প্রেম যেন এমনই হয়-৩৫
লিখেছেন লিখেছেন প্রগতিশীল ১৯ জানুয়ারি, ২০১৫, ১১:৫৪:৩০ রাত
অনুষ্ঠানের পরের এ ছোট্ট অনুষ্ঠানটার পরিবেশটা অনেক ভারী। এ অনুষ্ঠানে সপরিবারে এসেছেন রেণু আপু। বিচ্ছিন্নতাকে যিনি জুড়ে দিয়েছেন বিয়ে নামের এক পবিত্র বন্ধনে। রতন আর সঞ্চিতা যার কারণে জীবনের একটি অনবদ্য অধ্যায় শুরু করতে পারলো। আসলে খাঁটি বাংলায় রেণু আপু ভাল ঘটক বটে! তবে বেশ শক্ত মানের, বিয়ে দিয়েই যার দায়িত্ব শেষ নয়। তিনি রতন আর সঞ্চিতার ভালবাসার আবেগকেও যেমন গুরুত্ব দিয়েছেন তেমনি কঠোরভাবে বিবেচনা করেছেন তাদের শিক্ষা জীবনের সমাপ্তির দিকটাও।
রতনদের বাসায় আজ বলতে গেলে রেণু আপুর নেতৃত্বেই সঞ্চিতাদের বাসার একদল মেহমান এসেছেন। রতন আর সঞ্চিতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য। এরপর রতনদের আত্মীয় স্বজনরা গিয়ে আবার তাদের নিয়ে আসবে। এতেই সব আনুষ্ঠানিকতার শেষ। আসলে এ জাতীয় প্রথা গড়ে ওঠার পেছনের কোন ইতিহাসই কারো জানা নেই। কি কারণে এমনটা দরকার তারও কোন ব্যাখ্যা নেই। অনেকেই আবার মনে করেন বিয়ে প্রথাটাকে এসব বাড়াবাড়ির মাধ্যমে অহেতুক জটিল করা হয়েছে। বিয়েটা সহজসাধ্য হলে সমাজে অজাচার কমে যেত ইত্যাদি ইত্যাদি।
সন্ধ্যায় এসেছিলেন রেণু আপুরা। তাদের হালকা আপ্যায়নের পর একটা আসর বসলো। এটাকে গল্প বা পরিচিতি যে কোন একটা নাম দিলেই চলে।
রতনের বাবা-মা পরিবারের সদস্যরাসহ বর-কনে নিজেরাও এখানে উপস্থিত ছিল। আলোচনা প্রসঙ্গে লিটন সাহেব জিজ্ঞেস করলেন; রেণু মা তোমার সম্পর্কে খুব একটা জানা হয়নি।
রেণু কললেন; চাচাজান আমার বাবা আনিস সাহেবকে আপনি হয়তো চিনবেন যতটুকু জানি উনি আপনার পরিচিত।
আমি বাংলাদেশে থাকাকালীন একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াতাম পরে আমার স্বামী দেশের বাইরে যাওয়ার মনস্থ করলে দেশের বাইরে চলে যাই। এখন আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকরি করছি। আর আপনাদের দোয়ায় ছেলে-মেয়ে দু’জন।
লিটন সাহেব কথা না ঘুরিয়ে বললেন, রতন-সঞ্চিতার অভিভাবক এখন তুমি।
রেণু কথা না ঘুরিয়ে বললেন, চাচা আমিও আপনার একজন মেয়ে। আমাকে দূরের আত্মীয় ভাববেন না। আমি সোজা-সাপটা একটা কথা আপনাকে আর চাচীজানকে বলে দিতে চাই। রতন-সঞ্চিতার বিয়ে হল তবে তাদের যেন সন্তানের জন্য কোন চাপ দেয়া না হয়। অন্ততপক্ষে তাদের পরাশুনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত। প্রয়োজনে তারা পিএইচডি শেষ করবে তার পর ওসব ভাববে। এজন্য তাদের যেন পারিবারিকভাবে কোন ‘মানসিক চাপ’ দেয়া না হয়।
ইব বর-বধূ রতন-সঞ্চিতা লজ্জায় লাল হয়ে গেল।
তাদের এমন মধুর ‘করুণ’ পরিস্থিতিতে রিদিতা হাসতেও পারে না আর কিছু বলতেও পারেনা। ভাবী তামান্নাও চুপ-চাপ।
রেণু আপু এতটা ঠোঁট কাটা এটা সঞ্চিতা ভাবতেও পারেনি।
কথা বলে উঠলেন সানজিদা; তুমি ঠিকই বলেছ মা, তবে আমাদেরও নাতি-নাতনীর আর তেমন চাহিদা নেই। আল্লাহতো আমাদের যথেষ্ট দিয়েছেন।
রেণু বললেন, চাচী আমি সবার সামনে এজন্য একথা বললাম যে আমাদের অভিভাবকদের এসব গোঁড়ামির কারণেই আজকাল ছেলে-মেয়েদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। যে যুগ চলছে এদের মানসিকতা অনেক আগেই পরিপক্ক হয়ে ওঠে। রতন-সঞ্চিতার অবস্থার কথাই চিন্তা করেন। ওদের মত কত ছেলে মেয়ে একই অবস্থায় আছে। এদের পথে পারিবারিক প্রতিবন্ধকতা তৈরী না করলে। ধর্ম-সামাজিকতা সব মেনে সুযোগ করে দিলে দেখবেন এরা সচেতনভাবে সব কাজ করবেন। আমরাতো পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আগ্রাসন রোধ করতে পারবো না। আর মেয়ে-ছেলেদের মেলামেশাটাকে যদি প্রতিবন্ধকতা দিয়ে আটকে রাখতে চাই, তাহলে স্বভাবতই তারা নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হবে।
রতন সঞ্চিতা দুজনেরই রাষ্ট্রীয়ভাবে বিয়ের বয়স হয়েছে তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সম্পর্কটা মেনে না নিলে হয়তবা ত্রিশ-বত্রিশের কোঠায় গিয়ে আপনারা বিয়ের কথা ভাবতে শুরু করতেন।
লিটন সাহেব বললেন, বাস্তবে তোমার কথায় আমার চিন্তার পরিবর্তন ঘটলো। তুমি ঠিক জায়গাটাতেই আঘাত করেছ।
মৃদু সুযোগ পেল রিদিতা বললো; বিষয়টা নিয়ে লিখতেও পার।
সবাই হেসে উঠলো।
লিটন সাহেব রেণুকে লক্ষ্য করে বললেন, রতন-সঞ্চিতার বিষয়টা কি করবে।
রেণু বললেন; সঞ্চিতাতো পড়ছেই ও আবার কানাডা গিয়ে নিয়মিত হবে। আর রতনের বিষয়ে আবেদন করা হয়েছে ওর বিষয়টা সমাধান হতে মাস খানেক সময় লাগতে পারে। আশা করছি আমরা সকলে একসঙ্গে কানাডা যাবো।
চলবে...
বিষয়: সাহিত্য
১২৫৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন