কসম কলমের আর সে যা লিখে; সেই ক্বিতাবের-
লিখেছেন লিখেছেন হককথা ১৩ মার্চ, ২০১৬, ০৩:০৮:৫৮ রাত
মহান আল্লাহ রাব্বুল আ'লামিন তিনটা বস্তু তাঁর কুদরতি হাতে সৃষ্টি করেছেন, সেগুলো হলো; এক- আদম আ:, দুই- জান্নাতুল ফিরদাউস এবং তিন কলম।
আল্লাহর কুদরতি হাতের প্রথম সৃষ্টি; আদম আ: (মানুষ)-
আদম আ: এরই অধস্তন বংশধর আমরা প্রতিটি মানবসন্তান। আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্ঠি, সবচেয়ে প্রিয় সৃষ্টি। সবচেয়ে মর্যাদাবান, সবচেয়ে জটিল এবং সবচেয়ে বুদ্ধিমান সৃষ্টি। এ মর্যাদাকেই তিনি আরও বেশী মর্যাদাবান, মহিমান্বিত করেছেন আদমের মধ্যে তাঁর নিজের 'রুহ' ( নিজ পবিত্র সত্তার কিছু সিফাত) ফুঁকে দিয়ে! (তারা আপনাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দিনঃ ‘রূহ’ আমার রবের আদেশ। এ বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে।)
একে তো তিনি নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন, আর দ্বিতীয়ত সেই সৃষ্টির মধ্যে আবার নিজের রুহ'কে বা নিজের কিছু সিফাতকে ফুঁকে দিয়েছেন, এই দুটো কারণেই মানুষ সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। সবচেয়ে বেশী সম্মানিত। তাঁর নিজের ঘোষণা ' ওয়ালাকাদ কাররামনা বনি আদাম' (আল কুরআন ১৭/৭০)
এতটাই সম্মানিত যে, সকল কিছু ফেলে সার্বক্ষণিকভাবে একমাত্র আল্লাহরই তসবীহ করে যাচ্ছে, বিন্দুমাত্র অবাধ্যতা না করে, সেই তাদেরকে বাদ দিয়ে এই মানুষকে, এই আদমকেই তিনি নিজের প্রতিনিধি হিসেবে ঘোষণা করেছেন। (সুরা বাকারা ৩০) আর এই উচ্চ সম্মান, উচ্চ মর্যাদার বাহ্যিক স্বীকৃতি হিসেবে তিনি সকল ফেরেশতা দিয়ে আদমকে সেজদা করিয়েছেন। ((সুরা বাকারা ৩৪)
এত উচ্চ মর্যাদা যার, তার সামনে তিনি পথচ্যুতির উপাদানও রেখেছেন পরীক্ষা হিসেবে। অহংকারী শয়তান বিতাড়িত হয়ে মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ফিরেয়ে রাখার সে দায়িত্ব উপযাচক হয়ে নিজেই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। ( সুরা হিজর: ৩৯-৪০)
এভাবেই মু'মিনের সাথে শয়তানের চিরস্থায়ী দ্বন্দের সৃষ্টি।
আল্লাহর কুদরতি হাতের দ্বিতীয় সৃষ্টি; জান্নাত-
আর শয়তানের সাথে মানুষের এই যে চিরন্তন দ্বন্দ, এ দ্বন্দে যে মানুষ শয়তানকে পরাজিত করে, তাকে অবজ্ঞা করে এক আল্লাহর নির্দেশিত পথে অবিচল থাকতে পারবে, তার জন্য পুরষ্কার হিসেবে তিনি সৃষ্টি করেছেন অসীম এবং অকল্পনীয় সূখময় স্থান; জান্নাত। কুরআনের অনেক জায়গায় মু'মিনদের প্রতি জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে আল্লাহর পক্ষ হতে। (সুরা বাকারা-২৯, ইমরান-১৮৫, তওবা-৭২, নিসা-১৩, সা'দ- ৭৩ সহ আল কুরআনের শত শত আয়াত।)
আল্লাহর কুদরতি হাতের তৃতীয় সৃষ্টি; কলম-
