প্রেম যেন এমনই হয় ৪৪
লিখেছেন লিখেছেন প্রগতিশীল ২৩ মার্চ, ২০১৫, ১২:৪৯:২০ দুপুর
রাত ১১ টা বাজে রিডিং রুমে অনবরত লিখে চলছেন লিটন সাহেব। অকস্মাৎ তিনি খেয়াল করলেন তার সামনে কেউ বসে আছে। তিনি স্মিত হেসে বললেন, তুই এসেছিস?
রিদিতা বললো; বাবা তোমার যে কখন কি হয় তা বোঝাই দায়। এমনিতে ডাকলেই পারতে ফোনে এসএমএস দিয়ে ডাকার দরকার কি ছিল?
লিটন সাহেব বললেন, দরকার ছিল বলেইতো একা একা এলি। সঞ্চিতা কি পড়াশুনা শুরু করে দিয়েছে?
রিদিতা হেসে হেসে বললো; ও লিও টলস্টয়ের ‘ওয়্যার অ্যান্ড পিস’ পড়তে শুরু করেছে। এরপর নাকি গ্যোটের ‘ফাউস্ট’ পড়বে।
লিটন সাহেব চোখ কপালে তুলে বললেন, বলিস কি এত কঠিন বিষয়ে হাত দিয়েছে? ওতো সহজ কিছু দিয়েও পড়া শুরু করতে পারতো।
রিদিতা হেসে বললো; ভাবছি ওকে ফেরদৌসীর শাহানামা পড়ার পরামর্শ দেব।
তুই ওকে বিভ্রান্ত করার যতই চেষ্টা করিসনা কেন আমার মনে হয় ও ভাল একজন পাঠক হবে। হাসতে হাসতে জবাব দিলেন লিটন সাহেব।
যাহোক তোর কথা বল সেদিন বললি, সেই ছেলেটা তোর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে।
হ্যাঁ বাবা রনি আমার সাথে আবারো যোগাযোগ করছে। জানো বাবা ওর বউ মারা গেছে। ওদের একটা ছোট্ট মেয়েও আছে।
বলিস কি? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, লিটন সাহেব। বিষয়টা দুঃখজনক।
রিদিতা বললো, মেয়েকে নিয়ে ও আমেরিকা থেকে চলে এসেছে। আর দেশের বাইরে যাবেনা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তো তোর সাথে কেন যোগাযোগ করলো।
বাবা ও সরাসরি না বললেও বোঝাতে চাইছে আমি যেন ওর...
লিটন সাহেব মৃদু হেসে বললেন, তুই কি বলেছিস তোরও বিয়ে হয়েছিল?
রিদিতা বললো, কি বলছো তুমি? আমার আবার কখন বিয়ে হল?
লিটন সাহেব বললেন, রনি আর তোর ঘটনাটা আমি ছাড়া আর কেউ জানেনা। তুই তখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে ছিলি। তাই ওটাকে আমি বয়সের একটা স্বাভাবিক ভুল বলেই ধরে নিয়েছি। আমি নিজে রনিকে বলেছিলাম ও যেন পরিবারের সাথে কথা বলে আমি তখনই তোকে ওর সঙ্গে বিয়ে দিতাম। পড়াশুনা না হয় বিয়ের পরে করতি। তবে ও আর কোন সাড়া দিলনা। তার পরের বছরই সে আমেরিকায় পাড়ি যমানোর আশায় প্রবাসী এক বাংলাদেশি মেয়েকে বিয়ে করলো। মেয়েদের জীবনের প্রথম দুর্বলতার স্থায়িত্ব অনেক বেশি।
না বাবা ওর সম্পর্কে তোমার ধারণা ঠিক না। ও পরিবারের চাপে পড়ে অমন করেছিল।
লিটন সাহেব বললেন, এখন ওকে ফোন দিবি। ফোন লাউড স্পিকারে রেখে ওকে বানিয়ে বল এই সময়ের মধ্যে তোরও বিয়ে হয়েছিল।
রিদিতা আর বাকিটা না শুনে ফোন দিয়ে লাউড স্পিকারে কথা শুরু করলো।
রনি : রিদিতা, কেমন আছো?
রিদিতা : ভালো, তোমার কি অবস্থা?
রনি : মেয়েটাকে নিয়ে আছি মহা ঝামেলায়। ওকে সামলানো খুবই কষ্ট। যাহোক তোমার কথা বল।
রিদিতা : আমি তোমার বিষয়টাই ভেবেছি।
রনি : সৌভাগ্য আমার।
রিদিতা : রনি, তোমাকে একটা কথা বলে রাখি। তোমার একটা মেয়ে আছে তা সত্ত্বেও তোমার প্রতি আমার অনুভূতি আগের মতই আছে। তবে...
রনি : তবেটা কি?
রিদিতা : তোমার মত আমারও জীবনে একটা দুর্ঘটনা আছে।
রনি : মানে কি?
রিদিতা : আমারও বিয়ে হয়েছিল। তোমার বিয়ের পরেই আমিও রাগ হয়ে একটি ছেলেকে বিয়ে করি। পরিবারের কেউ বিষয়টা জানতো না। এর এক বছর পরই আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়।
রনি : ও তাই মেয়ের দোহাই দিয়ে এখন আমার গলায় ঝুলে পড়ার ফন্দি করছো।
রিদিতা যেন আকাশ থেকে পড়লো।
রিদিতা : মানে বিয়ের পরও তোমাকে আমি মেনে নেব আর আমার বেলায় তা হবে ষড়যন্ত্র।
রনি : তোমার চরিত্র আমার ভাল জানা আছে।
রিদিতা : কেঁদে বললো, এই তোমার বাস্তবতা?
রনি : বিয়ে হয়েছিল জেনেও তোমাকে বিয়ে করবো?
রিদিতা : আমিতো তাই করতে চেয়েছিলাম।
রনি : আরে রাখ তোমার ভনিতা, আমি পুরুষ।
রিদিতা : এবার হাসলো রিদিতা। হেসে বললো; ও আমি নারী। তাহলে তুমি দয়া করে আর আমাকে বিয়ে করছো না?
রনি : প্রশ্নই আসেনা। তুমি আমাকে প্রতারিত করতে চেয়েছ।
রিদিতা : উচ্চস্বরে হেসে বললো। জীবনে কত বড় একটা ভুল করেছিলাম তা আজ বুঝলাম। আজ আবেগ উড়ে গেল।
রনি : তোমার মত টাইমপাস মার্কা মেয়েকে আর যাই হোক বিয়ে করা যায়না। এজন্যইতো আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছিলাম। তবে ভাগ্যটা খারাপ। যদিও বাবার সম্পদ ও শ্বশুরের সম্পদ দুটোই এত কম বয়সে পেয়ে গেছি। আর একটা বিয়ে, তা কোন ভাল মেয়েকেই করে ফেলবো। তোমার মত কোন বিবাহিতা মেয়েকে বিয়ে করবো কোন দুঃখে।
রিদিতা : বাবার কথা শুনে আমিও বাঁচলাম রনি। বাবা আমাকে বলেছিল, তুই ওকে যে অবস্থায় মেনে নিতে চাচ্ছিস তোর বেলায় অমনটা হলে ও মেনে নিত কি না? যাই হোক অতটুকু জানতে গিয়ে অনেক কিছু জানলাম। আর যেন জীবনে তোমার মত মনমানসিকতার মানুষের পাল্লায় কেউ না পড়ে। ভাল থেকো।
রনি : শোন, শোন।
রিদিতা ফোন কেটে দিয়ে তা অফ করলো। এরপর সিমটা খুলে ভেঙ্গে ফেললো।
চলবে...
বিষয়: সাহিত্য
১৫০৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চলছেন যখন, আমিও চলব। থামাবে কার সাধ্য।
তবে আপনার উপর আমার ভরষা নেই আবার কবে দিবেন কে জানে - - - ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন