প্রেম যেন এমনই হয়-৩৯

লিখেছেন লিখেছেন প্রগতিশীল ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৭:৩০:১১ সন্ধ্যা



লিটন সাহেবের রিডিং রুমটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলো সঞ্চিতা। রিডিং রুমটা অনেক পরিপাটি ও সাজানো গুছানো। পুরো রুমটা বই দিয়ে ঘেরা। বইয়ের আলমারিগুলো বর্ণমালার ক্রম অনুসারে সাজানো। যেমন; অ লেখা যে জায়গাটিতে সেখানে অন্নদা শঙ্কর রায়ের লেখা বইগুলো, আ তে আহমদ ছফা সমগ্র; আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখা, সেই সাথে আছে নজরুল ও রবীন্দ্রনাথ সমগ্র। বিভিন্ন প্রবন্ধ, ইংরেজিসহ নানা ভাষার সাহিত্য।

সঞ্চিতা অবাক হল যে রাশিয়ান ভাষাতেই এখানে আছে লিও তলস্তয় এর ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ আর জার্মান ভাষাতেই আছে মহাকবি গ্যোতের ‘ফাউস্ট’। এ রিডিং রুমটা যেন বাংলাসহ বিশ্ব সাহিত্যের প্রতিচ্ছবি। কেবল অনুবাদ সাহিত্যই নয়। সংশ্লিষ্ট ভাষায় বিশ্ব সাহিত্য দেখে সঞ্চিতা অবাক হল।

আপু বাবার রিডিং রুম এত সমৃদ্ধ? রিদিতাকে জিজ্ঞেস করলো সে।

আরো দেখ সামনে। দুজনেই আরো সামনে এগিয়ে গেল। লিটন সাহেব বিশ্বধর্ম নামেও একটি কর্নার করেছেন। এখানে আবার ইহুদি, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ সকল ধরনের ধর্মের বই আছে। সঞ্চিতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো নিজের ধর্ম কই?

রিদিতা হেসে বললো আরো সামনে চলো। আরেকটু সামনে গিয়েই দেখা গেল ‘আমার ধর্ম’ নামে পৃথক একটি কর্নার।

সঞ্চিতা পুরো রুমটা ঘুরে একটা খটকার বিষয় আবিষ্কার করলো। জায়গা থাকা সত্ত্বেও বেশ কিছু বই আলমারির র‌্যাকে স্থান না পেয়ে বাইরে বা আলমারির উপরে পড়ে আছে। আর এগুলো নতুন নতুন বই। সাথে পুরনো তবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বইও আছে।

বিষয়টি রিদিতাকে জিজ্ঞেস করলো সে। রিদিতা সামনের দিকে একটা লেখা দেখার ইশারা করলো তাকে।

‘যা পড়িনি তা তুলে রাখিনি’ এমন একটা লেখা পড়ে সঞ্চিতা অবাক হল। হালকা আওয়াজ করে বললো; এ কেমন চিন্তা।

রিদিতা বললো; মানে যে বইগুলো বাবা পড়েছেন কেবল সেগুলোই আলমারিতে স্থান পেয়েছে। আর বাকিগুলো বাইরে আছে। এ রিডিং রুমটার খুবই যতœ নেয়া হয়। নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। রুনু আর আম্মু কোথায় কি রাখতে হবে বা কোথায় কি থাকে সবই জানে। মূলত তারাই এর দেখাশোনা করে।

আপু আমি একটা বিষয় বুঝছিনা বাবা এতগুলো বই পড়েছেন? প্রশ্ন সঞ্চিতার।

রিদিতা বললো, আসলে বাবার একটা ‘প্লান অব স্টাডি’ বা এটাকে ‘অধ্যয়ন পরিকল্পনা’ও বলতে পার। চল বাবার কাছ থেকেই বিষয়টা জেনে নেই।

সঞ্চিতা বললো ‘প্লান অব স্টাডি’ আবার কি। অনার্স মাস্টার্স শেষ। পারলে এমফিল, পিএইচডি। আর না পারলে বাবার ব্যবসা বা একটা জব, বাচ্চা-কাচ্চা সংসার হাবিজাবি। কিন্তু বাবা সব করেও এত পরিকল্পিত উপায়ে কাজ কিভাবে করেছেন?

রিদিতা বললো, চলতো সব বাবার কাছেই শুনি।

লিটন সাহেবের দৃষ্টি তখনো কম্পিউটারের মনিটরে। সঞ্চিতা তার সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো; কি করেন বাবা। লিটন সাহেবের মাঝে সেই ইতস্তত ভাব আর নেই। তিনি বললেন; ভাবছি এই রুমের সব বইগুলোকে কম্পিউটারে ঢুকিয়ে ফেলবো।

মানে কি? প্রশ্ন করলো রিদিতা। এ বইগুলোতো আর তোমার নিজের লেখা নয় যে সফট কপি তোমার কাছে আছে। চাইলেই তুমি সব করে ফেলবে।

লিটন সাহেব বললেন; ভাবছি একটা অনলাইন লাইব্রেরি বানাবো। আর তোর কথাও ঠিক তবে ভাবছি পুরো রিডিং রুমের সব বইগুলো স্ক্যান করেতো পিডিএফ ফরম্যাটে একটা একটা ফাইল করে ফেলবো। একজন বিশেষজ্ঞের সাথে কথাও বলেছি। তবে লাইব্রেরিটা অনলাইনে বানাবো না কেবল নিজের জন্য সমস্ত বই কম্পিউটরে ঢুকিয়ে ফেলবো। যাতে আমার নাতি-নাতনীর সন্তানরাও পড়তে পারে।

বাবার দুষ্টু ইঙ্গিত দুজনেই বুঝলো।

সঞ্চিতা বললো; বাবা অনলাইনেই দিয়ে দিন। তাহলে মানুষ উপকৃত হবে। দেখা যাবে যে পড়তে চায় তার এগুলো কালেকশন করতে যে সময় লাগার কথা তা বেঁচে যাবে। বরং সে অল্প সময়ে এর থেকে বেশিও পড়ে ফেলতে পারবে। এ যুগের পাঠক এটাতো করতেই পারে।

রিদিতা বললো; মানুষের এখন আর অত পড়ার আগ্রহ নেই। তবে সঞ্চিতার আইডিয়াটা চমৎকার।

লিটন সাহেব বললেন; আমি এমনটাই ভেবেছিলাম।

সঞ্চিতা ঝটপট উঠে বললো; বাবা অনেক কথা আছে। আমি চা নিয়ে আসি ১১টা বেজে গেছে ৯টায় চা খেয়েছিলাম। মাথা ধরেছে, আমি চা নিয়ে আসি।

এই বলে সে চলে গেল। আসলে রুনুকে ইন্টারকমে চা আনতে বলা যেত। কিন্তু শ্বশুরকে চা খাওয়ানোর সুযোগটা সে হাতছাড়া করতে চাইলো না। রিদিতাও বিষয়টা বুঝেছে তাই সেও কিছু না বলে চুপচাপ বসে থাকলো।

চলবে...

বিষয়: সাহিত্য

৯৭৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

303831
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০৮:৫৮
আফরা লিখেছেন : সাথেই আছি, থাকব । ইনশাাল্লাহ !
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০৯:৪৮
245777
প্রগতিশীল লিখেছেন : চিন্তার বিষয়<:-P <:-P <:-P দেখা যাক...
305850
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০৪:২৩
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : সাথেই আছি, থাকব । ইনশাাল্লাহ ! ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৪:৪৪
247533
প্রগতিশীল লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File