ইবলিশ তথা শয়তানের কুটচাল বড়ই শক্ত, দূর্বোধ্য এবং জটিল। সে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে, চতুরতার সাথে ফাঁদ তৈরী করে মানুষকে বিপথে নেবার জন্য। ইবলিশের সেই ফাঁদ থেকে বেঁচে থাকতে পারাটা চাট্টিখানি কথা নয়। এর জন্য একজন মানুষকে, একজন মু'মিনকে সব সময় সচেতন ও সতর্ক থাকতে হয়। কেবল মাত্র সতর্ক ও সচেতন থাকলেই চলে না, এর জন্য মানুষের কাছে থাকতে হয় পর্যাপ্ত জ্ঞান। এ কারণেই আল্লাহ পাক মানুষকে জ্ঞান দিয়েছেন, সে যদি এই জ্ঞান ভুলে যায়, তবে তাকে তা আবার মনে করিয়ে দেবার জন্য নবী-রাসুল পাঠান, নিখাঁদ জ্ঞান দিয়ে।
আর পৃথিবীতে যত জ্ঞান এসেছে, তা সবই এসেছে এক আল্লাহর নিকট হতে, তিনিই আ'লিম, তিনিই সকল বিষয়ে সুক্ষ জ্ঞান রাখেন। সকল বিষয়ের জ্ঞান রয়েছে তাঁর কাছে, তিনি জ্ঞানের একমাত্র উৎস। তিনিই মানুষকে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন। (আল কুরআন ২/ ৩১) মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন কলমের সাহায্যে, সেটা তাঁর নিজেরই ঘোষণা (সুরা আ'লাক-৪)।
কিতাব তথা আল কুরআন লীপিবদ্ধ করা হয়েছে কলমেরই সাহায্যে। আর বিশ্বের শেষ দিনটি পর্যন্ত জ্ঞানের বিস্তার ঘটতে থাকবে এই কলমের দ্বারাই।
এই কারণে কলম এতটা গুরুত্বপূর্ণ একটি বস্তু। আল্লাহর এক বিষ্ময়কর সৃষ্টি। পবিত্র কুরআনে কলম শব্দটি মোট চারবার বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে। (সুরা কলম: ৬৮-১- ) সুরা, লুকমান- ২৭, ইমরান-৪৪, আ'লাক- ৯৬)
এই কলমের অপব্যবহার করে কেউবা নিজের নিশ্চিত ধ্বংস ডেকে আনে, সত্যের বিপরিতে মিথ্যা আর অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিয়ে। আর কেউবা এই কলমকেই পুঁজি করে নিজের জন্য কল্যাণ অর্জণ করে শ্বাশত সত্য প্রচারের মাধ্যমে। আপনি যদি আল্লাহর সৃষ্টি কলমকে আশ্রয় করে তাঁর ক্বিতাবের বাণী ছড়িয়ে দিতে, জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে তৎপর হন, সেটা হয়ত অপর ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীর জন্য হেদায়েতের কারণ হয়ে যেতে পারে।
আপনি নিজে আল্লাহর কুদরতি সৃষ্টি, তাঁরই বাণী প্রচারে ব্যবহার করলেন তাঁর আরও একটি কুদরতি সৃষ্টি; কলম। আশা করা যায় যে, আপনার এই খেদমতের কারণে আল্লাহ পাক আপনাকে তাঁর তৃতীয় কুদরতি সৃষ্টি জান্নাত থেকে বঞ্চিত করবেন না, অতএব আল্লাহর উপরে ভরসা করে কলম ধরুন সমাজে ছড়িয়ে দিন আল্লাহর বাণী; জ্ঞান। সমাজে জগদ্দল পাথরের মত জেঁকে বসা আধুনিক জাহেলিয়াতের মোকাবেলায় হয়ে উঠুন একজন কলম সৈনিক। কসম কলমের আর সে যা লিখে; সেই ক্বিতাবের, আপনিও ইনশাআল্লাহ সফল হবেন।
বিষয়: বিবিধ
২৬৬৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন