প্রেম যেন এমনই হয়-৬
লিখেছেন লিখেছেন প্রগতিশীল ২৫ নভেম্বর, ২০১৩, ১১:১০:৫৭ রাত
সকাল দশটা। ১০.৩০ এ ক্লাস শুরু হবে। ভার্সিটির কেন্টিনে বসে রতন চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে আর কি যেন ভাবছে। হঠাৎ পেছন থেকে একজন তাকে জড়িয়ে ধরল। রতন চকিত হল। ফিরে দেখল একটি সাদা সার্ট আর ব্লু জিন্স পরিহিতা একটি মেয়ে। শার্টের ভেতরের পোশাকও বোঝা যাচ্ছে স্পষ্ট।
রতন বিরক্ত হয়ে বলল, ‘কি করছ এসব এটা পাবলিক প্লেস। আর কি পরেছ এসব। ছি! ছি! এত খোলামেলা হতে তোমার লজ্জা করে না সঞ্চিতা।’ মেয়েটি বলল, ‘আমাকে রাগাবে না। আমি কিন্তু এ দেশে জন্মিনি। যে দেশে জন্মেছি সে দেশের স্টাইলে এখনই তোমাকে এখানে........।’
রতন বুঝল পরিস্থিতি আয়ত্বে আনতে গেলে চুপ থাকতে হবে। সঞ্চিতার জন্ম আমেরিকায়। সেখানেই সে ১৪ বছর কাটিয়েছে। তারপর তার পরিবার বাংলাদেশে এসেছে। এখন তার বয়স বিশ। রতন বলল, ‘কিছু মনে কর না একটু দুঃশ্চিন্তায় আছি তো তাই।’ মেয়ে মানুষ সে যেখানেই জন্মাক কোমলতা তার স্বভাবজাত বৈশিষ্ট। তাই সঞ্চিতা বলল, ‘ওহ স্যরি। তুমি কি ভাবছিলে বল তো। রতন বলল, ‘ক্লাসের সময় হয়ে গেল। বিকেলে দেখা হলে কথা বলি।’
সঞ্চিতা হ্যা সূচক জবাব দিয়ে চলে গেল। রতনও ক্লাসে চলে গেল। রতন ধানমন্ডির একটি প্রাইভেট ভার্সিটিতে আর সঞ্চিতা গুলশানে। দুজনের বাসাই ধানমন্ডিতে। সঞ্চিতাদের গুলশানেও বাসা আছে কিন্তু ওর দাদীর কারণে ওরা সবাই ধানমন্ডিতে থাকে। রতনের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সঞ্চিতাও গাড়িতে নিজের ভার্সিটির দিকে রওয়ানা হল।
সংসদ ভবন এলাকায় বিকেলে রতন বসে বসে কি যেন ভাবছে। সামনে থাকা পানির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বোধহয় সে চেষ্টা করছে কিছু খুঁজতে। পাশ থেকে একজন তাকে গুতো দিল। রতন একটু চমকে উঠল। দেখল আর কেউ নয় সঞ্চিতা।
সঞ্চিতা বলল, ‘এত আনমনা হয়ে কি ভাবছ ? আমি আসলাম পাশে বসলাম টেরই পেলে না।’ রতন বলল ‘ভালবাসার মানে খুঁজছি। কিছু মনে কর না আজ একটা সত্য বলি। সঞ্চিতা বলল, ‘নির্দিধায় বল।’ রতন বলল, ‘আমি বোধহয় তোমাকে না তোমার শরীরটাকে পছন্দ করি।’ সঞ্চিতা একটু বেশিই খোলামেলা সে হেসে বলল, ‘স্বাদ গন্ধ নেয়ার পর এরকম কথা বলছ ! তবে আমিও তো তোমারই মত। তোমাকে নিয়ে তো ভবিষ্যতের কোন ছবি আঁকিনি আমি। শুধু সময় পার করে যাচ্ছি।’
রতন বলল, ‘আজ অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। কেন জানি না তোমাকেই বলছি। তোমার আগেও আমি অনেকের সাথে ঠিক তোমারই মত করেই মিশেছি।’ সঞ্চিতা হাসল হেসে বলল, ‘আসলে আমরা আজ এমন সব বিষয় আলোচনা করছি। যা কোন সময় আলোচনা হয় না। আমার বেডরুমে যে ন্যুডটা দেখেছ। তোমার মনে নেই ? সেটা আমারই। শুধু মুখটা একটু আলাদা করা হয়েছে।’
রতন অবাক! বলল ‘ ওটাতো বছর দুয়েকের বেশি সময় আগের বলে মনে হয় না।’ সঞ্চিতা বলল ‘তাই তো। একটা কথা বলত রতন আমাদের কি রুচি বিকৃত হয়েছে ? না আমরা একটু বেশি আধুনিক ?’ রতন বলল, ‘আমার ধারণা দুদিন আগ পর্যন্ত ছিল আমরা আধুনিক। কিন্তু তুমি কি জান, আমার নিজের ঘরেই বাবা ও মায়ের মধ্যে গভীরতম ভালবাসা দেখে আমার কি মনে হয়েছে। প্রকৃত ভালবাসা বিয়ের পরেই যা হয় তা। এটা শরীরে শরীরে নয় হৃদয়ে হৃদয়ে আত্মায় আত্মায় হয়।
দুজনের খোলামেলা কথা আজ আনমনা করল দুজনকেই। আসলে মানুষের কাছ থেকে সব নিয়ে নেয়া যায়। কিন্তু তার কথাটা যা মনে লুকিয়ে থাকে গভীর থেকে গভীরে তা নিয়ে নেয়ার সাধ্য কারও নেই। আজ একজোড়া কপোতকপোতি তাদের স্বভাবসুলভ ডাক ছেড়ে প্রকৃত মানুষের মত কথা বলেছে। শুধু দুজনার কাছে নয় নিজের কাছে নিজেদেরই এক ভিন্ন অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে তাদের।
দুজনই বিদায় নিল দুজনার কাছ থেকে। কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে রইল ঊদ্যানের পানি আর গাছ। তারা বোধহয় এরকম আলোচনা এ জায়গায় আগে কখনো শুনেনি।
দেশের গুরুতর পরিস্থিতিতেও লিখে চলছি নির্মমভাবে চলবে......।
বিষয়: সাহিত্য
১১০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন