১৮শ টাকার বই ৬শ টাকায় কেনার সুযোগ, বাংলা একাডেমির ছয় দিনব্যাপী ‘বইয়ের আড়ং’ উদ্বোধন আজ
লিখেছেন লিখেছেন ব্লগারদের প্রকাশনা প্যানেল ১০ জুন, ২০১৪, ১১:২৬:৫৪ সকাল
বই প্রেমিদের জন্য সু-খবর
সৃজনশীল ও গবেষণাধর্মী বই তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে চট্টগ্রামে ছয় দিনব্যাপী বইয়ের আড়ং (মেলা) এর আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় নগরীর মুসলিম ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এর উদ্বোধন করবেন বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. অনুপম সেন। বইয়ের আড়ং উপলক্ষে গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও লোকতত্ত্ববিদ অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন কবি ও সাংবাদিক অধ্যাপক আবুল মোমেন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি কবি রাশেদ রউফ ও সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী।
বিশিষ্ট লোকবিজ্ঞানী শামসুজ্জামান খান বলেন, ২০১৩ সালের নতুন আইনে বাংলা একাডেমির োগান নির্ধারণ করা হয়েছে- কেন্দ্রে গবেষণা, তৃণমূলে বিস্তার এবং বহির্বিশ্বে প্রচার ও প্রসার। এর আলোকে বইকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রাথমিক পর্যায়ে বিভাগীয় শহরগুলোতে বইয়ের আড়ংয়ের আয়োজন করা হচ্ছে। ঢাকায় বসে বসে সেমিনার করলে কোন কাজে আসবে না। তৃণমূলে বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনার স্তর কোন পর্যায়ে তা নিয়ে গবেষণা করতে হবে।
শামসুজ্জামান খান বলেন, ঢাকায় বইয়ের আড়ংয়ের আয়োজন করা হয়। আমরা চিন্তা করেছি শুধু একটি নগরীর মানুষ এ সুযোগ পাবে তা হবে না। আমরা নতুন আইনের আলোকে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে আড়ংয়ের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বইয়ের আড়ংয়ে পাঠকরা ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ে বই কিনতে পারবে। ১৮’শ টাকার বই ৬’শ টাকায় এবং ৩৩ টাকার বই মাত্র ৯টাকায় কিনতে পারবে। এখানে জীবনী গ্রন্থ যেমন পাওয়া যাবে, বিশ্ব সাহিত্যের প্রধান প্রধান ক্লাসিক্যালগুলোর অনুবাদ গ্রন্থও পাওয়া যাবে। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমির নামে ছাপানো নকল বই সম্পর্কে পাঠকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
চট্টগ্রামে বাংলা একাডেমির বিক্রয় কেন্দ্র পুনরায় খোলার দাবি প্রসঙ্গে শামসুজ্জামান খান বলেন, চট্টগ্রামে বাংলা একাডেমির বিক্রয় কেন্দ্র ছিল। কিন্তু এক সময় এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাংলা একাডেমির বই মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বিভাগীয় শহরগুলোতে শক্তিশালী এজেন্ট নিয়োগ করা হবে। ঢাকার পাঠকরা যত টাকা ছাড়ে বই পাবে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরের পাঠকরাও এজেন্টদের কাছ থেকে সমান ছাড়ে বই কিনতে পারবে।
বাংলা একাডেমির অভিধানটি পাঠকদের কাছে সমাদৃত হওয়ায় সেটি এখন নকল করা হচ্ছে জানিয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু শব্দমালা অভিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। একারণে অভিধানটি নতুনরূপে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আধুনিক বাংলা অভিধান নামে আগামী বই মেলায় এটি প্রকাশ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অতীতে চট্টগ্রামের সাহিত্যিকরাই দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের অভিভাবক ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলা একাডেমিতে এখন সবচেয়ে বড় যে মিলনায়তনটি হচ্ছে তার নামকরণ করা হচ্ছে চট্টগ্রামের আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদের নামে। এছাড়া নতুন ৫তলা যে ভবনটি হচ্ছে তার নামকরণ করা হচ্ছে ড. এনামুল হকের নামে। তিনিও চট্টগ্রামের।
কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, বাংলা একাডেমি আমাদের মননের প্রতীক। ৫৪ সালে বাঙালির ২১ দফার একটি ছিল বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা। বাংলা একাডেমির কাছে আমরা অনেক কারণে ঋণী। সাহিত্যের আকর গ্রন্থগুলো শুধুমাত্র বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছে। বই প্রকাশে বাজেট বাড়ানোর দাবি জানিয়ে সৃজনশীল বই প্রকাশে বাংলা একাডেমিকে আরো মনযোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আবুল মোমেন বলেন, বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হলেও চট্টগ্রাম কিন্তু সেভাবে বিকশিত হয়নি। বাংলাদেশে সবকিছু এক নগরী কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। প্রকাশনা ও বিপণনেও পিছিয়ে রয়েছে চট্টগ্রাম। নাগরিক ফ্যাসিলিটি, বইয়ের প্রকাশনা-বিপণি এসব আলোকিত মানুষ গড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। কিন্তু চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও এসবের সুবিধা তেমন নেই। চট্টগ্রামে বইয়ের আড়ং আয়োজনের জন্য বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবুল মোমেন বলেন, এই আড়ংয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রামের পাঠক সমাজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান বই সুলভে পাবে। এছাড়া বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত ‘উত্তরাধিকার’ এখন নতুন কলেবরে বের হচ্ছে জানিয়ে পত্রিকাটি পাঠককে আকৃষ্ট করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ রউফ বলেন, চট্টগ্রামে পাঠক সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু বাংলা একাডেমির একটি বই বিপণন কেন্দ্র থাকলেও তা বন্ধ করে দেয়া ছিল চট্টগ্রামবাসীর জন্য দুঃখজনক। চট্টগ্রামের পাঠকরা যাতে সুলভে বাংলা একাডেমির বই পেতে পারে, সে লক্ষ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এজেন্ট নিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
চট্টগ্রামে প্রথম বারের মতো বইয়ের আড়ং আয়োজন করায় বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানান প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানমালা : আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি থাকবেন শহীদ জায়া বেগম মুশতারী শফী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।
এছাড়া আড়ং উপলক্ষে তিন দিনের আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। প্রথম দিন আজ বিকেল চারটায় ‘চট্টগ্রামে সাহিত্য চর্চা’ শীর্ষক আলোচনায় সভাপতিত্ব করবেন কবি আবুল মোমেন। আলোচনায় অংশ নেবেন ড. মাহবুবুল হক, ড. মহীবুল আজিজ, অধ্যক্ষ আনোয়ারা আলম ও রাশেদ রউফ। দ্বিতীয় দিন ১১ জুন বিকেল চারটায় ‘চট্টগ্রামের লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি’ শীর্ষক আলোচনায় সভাপতিত্ব করবেন সাহিত্যিক ফাহমিদা আমিন। আলোচনায় অংশ নেবেন অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাসেম, ড. মনজুর উল আমিন চৌধুরী, মুহম্মদ ইসহাক চৌধুরী ও আহমদ মমতাজ। তৃতীয় দিন ১২ জুন বিকেল চারটায় ‘চট্টগ্রামে সাংবাদিকতার বিকাশ’ শীর্ষক আলোচনায় সভাপতিত্ব করবেন প্রবীণ সাংবাদিক অরুণ দাশগুপ্ত। আলোচনায় অংশ নিবেন সাংবাদিক নাসিরুদ্দিন চৌধুরী, স্বপন দত্ত ও ওমর কায়সার। উল্লেখ্য, আজ ১০ জুন থেকে ১৫ জুন প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বইয়ের আড়ং সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
সূত্র: দৈনিক আজাদী
লিংক:http://www.dainikazadi.org/details2.php?news_id=1050&table=june2014&date=2014-06-10&page_id=4&view=0&instant_status=
বাংলা একাডেমির প্রতি আমাদের একটি দাবী ছিল
^^বাংলা একাডেমির প্রতি ব্লগারদের কয়েকটি দাবী
বিষয়: বিবিধ
১৩৬২ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন