প্রেম যেন এমনই হয়-৩৮

লিখেছেন লিখেছেন প্রগতিশীল ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১১:৩৫:৫৯ রাত



ডেক্সটপের কি বোর্ডে হাত আর মনিটরের দিকে চোখ। অবিরাম লিখে চলছেন হাত দুটি দিয়ে। কখনো মুখে হাসির রেখা, কখনো দুঃখের কালো ছায়া। কখনো ভাললাগা অনুভূতির জাল বুনছেন। কখনো আবার কষ্টকর অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিচ্ছেন।

লেখার সময় লেখকের কেবল লেখার সাথেই একটা আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা কখনো তাকে অশ্রুসজল করে তোলে কখনোবা সুখের ভেলায় ভাসিয়ে দেয়। পুরো লেখার মধ্যে ঢুকে যান লেখক। পাঠক হৃদয়ে সাহিত্য পাঠের যে পুলক অনুভব করেন তা মূলত এ কারণেই।

চেয়ারের পেছন থেকে দুটো হাত তাকে জড়িয়ে ধরলো। লেখক বিভ্রান্তিতে পড়ে গেলেন। লেখার নায়িকা চরিত্রটি জীবন্ত হয়ে নায়কের পরিবর্তে লেখককেই আলিঙ্গন করছে না তো!

ভুল ভাঙলো লিটন সাহেবের না অমন কিছু নয়। পেছনে সানজিদা টেবিলে এক পেয়ালা গরম চা এখনো ধোয়া উঠছে। দুষ্টু হাসি হেসে লিটন সাহেব সানজিদাকে বললেন; বুড়ো বয়সে আর যখন তখন বিছানায় যেতে মন চায় না বেলী।

সানজিদা বললেন; রাখতো তোমার ন্যাকামি। চা টা খাও। আর লেখার সময় এত আবেগী হও কেন তুমি। সহজ বানানগুলোও ভুল কর। যতি চিহ্নগুলোও এলোমেলো করে ফেল। তোমাকে যে কি বলবো।

লিটন সাহেব বললেন; ওই দেখেছো।

সানজিদা বললেন; কি?

লিটন সাহেব বললেন; কয়েক রংয়ের কালির কলম। আর ওই প্রিন্ট করা পাণ্ডুলিপি। ইজ্জতটা বাঁচাও বউ। পুরুষের ইজ্জত গেলে আর কোনো উপাধি পাওয়া যায়না।

সানজিদা হাসলেন, বললেন; তারেক বলার সাথে সাথে এসে প্রিন্ট দিয়ে দিয়েছ। বেশ আমি দেখে দেব। তার পরও ভালো কাউকে দিয়ে প্রুফ দেখিয়ে নিও। সম্পাদনাটাও যেন ভাল কেউ করে দেয়। আর একটা কাজ করতে ভাল হয় এসব কাজ শেষ করে বিভিন্ন বয়সী কয়েকজন পাঠককে দিয়ে তা পড়িয়ে নিও তাদের মনে যদি কোন প্রশ্নের উদ্রেক হয়। তাও জেনে নিও। তাহলে লেখাটা অনেকটা সমৃদ্ধ হয়ে যাবে।

সানজিদার এমন চমৎকার বুদ্ধিতে লিটন সাহেব রীতিমত অবাক। কিছুই বললেন না চা টা শেষ করে সানজিদাকে কাছে ডাকলেন।

চেয়ার থেকে উঠে সানজিদাকে বুকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। সানজিদা চুপচাপ স্বামীর বুকের নিরাপদ আশ্রয়ে শান্ত হয়ে মুখ লুকিয়ে থাকলেন।

এমন সময় কাঁশির শব্দ সঞ্চিতা আর রিদিতা এসে ঢুকেছে বাবার রিডিং রুমে।

রিদিতাকে খোঁচালো সঞ্চিতা। আপু চলে গেলেই হত। সিগনাল দেয়ার কি দরকার ছিল। রিদিতা বললো কিছু জিনিস দেখে ফেলাও বোধ করি ভাল। তবে বেশি অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু দেখার অধিকার কোন চোখেরই নেই। তাইতো সংকেত দিলাম।

ওদিকে লিটন আর সানজিদা ভালবাসার অতিসহ্যে রীতি মত কাঁপতে শুরু করেছে! মেয়ে আর বউ অসময়ে এসে তাদের এমন এক বিপদে ফেলেছে যে বয়োবৃদ্ধ জ্ঞান বৃদ্ধ হলেও এখন তারা নাবালক-নাবালিকার পর্যায়ে।

সংসারের হাল ধরার যোগ্যতা নববধূরা যেন স্বভাবতই পেয়ে যায়। শ্বশুর-শাশুড়ির দিকে এগিয়ে গেল সঞ্চিতা চোখ তার টলমল। গিয়েই বললো; মা-বাবা আসলে অসময়ে আমাদের এভাবে চলে আসাটা ঠিক হয়নি। এটা বাবার একান্ত একটা রুম যা আমাদের বোঝার দরকার ছিল। তবু না এলে বুঝতাম না কোন শর্ত দিয়ে বাবা আমাকে রতনের হাতে তুলে দিয়েছে।

সঞ্চিতার কথায় রিদিতা অবাক। পরিস্থিতি পরিবর্তনে পটু সঞ্চিতা।

লিটন-সানজিদাও কিছুটা স্বাভাবিক হলেন। সানজিদা চায়ের কাপ ও স্ক্রিপ্টের কপিটা নিয়ে বের হয়ে গেলেন।

সঞ্চিতা পুরো রুমটা ঘুরে দেখতে লাগলো। রিদিতা নিরুপায়ের মত তাকে অনুসরণ করছিল। লিটন সাহেব কম্পিউটারে কি যেন একটা কাজ শুরু করলেন।

চলবে...

বিষয়: বিবিধ

১০৪৭ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

303035
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১২:০৩
আফরা লিখেছেন : আসলে মাঝখানে থেকে পরে সবটা বুঝা না গেলে ও আজকে পুরাটাই পড়লাম ভালই লাগল । এখন থেকে বাকী পর্বগুলো নিয়মিত পড়ব । ইনশা আল্লাহ ।
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০৯:১৮
245210
প্রগতিশীল লিখেছেন : পুরোটা পড়ছেন...এত্ত বড়টা দু‘ঘণ্টা লাগতে পারে...
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৫:০৬
245289
আফরা লিখেছেন : না ভাইয়া আর পিছনে চেতে চাই না সামনে আগান সাথে আছি । ইনশা আল্লাহ !

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File