সময় এসেছে ইতিহাসে নাম লিখাবার
লিখেছেন লিখেছেন আত্নসমর্পণ ১৩ মে, ২০১৩, ১০:০২:২৬ রাত
Know thyself - নিজেকে জানো।শোনা মাত্রই বলে ফেললাম- Man, This Is Man । জিজ্ঞাস করলাম- কে বলেছেন এই কথা? উত্তর পেলাম-সক্রেটিস বলেছেন।প্রাচীন গ্রীসের সক্রেটিস।মনে ভাবলাম,সে যে দেশেরই হোক না কেন,এমন কথা যিনি বলেছেন তাকে তো খুঁজে বের করতেই হবে।তিনি বেঁচে নেই সত্য কিন্তু তার চিন্তাধারা,তার বলে যাওয়া কথা তো আছে।
সক্রেটিস পৃথিবীতে খুব পরিচিত এক নাম।তাই খুঁজে পেতে খুব কষ্ট হোল না সক্রেটিসকে। খ্রিস্টপূর্ব ৪৭০ অব্দে গ্রিসের এথেন্স শহরে সক্রেটিসের জন্ম।অনেক ভাল ভাল কথা বলে গিয়েছেন এই জ্ঞানী ব্যক্তি।সবচেয়ে বড় কথা উনার অনেক কথাই আমার মনে ধরেছে। আর মনে ধরা মানেই তো ভালবাসার সূচনা।ভালোবেসে ফেলেছি সক্রেটিসকে।
মৃত্যু এক অনিবার্য সত্য-আমরা জানি। প্রিয়জনের সেই মৃত্যু যদি হয় স্বাভাবিক মৃত্যু তাহলে খুব বেশি কষ্ট লাগে না মনে।কষ্ট লাগে কিন্তু সে কষ্ট সহ্য করা যায়। কিন্তু প্রিয় মানুষকে যদি কেউ অন্যায়ভাবে হত্যা করে তাহলে মন বিদ্রোহী হয়ে ওঠে,এক ভীষণ কষ্টে সমস্ত সত্তা প্রতিবাদ করে ওঠে।আগ্নেয়গিরির মত বিস্ফোরিত হতে মনে চায় তখন। আর সক্রেটিসের মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল না।উনাকে হত্যা করা হয়েছিল।তখনকার শাসক শ্রেণীর ইন্ধনে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিচারের নামে প্রহসনে সক্রেটিসকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।দুঃখ ভরা মনে, তাই আমি প্রায়ই ভাবি যে,আমি যদি সক্রেটিসের সময় বেঁচে থাকতাম তাহলে এই অন্যায় মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদ অবশ্যই করতাম।কিছুতেই এমন জ্ঞানী এক ব্যক্তিকে হত্যা করতে দিতাম না। সক্রেটিসের শহর এথেন্সবাসীর ওপর অনিচ্ছাকৃত-ভাবেই কিছু ঘৃণা জন্ম নিয়েছে মনে মনে।সক্রেটিসকে হত্যা করা হলো আর এথেন্স-বাসী কোন কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারল না! এ কেমন কথা ! মনের কষ্ট মনেই রইল।
এবার জীবনের আর এক ঘটনা বলি।
সেদিন এক মাসিক পত্রিকা পড়ছিলাম। পত্রিকায় ছোট ছোট অনেক লিখা ছাপা হয়েছিল। কিছু আমাদের দেশের লেখক কিছু দেশের বাহিরের। পড়তে পড়তে কয়েকটা লাইন পড়ে থমকে দাঁড়ালাম।লাইনগুলি ছিল-
"খাঁটি ইসলামি আদর্শের সাথে অন্যান্য আদর্শের সংমিশ্রণের ফলে যে মতবাদ রচিত হয় তা ইসলামি বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলে।"
কি অসাধারণ কথা ! মনে ধরল কথাটা। ভাল লেগে গেল লেখককে। লিখাটা লিখেছিলেন সায়েদ কুতুব শহীদ।খুঁজে বের করলাম কে এই সায়েদ কুতুব।পেলাম মিশরের লেখক ইনি।লাইব্রেরীতে উনার যে কয়টা বই ছিল কিনে নিয়ে এলাম।মুগ্ধ হয়ে পড়লাম উনার লিখা The Milestone, ফি যিলালিল কুর-আন, আগামী বিপ্লবের ঘোষণা পত্র......কুর-আনের নতুন এক রূপ দেখলাম উনার লিখা 'আল কুর-আনের শৈল্পিক সৌন্দর্য' বইয়ের পাতায় পাতায়।নব রূপে,নতুন আঙ্গিকে কুর-আন তার আরেক সৌন্দর্যের অনুপম ছবি একে দিল মনের ক্যানভাসে।এ অনুপম ছবির সন্ধানদাতা সায়েদ কুতুব।
আমার শরীরের প্রতিটি রক্ত বিন্দু জ্বলে ওঠে যখন মনে পড়ে এই অসাধারণ মানুষটাকেই তৎকালীন শাসকশ্রেণী ফাঁসী দিয়ে শহীদ করে দিয়েছে।বিনা অপরাধে।সত্য প্রচারের অপরাধে (?)।আমার কেবলই মনে হয়- ওহ, আমি যদি তখন বেঁচে থাকতাম তাহলে চিৎকার করে এই অবিচারের প্রতিবাদ করতাম।প্রয়োজন হলে শরীরের সমস্ত রক্ত রাজপথে ঢেলে দিতাম প্রতিবাদের মিছিলে।তবু অবশ্যই আমি প্রতিবাদ করতাম।আমি অভিযোগ করে বলি তখন মিশরের ইখওনুল মুসলিমিনের ভাইয়েরা কি করেছেন যখন সায়েদ কুতুবকে ফাঁসী দেওয়া হল ??তারা কি জীবনের ভয়ে ভীত ছিলেন??
স্যার আর্থার কোনান ডায়েল বলে গিয়েছেন-ইতিহাস ঘুরে আসে।ইতিহাস আজ সত্যই ঘুরে এসেছে।যে অত্যাচারের বর্ণনা শুধু বইয়েই পড়েছি কিন্তু চোখে দেখিনি,যে অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন সক্রেটিস,সায়েদ কুতুব,হাসানুল বান্না........আজ আমার জীবনকালেই,আমার দেশে,আমার পাশেই সেই একই রকম অত্যাচার আবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে।একদম চোখে দেখতে পাচ্ছি সে অত্যাচার।মুখে নির্মমতার বীভৎস হাসি নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে নিরীহদের, ফাঁসীতে ঝুলিয়ে দেবার আয়োজন চলছে জ্ঞানের বাহকদের।সক্রেটিস,সায়েদ কুতুবের অত্যাচারের কথা শুনে মনে সৃষ্ট সেই গভীর অনুভূতি মনে করে তাই এখন মিটি মিটি হাসি।বুঝতেই পারছেন যে হাসার যথেষ্ট কারণও আছে।ইতিহাস ঘুরে এসেছে।ইতিহাস আমাকে টেনে এনে দাঁড় করিয়েছে কথার প্রমাণ দিবার জন্য।সক্রেটিসের মৃত্যুতে,সায়েদ কুতুবের মৃত্যুতে আমি সত্যই কোন প্রতিবাদ করতাম কিনা-যদি বেঁচে থাকতাম তাদের যুগে-পরীক্ষা দিবার সময় এসেছে আমার। ইতিহাস তার কলম নিয়ে বসে পড়েছে-বসে পড়েছে আমার,আমার দেশবাসীর ইতিহাস লিখার জন্য।সিদ্ধান্ত এখন আমার হাতে, আমাদের হাতে-ইতিহাসের পাতায় আমরা কিভাবে বেঁচে থাকতে চাই.........
বিষয়: বিবিধ
২১৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন