বিচারপতি খায়রুল হক, আমরা স্তম্ভিত ও লজ্জিত।
লিখেছেন লিখেছেন সুঘ্রাণ কাদের ২৬ মে, ২০১৪, ০৪:৪৪:৪৩ রাত
পত্রিকায় আপনার বক্তব্য পড়লাম। আসলে এ দেশে কে সরকার সেটাই বুঝতে পারিনা। বক্তব্য পড়ে আমার নানার গল্প মনে পড়ে গেল। তিনি প্রায় শতাধিক বৎসর জীবিত ছিলেন। প্রতিদিন বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দুরে পত্রিকা পড়তে আসতেন। বৃদ্ধ বয়সে চোখে চশমা পরতেন। আমার মেজ মামা ছিলেন উচ্চতায় সাত ফুট। একদিন নানা পত্রিকা পড়ে বাড়ীর দিকে যাচ্ছেন, পথিমধ্যে মেজ মামার সাথে দেখা হলো। মামা নানাকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করলেন, নানা পাল্টা প্রশ্ন করলেন তুই কে? পাশে থাকা একজন বলে উঠলেন (যিনি একটু আগে নানার সাথে পত্রিকা পড়ছিলেন) আপনি পত্রিকার এতো ছোট অক্ষর চিনেন কিন্তু সাত ফুট দেহের নিজের ছেলেকে চিনলেননা? তারপর নানা চিনলেন। আমি মনে করি, এ বি এম খায়রুল হককে বলে দেয়া উচিত যে আপনার ঘুষ গ্রহণের পর দেয়া তত্ত্বাবধায়ক বাতিল রায়ে আপনার গডমাদার বর্তমানে সরকার চালাচ্ছে। এই অবৈধ সরকারের গুম-খুন ,ক্রসফায়ার, গুলি ও জনগনকে বলাৎকার ও নির্যাতনের হাহাকার শুনেও আপনি বুঝতে পারছেন না কে সরকার চালাচ্ছে। বিচারপতি খায়রুল হক, আপনার কথা ও কাজে আমরা স্তম্ভিত ও লজ্জিত।
আপনি বলেছেন- ‘প্রধান বিচারপতি থাকতে অনেক কথা বলতে পারিনি।অনেক কথা কেন, কথাই বলতে পারিনি।আজ আমি অনেক কথা বলব।' প্রথমত আজ আপনার কথা বলার দরকার নেই। আমরা আপনার থেকে আর কিছু শুনতে অভ্যস্ত নই। জাতির জন্যে আফসুস যে জাতি অত্যাচাির শাসকের বিরুদ্ধে সাহসী কথা বলার জন্যে একজন বিচারপতিও পায়নি। আসলেই আমাদের দুঃখ যে আমাদের এখানে বিচারপতি ইফতেখার মোহাম্মদ রা জম্ম নিচ্ছেনা। যিনি একাই অত্যাচারী শাসকের শোষণ থামিয়ে দিয়েছিলেন। এক বিচারপতির জন্য ক্ষমতার মসনদ ছাড়তে হয়েছিল অত্যচারীকে।
আমাদের বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে আমরা অনেক হাস্য রসাত্নক ঘটনা দেখেছি। সরকারের পরিবর্তনে একটি বিচারের ভিন্ন ভিন্ন রায় আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।আমাদের বিচারালয় সব সময় সকল অবৈধ শাসকের শয্যাসঙ্গীর ভুমিকা পালন করতে দেখেছি।সর্বশেষ সেনা সমর্থিত সরকারের সময়ে বিশেষ আদালতের বিচারকদের মনোচিকিৎসকের ভুমিকা আমাদের ভাবিয়েছে।মনোচিকিৎসক বলছি এজন্য তখন বিচারক কথিত রাজনৈতিক দুর্নীতিবাজদের চেহারার দিকে তাকাতেন, আর রায় দিতেন, লোকটা যত বছর বাচবে তত বছর জেল।
দেশের বিচারাঙ্গনের ইতিহাসে সবচেয়ে নিন্দিত সমালোচিত নাম বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। একযুগের বিচারিক জীবনে গণমানুষের ন্যায় বিচারের স্বার্থে আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলা জট কমাতে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলাগুলো নিষ্পতির দিকে আপনার নজর ছিল বেশী। এসব মামলা দ্রুত শুনানি করে ধারাবাহিকভাবে রায় দিয়েছেন। মামলার রায় সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক হওয়ায় আপনিই হয়ে উঠেন সরকারের আস্থাভাজন। এর ফলে তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থ আদায় করে আওয়ামী সরকারের আমলে আপিল বিভাগে নিয়োগ পান এবং জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘেনের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি হন। এতে আপনি ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হলেও বিতর্কিত হয়েছে দেশের বিচার বিভাগ।সংবিধানকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে দেশ ও জাতিকে এক ভয়ঙ্কর অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছেন।
