কৃষকের বন্ধু খনা

লিখেছেন লিখেছেন মেকী ভদ্রলোক ১৬ মে, ২০১৩, ০৮:৩০:১৯ রাত

আজ হঠাৎ করেই এদেশের কৃষকদের কথা ভাবছিলাম... মনে হলো আমার দেশের কৃষক সব সময় শুধু শোষিত হয়েছে...কেউ তাদের কথা ভাবেনি, কেউ তাদের পাশে দাঁড়ায়নি...হঠাৎ করেই একজন খনার কথা বললেন, নেট ঘেঁটে খনা সম্পর্কে অনেক তথ্য পেলাম....সেখান থেকে কিছু আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম.......

খনা বা ক্ষণা কথিত আছে তার আসল নাম লীলাবতী জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এক বিদুষী নারী, যিনি বচন রচনার জন্যেই বেশি সমাদৃত, মূলত খনার ভবিষ্যতবাণীগুলোই খনার বচন নামে বহুল পরিচিত।

• জন্ম

মনে করা হয় ৮০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তার আবির্ভাব হয়েছিল।কিংবদন্তি অনুসারে তিনি বাস করতেন পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলার (বর্তমানে বারাসাত জেলার) দেউলিয়া গ্রামে। তার পিতার নাম ছিন অনাচার্য। অন্য একটি কিংবদন্তি অনুসারে তিনি ছিলেন সিংহলরাজের কন্যা।

• বিবাহ

বিক্রমপুরের রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজ সভার প্রখ্যাত জোতির্বিদ বরাহপুত্র মিহিরকে খনার স্বামীরূপে পাওয়া যায়। কথিত আছে বরাহ তার পুত্রের জন্ম কোষ্ঠি গণনা করে পুত্রের আয়ূ এক বছর দেখতে পেয়ে শিশু পুত্র মিহিরকে একটি পাত্রে করে সমুদ্র জলে ভাসিয়ে দেন। পাত্রটি ভাসতে ভাসতে সিংহল দ্বীপে পৌছলে সিংহলরাজ শিশুটিকে লালন পালন করেন এবং পরে কন্যা খনার সাথে বিয়ে দেন।

• কর্ম

খনা এবং মিহির দু'জনেই জ্যোতিষশাস্ত্রে দক্ষতা অর্জন করেন। মিহির একসময় বিক্রমাদিত্যের সভাসদ হন। একদিন পিতা বরাহ এবং পুত্র মিহির আকাশের তারা গণনায় সমস্যায় পড়লে, খনা এ সমস্যার সমাধান দিয়ে রাজা বিক্রমাদিত্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। গণনা করে খনার দেওয়া পূর্বাভাসে রাজ্যের কৃষকরা উপকৃত হতো বলে রাজা বিক্রমাদিত্য খনাকে দশম রত্ন হিসেবে আখ্যা দেন।

• মৃত্যু

রাজসভায় প্রতিপত্তি হারানোর ভয়ে প্রতিহিংসায় বরাহের আদেশে মিহির খনার জিহ্বা কেটে দেন। এর কিছুকাল পরে খনার মৃত্যু হয়।

• নিম্নে দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ সংকলিত কিছু খনার বচন তুলে ধরা হলো …

১। চাষী আর চষা মাটি/

এ দু'য়ে হয় দেশ খাঁটি।

২। যদি বর্ষে মাঘের শেষ/

ধন্য রাজার পূণ্য দেশ।

৩। গাছে গাছে আগুন জ্বলে/

বৃষ্টি হবে খনায় বলে।

৪। জ্যৈষ্ঠে খরা, আষাঢ়ে ভরা/

শস্যের ভার সহে না ধরা।

৫। আষাঢ় মাসে বান্ধে আইল/

তবে খায় বহু শাইল।

৬। আষাঢ়ে পনের শ্রাবণে পুরো/

ধান লাগাও যত পারো।

৭। তিন শাওনে পান/

এক আশ্বিনে ধান।

৮। পটল বুনলে ফাগুনে/

ফলন বাড়ে দ্বিগুণে।

৯। ফাগুনে আগুন, চৈতে মাটি/

বাঁশ বলে শীঘ্র উঠি।

১০। ভাদ্রের চারি, আশ্বিনের চারি/

কলাই করি যত পারি।

১১। আখ আদা, পুঁই/

এ তিন চৈতে রুই।

১২। লাঙ্গলে না খুঁড়লে মাটি, মই না দিলে পরিপাটি/

ফসল হয় না কান্নাকাটি।

১৩। সবলা গরু সুজন পুত/

রাখতে পারে খেতের জুত।

১৪। গরু-জরু-ক্ষেত-পুতা/

চাষীর বেটার মূল সুতা।

১৫। সবল গরু, গভীর চাষ/

তাতে পুরে চাষার আশ।

১৬। গাই দিয়ে বয় হাল/

তার দুঃখ চিরকাল।

১৭। শোন শোন চাষি ভাই/

সার না দিলে ফসল নাই।

১৮। হালে নড়বড়, দুধে পানি/

লক্ষ্মী বলে চাড়লাম আমি।

১৯। রোদে ধান, ছায়ায় পান।

২০। আগে বাঁধবে আইল/

তবে রুবে শাইল।

২১। খনা বলে শুনে যাও/

নারিকেল মুলে চিটা দাও।

২২। গাছ-গাছালি ঘন রোবে না/

গাছ হবে তাতে ফল হবে না।

২৩। খরা ভুয়ে ঢালবি জল/

সারাবছর পাবি ফল।

২৪। ষোল চাষে মূলা, তার অর্ধেক তুলা/

তার অর্ধেক ধান, তার অর্ধেক পান।

২৫। ডাঙ্গা নিড়ান বান্ধন আলি/

তাতে দিও নানা শালি।

২৬। কাঁচা রোপা শুকায়/

ভুঁইয়ে ধান ভুঁইয়ে লুটায়।

২৭। বার পুত, তের নাতি/

তবে কর কুশার ক্ষেতি।

২৮। তাল বাড়ে ঝোপে/

খেজুর বাড়ে কোপে।

২৯। গাজর, গন্ধি, সুরী/

তিন বোধে দূরী।

৩০। কলা রুয়ে না কেট পাত/

তাতেই কাপড়, তাতে ভাত।

৩১। হলে ফুল কাট শনা/

পাট পাকিলে লাভ দ্বিগুণা।

৩২। খনা বলে শোনভাই/

তুলায় তুলা অধিক পাই।

৩৩। ঘন সরিষা পাতলা রাই/

নেংগে নেংগে কার্পাস পাই।

৩৪। দাতার নারিকেল, বখিলের বাঁশ/

কমে না বাড়ে বারো মাস।

৩৫। বারো মাসে বারো ফল/

না খেলে যায় রসাতল।

৩৬। ফল খেয়ে জল খায়/

জম বলে আয় আয়।

৩৭। ভরা পেটে ফল /

খালি পেটে জল।

৩৮। মঙ্গলের শেষ বুধে পা/

যথা ইচ্ছা তথা যা।

বিষয়: বিবিধ

১৩৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File