প্রেম যেন এমনই হয়-৪০
লিখেছেন লিখেছেন প্রগতিশীল ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১০:৪৬:০৬ রাত
অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে এল সঞ্চিতা। রিদিতা জিজ্ঞেস করলো চা কই? রুনু নিয়ে আসছে জবাব সঞ্চিতার।
হাসছিল রিদিতা। সে ভেবেই রেথেছিল রুনু সঞ্চিতাকে কোন ছোট কাজও করতে দেবে না। সঞ্চিতা এসব কিছু খেয়াল না করে সরাসরি লিটন সাহেবকো প্রশ্ন করলো। বাবা বলেন, আপনার ‘প্লান অব স্টাডি’ কি আর মানুষের প্লান অব স্টাডি কি থাকা উচিত? মানে যারা আপনার মত প্রগতিশীল পাঠক তাদের কি করা উচিত।
লিটন সাহেব বললেন, এতো খুবই সোজা ধর তুমি পাঁচ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত অধ্যয়ন পরিকল্পনা তৈরি করে নিলে।
সঞ্চিতা বললো; সে আবার কিভাবে বাবা। এতো অনেক সময়।
রিদিতাও যেন আজ বাবার কথা নতুন করে শুনছে।
লিটন সাহেব বললেন; এতো অতি সহজ কাজ। পাঁচ বছরের প্রথম বছর তুমি ঠিক করলে এ বছর কেবল এক পৃষ্ঠা করে প্রতিদিন বই পড়বে, আর তাতে খুব কম করেও তোমার ৩৬৫ পৃষ্ঠা পড়া হবে। তবে তুমি যদি একেবারেই প্রাথমিক মানের পাঠক হও তাহলেও দেখা যাবে; ওই বছরের প্রথম তিন মাসের মধ্যেই যদি পড়ার প্রতি তোমার ভাল লাগা তৈরি হয়ে যায় এরফলে ওই বছর তোমার পড়া কেবল ৩৬৫ পৃষ্ঠায় থেমে থাকবে না। গড়ে দেখা যাবে ওই বছর তুমি ৫ পৃষ্ঠা করে বই পড়ে ফেলবে। আর এগুলো জোর করে কেউ তোমাকে পড়াবে না তুমি নিজে থেকেই পড়বে। এরফলে ওই বছর যদি তুমি ধরে নিলাম ৩০০ দিনে পাঁচ পৃষ্ঠা করে কমপক্ষে ১৫০০ পৃষ্ঠা বই পড়বে। সেগুলো যদি গড়ে ৭০ পৃষ্ঠার বই হয় তাহলে তুমি তোমার প্রথম ব্যক্তিগত পাঠ্য বছরে কম হলেও ২৫ টি বই পড়ে ফেলবে।
রিদিতা মাঝখানে বলে উঠলো; বছরে মাত্র ২৫টা বই? তোমার হিসাবে পাঁচ বছরে ১২৫ টা বই। এত্ত কম!
লিটন সাহেব বললেন; হতে পারে। তবে কেউ যখন অভ্যস্ত হয়ে পড়বে সে তখন আরো বেশি পড়ে ফেলবে। যদি ধর সে যদি তখন সপ্তাহে একটি করেও বই পড়ে তখন বছরে তার ৪৮ টা না হোক ৪০ টাও যদি হয় তাহলে পাঁচ বছরে মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ২০০ টি বই। তবে এই এতটুকু কাজ করার জন্য তাকে তার জীবন থেকে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ মিনিট ব্যয় করতে হবে। আর এটা একজন সংসারী মানুষের জন্য খুবই কঠিন।
মানে কেউ যদি এক ঘণ্টা করে ব্যয় করে তাহলে সে তো এক বছরেই গড়ে ৫০ টি করে পাঁচ বছরে কমপক্ষে ২৫০ টি বই পড়ে ফেলবে। মানে আমার মত নিম্ন মানের পাঠক। বললো সঞ্চিতা।
তবে বাবা আমরাতো আমাদের প্লান দিতে বলিনি। তোমারটা জানতে চেয়েছি।
লিটন সাহেব হাসতে হাসতে বললেন; আমি ছাত্রজীবন থেকেই প্রায় দু’ঘণ্টা করে অন্যান্য পড়াশুনো করেছি। আর বিয়ের পর তোর মাও আমাকে এতটুকু সময় নিরিবিলিতেই ছেড়ে দিয়েছে। অফিস শেষে বাসায় ফিরে আমি দু-তিন ঘণ্টা করে প্রথমে পড়তাম। পরে যখন তারেক-রাইসার জন্ম হল তখন বেশিরভাগ সময় সকালে মানে ভোরবেলা উঠে পড়েছি।
মানে কত বছর থেকে শুরু করেছেন? আর এখন আপনার বয়স কত?
এর মধ্যে রুনু চা নিয়ে এল। চা খেতে খেতে লিটন সাহেব বললেন; এখন ৫৫ আর শুরু করেছিলাম ২২ কি ২৩ এ।
মানে ত্রিশ বছর ধরে তুমি পড়ছো? প্রায় দু’ঘণ্টা করে, চোখ কপালে তুলে প্রশ্ন করলো রিদিতা।
মোবাইল ক্যালকুলেটরে হিসেব করে রিদিতা বললো; মানে গড়ে সর্বনিম্ন ২০ পৃষ্ঠা হলে আপনি দুই লাখের বেশি পৃষ্ঠা বই পড়েছেন। আর তা যদি ৭০ পৃষ্ঠার করে বই হয় তাহলে তিন হাজারের বেশি। এক’শ পৃষ্ঠা বা তার চেয়ে বেশি করে হলেও আপনি দুই হাজারের বেশি বই পড়ে ফেলেছেন এতে সন্দেহ নেই। মানে আপনার রিডিং রুমের সব বই?
লিটন সাহেব মৃদু হাসছিলেন। রিদিতা ওড়না দিয়ে ঘাম মুছছিলো।
চলবে...
বিষয়: বিবিধ
১০১৮ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন