আমরা সৃষ্টিকর্তাকে ধরে ফেলেছি !
লিখেছেন লিখেছেন আত্নসমর্পণ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৯:০৬:২৩ রাত
যা কিছু ঘটে গেছে তাই ইতিহাস।ইতিহাস নিয়ে সৃষ্টিকর্তা তর্ক করতে পারেন না কিন্তু আমরা মানুষেরা তা পারি। এইখানটায় আমরা সৃষ্টিকর্তাকে পরাজিত করেছি।তিনি তর্ক করতে পারেন না কিন্তু আমরা পারি।তবু সৃষ্টিকর্তা এখানে না পেরেও আমাদের থেকে শ্রেষ্ঠ রইলেন! কেননা প্রকৃত বিষয় তো এই যে, সৃষ্টিকর্তা ইতিহাসকে নির্ভুল, নিশ্চিত রূপে জানেন তাই ইতিহাস নিয়ে উনার তর্ক করার প্রয়োজনই পড়ে না। আমরা মানুষেরা ইতিহাসকে নির্ভু্ল, নিশ্চিত রূপে জানিনা; তাই প্রকৃত ইতিহাস নির্ণয় করতে গিয়ে আমাদের ভিতর পক্ষ বিপক্ষের সৃষ্টি হয়-তর্ক শুরু হয়।এই তর্ক আরো জটিল আকার ধারণ করে যখন ঘটে যাওয়া ইতিহাসের সাথে বর্তমান রাজনৈতিক লাভ লোকসানের একটা সম্পর্ক থাকে। রাজনৈতিক সম্পর্ক থাক আর ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাক-যখন ইতিহাস তর্কে দুপক্ষের সৃষ্টি হয় তখন সঠিক ইতিহাসে পৌঁছানোর পথ কি??
আপনি কি এ প্রশ্নের উত্তরে এটাই বলবেন না যে: ঠিক আছে, পক্ষ বিপক্ষকে তাদের তথ্য, উপাত্ত, প্রমাণাদি উপস্থাপনের অবাধ নিরপেক্ষ সুযোগ দেওয়া হোক এবং এই প্রমাণাদি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য, বিচার বিশ্লেষণের জন্য বিজ্ঞ নিরপেক্ষ স্বাধীন একজন উপযুক্ত বিচারক নিয়োগ করা হোক যিনি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ বিচার-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সঠিক পক্ষকে চিহ্নিত করবেন - এটাই কি সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর একমাত্র সঠিক পথ নয়??
আমরা যারা এখন ছাত্র ছাত্রী, তরুণ-তরুণী কিম্বা যুবক যুবতি-আমাদের কাছে ১৯৭১ সাল ইতিহাস।
আমরা ১৯৭১ সালে উপস্থিত ছিলাম না।আর উপস্থিত হবার সুযোগও ছিল না কেননা তখনো আমরা এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করিনি।তাই ১৯৭১ সালে ঠিক কে বা কারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে-এ প্রশ্ন আমাদের কাছে ইতিহাস। এক পক্ষ বলছেন যে, অমুক অমুকই এই অপরাধ করেছে-অন্যপক্ষ প্রতিবাদ করে বলছেন যে, না এ অভিযোগ মিথ্যা। শুরু হয়েছে তর্ক। আমরা তরুণ প্রজন্ম অবাক! আমরা সৃষ্টিকর্তা নই।আর অতীতে উঁকি দিয়ে দেখার মত 'টাইম মেশিন' এখনো আমাদের বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারেন নাই। তাই আমাদের সঠিক পক্ষকে বাছাই করার জন্য নিরপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়ার কোন বিকল্প নেই।আমরা সে কাজ শুরু হতেও দেখেছিলাম।
গঠন হল ' আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল'।ভাল লেগেছিল এই ভেবে যে, আমরা জানতে পারব প্রকৃত অপরাধী কারা? প্রকৃত অপরাধী চিহ্নিত করার জন্য স্বচ্ছ নিরপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়ার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু এই ট্রাইব্যুনাল কি এর স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে পেরেছে?? এ প্রশ্নের উত্তর নিজেরাই খুঁজে নিন।আপনি এ উত্তর উপেক্ষা করতে পারেন না-এ প্রশ্নের উত্তর আপনাকে খুঁজে নিতেই হবে কেননা আজ সুযোগ এসেছে প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করার-সময় এসেছে আমাদের অজস্র ভাই, বাবা,মা,বোনদের রক্ত আর নির্যাতনের বদলা নেবার।আর প্রকৃত অপরাধী চিহ্নিত করার একমাত্র পথ-স্বচ্ছ নিরপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়া।
১৯৭১ সালের ইতিহাসের সাথে রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত। কেননা ঐ জঘন্য অপরাধীদেরকে আমরা বাংলার সকল মানুষ মনে প্রাণে ঘৃণা করি। এই জঘন্য অপরাধ যদি কোন রাজনৈতিক দলের উপর প্রমাণিত হয় তবে বাংলার মানুষ সে রাজনৈতিক দলকে বয়কট করবে।এ কথা সবার জানা।বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনীতিবিদের চরিত্র বিশ্বাসযোগ্য নয়। ক্ষমতাশীল রাজনীতিবিদরা দেশের সকল ক্ষেত্রে( এমন কি বিচার বিভাগেও) অবৈধ হস্তক্ষেপ করে নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যে-এ আমরা বুঝার বয়স থেকেই দেখে আসছি। এরা নিজেদের স্বার্থে দিনকে রাত আর রাতকে দিন করতে পারে।
তাই, আজ আমাদের চোখ, কান , বিবেক সজাগ রাখতে হবে যেন কেউ আমাদের ধর্মের অনুভূতির অপব্যবহার করতে না পারে ঠিক তেমনি কেউ যেন আমাদের ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের অনুভূতিরও অপব্যবহার করতে না পারে।
পত্র পত্রিকায় তরুণ সমাজের নৈতিক অধঃপতনের খবর পড়তে পড়তে ঘেন্না ধরে গিয়েছিল এই পত্র পত্রিকার উপর।আরে ! এ অধঃপতনের অপবাদ তো আমার কাঁধেও চাপে কেননা আমিও যে একজন তরুণ।কিন্তু এখন ভাল লাগে।কয়দিন হলো পত্রিকা খুললেই একটা প্রধান খবর আমাকে খুব গর্বিত করে। নৈতিক অধঃপতনে নিচের দিকে গেলেও জ্ঞানের ঊর্ধ্ব গতিতে আজ আমরা সৃষ্টিকর্তাকে ধরে ফেলেছি! সৃষ্টিকর্তা নির্ভুল নিশ্চিত রূপে ঘটে যাওয়া বিষয় ইতিহাসকে জানেন।তাই ইতিহাস নির্ণয়ে উনার কোন ট্রাইব্যুনালের দরকার পড়ে না-প্রশ্ন ওঠে না স্বচ্ছ নিরপেক্ষ ট্রাইব্যুনালের কেননা উনি নিশ্চিত ভাবেই জানেন যে ঘটনা কি ঘটেছে,ঠিক কে বা কারা ঘটিয়েছে?? আজ সৃষ্টিকর্তার মত আমরা তরুণ তরুণীরাও নিশ্চিত ভাবেই জেনে ফেলেছি যে, ঠিক কারা কারা মানবতা-বিরোধী অপরাধ করেছে! আর তাই আমরা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার-প্রক্রিয়া তথা ট্রাইব্যুনালের গুরুত্ব ও দাবি ভুলে গিয়ে মাঠে নেমেছি।আর বলে চলেছি নাম ধরে ধরে," অমুকের ফাঁসী চাই'' অমুক অমুককে ফাঁসী না দিলে ঘরে ফিরব না"।
আজ আমাদের চোখ, কান , বিবেক সজাগ রাখতে হবে যেন কেউ আমাদের ধর্মের অনুভূতির অপব্যবহার করতে না পারে ঠিক তেমনি কেউ যেন আমাদের ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের অনুভূতিরও অপব্যবহার করতে না পারে।
সময় এসেছে জেগে ওঠার।'কান নিয়েছে চিলে' তাই ছুটো চিলের পেছনে।চিলের পেছনে ছুটার আগে একবার ভাল করে দেখে নিন যে, সত্যই চিলে কান নিয়েছে কিনা?
বিষয়: বিবিধ
১২৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন