জামায়াত আসলে কি করবে?

লিখেছেন লিখেছেন সুঘ্রাণ কাদের ০৬ নভেম্বর, ২০১৪, ০৫:১৯:২৭ বিকাল

ইদানিং আমার ভাবনাটা জামায়াতকে নিয়েই ঘুরপাক খাচ্ছে। কারন আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। এত কাহিনীর পরেও তারা কিভাবে চলছে? আওয়ামীলীগের মারাত্মক প্রতিহিংসা পরায়ণনীতি ও বিএনপি'র নিশ্চুপ অবস্থানে কিভাবে তাদের গতিপথ ঠিক করবে? সমঝোতা, আপোষ নাকি চুড়ান্ত আঘাত কোনটি তারা গ্রহণ করবে? প্রতিশোধের ক্ষেত্রে তারা আবদুল কাদের মোল্লা, গোলাম আযম, কামারুজ্জামান, সাঈদী সাহেবের বদলে আওয়ামীলীগ থেকে কাকে মৃত্যুদন্ডের জন্যে কিসাস হিসেবে সিলেক্ট করবে? সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলেও কি তারা ধৈর্য্যধারণ করবে? নাকি আওয়ামীলীগকে খেলাতে খেলাতে ধ্বংসের শেষ সীমায় নিয়ে ছেড়ে দেবে। যেখান থেকে আওয়ামীলীগ বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ হয়েই থাকবে বাস্তবতায় ফিরে আসার সুযোগ পাবেনা। মিথ্যারোপকারী মিডিয়া গুলোকে কিভাবে সত্য বলার শিক্ষা দেবে? নিষিদ্ধ হলে তাদের আউটলুকিং কেমন হবে? নিজে থেকে্ই একটা সমীকরণ দাঁড় করাতে চেষ্টা করেছি।

প্রথমত জামায়াত তাদের গতিপথ ঠিক করেই রেখেছে। প্লান এ, বি, সি তাদের অনেক আগেই করা আছে। তাদের সবথেকে বড় সফলতা হলো একদিনে সরকারী বাহিনী তিন শতাধিক লোক হত্যা করার পরেও তারা হাতে অস্ত্র্র তুলে নেয়নি। হাজারবার উত্তেজিত করেও আওয়ামীলীগ তাদেরকে তাদের সিদ্ধান্তের বাইরে নিতে পারেনি। ক্যাডারভিত্তিক ও শতভাগ শিক্ষিত মানুষের দল হওয়ায় মিডিয়ার এত কপচানোর পরেও তাদের কোন কর্মী সমর্থককে বিশ্বাস করানো যায়নি যে জামায়াত নেতারা যুদ্ধাপরাধ করেছে। মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের অখন্ডনতা ও যুদ্ধাপরাধ দুই জিনিসি তা তারা তাদের কর্মীদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছে। তাছাড়া গত ৪৩ বছরে নেতাদের নামে কোন থানায় জিডি পর্যন্ত তাদের নেতাদের নিষ্কলুষ চরিত্র দিয়েছে। তৃণমূল জামায়াত বিশ্বাস করে যে যাদেরকে এখন ধর্ষণ করতে দেখা যায় তারাই ছিলো সবকালে ধর্ষক। সুতরাং তাদের নেতারা অপরাধী নয়। এটা তাদের অগাধ বিশ্বাস। তাদের সকল অবস্থায় চলতে থাকা তাদের শৃংখলাবোধ ও নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যেরই অংশ।

দ্বিতীয়ত জামায়াত আওয়ামীলগি সমঝোত হবে কিনা এ প্রশ্ন করেছিলাম, জামায়াতের এক পঞ্চম সারির এক নেতাকে। তিনি যা বললেন-তাতে আমি হতবাক। তিনি আমাকে আওয়ামীলীগার মনে করে বললেন- শহীদ কাদের মোল্লাকে ফেরৎ দিতে পারবেন? আমি তো কবি নিরব অবস্থা। জামায়াতের এখন অনেকেই মনে করেন বিএনপি ও আওয়ামীলীগের মাঝে ঐক্য হয়েছে যে আওয়ামীলীগ জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দেবে আর বিএনপি চুপ থাকবে। মিডিয়ার কল্যাণে এটা এখন এতই হট ইস্যু যে জামায়াতের পক্ষে বিবৃতি দিলেই স্বাধীনতার ঘোষকের পার্টি নিজেই রাজাকার হয়ে যাবে। বিএনপি গা বাচানো রাজনীতি এখন তাকে তৃতীয় সারির রাজনৈতিক অবস্থান দিয়েছে। এখন রাজনীতির মাঠে আওয়ামীলীগ প্রধানদল, আর জামায়াত বিরোধীদল। মাঠ পরিসংখ্যানে উপজেলা নির্বাচনে জনগন এটার প্রমাণ দিয়েছে। অনেক জায়গায় বিএনপি আওয়ামীলীগ উভয়ের সাথে খেলেই জামায়াত বিজয়ী হয়েছে। আগামী নির্বাচনে জামায়াত একক নির্বাচন করলেও তারা জনগনের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠনের মতো অঘটনও ঘটাতে পারে।

চুড়ান্ত আঘাতের ক্ষেত্রে দলটি কি ভাবছে? এটা আমারও কৌতুহল।স্বাধীনতা পরবর্তী একসাথে অনেক প্রাণ বিসর্জনের ইতিহাস শুধুমাত্র জামায়াতেরই।যা ট্রাইব্রুনালের রায়ের সাথে মানুষ ফুসে উঠেছিল। চুড়ান্ত আঘাতের ক্ষেত্রে দলটি তিনটি খেলা খেলতে পারে।সরকার পতনের জন্যে একদফা দাবীতে আন্দোলন করা। এক্ষেত্রে সরকার যেহেতু অবৈধ সেহেতু অল্প নাড়া দিলেই পড়ে যাবে। জামায়াতের আগেই থেকেই নাড়া দিয়ে বিল্ডিং ধ্বংস করার ইতিহাস আছে।

নিশ্চুপ ফাঁসি হতে দেওয়া পরে সুযোগ পেলে বিচারকারী সকলকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া। চুড়ান্ত আঘাতের জন্যে তারা শক্তি রিজার্ভ রাখবে।

আওয়ামীলীগ-বিএনপির আঁতাতে তারা নেতা হারাবে কিন্তু দলের বৃহত্তর কোন ক্ষতি হতে দেবেনা। যেহেতু ক্যাডারভিত্তিক দল যে কেউ নেতা হলেই এদল চলবে। জামায়াত বরাবরই বাপ-স্বামী বন্ধনার বাইরের গনতান্ত্রিক দ‍ল। তারা আন্দোলন করে শুধুই বিএনপিকে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ তারা পরিহার করবে। ২০ দলীয় জোটে বিএনপি কখনোই জামায়াতের পাশে দাঁড়ায়নি।

প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষেত্রে জামায়াত আওয়ামীলীগ থেকে মনে মনে লোক ঠিক করবে। যেহেতু তাদের নিরপরাধ লোকের ফাঁসি হচ্ছে সেহেতু তারা আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ইসলামী বিধান অনুসারে মৃত্যুর জন্যে সিলেক্ট করবে। হয়তো কিছুদিন পর আবদুল কাদের মোল্লার হত্যাকান্ডের জন্যে আওয়ামীলীগ থেকে তোফায়েল ভাইকে পছন্দ করবে। যদি তাদের ওয়েবসাইটে কামারুজ্জামানের ফাঁসির বদলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম ভেসে ওঠে তাহলে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই থাকবে না। এ খেলাই পরাজয় হবে আওয়ামীলীগেরই। এটা একটা ধারণামাত্র। মানুষ আসলে আত্মঘাতী তখনই হয় যখন তার আর কোন উপায় থাকেনা।

সমালোচনাকে জামায়াত প্রশংসার অংশই মনে করে।জামায়াতের এই পজেটিভ থিংকিং অনেক আগে থেকেই। কোন লোক বা দলীয় মুখপাত্র নেই কিন্তু আলোচনা মিডিয়াকে জামায়াত নিয়েই করতে হচ্ছে‍। জামায়াত সম্পর্কে জানার জন্যে মিডিয়া জামায়াতের ওয়েবসাইটকেই প্রাধান্য দেয়।

মিডিয়া জামায়াতকে যে কলংকিত রূপ দিয়েছে তার জন্যে মিডিয়াম্যান ও হাইজগুলো কি ছাড় পাবে? মনে হয় না। সামপ্রতিক আমারদেশ অফিস যেভাবে জালিয়ে দেয়া হয়েছে ঠিক একইভাবে ক্ষোভের আগুনে যে কোন মিডিয়া জ্বলে যেতে পারে। মিথ্যাচার সহ্য করতে করতেই সহ্যের সীমা প্রায় শেষ দিকে জামায়াতের।

সবশেষ যদি জামায়াত নিষিদ্ধ হয়েই যায় তাহলে তারা কি পার্টি করবে? এব্যাপারে আমার সিরিয়াস কোন আইডিয়া নেই। তবে আমি একটি রম্য অবস্থানে রয়েছি।একথা ধ্রুব সত্য যে তারা সবাই সৎ মানুষ। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি তাদের থেকে যোজন যোজন দুরে। নিষিদ্ধের পর তারা যদি একটি 'ধোলা্ই পার্টি' সৃষ্টি করে এবং জনগনের কাতারে থেকে কাজ করে তাও আশ্চর্যের কিছু নেই। আওয়ামীলীগ-বিএনপি'র সকল অপকর্মের পর তারা জনগনকে সাথে নিয়ে যদি খাম্বা-কুইকরেন্টালের জন্যে মাইর শুরু করে তাহলে তারা জনপ্রিয়তা পাবেই্। পরিশেষে ধন্যবাদ/ঘৃণা দিয়েই শেষ করবো আওয়ামীলীগকে। গড় ৪% ভোটের একটি দলকে অসম্ভব জনপ্রিয়তায় তুলে দেওয়ার জন্যে। যাদেরকে নিয়ে এখন সারাদেশ ভাবছে। ধন্যবাদ জামায়াতে ইসলামী খেলতে খেলতে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নেওয়ার জন্যে

বিষয়: বিবিধ

১২৫০ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

281775
০৬ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৬
মামুন লিখেছেন : আপনার লিখাটি পড়লাম। ধন্যবাদ।
281776
০৬ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৭
হতভাগা লিখেছেন : জামায়াতের লোকদের এখন গণহারে পাকিস্তানে চলে যেতে হবে যাদের জন্য তারা নিজেদের দেশের মানুষকে হত্যা করেছিল ৭১ এ ।
এটা তাদের অনেক আগেই করা উচিত ছিল , ১৬.১২.৭১ এর আগেই । তাহলে এত হাঁপানী পেতে হত না ।
০৬ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৮
225339
মাজহার১৩ লিখেছেন : ঐ সময় বাংলাদেশ বলে কোন দেশ ছিল না। ছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী আর অখন্ডতাবাদীদের গৃহযুদ্ধ। সুতরাং দেশপ্রেমের কথাটা আসতে পারে বাংলাদেশ সৃষ্টির পর। শেখ মুজিবও ২৫শে মার্চ পর্যন্ত অখন্ডতার জন্য কোশলী ভুমিকা পালন করেছেন। ভাগ্য তাকে বর দিয়েছে বলেই রাজনীতির বরপুত্র হিসেবে স্বাধীনতার স্থপতির পুরস্কার পেয়েছেন।
০৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:০৪
225353
হতভাগা লিখেছেন : পাকিস্তান তো ৭১ এ হেরে যাবার পর নিশ্চিন্হ হয়ে যায় নি । যারা পাকিস্তানের পক্ষে অখন্ডতা রক্ষা করতে চেয়েছিল তারা পরাজিত হবার ফলে বিচ্ছিন্নতাবাদী(!)দের চোখে যুদ্ধাপরাধী ।

াআজ যদি পাকিস্তান জিতে যেত তাহলে কি মনে করেন এখনকার মুক্তিযোদ্ধা বিশেষ করে জিয়াদের আস্ত রাখতো?

বীরভোগ্যা বসুন্ধরা

এই পৃথিবী বিজয়ীদের গান গায় ।

তো ভাই অখন্ডতাকামী হয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দেশে কেন ? চলে যান অখন্ডতার দেশে , ওরা তো পৃথিবীর মানচিত্রে এখনও টিকে আছে ।

নিজেরাও শান্তিতে থাকতে পারতেন , ফলে আমরাও শান্তিতে থাকতে পারতাম ।
281777
০৬ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৭
মামুন লিখেছেন : খুব সুন্দরভাবে আপনি বিশ্লেষণ করেছেন। সেজন্যও আপনি সাধুবাদ পেটে পারেন। এটা দিতেই আবার ফিরে এলাম।
শুভকামনা রইলো। Rose Rose
281791
০৬ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৮
রিদওয়ান বিন ফয়েজ লিখেছেন : আপনার মতামতটি খুবই সুন্দর। আপনার অনেকগুলো কথা সত্যও হয়ে যেতে পারে, যদি আল্লাহ চাহে। ইনশাআল্লাহ এই বাংলার জমিনেই,এই ভন্ড আদালতের, ভন্ড বিচারকদের বিচার হবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা। ধন্যবাদ.....
281803
০৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৪৩
চেয়ারম্যান লিখেছেন : Happy Happy Winking Winking ;Winking ;Winking
281848
০৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৫৫
মাজলুম যাযাবর লিখেছেন : যারা ধর্ষণের শতক পূরনে পুরষ্কার দেয় বা পায়,বিশ্বজীতের মতো নিরাপরাধ মানুষকে বীরদর্পে পিটিয়ে হত্যা করে, ভোটাধিকার হরণ করে শুধু ৪% ভোটে সরকার গঠণ করে, দেশের স্বার্থ বিকীয়ে ভারতের স্বার্থে খুশি খোঁজে (কত লিখব-----!) তারা কি সত্যই দেশপ্রেমিক?
281852
০৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১১:০৮
লোকমান বিন ইউসুপ লিখেছেন : পড়লাম।
ফেবুতে আশা করছি।
319137
১০ মে ২০১৫ রাত ০২:৫৮

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File