প্রেম যেন এমনই হয়-১৯
লিখেছেন লিখেছেন প্রগতিশীল ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১১:১৫:৪৪ রাত
রাত তখনও গভীর হয়নি। তবে ঝলমলে জোৎস্না আছে সে জোৎস্নায় হাতে হাত দিয়ে বাসার ছাদে বসে আছে একজোড়া মানব-মানবী। মন খুলে প্রাণ খুলে আলাপ করছে ওরা। এ আলাপ করতে হয় নিতান্তই সঙ্গোপনে। কেউ যেন না শোনে এভাবেই আলাপ করছিল তারা। হঠাৎ এক আগন্তুকের কারণে ছেদ ঘটে নিবিড় আলাপচারিতার।
সে আগন্তুক আর কেউ না রিদিতা। এসে সে বিক্ষিপ্তভাবে কি সব বলছিল তা আর কেউ তো নয়ই সে নিজেও বোধ হয় বুঝতে পারছিল না। রাগলে তার গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে যায়। সে বোধহয় পুরোটাই এলামেলো হয়ে যায়। যে কেউ দেখলে বুঝবে আবোল-তাবোল বকছে, একটা আধ পাগলি অথবা পুরো পাগলি। যাহোক উপস্থিত দুজন একমত হল যে, সে বলছে এত রাতে এখানে কি ?
জবাব এল না এল প্রশ্ন। ‘তোদের যে আরও একজোড়া ভাইবোন আছে, ওদের কথা কি তোরা একেবারেই ভুলে গেছিস ?’ বলল সানজিদা রিদিতার মা। রিদিতার সে তেজ কমে গেল। সে শান্ত হয়ে বলল, ‘ মা-বাবা তোমরা কি এই রাতের বেলা বসে বসে ভাইয়া আর আপুর কথা চিন্তা করছ ? ওদের সাথেতো আমার প্রায় কথা হয়। আর আমিতো নিয়মিতই ওদের ছেলে-মেয়েদেরও খোঁজ খবর রাখি। পরে না হয় সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাবে। এখন চলতো তোমরা দুজনেই। রাত একটা বেঁজে যাচ্ছে। ঘুমাবে চল।’
‘তারেক ও রাইসা দুজনেই অভিযোগ করেছে তুমি মাঝে মাঝে ওদের খবর নিলেও রতন মোটেই খবর নেয় না।’ বললেন লিটন সাহেব। ‘আসলে কি বলব বাবা রতনের কোন কান্ডজ্ঞান নেই। আর ও বোধহয় সময়ই পায় না ভাইয়া আপুরা ওর যত খোঁজ নেয়। ও আর কখন নেবে !’ জবাব দিল রিদিতা।
আসলে বাস্তবতা এটাই। তারেক ও রাইসা দুজনেরই বিয়ের প্রায় চার পাঁচ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু সেই থেকে তারা ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে নিজেদের বউ স্বামী আর সন্তান সংসার নিয়ে। পূর্বেও যে তারা একটা পরিবারের সদস্য ছিল। সে পরিবারের প্রতি যে তাদের একটা দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। সে কথা তারা ভুলেই গেছে। বিয়ের প্রথম কয়েকটা বছর তারা নিয়মিতই আসত বাবা-মা, ভাই বোনদের কাছে। আর ওদের প্রথম বাচ্চাটা হওয়ার সময় ছেলের বউ ও মেয়ে দুজনেই শ্বশুর বাড়ি ও বাপের বাড়ি তথা সানজিদা, লিটন সাহেবের বাড়িতেই ছিল। এরপর মেয়ে রাইসা একটা ঈদ শ্বশুর বাড়িতে করলে আরেকটা ঈদ বাপের বাড়িতেই করেছে। আর তারেকতো প্রথম দু এক বছর বাড়িতে ছাড়া অন্য কোথাও থেকে ঈদ উৎযাপনের কথা ভাবেই নি।
কিন্তু আবর্তিত সময় তাদেরকে ঋতু বৈচিত্রের মত বদলে ফেলেছে। ঈদ আসে ঈদ যায়, উৎসব শেষে উৎসব চলে যায়, ক্যালেন্ডার উল্টে উল্টে পার হয়ে যায় বছরগুলো। কিন্তু আসেনা তারা, সময় পায় না, আজ তারা মহাব্যস্ত।
তাই রিদিতার কথার কোন জবাব নেই সানজিদা বা লিটন সাহেব কারও কাছেই। রিদিতাকে চুপ করিয়ে দিয়ে সানজিদা বলল, ‘তুই যাতো মা আমরা এক্ষুণি আসছি।’ রিদিতা তাড়াতাড়ি এস বলে চলে গেল ছাদ থেকে। রিদিতার জাবার পথের দিকে তাকিয়ে সানজিদা জড়িয়ে ধরলেন লিটন সাহেবকে। বুকে মাথা রেখে নিঃশব্দে কানছিলেন মা সানজিদা। জোরে চিৎকার করে কানতে পারলে তার জন্য বুঝি আরও ভাল হত। লিটন সাহেবের বুক ভিজে যাচ্ছিল চোখের পানিতে।
তিনি শুধু সান্তনা দিয়ে বললেন, ‘সন্তানদের পৃথিবী দেখিয়েছ কি ঘরে রাখার জন্য ? চলতে দাওনা ওদের পৃথিবীটাকে ওরা নিজের মত করে গুছিয়ে নিক। ভাল থাকুক ওরা সুখে থাকুক। বাঁচুক নিজের মত করে।’ এরপর তিনি সানজিদাকে ধরে তুলে রুমের দিকে নিয়ে চললেন।
চলবে.....
বিষয়: সাহিত্য
১২০৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন