প্রেম যেন এমনই হয় ৪৬
লিখেছেন লিখেছেন প্রগতিশীল ৩০ এপ্রিল, ২০১৫, ০৯:২৪:০৮ সকাল
সকাল ৯ টা বাজতে না বাজতেই কলিং বেল বেজে উঠলো। লিটন সাহেব সানজিদা খাবার টেবিলেই বসেছিলেন। রুনু গিয়ে দরজা খুলে সালাম দিল। সানজিদা জিজ্ঞেস করলেন, কে এলরে রুনু।
রুনু হাসছিল। ভেতরে প্রবেশ করলেন জাফর-সাদিয়া দম্পতি। বেয়াই বেয়ানকে এভাবে সকালবেলা অপ্রত্যাশিতভাবে পেয়ে অবাক হলেন লিটন সাহেব। তারা দুজনে গিয়ে গলায় গলা মিলিয়ে বেয়াই-বেয়ানকে নিয়ে এলেন।
অতিথি দুজনেই নাস্তার টেবিলেই বসে গেলেন।
জাফর সাহেব বললেন, ভাবলাম সকালের নাস্তাতা আপনাদের এখানেই করবো। তাই চলে এলাম।
সানজিদা বললেন, ঠিকই করেছেন। আসুন নাস্তাটা শেষ করি তার পর কথা হবে।
পেছন থেকে এসে সাদিয়াকে জড়িয়ে ধরলো রিদিতা। বললো, খাওয়ার সময় আর সালাম দিলামনা। আপনাদের দেখে খুব ভাল লাগছে। কেমন আছেন আপনারা?
আমরা ভালই আছি, তোমাদের অবস্থা দেখতেই এলাম। ফোন দিয়ে তো আর চোখে দেখার স্বাদ পূরণ হয়না মা।
এমন সময় এল রতন-সঞ্চিতা। সঞ্চিতা এসে কোন কথা শুরুর আগে হাসতে শুরু করলো।
রুনু কিনা আমাকে গিয়ে বললো, সকাল বেলা দু’জন মেহমান এসে সরাসরি বাবা-মার সাথে নাস্তা করতে বসেছে। আমিতো বিরক্তই হয়েছিলাম। এখন দেখছি আব্বু-আম্মু এসেছে। মানে রুনু আমাকে বোকা বানালো সকাল বেলা। একটানে এতগুলো কথা বলে সে বললো, তোমরা এত সকাল বেলা আমার বাড়িতে?
জাফর সাহেব উচ্চস্বরে হেসে সাদিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন, দেখেছো তোমার মেয়ে শ্বশুর বাড়ি আসতে না আসতেই আমাদের পর ভাবতে শুরু করেছে।
সাদিয়াও হেসে বললেন, তোমার মনে নেই আমাদের বিয়ের পর আমার বাবা যখন প্রথম এলেন তখন কি হয়েছিল? বাবার হাত থেকে একটা পড়ে একটা গ্লাস ভেঙ্গে গেল। আর আমি বললাম-বাবা কি করলে? সাবধানে ধরবে না?
বাবা বললেন, বিয়ের আগেতো এমন হলে চিন্তা করতি বাবার হাত কেটে গেল কি না। আর এখন? আমি যে কি লজ্জাটাই না সেদিন পেয়েছিলাম।
সবাই হেসে উঠলো।
লিটন সাহবে বললেন, মেয়েরা অমন না হলে বোধকরি সমাজটাই টিকতো না। জীবনের বড় একটা সময় এক জায়গায় বেড়ে উঠে তারপর আর এক জায়গাকে গড়ে তোলা এ তাদেরই পক্ষে সম্ভব।
সানজিদা বললেন, সবাই আগে খেয়ে নেই তারপর গল্প করা যাবে।
পুরো আসরে নীরব ছিল রতন। চুপচাপ বসে খাচ্ছিল। খাওয়ার পর উঠে গেল সে।
তার বিষয়টা খেয়াল করলো রিদিতা। পিছে পিছে তার রুমে গেল সে। রুমে গিয়েই বিছানায় হেলান দিয়ে বসেছিল রতন।
রিদিতা গিয়ে পাশে দাঁড়ালো। কিরে মন খারাপ?
আপু তুই ঠিকই ধরেছিস। আমার শ্বশুর-শাশুড়ি কেন এসেছে জানিস? আমরা আর অল্প কটা দিন আছি।
রিদিতা বললো- তুই শুধু শুধু মন খারাপ করছিস।
রতন বললো, যাক এসব কথা আপু তুই রনি ভাইকে পছন্দ করতি বা অন্য কিছু আমিতো কোনদিন জানতাম না। জানলে তো আমিই বলতে পারতাম সে আসলে কি ধরণের। যা হোক শোভন ভাইর কথা তোর মনে আছে?
রিদিতা বললো, কোন শোভন?
আরে ওই যে তোরা একসাথে একটা কোর্স করেছিলি। মাঝখানে তুই একদিন আমাকে তার নামে বলেছিলি। আমি তখন কি করেছিলাম তা তো তোকে আর বলা হয়নি।
একদিন টিএসসি এলাকায় আমার ক’জন বন্ধুসহ তাকে ধরেছিলাম। ঊনি সোজা বলেছিলেন, দেখ রতন আমার বন্ধু-বান্ধবদের কাছে খোঁজ নাও আমার সম্পর্কে জানতে পারবে। খাঁটি সত্য কথা হল আমি রিদিতাকে পছন্দ করি। ও যদি চায় তো আমি বিষয়টা নিয়ে পরিবারিকভাবে এগুতে চাই।
আমি এবং আমার বন্ধুরা তার সোজা কথায় সেদিন অবাক হয়েছিলাম। তাকে বলেছিলাম, শোভন ভাই আসলে আপুতো আপনাকে পছন্দ করে না। তাই আমার মনে হয় আপু বিরক্ত হয় এমন কোন কিছু আপনার আর করা উচিত হবে না।
উনি সেদিন বলেছিলেন, ঠিক আছে।
রিদিতা অবাক হয়ে বললো, কেমন হ্যাংলা আর বদমায়েশের মত দেখা যায়। তাই আমি তাকে কোনদিন পাত্তা দেইনি। সেও অবশ্য আমাকে আর ডিস্টার্ব করেনি। আর রনির বিষয়টা সেওতো জানে।
রতন বললো, সে এখনো বিয়ে করেনি। সেদিন আমার সাথে কথা হল। বললো- রতন রিদিতাকে বলতে পারো এখনো সে আমার বিষয়টা ভাবতে পারে।
আসলে আপু আমার মনে হয় তুই ভেবে দেখনে পারিস। বাস্তবে শোভন ভাই ভালই ছিল। তবে তার সম্পর্কে তোর মনে খারাপ ধারণা তৈরী হয়েছিল আর রনি ভাই সম্পর্কে উল্টো ধারণা। রনি ভাইর আমার এক বান্ধবীর সাথেও সম্পর্ক ছিল। এই হল বাস্তবতা। আমাদের ভাবনার সাথে এর দূরত্ব অনেক বেশি। আর শোভন ভাই এখন ব্রিটেনে থাকেন।
রিদিতা হাসতে হাসতে বললো- তুই আমাকেও বাবা-মার থেকে দূরে প্রবাসে যেতে বলছিস নিজের মত। আচ্ছা ভেবে দেখবো, এখন চল ড্রয়িংরুমে সবাই বেশ জমিয়েছে।
চলবে...
বিষয়: বিবিধ
১৩৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন