প্রেম যেন এমনই হয়-১৭
লিখেছেন লিখেছেন প্রগতিশীল ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১০:৪৯:৪৭ রাত
রাত এগারটা পেড়িয়ে বারটার দিকে এগিয়ে চলছে বেসামাল ঘড়ির কাঁটাটা। মাঝে মাঝে মনে হয় কাটাটা ভেঙ্গে ফেললে বা বিচ্ছিন্ন করে রাখলে বুঝি সময়টাকে বেঁধে রাখা যেত। কিন্তু এমন কোন উপায় নেই যা দিয়ে সময়ের স্রোত থামানো যেতে পারে। নিরুপায় হয়ে তাকিয়ে থাকলেও যা আর চঞ্চল হয়ে কর্মের মধ্যে ডুবে থাকলেও তা। পৃথিবীতে অনেক যুদ্ধ হয়েছে। কিন্তু এ সময় নিয়ে বা সময়কে আটকে রাখার জন্য জ্ঞানত কেউ কোন যুদ্ধ করেনি। শুধু যুদ্ধের সময় শ্রী কৃষ্ণ সময়ের গতি থামিয়ে অর্জুনকে দীক্ষা দিয়েছিলেন। সেটা ছিল মহাভারতের যুদ্ধ।
আর মহানবী (সাঃ) মিরাজে গিয়েছিলেন যখন তখনও থেমেছিল সময়ের গতি। আসলে সময় বোধকরি অসাধারণ ছাড়া সাধারণের জন্য কোনদিন থামেনি থামতে পারে না। যা হোক এভাবে কোন লেখা যদি পড়া যেত, বিশিষ্ট সময় গবেষক মি. দন্ত স বলেছেন সময়......তাহলে কয়েকটা উদ্ধৃতি তুলে দেয়া যেত।
সময়ের পট পরিবর্তনে রিদিতা পড়েছে এক মহাসঙ্কটে। ছোট্ট আদরের ভাইটি তাকে ভুল বুঝেছে ভেবে সে অস্থির। বোনের ভালবাসা পৃথিবীর যে কোন কৃত্রিমতা মুক্ত। এ ভালবাসায় কোন রকম কেমিকেল বা প্রিজারভেটিভ লাগানোর দরকার হয় না। খাটি মধুতে ভেজাল থাকা সম্ভব কিন্তু বোনের ভালবাসায় নয়।
অপরাধীর মত হাঁটতে হাঁটতে রিদিতা এল রতনের রুমে। রতন চিৎ হয়ে শুয়ে আছে বুকে সেই চিঠিটা নিয়ে। পাশে বসল রিদিতা। আস্তে করে একটু মাথায় হাত দিতেই বন্ধ করা চোখ খুলে গেল রতনের। রিদিতাকে দেখে সে বলল, ‘আপু তুই এখন, কিছু বলবি ?’ রিদিতা তেল মারার ভঙ্গিতে বলল, ‘তোর সঞ্চিতাতো সুন্দর বাংলা লিখতে পারে। ও তো আমেরিকায় জন্মেছিল আর বাংলাদেশে এসেছিল তো প্রায় বড় হয়েই।’
রতন হাসতে হাসতে বলল, ‘আর বলিস না আপু সেতো বাংলা আর ইংরেজির মিশ্রণে এক বাংলিশ রমণী। প্রথমদিন যেদিন আমদের পরিচয় প্রণয়ের দিকে রূপ নিচ্ছিল সেদিন সে আমাকে বলেছিল, ‘তুমি কি আমাকে লাইক কর ? আমি তোমাকে লাইক করি। আর তুমি চাইলে আমরা এসো লাভ করি।’
‘তবে আমি অবশ্য সেদিন কোন লোকসানের দিকে না গিয়ে লাভের দিকেই গিয়েছিলাম। আর বাঙ্গালি পুরুষ কিনা তাই তো লোকসান আমরা করতে পারি না।’ হেসেই বলল রতন। হাসছিল রিদিতাও।
‘কিন্তু এখন সে একজন আদর্শ বাঙালি গৃহবধু হতে পারে তাইনা ?’ বলল রিদিতা। রতন কিছু না বলে হ্যা সূচক ভঙ্গি করল। এবার রিদিতা বলল, ‘লক্ষী ভাই আমার তুই আমার উপর রাগ করেছিস। আসলে আমি তোর বিরোধীতা করেছি তোরই ভালর জন্য। দেখ্ একজন মেয়ে হিসেবে বলছি আমি যদি কাউকে ভালবাসি আর তার সাথে যদি আমার ঘর বাঁধা না হয় তাহলে আমার কষ্ট হবে ঠিকই। কিন্তু অন্য কোথাও বিয়ে হলে। যখন আমি এক দুটা সন্তানের মা হব। তখন আমার সংসার চিন্তা আমার মধ্য থেকে অনেক দুশ্চিন্তা দূর করে দিবে।’
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে বলল, ‘ সারাদিন সন্তান সংসার আর রাতে স্বামী, হয়তবা দুখের ভাবনা ভাবার সময়টুকুও কোন সময় পাব না কোনদিন। কিন্তু যে মানুষটি আমাকে প্রকৃত অর্থেই ভালবেসেছে। সেও যদি একই পরিস্থিতিতে পরে তাহলে তার কষ্টটা বিভাজিত হওয়ার সুযোগ কম থাকায় প্রগাঢ় হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’
‘এজন্য তোর এ ভাইয়ের জন্য দুঃশ্চিন্তা করেছিস। কিন্তু আমি বোধহয় এই প্রথম সঞ্চিতার কাছে সঞ্চিত হয়েছি। এর আগে সব সময় পার। জীবনের এই অধ্যায়ে এসে জীবনের শিক্ষা ভালই পেয়েছি। তবে তোর উপর আমার কোন ক্ষোভ বা রাগ নেই।’ বলল রতন।
ভীষণ খুশি হয়ে রতনকে রিদিতা বলল, যাক বাঁচলাম। এখন তুই ঘুমিয়ে পর আমি আসি বলে চলে যাচ্ছিল রিদিতা। রতন পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলল, ‘আপু কাল ভার্সিটিতে যাবার সময় কিছু টাকা দিস তো। আমি তোকে দিয়ে দিব।’
রিদিতা হাসতে হাসতে বলল, ‘ওহ! লাইনে চলে এলি এত তাড়াতাড়ি ? আমিতো জানি টাকা নেয়ার পর বলবি, তোর এ ঋণ আমি কোনদিন শোধ করতে পারব না আপু।’
রতন বলল, ‘যাতো কাল সকালে দিয়ে দিস। নাহলে মন খারাপ করব কিন্তু।’ কাল নিস বলে চলে গেল রিদিতা। সত্যি ভাইবোনে ঝগড়া করলেও একটা নির্মল আনন্দ পাওয়া যায়।
চলবে.............
বিষয়: সাহিত্য
১৩০৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন