গল্পটা বিয়েরই ( অবশেষে...)

লিখেছেন লিখেছেন প্রগতিশীল ১৬ মার্চ, ২০১৪, ০৭:২৯:৩৮ সন্ধ্যা



সকাল ৭ টা ৩০ মিনিট। স্কুলের সামনে ছোট্ট এক মেয়ের চুল বেঁধে দিচ্ছিলেন বাবা। একবার বেণী করে দিচ্ছিলেন আর একবার এমনি আঁচড়িয়ে দিলেন সুন্দর করে। এরপর পুরো চুল পেছনের দিকে নিয়ে নিয়ে রাবার ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে দিলেন। সুন্দর মিষ্টি মেয়েটি কিছুই বলছিলনা কেবল অসাধারণ এক মায়াবী ভঙ্গিতে বসে ছিল অবিভাবকদের বসার জায়গায়।

এ পুলকময় দৃশ্যটুকু অল্প কিছু দূর থেকে লতা বেশ কিছুক্ষণ ধরে খেয়াল করছিল আর মিটমিটিয়ে হাসছিল। তার সাথে থাকা ছোট্ট ছেলেট হঠাৎ স্কুলের গেঠের দিকে দৌড় দিচ্ছিল তাই আর ওদিকে তাকানোর সুযোগ পেলনা সে। ধরে ফেলল দুষ্টু ছেলেটাকে। এরপর আস্তে করে কোলে নিয়ে দুটো চুমু দু’গালে দিয়ে তাকে ঢুকিয়ে দিল স্কুলের গেট দিয়ে। ছেলেটি দিল ভোঁ দৌড়। হাসল লতা ছেলেরা এমন দুরন্তই হয়।

একটু সরে এসেই সে দেখতে পেল সেই মেয়েটাকেও তার বাবা আদর করে স্কুলের দরজা দিয়ে ঢুকিয়ে দিল। এবারও সে সেই মিষ্টি মেয়েটির মুখ আর তার বাবার পিঠই দেখতে পেল। একটা প্রশ্ন এল লতার মনে মেয়েটির কি মা নেই ? কিন্তু মানুষের কল্পনার রং বড় বিচিত্র !

কখন তা কিরকম হয় বোঝাটাই মুশকিল। তাই আর অহেতুক এ বিষয়টা নিয়ে চিন্তা না করে উল্টো দিকে ঘুরে হাটা দিল সে। ঠিক এই মুহূর্তে পেছনে ফিরে তাকালেন সুজা সাহেব সেই মিষ্টি মেয়েটির বাবা। তারও মনে হচ্ছিল কেউ তাকে খেয়াল করছে। কিন্তু ফিরে সে চমকে উঠল। যদিও তিনি লতার পেছনের দিকটাই দেখতে পেয়েছিলেন তার পরও তার পোশাকের ধরণটা পরিচিত কারও মনে হচ্ছিল। পরিচিত জনের পেছনটাও তো অপরিচিত নয় । অমূলক নয় হয়ত সেরকম কেউ হবে যাকে নিয়ে কোন এক সময় একটু আধটু ভেবেছিলেন তিনি। এসব আর এখন ভেবে কি লাভ। তবুও অবুঝ মন তখনো বোঝেনি এখনও বুঝতে চায় না। ভুলেই যায় কল্পিত প্রেয়সী কল্পনার অতল তলে চিরদিনই হারিয়ে যায়।

সুজা সাহেব আজ নতুন নয় প্রায় একবছর ধরে আসছেন এ স্কুলে কিন্তু কোনদিন তার এরকম কিছু মনে হয়নি। তবে হঠাৎ করে একট ছবি হৃদয়ে ভেসে উঠল। সেই মেয়েটির কথা তার মনে পড়ল যার রূপোমুগ্ধ ছিলেন তিনি। রুপোমুগ্ধ এজন্য যে সে মেয়েটি অনন্যার বান্ধবী ছিল। অনন্যা হল সুজা সাহেবের প্রিয়তম স্ত্রী। সেই ছাত্র জীবন থেকে তাকে ভালও বেসেছিলেন তিনি। তার বাইরে আর কাউকে তিনি কল্পনাও করেননি। কিন্তু অনন্যার এক বান্ধবীর চেহারা তার খুব ভাল লেগেছিল। কি আর করার দুটি ফুল কি একসাথে কারো ভাল লাগতে পারেনা ! তাও আবার পুরুষের মন। তবে অনন্যাও যথেষ্ঠ সুন্দরী ছিল। কিন্তু সমস্যাটা ওই বিধাতার বানালই যদি এত বিচিত্র রূপ দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন অপরূপ রূপবতী বানানোর দরকারটা কি ? মনে হয় পুরুষের মতিভ্রমের পিছনে বিধাতারই কোনো ষড়যন্ত্র আছে।

তবে একথা একদিন অনন্যা বুঝতে পারে। বড় বিচিত্র ছিল অনন্যাও। নিজেদের আড্ডার জায়গায় তার সেই বান্ধবীর সাথে সুজা সাহেবের বসার সুযোগ করে দিত। দুষ্টু বা ডাইনি কোনো প্রকৃতিরই ছিলনা অনন্যা। তবে ভালবাসার মানুষের ভাললাগার বিষয়কে সে প্রাধান্য দিত। এরকম নারী সমাজে বিরল। একদিন তার এ চালাকি বুঝতে পারেন সুজা সাহেব। অনন্যাকে সরাসরি প্রশ্ন করলে সে হাসে। সেদিনই সোজা কাজী অফিসে গিয়ে অনন্যাকেই বিয়ে করেন তিনি বন্ধনটা একেবারে পাকাপোক্ত করার জন্য। এরপর ফাইনাল পরীক্ষা তারপর সকল বন্ধু বান্ধবের সাথে বিচ্ছেদ। যোগাযোগ শুধু বন্ধনে আবদ্ধ মানুষটির সাথে।

হঠাৎ ঢং করে ঘণ্টা পড়ার আওয়াজে চৈতন্য ফিরে আসে তার। দরকারি কিছু কাজের কথা মনে পড়ে যায়। আবার ফিরে এসে বাচ্চাকে নিতে হবে। তাই জলদি চলেন তিনি।

ফিরে আসেন স্কুল ছুটির ঠিক পাঁচ মিনিট আগে। ছুটির পর গেট দিয়ে বের হচ্ছিল তার মেয়েটি এসময় তার চুল ধরে টান দেয় এক দুষ্টু ছেলে। শুধু টানা নয়, চুল টেনে ধরেই গেটের বাইরে বেড়িয়ে আসতে শুরু করে ছেলেটি। সুজা সাহেব যতক্ষণে খেয়াল করলেন ততক্ষণে শুনলেন, ‘ করছ কি তমাল ছেড়ে দাও ব্যাথা পাবেতো !’ ছাড়িয়ে নিয়ে মেয়েটিকে আদর করছিল লতা এসময় হাসিমুখে এগিয়ে এসে সুজা সাহেব বললেন,‘ আপনার ছেলে ?’ লতা মুখ উঁচু করে তাকাল। চশমার ভেতর দিয়ে সামনের জনকে দেখল অনেকটা চেনাই মনে হল তার কিন্তু ! সুজা সাহেবও অনেকটা চমকে উঠলেন তারও সামনের মহিলাটিকে কিছুটা চেনা মনে হল। কিন্তু তারা নিজেদের পরিচয় বিনিময় না করে বাচ্চাদেরটা করল। সুজা সাহেবের মেয়ের নাম অনুপমা সংক্ষেপে অনু আর লতার ছেলের নাম তমাল। তবে আজ এ পর্যন্তই।

রাতটুকু দুজনেরই একটু অন্যরকম কাঁটল। সুজা সাহেব ভাবছিলেন ভদ্রমহিলা তার পরিচিতি তবে চশমা পড়ায় তাকে চেনা যাচ্ছেনা। যদি তিনি সংকোচ না করে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেন তাহলে হয়তবা এমন হতনা। অন্যদিকে লতাও ভাবল যে অনুর বাবা পরিচিত কেউ কিন্তু ভদ্রলোকের গোফটা তার চিন্তাকেও থামিয়ে দিল। যাহোক প্রতীক্ষা সকাল পর্যন্তই।

আবার সেই স্কুলের সামনে দুই অবিভাবক তাদের বাচ্চাদের স্কুলের ভেতর প্রবেশ করিয়ে চলে আসছে। লতাই এগিয়ে গেল সুজা সাহেবের দিকে। বলল, আপনাকে আমার ! তার মুখের কথা কেড়ে নিয়েই সুজা সাহেবব বললেন, চেনা চেনা লাগছে তাইতো। আমি তোমাকে ঠিকই চিনে ফেললাম এখন। চশমা লাগিয়ে একটু অন্যরকম লাগছে। কিন্তু কণ্ঠটা সেই আগের মতই আছে। সুন্দরীর অসুন্দর কণ্ঠ।

লতা ইষৎ বিরক্ত হয়ে বলল, ‘সুজা ভাই ! কিন্তু নিজের কথা বলুন এ শতাব্দীতে কেউ গোঁফ রাখে। এ গোঁফটা আপনাকে পরিচিত জনদের কাছেও অপরিচিত করেছে। তবে আমার কণ্ঠ নিয়ে ব্যঙ্গ করা এখনো ভোলেননি।’

‘না ভুলব কেন, তোমার কণ্ঠটা খুব একটা সুন্দরনা এটা আগেও বলতাম এখনো বলছি। কর্কশও না আবার মধুরও না।’ বললেন সুজা সাহেব। তবে তুমি আগে অনেক সুন্দর ছিলে।

‘কিন্তু এখন ?’ স্মিত হেসে বলল লতা।

এখন বোধহয় মুটিয়ে গিয়ে আরো বেশি সুন্দরী হয়ে গেছ। আগে সুন্দর মেয়ে ছিলে এখন সুন্দরী মহিলা হয়েছ। চশমাটা ছাড় তবেই দেখবে.....

থাক আর বলতে হবেনা এতদিন পরে দেখা করে এখন আর ঝগড়া করতে চাইনা। কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই অনেক কথা হল চলেন বসে একটু চা খাই। চা খেতে খেতেই না হয় বাকী কথা বলব।

তাই করি চল এ ব্যবচ্ছেদখানা থেকে একটু দূরে যাই।

হাটতে হাটতেই লতা বলল, ব্যবচ্ছেদখানা মানেটা বুঝলামনা।

আরে মর্গ বা অপরেশন থিয়েটারও বলতে পার। এ অবিভাবকস্থল তা নয়তো কি ? আমিতো এখানে সংখ্যালঘু পুরুষ মানুষ কিন্তু তুমিতো নিশ্চয়ই ওই ভদ্রমহিলাদের সাথেই প্রতিদিন বস। এনারা মুখ দিয়ে কত বড় বড় অপারেশন এখানে বসেই করে ফেলেন। একেবারে নিজের ঘর থেকে পরের বর, দেশ থেকে বিশ্ব, বুয়া থেকে বৌদি সব আইটেমের রহস্য এখানেই উন্মোচন হয়।

লতা হেসেই বলল, মহিলাদের কথা শোনার অভ্যাসও দেখি গড়ে উঠেছে !

সুজা সাহেব কৌশলে একজনের দিকে দেখিয়ে বললেন, ওই যে মহিলা আমি বুঝিনা ওরকম একটা হাতি নিয়ে ওর বর ঘর করে কেমন করে। হরিণ আর হাতি কি এক জিনিস হল। কি কথাই না বলে।

লতা থামিয়ে দিয়ে বলে, আপনার কথায় মাথা ধরে যাচ্ছে। চা বাদ চলুন কফি খাই।

এরপর দুজনেই একটি কফিশপে ঢুকল।

অনেক গল্প হল তাদের জীবনের গল্প এ যে বেঁচে থাকতেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার গল্প।

সুজা সাহেবের গল্পটা অনেক সহজ পরিবারে দুজনেই কর্মজীবী স্ত্রী অনন্যা কলেজে পড়ায়। আর তিনি আইটি ফার্মে কাজ করেন তার অফিস বিকেল থেকে তাই সকালে বাচ্চাকে নিয়ে তিনিই আসেন।

অন্যদিকে লতার স্বামী দেশের বাইরে সময় তার কাটে সন্তাকে নিয়েই।

এই হল দুজনের গল্প।

পূর্ব পরিচিতদের নতুন পরিচয় তারপর নিত্যদিন এরকম গল্প হওয়ায় বাচ্চাদের সাথে নিজেদের সময়ও ভালই কাটছে তাদের।

হঠাৎ একদিন অনুকে নিয়ে আসে তার নানী। লতা তাকে চিনতই। আর তাকে দেখে অনুর নানীও ভীষণ খুশি হল। কুশল বিনিময়ের পর লতা জিজ্ঞেস করল সুজা সাহেবের কথা।

অনুর নানী বললেন, ওর হাল্কা ঠা-া লেগেছে।

জবাবে লতা বলল, ‘অনন্যাতো আসতে পারত। একটা দিনে কি এমন সমস্যা হত। আপনি শুধু শুধু কষ্ট করে এলেন।’

‘অনন্যা ! কেন সুজা তোমাকে কিছুই বলেনি।’

লতা বলল, ওর আবার কি হয়েছে ?

অনুর নানী বললেন, ‘ওতো নেইরে মা। অনুর জন্মের সময়ইতো ও মারা গেছে।’

বিস্ময়ে হতবাক লতা !

অনন্যার মাকে জড়িয়ে ধরে অনেক্ষণ কাঁদল। কেঁদেই কেঁদেই বলল, আমি জানতামনা আন্টি এতদিনে সুজা ভাই আমাকে কিছুই বলেনি। বুঝতেও দেয়নি।

পরস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে লতা অনুর নানীর কাছ থেকে সুজার ফোন নম্বরটা নিল। প্রতিদিন দেখা হয় বিধায় নম্বরটা আর নেয়া হয়নি। একদিন অনন্যার সাথে বাসা গিয়েই দেখা করার বিষয়েও ভেবে রেখেছিল সে।

রাত ঠিক ১১ টা সুজার ফোন বেঁজে ওঠে।

কণ্ঠ চিনতে পারেন সুজা সাহেব। আশ্চর্যও হন কিছুটা।

লতা নিজে থেকেই প্রশ্ন করে চিনতে পেরেছেন।

আর চেনা লাগবেনা এরকম একটা বাঁজে কণ্ঠ একটা সুন্দরী মেয়ে স্যরি মহিলারই আছে যাকে আমি চিনি।

লতা জানে কণ্ঠ নিয়ে কথা বলতে গেলেই কথার কথা অনেক কথা হবে।

তাই সে প্রশ্ন করে শরীর কেমন এখন।

এইতো অনেকটা ঠিক।

অনন্যাকে বাঁচিয়ে রাখার কি দরকার ছিল, কোন দিনতো বললেননা ও নেই।

থমকে যায় সুজা। ওতো আমার স্মৃতিতেই বেঁচে আছে।

এরপর দুজনেই নিরব প্রায় এক মিনিট।

লতা বলল, কাল স্কুলে আসেন।

পরশু আসব !

লতা একটু রেগেই বলল, কাল আবার কি হল ?

শুক্রবার।

ও তাইতো, ভুলেই গিয়েছিল লতা। শনি থেকে বৃহস্পতিবার নয় গ্রহ থেকে গ্রহে যাওয়ার মত সময় কেটেছে তার। এই একটি সপ্তাহ বোধ হয় অনেক ধীরে শেষ হয়েছে। অনেকটা অসহায়ের মত লতা বলল, কাল একটু দেখা করি ?

বাসায় চলে এস কাল পুরো পরিবারই কাল বাসায় আমরা। অনেক ভাল হবে তুমি এলে, বললেন সুজা সাহেব।

বাসার ঠিকানাটা নিয়ে নিল লতা।

দুপুরের আগেই গেল লতা, গিয়েই সুজা সাহেবের সাথে কথা খোঁজ খবর। তারপর অনুর সাথে খুনসুটি। অনু জেনে খুব খুশি যে লতা আন্টি তার মায়ের বান্ধবী।

অনু অনন্যারই ফটোকপি এটা লতা বেশ ভালভাবেই বুঝতে পেরেছে। বান্ধবীকে সে খুবই ভালভাবে চিনত। সে এও জানে যে তার জন্যই সুজা অনন্যাকে জলদিই বিয়ে করেছিল। তবে তাতে সে কিছুই মনে করেনি। অনন্যাকে সে সচেতনভাবেই বলেছিল, “নারীর রূপ কখন কাকে বিমোহিত করে সেটা বোঝা দায়, তবে আমি কিন্তু তোর বরকে কোনরকম সম্মোহিত করার চেষ্টা করিনি।”

হেসেছিল অনন্যা ওই মিষ্টি হাসিটাই আজ অনুপমার মুখে দেখতে পেয়ে প্রাণ জুড়িয়ে গেল তার।

বিকেলে ফিরে আসবে লতা এসময় অনুর নানী বলল, ‘ মা সারাদিন তোমার বাচ্চাটাকে রেখে একা কাটালে, সে কার কাছে ?

লতা বলল, ওর মায়ের কাছে।

মানে !

ওহ আন্টি আপনাকেতো বলাই হয়নি। তমালতো আমার ভাইয়ের ছেলে। আমার সময় কাটেনা এজন্যই ওকে নিয়ে স্কুলে আসা যাওয়া করছি। ও আমাকেই মা ডাকে আর ওর মায়ের থেকেও আমার কাছেই বেশি সময় থাকে।

আর তোমার স্বামী ?

কথা শুরুর আগে দীর্ঘশ্বাস ছেড়েই লতা বলল,‘ আমার একট আনুষ্ঠানিক বিয়ে হয়েছিল মাত্র তবে ঘর-সংসার কিছুই হয়নি। দুপুরে বিয়ে হয় আর রাতেই ফয়সাল দেশের বাইরে চলে যায়। আপনিওতো ওকে দেখেছিলেন।

হ্যা জবাব দিলেন অনুর নানী। কিন্তু ও আর দেশে আসেনি বা তোমাকে নিয়ে যায়নি।

না আন্টি ওসব কথা এখন থাক, পরে আরো বলব। এখন যাই সন্ধা হয়ে যাচ্ছে।

সুজা সাহেব রাতে এসব কথা শুনে খুবই কষ্ট পেলেন। ফয়সালের মত একটা ভাল ছেলে এমন কাজ করতে পারল, অমন সুন্দর মেয়েটার জীবনটাকে এলোমেলো করে দিল।

রাতে ফোন করলেন লতাকে। লতা এড়িয়ে যেতে চাইছিল বিষয়টা। তবে সুজা সাহেবের চাপাচাপিতে বলল, ভাইয়া আপনাদের বিয়ের পরের বছরই আমাদের বিয়ে হয়। আমরা পরস্পরকে ভালবাসতাম এটাতো আপনি জানতেনই। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমারই সুন্দরীদের কপালটা আসলে সুন্দর হয়না, আর বরতো নয়ই। বিয়ের আগ থেকেই ফয়সাল চেষ্টা করছিল দেশের বাইরে যাওয়ার। কিন্তু তার সে সৌভাগ্য আমার জন্য দুর্ভাগ্য হয়ে এল। বিয়ে হল দুপুরে আর রাতেই ও চলে গেল দেশের বাইরে। ও আমাকে ভালবাসত ভেবেছিলাম। কিন্তু ভুল আমারই ছিল অহংকার করে বলছি না একটা সুন্দরীর ভালবাসা পাওয়া তার জন্যই সৌভাগ্যের বিষয় ছিল। আর তাই যখন ডাবল সুন্দরী পেয়ে গেল তখন চলে গেল আমাকে ছেড়েই চলে গিয়ে স্বার্থ পরতার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।

মনোযোগ দিয়েই শুনছিলেন সুজা সাহেব। মাঝখানে বললেন, আসলে কি হয়েছে বলত ?

লতার জবাব, কি আর নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য এক বিদেশিনীকে বিয়ে করে সে আমাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছে।

সুজা সাহেব একটু রসিকতা করে বললেন, অনন্যাওতো কম সুন্দরী ছিলনা। যদিও স্কার্ফ পড়লে তোমাকে একটু বেশি সুন্দর লাগত তবে যাহোক তার স্বামীতো তাকে ছেড়ে যায়নি। কিন্তু সেতো কেবল এক টুকরো চাঁদের টুকরো হাতে ধরিয়ে দিয়ে অজানার পথে পাড়ি দিল। বলতো চাঁদ আর চাঁদের টুকরো কি এক হল। কথায় তার আবেগের ভাব স্পষ্ট।

লতা প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বলল, এখানে তার বা আপনার কারই কিছু করার নেই। ¯্রষ্টার হাত যেখানে সেখানে সৃষ্টির হাততো নিরুপায় হবেই। যাহোক বিয়ে করলেননা কেন ?

সুজা সাহেব বললেন, ভালবাসার পূর্ণতা পেয়েছি শূন্যতা থাকলে না হয় কথা ছিল। উপহারও পেয়েছি অনুপমাকে আর কিছু চাইনা। হৃদয় পূর্ণ করার মত ভালবাসা দিয়েছে তোমার বান্ধবী।

যাহোক নিজের কথাটা বল ফয়সাল না হয় জীবনের প্রথম ইনিংসেই আউট দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করলেই তো পারতে।

না সুজা ভাই এতে বেদনা আরো গাঢ় থেকে গাঢ় হয়। ঘর পোড়া গরুতো ধোয়া দেখলেই চমকায়।

তো একাকিনী রমণী এভাবে আর কতদিন থাকবে ?

দুখের হাসি হাসাবেননা সুজা ভাই। এক সময় সৌন্দর্যটাকে গর্ব মনে হত, মনে হত এ সৌন্দর্যের দরজা দিয়েই ¯্রষ্টা সুখকেও জীবনে প্রবেশ করাবে। আর তা বের হবে কোন দিক দিয়ে ললনার ছলনায় আটকে থাকবে জীবনভর। কিন্তু খেয়ালী মন বোঝেনি সব আলোর পরই অন্ধকার থাকে। সৌন্দর্যের আলো যখন ঠিকরে পড়ছিল তখন অন্ধকারের কথা ভাবাই হয়নি। এ এক আজব অন্ধকার।

আহা বয়সতো সবে ৩৫ আর রূপেও ভাটা পড়ল কই। দাড়াও ম্যারেজ ডটকম এ একটা বিজ্ঞাপন দেই দেখবে বাজারদর এখনো কমেনি, হাসতে হাসতে বললেন সুজা সাহেব।

সাহিত্যিকদের মতো নিজেকে দুখী ভেবনা। ঊনারাতো গল্পের প্রয়োজনে দুখী আর সুখী হয় নিজের প্রয়োজনে নয়। যোগ করলেন সুজা সাহেব।

লতা হেসে বলল, আমিতো অর্ধ বিধবা আর আপনিতো পুরোটা। এখন বলুন, আপনার জন্য খুঁজতে হবে কিনা। তাহলেও একটা কাজ হাতে পাই।

সুজা সাহেব বলল অনেকতো কথা হল এখন ঘুমাই কি বল ? লতা ঠিক আছে বলে ফোন রেখে দিল।

সকাল হল। অনুর নানী সুজাকে জিজ্ঞেস করলেন, আজ কি আমি যাব অনুকে নিয়ে না তুমিই যাবে ? সুজা সাহেব বললেন আমিই যাব। তার কিছুটা পরিবর্তন শ্বাশুড়ীকে বেশ খুশি করল। তিনি ভাবলেন, জোড়া লাগুক আর না লাগুক দুটো ভাঙ্গা জীবন, যাতে চলছে কিছুটা রসায়ন।

কিন্তু দিন চলে গেল সময় বয়ে চলল। এর কোন পরিণতিই তার নজরে পড়লনা।

একদিন তিনি নিজেই লতার মায়ের কাছে গিয়ে বললেন নিজের মনের কথা। লতা-সুজার বিয়ের কথা। তারও আপত্তি নেই। বরং খুশিই তিনি।

তবে একথা শুনে লতা ও সুজা দুজনেই অবাক।

সুজা সাহেব শ্বাশুড়ীকে বললেন, এসব উৎকট উদ্যোগ বন্ধ রাখুন।

লতা অনেকটা রাগ হয়েই তার মাকে বলল, কালই যাচ্ছি গ্রামে ফোন নম্বরও চেঞ্জ করব। তোমাদের জন্যই আর সুজা ভাইয়ের সাথে যোগাযোগই করবনা।

তার মা বলল, কিন্তু আমরা চাইছিলাম তোরা এক হয়ে আবার জীবন শুরু কর সংসার কর। আর অনুতো তোর বান্ধবীরই মেয়ে। এতে সমস্যা কি।

লতা বলল, ছি মা ! একি বলছ তুমি অনুর বিষয়ে আমি কিছু বলেছি। কিন্তু মা আমরা দুজন দু’মেরুর তাই মিলন হবেনা। আর এসব চিন্তা করবেনা কখনো।

এখনো সুজা সাহেব অনুকে নিয়ে স্কুলে আসেন আগের মতই। কিন্তু তমালকে নিয়ে আসেন তার দাদী অর্থাৎ লতার মা। ইদানিং তমালের দাদীর সাথেই সখ্য হয়েছে সুজার। যদিও মনে মনে ভাবছেন সামনের বছর অনুকে অন্য স্কুলে ভর্তি করানোর কথা।

আর লতা চলে গেছে গ্রামে আর তাদের যোগাযোগ হয়না।

এখনও রাত আগের মতই কাটে সুজা সাহেবের কিন্তু হদয় বলে একটা জিনিসতো আছেই। সেখানে একটা গোপন বিষন্নতার তৈরি হয়েছে। হঠাৎ অন্ধকার ঘরে আলোর ঝলকানি জোনাকির মত। নিঃশব্দ মোবাইল জ্বলছে। এসএমএস এসেছে অপরিচিত নম্বর থেকে লেখা “কাল আসছেনতো স্কুলে ?”

বিষয়: বিবিধ

২৯৩৭ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

193103
১৬ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৪
সুশীল লিখেছেন : দারুন্স Big Hug Big Hug
১৬ মার্চ ২০১৪ রাত ১১:৪১
143958
প্রগতিশীল লিখেছেন : প্রগতিশীলের ব্লগে সুশীলকে স্বাগতম....
193117
১৬ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৪
নীল জোছনা লিখেছেন : গল্পটা ঠিক বাসর রাতের মত হৈছে। সঙ্গিনীকে কাছে পেতে না পেতেই যেমন ভোর হয়ে যায় তেমনি পড়তে শুরু না করতে করতেই শেষ হয়ে গেলো ।

সুন্দর অনুভূতির একটা গল্প পড়লাম ম্যানি ম্যানি থ্যাংকস
১৬ মার্চ ২০১৪ রাত ১১:৪২
143959
প্রগতিশীল লিখেছেন : অভিজ্ঞতা নেইরে ভাই...তাই ও রাতের পূর্ব পর্যন্তই লিখতে পেরেছি...
193118
১৬ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৬
নীল জোছনা লিখেছেন : মডারেটর সাব গল্পটা স্টিকি কৈরা ফালান। হাজার জনমে এরাম গল্প খুব কমই পাওয়া যায়।
১৬ মার্চ ২০১৪ রাত ১১:৪৩
143960
প্রগতিশীল লিখেছেন : ধন্যবাদ...আমি এ উদ্দেশ্যেই দিয়েছিলাম...
193822
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৫:২১
অনন্যা লিখেছেন : চমৎকার!!
২৪ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৬:০১
146975
প্রগতিশীল লিখেছেন : চমৎকার মন্তব্য...
194536
১৯ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:২৬
২৪ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৬:০০
146973
প্রগতিশীল লিখেছেন : আর একটা গোলাপ দিলে কি এমন সমস্যা হত ? জোড়াটা...
২৪ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৭:১১
146977
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : হা হা হা, নেন দিলাম Rose Rose
194992
১৯ মার্চ ২০১৪ রাত ১১:৩৬
আরোহী রায়হান প্রিয়ন্তি লিখেছেন : সুন্দর গল্প। Happy Good Luck Rose
২৪ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৬:০১
146974
প্রগতিশীল লিখেছেন : দুটো সুন্দরীকে নিয়ে লিখেছি কি নাHappy Happy
294379
১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১১:৩০
আফরা লিখেছেন : আপনি তো অনেক ভাল গল্প লিখেন ভাইয়া সত্যি অনেক সুন্দর হয়েছে গল্প । আমি তো আর এত ভাল লিখতে পারি না ।ধন্যবাদ ভাইয়া ।
১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১২:০৮
237933
প্রগতিশীল লিখেছেন : রেডি পাঠক পাইলাম বোধহয়;Winking ;Winking
298309
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৫
আবু জান্নাত লিখেছেন : অনেকদিন পরে হলেও পড়লাম, অনেক ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File