প্রেম যেন এমনই হয় ৪৭
লিখেছেন লিখেছেন প্রগতিশীল ০৫ মে, ২০১৫, ০২:৫৭:০৮ দুপুর
একটা অন্যরকম দিন কাটলো রতন-সঞ্চিতার। শ্বশুর বাড়িতে বাবা-মাকে এভাবে কল্পনা করেনি সঞ্চিতা। এ প্রাপ্তি তার কাছে অনেক বড়। যদিও রতন কিছুটা বিষন্ন ছিল কারণ সে বুঝতে পেরেছে তাদের সাথে কুরবানির পশুর মত আচরণ করা হচ্ছে। মানে কুরবানি দেয়ার আগে পশুকে যেভাবে অতি আদরযত্ন করা হয় তাদেরও ঠিক তেমনি অতি আদরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে প্রবাসে পাঠানোর পূর্বে। তবে অভিভাবকদের উদ্বিগ্নতাও কম নেই একথাটা বুঝেই রতন স্বাভাবিক হয়েছে।
সকাল গড়িয়ে কখন বিকেল হয়ে গেল কেউ বুঝতে পারেনি। বিকেলে আরেক মেহমানের আগমন ঘটলো। এলেন রেণু আপু। তিনি এসে সঞ্চিতার বাবা-মাকে দেখে অবাক হলেন। বললেন, যাক বাঁচা গেল আপনাদেরও পেলাম। আসলে আমি জানাতে এলাম আমাদের যাওয়াটা দুই সপ্তাহ পিছিয়ে গেল। আজ রাতে একটু চট্টগ্রাম যেতে হবে। বিষয় সম্পত্তিগত কি যেন সমস্যা আছে সমাধান হতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগবে।
সবাই মনে মনে খুশিই হল। রতন বললো-যাক আপু আমিও যাওয়ার আগে একটু সময় নিতে চাচ্ছিলাম।
সঞ্চিতা বললো, তোমার আবার কি সমস্যা?
রতন বললো- বিয়ে।
বাসার সবাই একযোগে বলে উঠলো-কার বিয়ে।
রতন বললো- আপুর।
সানজিদা বললেন, কি বলছিস তুই। আমরাতো কিছুই জানলাম না। মানে তুই কি বলছিস কিছুইতো বুঝছি না।
আপুকে আজ জানিয়েছি-ও কিছুটা সম্মত। বললো রতন।
এবার কথা বলে উঠলেন লিটন সাহেব, রতন বাবা বিষয়টা একটু পরিষ্কার করবে।
রতন বললো, বাবা ওই যে ইঞ্জিনিয়ার ফয়সাল আঙ্কেলের ছেলে শোভন ভাই। ঊনি আপুকে পছন্দ করতেন, তবে আপু বিষয়টা নিয়ে কখনো ভাবেনি। আমি আজ ওকে ভাবতে বললাম। শোভন ভাইতো ব্রিটেনে থাকে এক মাসের কিছু বেশি সময়ের জন্য গত সপ্তাহে দেশে এসেছেন। আমার সাথে কথা হয়েছে। উনি বলেছেন, আপু যদি রাজি হয়। তো উনি পরিবারের লোকজন পাঠাবেন।
সানজিদা বললেন, আমি যতটুকু জানি ফয়সাল সাহেব ও ওনার স্ত্রী দুজনেই মারা গেছেন।
রতন বললো, হ্যা মা। শোভন ভাইয়ের ভাই-ভাবী দেশে থাকেন। ওনারা আসবেন।
লিটন সাহেব রিদিতার মুখের দিকে তাকালেন। তার আর বুঝতে বাকি রইলো না। রিদিতার সম্মতি আছে। তাই তিনি হাসতে হাসতে বললেন, রতনের ঘটকালির প্রতি আমরা আস্থা আনলাম। মনে হচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের আরেকটা উৎসবের আয়োজন করতে হবে।
জাফর সাহেব বললেন, সে বিষয়ে আপনার কোন চিন্তা করতে হবেনা। আমরাতো আছিই।
সবাই ভীষণ খুশি হল। এমন সময় সঞ্চিতা রতনকে ইশারা দিল। দুজনেই রুমের দিকে গেল। এর কিছুক্ষণ পরেই রতন ফিরে এল। তারও কিছু সময় পর সঞ্চিতা। আসর তখনও জমজমাট ছিল।
রতন আসার পর সবাই তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসছিল। রতন ভাবলো ঘটক হিসেবে অভিষেক হচ্ছে তাই সবাই এমন শুরু করেছে।
তবে আসরের সবাই হাসছে না লজ্জা পাচ্ছে তাই বুঝতে পারছে না রতন। রিদিতা যদিও একটা অন্যরকম বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছে তারপরও সে রতনের দিকে খেয়ালই করেনি। খেয়াল করা মাত্র ছুটে গেল তার দিকে। সঞ্চিতা যেহেতু রতনের পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিল তাই দুজনকেই টেনে নিয়ে গেল রুমের দিকে।
রুমে নিয়ে গিয়ে আচ্ছা রকম বকতে শুরু করলো-তোদের কাণ্ডজ্ঞান নেই। বেয়াক্কেল কোথাকার।
সঞ্চিতা বললো, তোমার আবার কি হল আপু? তুমি কি রাজি না?
রিদিতা সঞ্চিতার কান ধরে বললো- রতনের গালের দিকে তাকা।
হায় হায় লিপস্টিকের দাগ ও না মুছে গেল!
রতন ছুটে গেল ওয়াশ রুমের দিকে।
সঞ্চিতা রিদিতাকে জড়িয়ে ধরে বললো- তোমার জন্য চটজলদি এমন একটা ব্যবস্থা করলো। তাই আমি খুশি হয়ে ওকে গিফট দিলাম। এখন কি হবে আপু আমি সবার সামনে আর মুখ দেখাতে পারবো না।
রুমে দরজা আটকে দুজনে যা খুশি কর। আমি গেলাম ওদিকে। এই বলে চলে গেল রিদিতা।
চলবে...
বিষয়: সাহিত্য
১৩৪৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন