন, প্রথম খন্ড, হাদিস নং ১৯৫ ।

বিষয়: বিবিধ

১৫৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File