প্রধান বিচারপতি হিসেবে সাত মাসের দায়িত্ব পালনকালে আপনি আদালতকে ব্যবহার করে একের পর এক বিতর্ক উসকে দিয়েছেন। যার ফলে দেশের রাজনৈতিক মাঠ হয়ে উঠেছিল উত্তপ্ত। দেশে চলমান সাংবিধানিক শূন্যতার যে অভিযোগ এর জন্যও দায়ী এ বি এম খায়রুল হক। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করার মাধ্যমে এই সাংবিধানিক শূন্যতার সূচনা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল,সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে করা পঞ্চম সংশোধনী বাতিল,সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের করা সপ্তম সংশোধনী বাতিল, বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার ঘোষক স্বীকৃতি, নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসকে অপসারণের সরকারি আদেশকে বৈধতা দেয়া,বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি নিয়ে দায়ের করা লিভ টু আপিল না শুনেই তিনি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেয়া এবং দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক কে সাজা দেয়ার ঘটনা আপনার সময়েই ঘটেছে।
সরকার পক্ষে অভূতপূর্ব নজিরবিহীন রায় দেয়ার ঘটনায় বর্তমান সরকার নিজেই চরম অভিভূত।আওয়ামীলীগের অনেকেই আপনার রায়ে হতভম্ব।আওয়ামীলীগ নিজেই এতটুকু আশা করেনি। বিচারপতি তাদের পক্ষে রায় দিবে এটা তারা জানতো। কিন্ত এতবেশী পক্ষপাতিত্ব করবে এটা সরকারও ভাবেনি।
দেশের আইনজীবীদের শীর্ষ সংগঠন সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশন অভিযোগ করেছে প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বপালনের সাত মাসে এ বিএম খায়রুল হক বিচার বিভাগকে ধ্বংস করতে যা কিছু করার সবই করেছেন। বারের পক্ষ থেকে দেশে সাংবিধানিক শূন্যতার জন্য তাকে দায়ী করে বলা হয়েছে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে এটা করা হয়েছে। অথচ মুন সিনেমা হলের সম্পত্তির জন্য পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করার দরকার ছিলনা।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশের একটি প্রতিষ্ঠানও দলীয়করণের বাইরে নেই। সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগকেও আওয়ামী লীগের অংশে পরিণত করা হয়েছে। বিচার বিভাগের অভিভাবক হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়ে প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক পুরোটা সময় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। হাইকোর্টের কোনো একটি ডিভিশন বেঞ্চ সরকারের বিপক্ষে রায় দেয়ার পরপরই আপনি ওই বেঞ্চের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে দলীয়করণের ন্যক্কারজনক অধ্যায় রচনা করেছেন। আওয়ামী লীগের নির্বাহী পরিষদে গৃহীত সিদ্ধান্তই আপিল বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছেন।
আপনি আপনার শপথ ভঙ্গ করেছেন, সংবিধান নিয়ে চলমান অনিশ্চয়তা সৃষ্টিতে সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন।
আমরা বলতে চাই দেশের সকল মানুষকে সংঘাত সংঘর্ষের মধ্যে ঠেলে দিয়ে আপনি সরকার কে চালাচ্ছে বলতে পারেন না। দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, আগামী দিনের রাজনৈতিক সংঘাত, জনগনের সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি, সাম্প্রতিককালের অগনিত প্রাণহানির জন্যে নিঃসন্দেহে আপনিই শতভাগ দায়ী। আপনার কর্ম তৎপরতার মধ্য দিয়ে জাতিকে এক অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে ধাবিত করেছেন। ইতিহাস কখনো এ আচরণ কে ক্ষমা করবেনা। সময়ের ব্যবধানে আপনাকে আবার এ আদালতেই বিচারের জন্য দাড়াতে হতেও পারে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৫০ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক এর নাম ইতিহাসে কলংকিত হিসেবে লেখা থাকবে।
আপনাকে ধন্যবাদ এত সুন্দর করে তার গর্হিত কাজ তুলে ধরার জন্য ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন