প্রেম যেন এমনই হয়-২৯

লিখেছেন লিখেছেন প্রগতিশীল ০৩ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৭:৫৬:১৯ সন্ধ্যা



আজ সেই বিয়েটার দিন যার জন্য রতন আর সঞ্চিতা জীবনের বিশের অধিক বসন্ত পার করেছে। বিভ্রান্ত দিকভ্রান্ত থেকে আবার ফিরে এসেছে বাঙালির শাশ্বত পথে। বিয়ে যেখানে সঙ্গীনীর অধরের এক চিলতে মিষ্টি হাসি সঙ্গীর রুমালে ঢাকা লাজুক মুখ। নিজের ঘরে বসে প্রহর গুনছে রতন। এদিকে রাত গড়িয়ে সকালটা হয়েই গেল কিন্তু সকালটা দুপুর অবদি যায়না কেন? এখানে সেখানে একটু আধটু উকি সব মিলে ছয়টা বাজেতো নয়টা বাজেনা অবস্থা। শেষে ভাবলো বাইরে গিয়ে একটু ঘুরে আসি। দরজা দিয়ে বের হচ্ছিল এসময় একজন কাঁচা পাঁকা বয়স্ক লোককে বাসায় ঢুকতে দেখে থমকে দাঁড়ালো। জিজ্ঞেস করলো, আপনি?

লোকটির চেহারায় দুষ্টুমির ছাপ স্পষ্ট। বললেন, বিয়ে করতে এসেছি। রতন হেসেই বলল, তবে বরের পরিচয়টা, নামতো একটা থাকবে নাকি? লোকটি জবাব দিল, আমি আফসারুজ্জামান লিটু। লিটনের মামা। রতন খুশিতে আত্মহারা! মানে আপনি লিটু নানু?

লিটু সাহেব বললেন, তুই কোনটা ছোটটা না বড়টা? ছোটটাই হবি, শালা আমার শুনলাম সুন্দরী ছুকড়ি নাকি পটিয়েছিস? বেশ ভালো, আমার কাছে কিছু টিপস নিয়ে নিস কাজে দেবে।

রতন কিছুটা লজ্জিত ভঙ্গিতে বললো, তোমাকে নিয়ে কাল থেকে অনেক আলাপ হচ্ছে নানু।

লিটু সাহেব রতনের পিঠ চাপড়ে বললেন, হবে না বিয়ের আগের পরামর্শতো নানুরাই দেয়।

রতন এবার রাখঢাক ছেড়ে রীতিমত হৈ চৈ শুরু করে দিল। ‘মা মা লিটু নানু এসেছে লিটু নানু।’

নাম শোনার পর পুরো বাড়ি লোকজন ছুটে এলো, বাদ পড়লো না রুনুও। অবাক হলেন, লিটন সাহেবের লিটু মামা।

সবাই এসে তাকে ঘিরে রেখেছে, এর কারণটা আবিষ্কার করা তার জন্য কঠিন হয়ে গেল।

ছুটে এলেন লিটন সাহেব। জড়িয়ে ধরলেন মামাকে। এতো মামা নয় বন্ধুও। বললেন, ‘চলো ভেতরে চলো, মামীকে কি বাইরে রেখে এসেছ?’

শুকনো জবাব এল, থাকলে তো নিয়েই আসতাম।

রেখে এলে কেন?

কি আবোল-তাবোল বলিস লিটন? তোকেতো মেসেজ করে জানিয়েছিলাম।

মানে?

ছয় মাস হয়ে গেল, আর তুই এখন প্রশ্ন করছিস।

আসলে মামা এত অপ্রয়োজনীয় মেসেজ আসে যে প্রয়োজনীয় গুলো খোলাই হয়না।

আফসোস করলেন লিটু সাহেব, বললেন ভেবেছিলাম তুই জেনেই নীরব আছিস। বেশি বয়সে সন্তানের চেষ্টাই কাল হলো, ছ’মাস আগে তোর মামী মারা গেছে।

নির্বাক হলেন লিটন সাহেব।

পরিবারের সবাই হতবাক। সময় মানুষকে থামিয়ে দেয়। একটু আগে যে মানুষটি আনন্দের কারণ ছিল এখন তিনিই সবার হৃদয়কে নাঁড়া দিলেন। তিনিতো আর বেঁচে নেই।

এই করুণ নাটকীয়তার শেষ অংশটুকুতে সানজিদা এলেন, সবার আগ্রহ উপেক্ষা করে লিটন সাহেবকে বললেন, মামাকে নিয়ে ভেতরে আসো। উনি ফ্রেস হয়ে নাস্তা করবেন। আর তোরা যার যার কাজে যা।

সবাই চলে গেল, কেবল রতন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বাইরের দিকে বের হল। তার কষ্ট এতটুকু লিটু নানুরও একদিন বিয়ে হয়েছিল।

চলবে...

বিষয়: সাহিত্য

১০৪১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

299004
০৩ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৮:০১
আফরা লিখেছেন : ভাইয়া আপনি তো বলেছিলেন ডিসেম্বরের ২০ তারিখের মাঝে দিবেন তা এতদিন পর !! কিন্তু সমস্যা একটা আছে আমি ধারাবাহিক পড়তে পারি না আর আগের গুলো না পড়লে তো কিছুই বুঝব না ।তাই পড়া থেকে বিরত থাকলাম ।
০৩ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৮:০৯
242092
প্রগতিশীল লিখেছেন : কথা দিয়েছিলাম...বাস্তবায়ন খুবই কঠিন...আপনাকে ১-২৯ পর্ব পড়ার আমন্ত্রণ...আর আমি ওই সময়ের মধ্যেই লিখতে শুরু করেছিলাম...তবে লেখা থামানো অনুচিত এটা বুঝেছি...আশা করছি অন্তত ১ দিন অন্তর এক পর্ব করে দিতে থাকবো...
299869
০৯ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০১:১৭
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ধারাবাহিক গল্প পড়তে আমার খুবই ভালোলাগে তবে বেশী অপেক্ষাতে থাকতে কষ্ট হয় তাই অনেকগুলো পর্ব একসাথে হলে পড়ে নেই তাতে খুবই মজা লাগে।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সুন্দর লেখনীর জন্য
১০ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ১০:১৭
242870
প্রগতিশীল লিখেছেন : ধারাবাহিকভাবে লিখছি আপনাদের জন্যই...

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File