প্রেম যেন এমনই হয়-৩৬

লিখেছেন লিখেছেন প্রগতিশীল ২২ জানুয়ারি, ২০১৫, ১০:৪৬:২২ রাত



জীবন এক বহতা নদীর মত এটা যেমন সত্য তেমনি এ নদীতে জোয়ার ভাঁটা আসে তাও সত্য। তবে জীবনে যেমন বসন্ত আসে তেমনি চৈত্রের খরাও আসে এই জীবনের স্বাভাবিকতা। অস্বাভাবিক বা অপ্রত্যাশিত কিছু জীবনে ঘটবে এই স্বাভাবিক। তেমন ঘটনার মুর্তরূপ লিটন সানজিদার জীবনে না এলেও এর আবছা একটি রূপ বিরূপ প্রতিবিম্ব নিয়ে এসছে তাতে সন্দেহ নেই। বিয়ের পর মেয়েকে বিদায় দিয়ে শ্বশুর বাড়িতে পাঠাতে হয় কিন্তু তাদেও ক্ষেত্রে ঘটছে অনেকটা উল্টো ঘটনা বিয়ের পর ছেলে-বউকে পাঠাতে হচ্ছে প্রবাসে। মেয়ে রিদিতাকেওতো বিয়ে দিতে হবে।

বিয়ে নামে এই কর্তব্যেও মধুর বিড়ম্বনায় বাবা-মাদের পড়তেই হয়। তারা নিরুপায় শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে সন্তান যখন যৌবনপ্রাপ্ত হয়ে যায়। তখন বাবা মাকেই এ বিষয়ে ভাবতে হয় সবচেয়ে বেশি। ভেবে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে আবার সে সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন করেও সুখ-দুঃখের অনেক ধাপের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে হয়। একে পারিবারিক মিথষ্ক্রিয়া বললেও ভুল হবে না।

রতনের বিয়ের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষ। এবার মামা বিদায়ের পালা! লিটন সাহেব এ পর্বটাতে খুবই বিষন্ন হলেন। বয়সটাই এমন যৌবনে কারো সাথে সম্পর্ক বা স্থানের দূরত্ব তৈরি হলে সেটা যদি আঁখির আড়াল হলে মনেরো আড়াল এমন জাতীয় কিছু হয় তবে সেটা ভিন্ন কথা। তবে বার্ধক্যে বন্ধু বিচ্ছেদটা বিষাদেরই হয়। যে বন্ধু কাছে থেকে চলে যায় কয়েকদিন পর হয়তবা খবর মেলে সে আর নেই। অথবা সে খবর পায় তার সেই বিদায়দাতা বন্ধু চিরবিদায় নিয়েছে। শারীরিক অক্ষমতা, দূরত্বের দুর্বিসহতা এমন নানা কারণে শেষ দেখা আর হয়ে উঠে না।

লিটু মামা লিটন সাহেবের ‘বন্ধু মামা’ বলতে গেলে মামার থেকেও বন্ধু বেশি। তাই এবার লিটন মামাকে বিদায় দিতে তার মন চাইছে না।

সানজিদাও কিছুটা বিষন্ন। শুধু তাই নয় রতন-সঞ্চিতা, তারেক-তামান্না, রিদিতা-রুণু সবারই মন খারাপ। লিটু নানু হঠাৎই হ্যালির ধূমকেতুর মত তাদের জীবনের একটা অনুসঙ্গ হয়ে উঠে আবার যেন মহাকাশে মিলিয়ে যাচ্ছে।

লিটু নানু সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে লিটন সাহেবের সাথে কোন কথা না বলেই বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। লিটন সাহেব সবই বুঝতে পারলেন। শুধু শুকনোভাবে বললেন, মামা একটু বুকে জড়িয়েতো যাবে?

লিটু সাহেব মাথা নিচু করেই পেছনে ফিরে তাকে জড়িয়ে ধরলেন। মামার চোখের পানিতে বুক ভিজে যাচ্ছিল লিটন সাহেবের।

লিটু মামা হু হু করে কেঁদে উঠলেন। এখন আর বিদায় নিতে মন চায় না রে লিটন। ভয় হয় বিদায়টা শেষ বিদায় না হয়।

লিটন সাহেবেরও চোখে জল। মামা আমার অনুভূতিও তোমার মতই। কি করবে বলো। বুড়োতো হয়েছি।

এমন করুণ দৃশ্যে বাকি সবারও চোখ ভিজে গেল। কেউ কোন কথা বলছেনা। বেরিয়ে গেলেন সবার প্রিয় লিটু নানু সে পথের দিকেই চেয়ে থাকলো সবাই।

তারেকের স্ত্রী তামান্না আফরোজ বাচ্চাদের পাঠিয়ে দিলেন দাদুর কাছে। নাতি-নাতনীদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন লিটন সাহেব। আবারো সেই ব্যস্ততা বিষন্নতাকে দূরে ঠেলে দিল।

চলবে...

বিষয়: বিবিধ

৮৭৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

301379
২৩ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৯:১৭
মোঃআয়নাল হক লিখেছেন : আবারো সেই
ব্যস্ততা বিষন্নতাকে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File