প্রেম যেন এমনই হয়-৩১

লিখেছেন লিখেছেন প্রগতিশীল ০৮ জানুয়ারি, ২০১৫, ১১:৪৬:২৪ রাত



কাজী সাহেব কাজের কাজ করলেন। রতন-সঞ্চিতা জুটিটা বেঁধে দিলেন। কিন্তু কিছু বিষয় তাকে ও উপস্থিত সবাইকে বেশ অবাক করলো। বিয়ের যে কাজগুলোতে মৃদু থেকে মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি হয় সে কাজগুলো সব সেরেই ফেলেছে বর-কনের অভিভাবকরা। বিয়ের মোহরানার পরিমাণটাও তারা আগেই আলাপ করে রেখেছেন। আর রতন নিজেও জানেনা তার মোহরানা নগদ পরিশোধও হয়ে গেছে বিয়ের সময়ই।

বিয়ে কবুলের মুহূর্তে রতন সঞ্চিতা দু’জনেই শুনলো যত টাকা মোহরানা তার পুরোটাই পরিশোধিত।

বিয়ে এই প্রথম এটা যেমন ঠিক তবে প্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে তারা দু’জনেই জানে মোহরানার আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটা এমন; এত টাকা ধার্য করে অত টাকা পরিশোধ করে বর-কনের ‘কবুল’ শব্দটা জানা হয়।

তবে এ বর-কনে দুজনেই জানলো তাদের বিয়ের নির্ধারিত মোহরানা কনে বুঝে পেয়েছে।

সঞ্চিতার মোবাইল তার এক বান্ধবীর হাতে ছিল। সেখানে কবুল বলার ১০ মিনিট পর একটা এসএমএস এসেছে আপনার অ্যাকাউন্টে পাঁচ লাখ টাকা জমা হয়েছে।

যাহোক দোয়ার মাধ্যমেই বর কনেসনহ সবাই বিষয়টা জানলো। বরের বাবা রতন যে সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়ার কথা তা থেকেই মোহরানা শোধ করে দিয়েছেন।

সবচেয়ে অবাক হলেন জাফর চৌধুরী ও সাদিয়া জাহান সঞ্চিতার বাবা-মা। লিটন সাহেব মোহরানার বিষয়টা কমিয়ে ধরেছেন বলে তারা মনে করলেও এভাবে বিয়ের দিনই পরিশোধ করে ফেলবেন তা তারা ভাবতেও পারেননি।

সুযোগ পেয়ে জাফর সাহেবকে খোঁচালেন সাদিয়া জাহান সঞ্চিতার মা। তার অভিযোগ মেয়ের মোহরানা শোধ হলেও তারটা শোধ হয়নি। বিয়ের সময় পঞ্চাশ হাজার টাকা মোহরানা ধরে পাঁচ হাজার টাকা পরিশোধ করে এখনো ৪৫ হাজার টাকা বাকি রেখেছো।

তবে জাফর চৌধুরী বউয়ের এ অনুযোগে হাসলেন। বিয়ের ভরা মজলিশেই ঘোষণা দিলেন, সম্মানিত উপস্থিতি; সবার সামনে আমার একটি ঘোষণা আছে।

সবাই তার দিকে তাকালেন; অবাক হয়ে তার দিকে তাকালেন নতুন বেয়াই বেয়ান।

ঘোষণা হল; মেয়ের মায়ের মোহরানা বাকি ছিল ৪৫ হাজার টাকা সেটা আজ শোধ করছি।

জাফর সাহেব ভেবেছিলেন; করতালি পাবেন তবে পেলেননা। হাসির আর একটা রোল উঠলো। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পরলেন উপস্থিত বয়সী পুরুষরা। কারণ সবারই একই অবস্থায় বিয়ে হয়েছিল। সবারই মোহরানাটা অপরিশোধিত আছে!

এবার নারীদের মধ্য থেকে কথা এল আর কথা আর কেউ বললো না। বললো বরের মা সানজিদা; ‘বেয়াই সাহেব বোধহয় কিছুটা অবিচার করছেন?’

নিজের বউয়ের এমন বিদ্রোহের কারণ বুঝলেন না লিটন সাহেব। বললেন; বেলী আমিতো বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় সব পরিশোধ করেছি।

ধূর নিজের কথা বলছি নাকি বলছি বেয়ানের কথা যে আমলে তাদের বিয়ে হয়েছিল তখনকার দিনে ওই টাকায় ধানমন্ডি এলাকায় ছোটখাট একটা প্লট হতো; তুমি কি বল?

মুখ হ্যাঁ করা ছাড়া লিটন সাহেবের কোন উপায় ছিলনা।

ইতোমধ্যে দুই বেয়ান পাশাপাশি দাঁড়িয়েছে। যাহোক জাফর সাহেব হেসে ফেললেন; বউ-বেয়ানের ঐক্যজোটে। এবার ঘোষণা দিলেন; দেবই যেহেতু আর কম দিয়ে কি লাভ। দলিল করতে যত সময় লাগে সে সময়ের মধ্যেই আমার ধানমন্ডির এ বাড়িটা সঞ্চিতার মায়ের নামে দিয়ে দিলাম মোহরানা স্বরূপ।

উপস্থিত সবাই হাততালি দিলো। যে তালি স্থায়িত্ব লাভ করলো নারীদের দু’হাতেই।

পুরুষরা বুঝি সব বিপদেই পড়ে গেল। গণহারে শুরু হল মোহরানা পরিশোধের ধুম। নারীদের মোবাইলে মেসেজ আসতে লাগলো অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হওয়ার।

দু’চারজন বীর পুরুষ বাড়ি অথবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও দিলেন গৃহিনীদের। কোনটাই কেবল প্রতিশ্রুতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার বিষয়ে আবদ্ধ রইলো না।

এ বিয়েতে যেন আসল বর কনের বিন্দু পরিমাণ দাম থাকলো না। তাদের কোন চর্চাই কারো মুখে নেই। তাদের বিয়ের পর্ব সেই কখন শেষ হয়েছে তবে মুরব্বীদের মোহরানা পর্বের জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। নবদম্পতিও ক্ষুধার্ত, তবে তাদের খোঁজ নেয়ার কেউ নেই। রতন আনমনে ফেসবুক খুললো, দেখলো সঞ্চিতাও অন। বিয়ের পর প্রথম চ্যাট। প্রথম বাক্য ‘ক্ষুধা লেগেছে’। রাত তখন ১২টা!

চলবে

বিষয়: বিবিধ

৯৫৫ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

299867
০৯ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০১:০৭
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : মাশ-আল্লাহ মেয়ের বিয়েতে মায়ের মোহরানা আদায়। ভালো লাগলো! চালিয়ে যান....।
১০ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৯:২২
242864
প্রগতিশীল লিখেছেন : আপু অনেক ধন্যবাদ আপনাকে...বিরতি দিয়ে লিখেছি তাই কেউ পড়ছে না তবে আপনাকে পেয়ে খুশি হলাম
১০ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৯:২২
242865
প্রগতিশীল লিখেছেন : আপু অনেক ধন্যবাদ আপনাকে...বিরতি দিয়ে লিখেছি তাই কেউ পড়ছে না তবে আপনাকে পেয়ে খুশি হলাম
300866
২০ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৬:০৭
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : Applause Applause Applause Applause Applause সবাই মোহরানা পরিশোধের ব্যাপারে এমন সচেতন হলে তো কথাই ছিলোনা! Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up
301123
২১ জানুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:০৬
প্রগতিশীল লিখেছেন : লেখক যেভাবে মেসেজ দেয়...

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File