গো মাংস ও বাংলাদেশ সমাচার-
লিখেছেন লিখেছেন হককথা ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৯:২৩:২৯ রাত
খবরটির প্রতি দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। খবরটি হলো আমেরিকায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের যুক্তরাষ্ট্র শাখা বাংলাদেশে অবিলম্বে আইন করে গরু জবাই বন্ধের দাবি জানিয়েছে (সুত্র বিডি টুডে. নেট)।
খবরটি দেখে বড়ই কৌতুক বোধ করলাম। কিছুটা গোষ্মার উদ্রেক যে হয় নি, তাও কিন্তু না। তবে, তার চেয়ে বেশী মনের ভেতরে কিছু প্রশ্নের জন্ম হয়েছে, এ প্রশ্নের উত্তরটা পেতেই এ লেখার অবতারণা।
জ্যাকসনহাইটসের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি টমাস দুলু রায়, সাধারণ সম্পাদক প্রদ্বীপ দাস, সদস্য সচিব প্রদ্বীপ মালাকার, পরিষদের ডিরেক্টর ও আমেরিকান হিন্দু ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট শ্যামল চক্রবর্তী, ঐক্য পরিষদের নেতা ড. দ্বিজেন ভট্টাচার্য, গৌরাঙ্গ কুণ্ডু, রূপকুমার ভৌমিক, প্রবীর রায়, রণবীর বড়ুয়া, প্রণবেন্দু চক্রবর্তী, অমিত চৌধুরী প্রমুখ। লিখিত বক্তব্য পেশ করেন ঐক্য পরিষদের প্রেসিডেন্ট বিদ্যুৎ দাস, প্রমূখ।
সাম্প্রতিক কালের বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করে রাজনীতি থেকে শুরু করে প্রশাসনের সর্বত্র খবরদারী করে বেড়ানো হিন্দু সম্প্রদায়ের উপরে তাদের অতি প্রিয় এই সরকারের আমলেও নাকি নির্যাতন অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে!
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু আর সংখ্যাগুরু নির্যাতন বলে কিছু নেই, বরং যেটা আছে সেটা হলো; সবল কর্তৃক দূর্বলের উপরে নির্যাতন। ধর্ম বিশ্বাসে এইসব নির্যাতনকারী বা নির্যাতিত কখনওবা হিন্দু, কখনও বা মুসলমান, বা বৌদ্ধ বা খৃষ্টান, কখনও বা নারী বা শিশু আবার কখনও বা পুরুষ। এখানে সবল ও ক্ষমতাধর কর্তৃক দূর্বলের উপরে নির্যাতনটা মহামারী আকার ধারণ করেছে, সেটা এক বাস্তবতা।
এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করে কেবলমাত্র মুসলমান কর্তৃক হিন্দু-খৃস্টান বা বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের নির্যাতিত হিসেবে দেখানোর প্রচেষ্টা আর যাই হোক না কেন, সুস্থ মানসিকতার প্রকাশ নয়।
সংবাদ সম্মেলনের আয়োজ ও বক্তব্য প্রদানকারীদের মানসিক বিকৃতি নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করার আরও যৌক্তিক কারণ আছে বটে।
কারণ হলো গরু প্রেম! তারা বলেছেন ' বাংলাদেশে যেভাবে গো-হত্যা চলছে এটা মেনে নেয়া যায় না।' অবিলম্বে আইন করে বাংলাদেশে গরু জবাই বন্ধের দাবীও জানিয়েছেন!
এখানেই আমার প্রশ্ন। বক্তারা যে আমেরিকায় বসে এই ন্যক্কারজনক দাবী জানিয়েছেন, সেই আমেরিকাতেই ২০১২ সালের হিসেবে প্রতি দিন গড়ে ১৮০৩২ টি, প্রতি বৎসর ৬৬ লক্ষ গরু জবাই করা হয়। (সুত্র- United States Department of Agriculture, Economic Research Service)।
যে আমেরিকায় বসে তারা এ হাস্যকর দাবী জানালেন, সেখানে প্রতি বৎসর দুই হাজার চারশত কোটি পাউন্ড গো-মাংশ প্রোডাক্শন হয়, যার মধ্যে দুই হাজার কোটি পাউন্ড মাংশই তারা ভক্ষণ করে আর প্রায় আড়াইশত কোটি পাউন্ড রপ্তানী করে, বেশীরভাগই যায় পার্শ্ববর্তি কানাডায়।
ওদিকে আমাদের এই দাদাদের তীর্থস্থান, তাদের অতি প্রিয় দেশ; ভারত হলো গো-মাংশ রপ্তানীতে বিশ্বের এক নম্বর, গো মাংশ উৎপাদনে ৫ম এবং গো মাংশ ভক্ষণে ৭ম স্থান অধিকারী দেশ! উইকিপিডিয়ার এই তথ্যই বেল দেয় সেখানে কী ব্যপাক হারে গরু জবাই হচ্ছে! ভারত প্রতি বৎসর ৩৬ লক্ষ মেট্রিক টন গো মাংশ উৎপাদন করে!
এত কিছু জানার পরেও দাদারা কেবল মাত্র বাংলাদেশে গরু জবাই করার আঈন করার দাবী জানালেন কেন? কেন তারা ভারত এবং আমেরিকায় গরু জবাই বন্ধের কথা বললেন না? তেমন দাবী করার মুরোদ দাদাদের ছিল না বোধগম্য কারণেই।
কারণগুলো হলো, আমেরিকানরা কী খাবে বা না খাবে,তাদের সে ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বরদাশত করবে না তারা। আর ভারতের কথা তারা বলেন নি, কারণ, প্রথমত; ভারতীয়দের কাছে পর্দার আড়ালে এই গোমাংস অতি উপাদেয় এক খাদ্য, তারা বাইরে যাই বলুন না কেন গো মাতা নিয়ে, সুযোগ পেলেই গো মাতার দেহ দিয়ে উদরপূর্তি করতে মোটেও কার্পণ্য করে না, সেটা প্রতি বৎসর ভারতীয়দের দ্বারা ১৯ লক্ষ ৬০ হাজার মেট্রিক টন গোমাংস ভক্ষণের সরকারী তথ্য দ্বারাই প্রমাণিত এক নিরেট বাস্তবতা, এক অকাট্য সত্য। (সুত্র; ইউকিপিডিয়া)।
আরও একটা কারণ আছে বটে, প্রতি বৎসর ভারত হিন্দুদের দ্বারা ভগবান বলে স্বীকৃত ও পূজিত গো মাতার ১৬ লক্ষ ৮০ হাজার মেট্রিক টন মাংস রপ্তানী করে ৪৩০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করে থাকে (সুত্র; ইউকিপিডিয়া । আমাদের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের দাদারা ভারত মাতার এই বিশাল আয়ের উৎসকে নাড়া দিতে চান নি।
তবে তারা নাড়া দিয়েছেন প্রায় ১৫ কোটি বাংলাদেশী মুসলমানের ব্যক্তি স্বাধীনতায়! কারণ সময়টাই এমন যে, এখন বাংলাদেশের মুসলমানদের বিরুদ্ধে যা কিছু বলা যায়, তাদের কে নিয়ে যেমন খুশী তেমন মন্তব্য করা যায়। তাদের অস্তিত্ব ধরে টানও দেয় যায়!
তবে দাদাদের একটা কথা বলে রাখি, এই বদ্বীপের মুসলমান, তথা বাংলাদেশী মুসলমানদের নিয়ে বেশি টানা টানি না করাই ভালো। কারণ, সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলে এরা কিন্তু জালিমের শেকড় ধরে টান দিতে বিন্দুমাত্র কসুর করে না। গো মাংস নিয়ে বাড়াবাড়ী করতে গিয়ে রাজা গৌর গোবিন্দ সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন বটে!
ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের এই বদ্বীপে কিন্তু আজও শাহজালাল আর শাহ পরাণের উত্তরসূরীরাই বসবাস করে! দাদারা সে কথাটা মনে রাখলে ভালো করবেন।
বিষয়: বিবিধ
২৩৪৯ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ঐ তথাকথিত ঐক্য পরিষদ নেতারা কি নগ্ন পদে ছিলেন? না জুতা কেনার সময় চামড়ার ঠিকুজী বের করেন?
আল্লাহ যা হালাল করেছেন তা হারাম করা কুফুরি। আর এ কুফুরি আর এ কুফুরির দাবী জানিয়ে তারা মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দিয়েছেন।
এটা ভারত নয় বাংলাদেশ।
ঘোড়া গবেট গাধা,
আচ্ছামত প্যাদা।
ওপাড়েতে আছে তাদের
ধূতিপড়া দাদা।
এরা নিজেরাও বুঝে যে এসব না করলে তাদেরকে কেউ চিনবেও না ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন