প্রেম যেন এমনই হয়-৪১
লিখেছেন লিখেছেন প্রগতিশীল ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১১:৫৫:৫৮ রাত
রিদিতা-সঞ্চিতা যেন একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। সঞ্চিতার কাছে বিষয়টা যতটানা বেশি অবাক হওয়ার মত রিদিতার কাছে তার থেকেও বেশি আশ্চর্যের বিষয়। সে নিজে বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছে। বাংলা সাহিত্য নিয়ে সে যথেষ্ট সচেতন। অথচ তার বাবা এত প্রখর চিন্তা নিয়ে সাহিত্য অধ্যয়ন করেন যা সত্যিই বিস্ময়কর।
আর সঞ্চিতার উপর তার রাগই হচ্ছিল মনে মনে। যে বিষয়টি সে সারাজীবনে আবিষ্কার করতে পারেনি, সে বিষয়টিই সঞ্চিতা নিমেষেই উদ্ধার করে ফেললো।
ঘোর কাটালো সঞ্চিতা; লিটন সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললো, বাবা সবই বুঝলাম তবে কিভাবে পড়া শুরু করবেন। এই ধরুন আপনার এত কালেকশন আমি যদি শুরু করি কোত্থেকে শুরু করবো।
রিদিতা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো, আর কত সঞ্চিতা?
লিটন সাহেব হেসে বললেন; কোন এক প্রান্ত থেকে শুরু করতে হবে। এ যেমন ধরো আমাদের বাংলার পণ্ডিত রিদিতার জন্য যা করতে হবে তা হল; ও রবীন্দ্র রচনাবলী প্রথম শেষ করবে, তারপর নজরুল রচনাবলী, বঙ্কিম, শরৎ-ঈশ্বও চন্দ্র, ইসমাইল হোসেন সিরাজী, আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ প্রমুখদের বই। আর লালন গীতি, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি গানও শোনা নয় পড়ে তারপর শুনতে হবে। এছাড়া পত্রিকার সাহিত্য পাতাও পড়তে হবে নিয়মিত।
সঞ্চিতা চটে গেল বাবার উপর অনার্স-মাস্টার্স শেষ করলাম আর তুমি এখন পরামর্শ দিচ্ছ বাবা।
লিটন সাহেব একটু জোরে হেসেই বললেন-
এক. তুই কোনদিন কিছু জানতে চাসনি।
দুই. এটার সাথে একাডেমিক পড়াশুনার কোন সম্পর্ক নেই।
রিদিতা নরম সুরে বললো; বাবা ওভাবে পড়লে রেজাল্ট এমনিই ভাল হবে। কারণ জানার জগৎটা ভরা থাকলে একাডেমিক বিষয়টা এমনিই আয়ত্বে চলে আসে।
লিটন সাহেব বললেন, এটা তুই ঠিকই বলেছিস। তবে আমি নিজে কেবল সেকেন্ড ক্লাস আর থার্ড ক্লাস নিয়েই পাশ করে বেরিয়েছি। তবে তোর মা সব গুলোতেই ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট।
রিদিতা-সঞ্চিতা একসাথে বলে উঠলো; তাই নাকি?
লিটন সাহেব বললেন; বই খুঁজতে গিয়েইতো ওকে পেলাম।
রিদিতা বিষয়টা শোনার জন্য উসখুশ করছিলো কিন্তু সঞ্চিতা বললো; বাবা আমি কি করবো বললেন না তো।
তুমি অন্য একটা স্টাইলে শুরু করতে পারো। যদি চাও আইন, ভাষা ও ধর্ম ইত্যাদি যে কোন বিষয়ে পড়াশুনা করতে পারো। তা না হলে; রাজনীতি বা আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী পড়তে পারো।
এছাড়া ধর্ম নিয়েও চাইলে পড়াশুনা করতে পারো; কুরআন, বাইবেল, রামায়ণ, মহাভারত, ত্রিপিঠক কি ভালো লাগে পড়। অগুলোর নিজ ভাষায় না পারো বাংলায় সব পড়ে নেবে। সব কিছু সম্পর্কে জানলে তুমি নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারবে। আর জ্ঞানের সম্পদই প্রকৃত সম্পদ এটা মনে রেখো।
তবে পড়ার বিষয়টা ব্যক্তির একটা নিজস্ব জগৎ। এ জগতটা তাকে নিজেই সৃষ্টি করে নিতে হয়।
সঞ্চিতা হ্যাঁ করে তাকিয়ে থাকলো। এই দৃশ্য দেখে হেসে দিল সঞ্চিতা।
লিটন সাহেবের নীরব রিডিং রুম এতটা সরব কোনদিন হয়নি। নি:স্তব্ধ পরিবেশ আজ যেন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে। মাঝে মাঝে নিয়মভঙ্গ মানুষকে পরম আনন্দ দেয়। লিটন সাহেব আজ সেই আনন্দই পেলেন।
চলবে...
বিষয়: সাহিত্য
১৪৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন