প্রেম যেন এমনই হয়-১১
লিখেছেন লিখেছেন প্রগতিশীল ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১১:০৪:৪২ রাত
রাত তখনও শেষ হয়নি হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল সানজিদার। রাতে দুই স্বামী-স্ত্রী মিলে অনেক গল্প করেছিলেন। আর সেই প্রেম কাহিনীর কথাই মনে করেই হাসছিলেন তিনি। যেন সবকিছু স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলেন তিনি। লিটন সাহেবকে যখন ঢাকায় নিয়ে আসা হয় তারপর তার ভালবাসার স্মৃতি একেবারেই নিভ নিভ মোমবাতির মত করে শেষ হতে থাকে।
ঢাকায় তিনি এস এস সি পরীক্ষা দিলেন তারপর সময় কেটে গেল দিন কেটে গেল। এইচ এস সি পাশ করলেন তিনি এরপর ভর্তি হলেন অনার্সে। দীর্ঘদিন তাদের পরিবার গ্রামে যায়নি। যদিও মাঝখানে কিছু পারিবারিক দায়িত্ব পালনের জন্য তার বাবা ও মা উভয়েই কয়েকবার গেছেন। কিন্তু যাওয়া হয়ে উঠেনি লিটন সাহেবের। চিঠি পত্রের যুগ চলে গিয়ে চলে এল মুঠোফোন ইন্টারনেটের যুগ। একদিন গ্রাম থেকে ফোন এল লিটন সাহেবের মামার বিয়ে।
আসলে লিটন সাহেবের মায়েরা তিন বোন ছিল কিন্তু তার নানীর একটি মাত্র ভাই ছিল সেই ভাইয়ের একমাত্র ছেলের বিয়ে। আর যেতে হবে সপরিবারে সবাইকে। লিটন সাহেবদের বাসায় সিদ্ধান্ত হল এবার তারা সবাই যাবে। প্রথমে প্রথমবর্ষে অনার্সে ভর্তি হওয়া ছেলে লিটন একটু ইতস্তত করলেও পরে রাজী হয়। একেবার দুসপ্তাহের পরিকল্পনা তাদের।
.........
বিয়ের ঠিক দুদিন আগে গিয়ে তারা হাজির হল সেই বাড়িতে। লিটন সাহেবের আপন নানা দাদা, নানী-দাদী কেউ বেঁচে ছিল না। তাই তারা সবাই সেই নানার বাড়িতেই গিয়েছিলেন যিনি তার নানীর আপন ভাই। তাদের আগমনে সকলেই ভীষণ খুশি হল বিশেষ করে লিটু মামা যার বিয়ে।
লিটু মামা সবে মাস্টার্স শেষ করে একটা চাকরি পেয়েছে তাতেই তার বিয়ে ঠিক করেছে পরিবার। একমাত্র ছেলে কিনা! লিটু মামা লিটন সাহেবের চেয়ে একটু বড় হলেও তারা একসাথে বাল্যকালে খেলেছে দুষ্টামি করেছে। লিটু মামা লিটন সাহেবকে বলল, ‘তুই সেই গেলি আর এলি না। একটিবার আমাদের কথা মনে করলি না। ভুলে গেলি চিরতরে এই গ্রামকে। যাহোক আমার বিয়েতে তুই এসেছিস অনেক মজা হবে।’
অনেক হৈ চৈ করে বিয়ে হল। লিটন সাহেবও অনেক মজা পেয়েছিল কিন্তু পরদিন যখন তিনি তার মামীকে ভাল ভাবে দেখলেন তখন সূচে গুতো খাওয়া বেলুনের মত চুপসে গেলেন তিনি। রাতে কনের সাজে ভাল করে দেখা না হলেও সকালে যখন লিটু মামা হাত ধরে নিয়ে মামীর সামনে বসিয়ে বলল, ‘লিটন এই যে তোর মামী।’ লিটন সাহেব ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে দেখল এই তো সেই! যার জন্য তিনি হয়েছিলেন স্কুল ছাড়া গ্রাম ছাড়া।
মামী লিটন সাহেবকে বললেন, ‘তুমি লিটন। তোমরা ঢাকায় থাক ?’ এতটুকুন মেয়ে বলে কিনা তুমি। তারপরও লিটন সাহেব বললেন, ‘জ্বী মামী’। মনে মনে তিনি বললেন, ‘হায়রে মেয়ে মানুষ এই মেয়েটি আজ আমার মামী আর যদি আমরা গ্রামে থাকতাম আর মায়ের কিছু হলে যদি বাবা একেই দ্বিতীয় বিয়ে করত তাহলে এই হত কিনা আমার মা।’ ভাবছিলেন আর ঘামছিলেন তিনি। ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে মামা বলল, ‘কিরে ঘামছিস কেন তুই ? ঢাকায় থাকিস আর মেয়ে মানুষের সামনে এসে ঘামিস।’
মামী এবার বলল ‘তোমার এ ভাগনেকে আমি চিনতে পেরেছি। সে তো আমাদেরই স্কুলে পড়ত আর আমার এক বান্ধবীর পিছনে লাইন মারত।’ মামীর কথায় আঁতকে উঠেছিলেন লিটন সাহেব। পরে যখন বুঝতে পারলেন মামী ও তার বান্ধবীরা তাকে সেই সময় যেভাবে নিয়েছিলেন তা ঠিক ছিল না। আসলে! যাহোক সে বেঠিক কাজটাই আজকের জন্য ঠিক হয়েছে।
চলবে..........
বিষয়: সাহিত্য
১২৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন