পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ তৃতীয়বারে মতো নওয়াজ শরীফের ক্ষমতারোহণ...

লিখেছেন লিখেছেন মেকী ভদ্রলোক ০৬ জুন, ২০১৩, ১১:১৪:২৫ সকাল

পাকিস্তান নামটি শুনলেই মনে হয়, এই বুঝি কোন জঙ্গী হামলা হলো...

এই দেশের জন্মলগ্ন থেকেই সমস্যার সূচনা...আজও যার কোন কূল কিনারা হয়নি। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর অর্ধেকের বেশি সময় দেশটি সামরিক শাসনাধীন ছিল। সেনা শাসনের নামে সৈর শাসনে দেশটির অর্থনীতির অবস্থা ভঙ্গুর। সম্প্রতি বিদায়ী সরকারের আগে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত আর কোন সরকারই ক্ষমতার পুরো মেয়াদ শেষ করতে পারেনি। কেবল সর্বশেষ সরকারই মেয়াদ পুরো করে একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে যেতে পেরেছে। তাই আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়ে যারা একটু আধটু খোঁজ খবর রাখেন তারাসহ অনেকেই মনে করছেন, পাকিস্তানে বুঝি গণতন্ত্রের সুবাতাশ বইতে শুরু করলো!

দেশটিতে শাসক শ্রেণীর দুর্ণীতির কারণে সাধারণ মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছে।

ক্যারিশ্মাটিক রাজনিতিক পাকিস্তানের সাবেক বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দুর্নীতি নির্মূলের কথা বলে প্রধানত তরুণ ভোটারদের মন জয় করে ২০১৩ সালের নির্বাচনে দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে সদ্য বিদায়ী পাকিস্তান পিপল’স পার্টির (পিপিপি) প্রধান বেনজীর ভুট্টো বোমা হামলায় নিহত হলে পাকিস্তানের জনগণ সহানুভূতিশীল হয়ে তার স্মামী (দুর্নীতির কারণে মিস্টার টেন পার্সেন্ট খ্যাত) আসীফ আলী জারদারীকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে।

কিন্তু প্রায় সবক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার কারণে মানুষ তাদের এবারের নির্বাচনে প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটির জনগণ নির্বাচিত করেছে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজকে (পিএমএল-এন)।

২০১৩ সালের ১১ মে’র সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। গতকালই (৫ জুন বুধবার) পাকিস্তানের পার্লামেন্টে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন পিএমএল-এনের প্রধান নওয়াজ শরীফ।

এখন দেখার বিষয় তিনি কতটা সফলভাবে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দিতে পারেন। তার দেশেরসহ সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। সুতরাং দেশটিতে জঙ্গী তৎপরতা বন্ধ করা, দেশের ভেতরে জঙ্গী দমনের নামে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলা বন্ধ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জ্বালানিসহ বহুমুখি সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে নওয়াজ শরীফকে। এখন দেখার বিষয় তিনি কতটা সফলতা লাভ করতে পারেন।

সংক্ষেপে নওয়াজ শরীফের কিছু তথ্য নিম্নে তুলে ধরা হলো:

জন্ম : মিয়া মোহাম্মদ নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোর শহরে ২৫ ডিসেম্বর ১৯৪৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার ১৯ শতকের শেষ দিকে কাশ্মীর থেকে এসে পাঞ্জাবে বসবাস শুরু করে।

রাজনীতি : জাতীয় রাজনীতিতে তার আগমন ঘটে পাকিস্তানের সাবেক সেনা শাসক জেনারেল জিয়াউল হকের মার্শাল ল'এর সময় (১৯৮৫-১৯৯০)। সেসময় তিনি দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশের অর্থমন্ত্রী ও পরে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তানে গত ৩০ বছর ধরে রাজনীতির মাঠে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার ভূমিকা পালন করে আসছেন। বর্তমানে তিনি পাকিস্তান মুসলিম লীগ-এনের (পিএমএল-এন) প্রধান।

সমালোচনা : নওয়াজ শরিফের সমসাময়িক রাজনীতিবিদদের মতো তার বিরুদ্ধেও তার আগের শাসনামলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী : প্রথমবার তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন, ১ নভেম্বর ১৯৯০ থেকে ১৮ জুলাই ১৯৯৩ পর্যন্ত। দ্বিতীয়বার ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭ থেকে ১২ অক্টোবর ১৯৯৯ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন।

নির্বাসন : ১৯৯৯ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মোশাররফের হাতে রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন নওয়াজ। এরপর কিছুদিন কারাবাস ও পরে দীর্ঘ সময় নির্বাসনে ছিলেন তিনি। তারপর ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে দেশে ফিরে আসেন।

তৃতীয়বার প্রধামন্ত্রী : গত ১১ মে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জন করে নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন। গতকাল তিনি তৃতীয়বারের মতো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন।

বহির্বিশ্বে পরিচিতি : ১৯৯৮ সালে পারমাণবিক পরীক্ষার নির্দেশ দেয়ার কারণে নওয়াজ শরিফ বহির্বিশ্বে বহুল পরিচিতি পান।

যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা : সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নওয়াজ শরিফ আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সমালোচনা করে আসছেন। জঙ্গিদের প্রতি তিনি কিছুটা নমনীয় আচরণের পক্ষপাতি।

শিল্পপতি : রাজনীতিকের পাশাপাশি নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের একজন বিশিষ্ট শিল্পপতিও। তিনি দেশটির অন্যতম স্টিল মিল 'ইত্তেফাক গ্রুপের' মালিক। উইকিপিডিয়া, বিবিসি, ইলেকশন.কম.পিকে।

বিষয়: বিবিধ

১১৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File