প্রেম যেন এমনই হয়-৩

লিখেছেন লিখেছেন প্রগতিশীল ২১ নভেম্বর, ২০১৩, ১১:০০:৫০ রাত



সুন্দর একটা সকাল শুরু হল লিটন সাহেবের। সবকিছু নিয়মতান্ত্রিক ভাবে হল শুধু নাস্তাটা ছাড়া। ছেলেমেয়েরা দেরিতে ওঠে তাই আজ তার পরিকল্পনা একসাথে খাওয়ার। গৃহিনী কিছুই বুঝলেন না গৃহকর্তার। তাকে খেতে ডাকলেন। কিন্ত লিটন সাহেব বললেন, ‘আজ একটু পরে খাব।’

সকাল দশটায় বাবা, ছেলে, মেয়ে সবাই একসাথে বসল খেতে। মেয়ে রিদিতা বলল, ‘বাবা তোমার কি রাতে ঘুম হয়নি ? আজ এত দেরি করে আমাদের সাথে নাস্তা করছ ?’ লিটন সাহেব বললেন, ‘না তো মামণি আজ চিন্তা করলাম তোমাদের সাথে খাব। তোমাদের তো আর এখন পাওয়া যায় না।’ রিদিতা একটু লজ্জা পেল। লিটন সাহেব রতনকে বলল,‘আব্বু তোমার কি অবস্থা ? কেমন চলছে পড়ালেখা।’ কাঠখোট্টাদের মত রতন বলল ‘ভাল’। লিটন সাহেব খেয়ে উঠে গেলেন। যাওয়ার সময় বলে গেলেন, ‘তোমাদের জন্য কিছু আছে আমার কাছে। তোমরা একটু আমার রুমে এসো খাওয়ার পরে।’

দু ভাইবোন বুঝল বাবা ডাকলে তো মজার কিছুই পাওয়া যায়। কিন্তু এখনতো আর তাদের চকলেটের যুগ নেই তারা যথেষ্ট বড় এখন। তবুও দুজনে গেল। তাদের মা বোধহয় বাইরে কোন কাজে ব্যস্ত আছে।

লিটন সাহেবের সামনে দুটো সাদা চিঠির খাম। ছেলে মেয়েরা বুঝল টাকা ! কিন্তু হিসেব তারা কোনমতেই মেলাতে পারছে না। কিসের টাকা, তারাতো চায়নি। লিটন সাহেব দুজনকেই বসতে বললেন।

দুজনে আজ অনেকদিন পর বাবার কাছে বসল। তাদের বাবা বলল ‘তোমরা কি বলতে পার আমার বাবার নাম কি ?’ রিদিতা একটু বিরক্ত হয়েই বলল, ‘ আমজাদ হোসেন খান ওরফে আমজাদ মাস্টার।’ লিটন সাহেব বললেন, ‘আমি সামান্য একজন স্কুল শিক্ষকের ছেলে। তোমরা যদি বাবা হিসেবে আমাকে পছন্দ না কর। তবে দুকথা শুনিয়ে দিও। যা মনে চাও করতে পার।’

বাবার মুখে এরকম কথা শুনে রিদিতা ও রতন দুজনেই একে অপরের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতে লাগল। লিটন সাহেব আবার বললেন, ‘আমার একটা অনুরোধ তোমাদের মাকে তোমরা কোন কষ্ট দিও না। আমি সব দুঃখ সইতে পারি। কিন্তু সানজিদার কেবল কান্না না চোখের ভেজা কোণও সহ্য করতে পারি না। সত্যি করে বলছি তোমাদের মাকে আমি অনেক ভালবাসি। সেই বিয়ের পর থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত আমার ভালবাসা এতটুকুও কমেনি বরং প্রতিনিয়ত বেড়েছে। হৃদয়ের সবটুকু ভালবাসা আমার তার জন্য।’

রতন হয়তবা কিছুই বলতনা কিন্তু বলেই ফেলল, ‘বাবা আমরা আবার কি করলাম ?’ জবাব লিটন সাহেবের দেয়া লাগল না রিদিতাই দিল। সেই রতনকে গতরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিল। রতন বুঝল আসল ঘটনা। রিদিতা মেয়ে মানুষ তাই সে কেঁদে ফেলল। সে বলল, ‘বাবা এই বয়সেও তুমি মাকে এত ভালবাস ? আমাদের ঘরের ভিতর বাবা ও মায়ের ভালবাসা এত গাঢ় ? এত ভালবাসার মধ্যে আমাদের জন্ম ?

লিটন সাহেব বললেন, ‘আমি তো আর গায়ক নই যে, গান গেয়ে বর্ননা করব। কবিও নই, তাহলে না হয় কবিতাই লিখতাম আমার প্রিয়তম স্ত্রীর জন্য। তবে তোমাদের যদি একটা কাজ করতে বলি করবে তো ?’ এবার রতন বলল, ‘আর বলতে হবে না বাবা মায়ের কাছে এক্ষুণি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’

লিটন সাহেব বললেন, ‘না ক্ষমা চাইতে হবে না। এই নাও।’ একথা বলে তিনি চিঠির খাম দুটো দুজনকে দিল। রিদিতা সাথে সাথেই খুলে ফেলল। দেখল তারটাতেও দুহাজার টাকা রতনের টাতেও। অবাক হয়ে বলল, ‘বাবা তুমি আমাদের পুরস্কৃত করলে না তিরস্কৃত করলে ?’ রতন কেবল ফ্যালফ্যাল করে চাইল। এ যেন তার বুদ্ধির সীমা অতিক্রম করা ঘটনা। বাবাকে অদ্ভুদ বলবে না আর কিছু বলবে ভাবতেও পারছেনা সে।

তাদের বাবা হাসতে হাসতে বলল, ‘তোমাদের প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিলাম। তবে আর জটিল করছি না। শোন দুহাজার টাকার একহাজার তোমাদের। আর বাকী একহাজার দিয়ে তোমরা তোমাদের মায়ের জন্য এমন কিছু কিনবে যা দেখে সে খুশি হয়। রতন ছেলে মানুষ। টাকার প্রতি স্বভাবতই তার হৃদয়ের টান আছে। কিন্তু বাবার দেয়া এ টাকাটা আজ তার দৃষ্টিকে লোভাতুর বানাতে পারল না। বানাল অশ্রুসিক্ত। ভালবাসা নিয়ে অনেক কবিতা, গল্প, উপন্যাস সে পড়েছে। নাটক, সিনেমা দেখেছে শত শত। নিজের ঘরে এরকম অসামান্য ভালবাসা আজ তাকে সত্যিই কাঁদিয়ে ফেলল। সে কিছুই না বলে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।

রিদিতা বোধহয় অনেক কিছু বলত কিছুই বলল না। শুধু বাবাকে বলল, ‘বাবা আমি গেলাম আমার ক্লাস আছে।’ বাবা কিছুই বললেন না মুখে। তার চাহনিই অনেক কথা বলে দিল ছেলে-মেয়েদের।

পাঠক সঙ্কটে আছি তবুও লিখেই চলছি..............

বিষয়: সাহিত্য

১২৫৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File