শিরোনাম হীন
লিখেছেন লিখেছেন তাহাবীতাহাপিন ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০২:২১:২১ রাত
শাহবাগ জমায়েতের প্রথম থেকেই আমি এটিকে সরকারের রিমোট কন্ট্রোলে পরিচালিত একটি ফ্যাসিবাদী আন্দোলন হিসেবেই দেখছি। ট্রাইব্যুনাল নিয়ে যে বিতর্ক আজ সৃষ্টি হয়েছে, তার সব দায় সরকারের হলেও কী চমত্কারভাবেই না শাহবাগ চত্বরে বিএনপি ও জামায়াতকে প্রতিপক্ষ বানানো হয়েছে। সরকারের অপদার্থতার সর্বশেষ উদাহরণ ২০০৯ সাল থেকে ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন। এই সংশোধনীর ফলে সরকার পক্ষও এখন ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করতে সমর্থ হবে। একটি চলমান মামলার একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে এভাবে ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা নিয়ে আইন সংশোধন করায় নতুন করে বিতর্কের সুযোগ সৃষ্টি হলো। নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আইনের এই সর্বশেষ সংশোধনীর প্রেক্ষিতে সমগ্র বিচার প্রক্রিয়াকেই উপহাস আখ্যা দিয়েছে।
আশির দশকের প্রারম্ভে শেখ হাসিনার রাজনীতি শুরু হয়েছিল জামায়াতে ইসলামীকে মিত্র রূপে পাশে নিয়েই। শেখ হাসিনার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী এবং স্বৈরাচারী এরশাদের দহরম-মহরম নতুন কোনো ঘটনা নয়। ১৯৮৬ সালে তার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ জাতির কাছে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে অবৈধ এরশাদ সরকারকে বৈধতা দিয়েছিল। ১৯৯৫-৯৬ সালে বিএনপির বিরুদ্ধে একই শেখ হাসিনা একপাশে গোলাম আযম এবং অন্য পাশে এরশাদকে নিয়ে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। জামায়াতের প্রচ্ছন্ন সমর্থনেই সরকার গঠন করেছেন। তাহলে শাহবাগের তরুণদের কণ্ঠে ‘শেখ হাসিনা তুই রাজাকার’ ধ্বনি আজ পর্যন্ত কেন উচ্চারিত হলো না? ফতোয়া চত্বর থেকে তারা তো যাকে তাকে তুই রাজাকার বলে অসম্মান করছে। এ কোন বিকৃত মানসিকতার তরুণ প্রজন্ম, যারা বয়স্কদের সম্মান করতে জানে না, ব্লগে অবিশ্বাস্য সব অশ্লীল বাক্য নির্দ্বিধায় লেখে, পিতা-মাতার ধর্ম ইসলাম সম্পর্কে কুত্সা রচনা করে? এরাই নাকি জাতির সেই ভবিষ্যত্ যাদের নির্দেশে মন্ত্রী, এমপি, সচিবরা তিন মিনিটের জন্য রাস্তায় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এদেশের বিচারপতিরা এতই সংবেদনশীল যে ভিন্নমতের লোকজনের লেখালেখিতে পান থেকে চুন খসলেই নাকি তাদের ইজ্জতের হানি ঘটে। আদালত অবমাননা নামক এক ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের কালো আইনের যত্রতত্র প্রয়োগ করা হয়। শাহবাগের lynching mob-এর কণ্ঠে ফাঁসি চাই এবং জবাই করো মার্কা কুিসত হুঙ্কার প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা ধরে উচ্চারিত হওয়া সত্ত্বেও সেই আদালত এখন দেখেও না দেখার ভান করছেন। প্রধানমন্ত্রী নির্দ্বিধায় বলছেন শাহবাগের জনমতকে আমলে নিয়েই নাকি ট্রাইব্যুনালের রায় দিতে হবে। এই অনৈতিক ও বেআইনি দাবি সত্ত্বেও আদালত অবমাননা নাকি হচ্ছে না। দ্বিমুখী নীতির সব সীমা বাংলাদেশের বিচার বিভাগ লঙ্ঘন করেছে। সার্বিক অবস্থার ভয়াবহ অবনতিদৃষ্টে প্রধানমন্ত্রীর অতি ঘনিষ্ঠজন আইন-সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল চক্রবর্তী পর্যন্ত বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, চাপ প্রয়োগে রায় সমাজের জন্য ভালো নয়। আসক-এর প্রধান যে কতখানি সেক্যুলার সেটি তার নামের মধ্যেও প্রতিফলিত হয়েছে। আমি আশ্চর্য হব না যদি শাহবাগ চত্বর থেকে এখন তাকেও রাজাকার হিসেবে ফতোয়া দেয়া হয়
বিষয়: বিবিধ
১১৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন