পরাজয় আপনার ললাট লিখন নয়-
লিখেছেন লিখেছেন হককথা ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৮:২৪:১৫ রাত
আজকের এ লেখাটা তাদের জন্য, যারা জীবন সন্মন্ধ্যে হতাশ। যারা ভাবছেন তাদের দ্বারা এ জীবনে আর কিছুই হবে না। জীবন থেকে পাবার মত আর কিছু নেই, তাদের বলি, আগে নিজেকে জানুন, নিজের ভেতরে লুকিয়ে থাকা অফুরাণ শক্তি আর সীমাহীন সম্ভাবনার কথা ভাবুন, উপলব্ধী করুন। আপনার জন্ম পরাজয় মেনে নেবার জন্য হয়নি। আপনি তো সফলদেরই একজন!
আপনি জীবনের একেবারে শুরু থেকেই সফল একজন! মাতৃগর্ভে আসার একেবারে সূচনালগ্নে পচিশ কোটি শ্রুক্রকীটের মধ্যে আপনি ও একজন ছিলেন! নিক্ষিপ্ত হবার পরে আপনারা এই পচিশ কোটি জন প্রাণপণ শক্তিতে ম্যা্রাথন রেসের মত করে মা'র ডিম্বানূ পানে ছুটেছিলেন । হাঁ, আপনিও ছিলেন তাদের মধ্যে, এই পচিশ কোটি জনের মধ্যে।
কল্পনা করতে পারেন? পচিশ কোটি জনের এক বশাল বাহিনীর মধ্যে আপনিও উর্দ্ধশ্বাসে ছুটে চলেছেন নিজ লক্ষ্য পানে! সেদিনের সেই প্রতিযোগিতায় চব্বিশ কোটি নিরানব্বই লক্ষ নিরানব্বই হাজার নয়শত নিরানব্বই জনকে পেছনে ফেলে আপনি, এই আপনি, হ্যাঁ, আপনি প্রথম মা'র ওভারিতে; ডিম্বাশয়ে পৌছে গেছেন! পচিশ কোটি প্রতিযোগীর মধ্যে আপনিই একমাত্র সফল ব্যক্তি, আপনার সফলতার যাত্রা, আপনার বিজয় রথ তো সেই সেদিন থেকেই শুরু হয়েছে।
আরও একবার কল্পনা করুন, আপনার সেই মহা চটকদার, চিত্তাকর্ষক, বিষ্ময়কর সফলতাটিকে! সেই মহা সফলতার সুত্র ধরেই আপনার এই জীবন প্রাপ্তি! এ জীবন তো আপনার সেই গৌরবময় বিজয়, সেই সাফল্যটাকে উদযাপন করার জন্যই দেয়া হয়েছে! সফলতা দিয়ে শুরু যে যাত্রার, সেই যাত্রা পথে কেন আবার ব্যর্থতা আসবে?
আপনি পৃথিবীতে এসেছেন এক পরিবর্তিত পরিবেশে। এই পরিবেশের জন্য আপনার প্রয়োজনীয় সকল অস্ত্র, সকল উপাদান আপনাকে দেয়া হয়েছে। শরীর, মন, শক্তি, বুদ্ধি-বিবেক, জ্ঞান-প্রজ্ঞা- বিচক্ষণতা, সব আপনাকে দেয়া হয়েছে। আপনাকে যিনি পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন সেই তিনিই আপনাকে ভালো মন্দের পার্থক্য করার ক্ষমতা, উচিৎ- অনুচিৎ বোঝার মত ক্ষমতাও দিয়েছেন, (কুরআন-৯১:৮) । অতএব আপনার ব্যর্থ হবার কোনো কারণই নেই।
আপনি বা আপনার কোনো বন্ধু বান্ধব কী হ্যারি পটার পড়েছেন? বইটির স্বনামধন্যা লেখিকা তার লেখা নিয়ে প্রকাশকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন, এক এক করে বারোজন প্রকাশক তার এই লেখা ফিরিয়ে দিয়েছেন এই বলে যে, লেখাটি প্রকাশযোগ্য হয় নি, বাজারে বিকোবে না। তের নম্বর প্রকাশকও তার লেখাটি ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু উক্ত প্রকাশকের কিশোরী কন্যা ঘটনাক্রমে উক্ত বই এর পান্ডুলীপিটা পড়ে ফেলে। সেই কিশোরী কন্যাই প্রকাশক বাবার কাছে জেদ করে বসে; ঐ পানডুলীপিটাকে বই বানিয়ে তাকে দিতে হবে! আদুরে কন্যার আব্দার রাখতে গিয়ে প্রকাশক শেষ পর্যন্ত অনিচ্ছা সত্তেও জে কে রোউলিং এর লেখাটা বই আকারে প্রকাশ করে।
আর এর পরে যেটা ঘটেছে, সেটা অবিশ্বাস্য, কেবলই ইতিহাস! দ্যা ভিন্সি কোড এর পরে বিশ্বের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যায় বিক্রিত বই; ৪৫ কোটি কপি বিক্রি হয়েছে! পর পর বারো জন প্রকাশকের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে মিসেস রোউলিংস যদি হাল ছেড়ে দিতেন , তা হলে কী আজ তিনি এই ইতিহাস রচনা করতে পারতেন?
আজকের বিশ্বের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও খ্যাতিমান বাস্কেটবল খেলোয়াড় মাইকেল জর্ডান জীবনে নয় হাজার বার লক্ষ্য ভেদে ব্যর্থ হয়েছেন, তিনশত ম্যাচ হেরেছেন, দলকে অন্তত ছাব্বিশ বার নিশ্চত জয় থেকে বঞ্চিত করেছেন। তিনি জীবনে বার বার হেরেছেন, কিন্তু হাল ছাড়েন নি। আজ তিনি বিশ্বের, এমনকি বলা হয়ে থাকে, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাস্কেটবল খেলোয়াড়।
আর এডিসনকে তো স্কুলে ভর্তি করার মাত্র তিন মাস পরেই তার প্রধান শিক্ষক এডিসনের মা'কে ডেকে আনিয়ে তার হাতে ছেলেকে তুলে দেন, বলেন, আপনার ছেলের মাথায় কিচ্ছু নেই! মেধা শূন্য, ওকে দিয়ে লেখা পড়া হবে না, বাড়ি নিয়ে যান। এডিসনের মা এ কথা শুনে অপমানিতা হয়েই স্কুল থেকে ছেলেকে সাথে করে ফিরে আসেন, এর পরে নিজ বাড়িতে, নিজের ত্বত্তাবধানে রেখেই ছেলেকে লেখা পড়া করাতে থাকেন। আর এই এডিসনই কিনা বিদ্যূৎ আবিস্কার করে বিশ্বকে আলোকিত করেছেন! হয়েছেন জগৎজোড়া বিখ্যাত বিজ্ঞানী!
জানেন কী, এডিসন এক এক করে দুই হাজার বার বিভিন্ন উপাদান, পথ ও পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে চেষ্টা করেও বাতি জ্বালাতে ব্যর্থ হন। এতে ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে তার সহকারী হাল ছেড়ে দিয়ে বলে উঠেন, আমরা এত চেষ্টা করেও কিছুই করতে পারলাম না! কিছুই শিখলাম না! এডিসন জবাব দিলেন, আমরা কিছু শিখি নাই, তা নয়। আমরা দুই হাজারটা পথ শিখেছি, জেনেছি, এই দুই হাজার পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ বাতী জ্বালানো সম্ভব নয়। হতাশ সহকারী হাল ছেড়ে দিলেও প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী, অদম্য এডিসন কিন্তু ছাড়েন নি, এর পরের বারেই তিনি সফল হন। আজ তিনি ইতিহাস! আপনি কী এডিসনের চেয়েও স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন? অবশ্যই তা নন। তা হলে আপনি কেন হেরে যাবেন? আপনি কেন ব্যর্থ হবেন?
জার্মান সুরসম্রাট বিটোফেন জীবনের একটা পর্যায়ে এসে তার শ্রবণক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন, কিছুই শুনতে পেতেন না। অথচ তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ চারটি সূর তিনি এই সময়টাতেই করেছেন! বধিরতা তার সৃষ্টিশীলতাকে আটকাতে পারে নি। আপনি তো বিটোফেন এর মত বধির নন! আপনি তো বিটোফেন এর চেয়েও বেশি শক্তিশালী, বেশি সক্ষম একজন। আপনি কেন ব্যর্থ হবেন?
আইনস্টাইনের তো চার বৎসর বয়স পর্যন্ত কথাই ফোটেনি মুখে! সাত বৎসর বয়স না হওয়া পর্যন্ত তিনি পড়্তেই পারতেন না! শিক্ষকরা ভেবেছিলেন ছেলেটা বোধ হয় মানসিক প্রতিবন্ধী! সেই ছেলেই কি না হয়ে উঠলো জগৎবিখ্যাত বিজ্ঞানী! আজ কে না জানে আইস্টাইনের নাম! আপনাকে কী কেউ আজ পর্যন্ত মানসিক প্রতিবন্ধী ভেবেছে? ভাবে নি। তার মানে হলো আপনি আইনস্টাইনের চেয়েও বুদ্ধিমান ! তা হলে আপনি কেন সফল হবেন না?
এ লেখাটা বহুল প্রচলিত একটা গল্প বলেই শেষ করি। সেই হতভাগ্য গাধাটার কথা নিশ্চয়ই শুনেছেন। এক লোকের এক গাধা ছিল, গাধাটা বুড়ো বয়সে উপনীত হবার কারণে সে আর আগের মত বোঝা টানাতে পারতো না, স্বাভাবিকভাবেই তার প্রতি মালিকের খুব একটা খেয়ালও ছিল না।
একবার গাধাটা অসাবধানবশত বাড়ির পাশে একটা পরিত্যক্ত কুয়োর মধ্যে পড়ে গিয়ে চেঁচামেচি করতে থাকে। তার চিৎকারে কুয়োর পাড়ে গিয়ে মালিক তার অবস্থা দেখে ভাবলো, গাধাটাকে তুলে এনে লাভ নেই। ও তো এমনিতেই মরেছে, অতএব ওকে ওখানেই কবর দিয়ে দিলেই হলো। সে আরও কয়েকজনকে ডেকে কুয়োর মধ্যে আশপাশ থেকে মাটি ফেলতে বললে সকলে মিলে সে মতই কুয়োর মধ্যে মাটি ফেলতে থাকে।
গাধা ব্যপারটা বুঝতে পেরে মৃত্যু আতংকে আতংকিত হয়ে পড়ে এবং আরও বেশি চিৎকার শুরু করে। তার চিৎকারে অতিষ্ঠ হয়ে বুড়ো ও তার দল বল আরও জোরে মাটি ফেলতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে মালিককে অবাক করে দিয়ে গাধাটা আর কোনো চেঁচামেচি করছে না দেখে মালিক ভাবলো গাধাটা বোধ হয় মাটি চাপা পড়ে মরেছে!
আসলে মালিকের উদ্দেশ্য বুঝতে পারার পর গাধাটা চিৎকার চেঁচামেচি না করে নিজে নিজেই সেখান থেকে উঠে আসার পথ খুঁজতে লাগলো এবং অচিরেই সে তো পেয়েও গেল! প্রতিবার নিক্ষিপ্ত মাটি যা কুয়োর মধ্যে পড়ছিল, তার গা'এও পড়ছিল কিছু অংশ, গাধা তা ঝেড়ে চুপ চাপ তারই উপর উঠে দাঁড়াচ্ছিল। এভাবে মাটি যত উঁচুতে উঠে আসছিলো, সে সাথে গাধাটাও!
ওদিকে কূয়োর বাঁকিটুকু ভরাট করার জন্য গাধার মালিক দলবলসহ মাটি ফেলেই চলছিল! সেটা যখন ভরাট হবার মত অবস্থায় এলো দেখা গেল, গাধাটা তখনও ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে! উপস্থিত সবাইকে অবাক করে দিয়ে সে তড়াক করে এক লাফে কুয়ো থেকে উঠে আসলো!
এ গল্পটার ভেতরে একটা শিক্ষা আছে। শিক্ষাটা হলো, আপনার জীবনে যে সব বিপদ-আপদ, প্রতিকূলতা আসে সে সবে ধৈর্য না হারিয়ে ঠান্ডা মাথায় তা মোকাবেলা করতে হয়। মনে রাখতে হয়, বিপদ আপদ আপনাকে ভেঙ্গে ফেলতে আসে নি, বরং তা এসেছে আপনাকে আরও শক্ত, আরও দক্ষ, আরও যোগ্য হিসেবে গড়তে। সেই আপনিই যদি বিপদ দেখে, ব্যর্থতা দেখে ঘাবড়ে যান, তা হলে যোগ্য হয়ে গড়ে উঠবে কে?
একবার ভাবুনতো আইনস্টাইন, এডিসন, জে কে রোউলিং এরা যদি ব্যর্থতা দেখে হতাশ হয়ে পড়তেন তা হল কী আজ ইতিহাস রচনা হতো? বিশ্বাস করুন, ইতিহাস সৃষ্টিকারী অত্যন্ত সফল ঐ সব ব্যক্তিবর্গের চেয়ে আপনি কোনো অংশেই কম নন।
হ্যাঁ, আপনি ভীষণ বুদ্ধিমান। বিশ্বাস করুন, আপনি ভীষণ বুদ্ধিমান। আইনস্টাইনের হাতে যে সুযোগ ও সম্পদ ছিল না, এই একবিংশ শতাব্দীতে আপনার হাতে তা আছে। আপনার এখন কেবল দরকার একাগ্রতা আর লেগে থাকার মত ধৈর্য। আপনি লেগে থাকুন, সফলতাই আপনার ভাগ্য লিখন, কেননা সফলতা দিয়েই আপনার জীবন শুরু, পরাজয় আপনার বিধিলীপি নয়।
বিষয়: বিবিধ
১৯০৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন