আদম বনাম হাওয়া ও আমাদের মৃত বিবেক-
লিখেছেন লিখেছেন হককথা ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০১:৪৯:২০ রাত
হযরত আদম আ: কে আল্লাহ পাক যখন পৃথিবীতে প্রেরণ করেন, তখন তাঁকে বর্তমান শ্রীলংকায় একটি পাহাড়ের উপরে নামিয়ে দেয়া হয়। 'আদম পাহাড়' নামে সে পাহাড়টি আজও বিশ্বের তাবৎ ভ্রমণ পিপাসু মানুষের কাছে এক অন্যতম আকর্ষণ।
ওদিকে মা হাওয়া আ: কেও একই সাথে পৃথিবীতে নামিয়ে দেন আল্লাহ পাক। তাঁকে নামানো হয় বর্তমান সউদি আরবের জেদ্দা শহরের নিকটে।
জেদ্দা; নামকরণটিও হয়েছে মা হাওয়া আ: এর স্মৃতিকে ধারণ করেই। জিদ্দ / 'জিদ্দি' আরবি ভাষায় মানে হলো; 'দাদী' বা 'নানী' / 'আমার দাদী' বা 'আমার নানী' আদম ও হাওয়া আ: সন্তান-সন্ততি ও তাদের বংশধররা নিজেদের দাদী বা নানী'র (বিবি হাওয়া আ: ) আদি বাসস্থানকে নির্দেশ করতেই স্থানটিকে ঐ নামে (জেদ্দা) ডাকা শুরু করে।
পৃথিবীতে আসার পরে আদম ও হাওয়া আ: দু'জনে দুই স্থানে অবতরণ করেন। কেউ কারো ঠিকানা জানতেন না। কিন্তু তারা জানতেন যে, তাঁর অপর সাথীও এ ভূখন্ডেরই কোথাও না কোথাও এসেছেন। উভয়ে পরষ্পর হতে বিচ্ছিন্ন! সে ছিল এক দু:সহ জীবন! একাকীত্বের এ যন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচতে তারা একে অপরকে খুঁজে ফিরতে লাগলেন। আদম এ ভাবেই প্রায় দুই শত বৎসর ছিলেন।
হযরত আদম আ: শ্রীলংকা হতে হাঁটা শুরু করলেন বিবি হাওয়ার খোঁজে, ওদিকে বিবি হাওয়াও আদম আ: এর খোঁজে জেদ্দা হতে এগুতে থাকলেন। কারোরই কোন নির্দিষ্ট ঠিকানা ছিল না, উদ্দেশ্যহীনভাবে সাথীকে খুঁজে ফেরা!
এভাবেই দুই শত বৎসর পরে এসে তাদের পরষ্পরের দেখা হয়ে গেলো মক্কার চৌদ্দ কিলোমিটার দূরের এক খোলা মাঠে। নতুন করে দু'জনের জানাজানি, স্বাক্ষাৎ হলো যে মাঠে, সেটিই হলো আরাফাত-এর মাঠ। আরবিতে আরাফাত (আরাফাহ) মানে হলো দেখা স্বাক্ষাৎ/ জানাজানি/চেনাপরিচয় ইত্যাদি।
ইতিহাসটুকু বর্ণনার জন্যই কেবল এ ঘটনার অবতারণা করি নি এখানে। ঐতিহাসিক এ ঘটনার মধ্যে আমাদের মনুষ্য সমাজের জন্য এক বিরাট শীক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।
সেটা হলো এই যে; একজন পুরুষ আর একজন নারী, আমাদের আদি পিতা ও আদি মাতা, দু'জনে একত্রিত হয়ে একটি পরিবারের সূচনা করেছিলেন, বিশ্বের সর্বপ্রথম পরিবার।
নিজের কণে খুঁজে বের করতে, তার সাথে জুটিবদ্ধ হয়ে একটি পরিবার গঠন করতে হযরত আদম আ: শ্রীলংকা হতে আরাফাত পর্যন্ত ৪৬৩১ কি:মি: বা ২৮৮৭ মাইল হেঁটেছেন। আর ওদিকে একই লক্ষ্যে বিবি হাওয়া জেদ্দা হতে আরাফাত পর্যন্ত ১১৬ কি:মি: বা ৭২ মাইল হেঁটেছেন। এর পরেই দু'জনে দুজনের দেখা পেয়েছেন।
লক্ষণীয় হলো; আল্লাহ পাক বিবি হাওয়া আ: কে যতটা পথ হাঁটিয়ে নিয়েছেন, আদম আ: কে হাঁটিয়েছেন তার চল্লিশ গুন বেশি পথ!
এ ঘটনার মধ্যে কী আদম সন্তানের জন্য কোন শিক্ষা নেই? হ্যাঁ, আছে বটে। শিক্ষাটা হলো; একটি সফল পরিবার গঠনে একজন স্বামী তার স্ত্রীর চেয়ে চল্লিশগুন বেশি পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করবেন।
অথচ আজ আমরা পুরুষরা আমাদের সমাজে নারীদের কাছ থেকে, তথা স্ত্রীদের কাছ থেকেই সবচেয়ে বেশি ত্যাগ ও শ্রম আশা করি। আমাদের লজ্জা হবে কী? আমাদের মৃত বিবেক কী জাগবে না?
বিষয়: বিবিধ
২৪২৮ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একজন স্ত্রীর কি অর্থনৈতিক কোন চিন্তা থাকে তার স্বামীর বর্তমানে ?
অর্থনৈতিক চিন্তা/টেনশন যার থাকে না তার দুনিয়াবী চিন্তার অন্তত ৯০-৯৫% ই থাকে না । টেনশন না থাকলে একজন মানুষ ফুরফুরে থাকতে পারে। দুনিয়াবী সমস্ত চিন্তার বাইরে নিজেকে রাখতে পারে একজন স্ত্রী তার স্বামীর সংসারে ।
পক্ষান্তরে স্ত্রীর ভরনপোষনের জন্য প্রধান উপাদানই হল অর্থ , এটা কামাতে কি একজন পুরুষকে কম পরিশ্রম করতে হয় ? তাকে কি কম চিন্তা/টেনশন পোহাতে হয় ? একটা মূহুর্তও কি সে টেনশন ফ্রি হতে পারে ?
এতদ সত্ত্বেও কি স্ত্রীরা স্বামীর প্রতি সন্তুষ্ট থাকে ?
সন্তানের জন্য আল্লাহ তায়ালা তার মাকে তার বাবার চেয়েও বড় আসনে রেখেছেন , কারণ মা তাকে কষ্ট করে গর্ভে ধারন করে ।
অন্যদিকে স্ত্রীদেরকে আল্লাহ তায়ালা তাদের স্বামীর অনুগত হতে বলেছেন কারণ তার স্বামী তার জন্য ব্যয় করে । কতজন স্ত্রী এটা ফলো করে ?
অথচ বর্তমান সময়ের উগ্রপন্থি মহিলারা এত সম্মানকে অস্বীকার করে সমঅধিকার বা সমসম্মান নিয়ে আন্দোলনে বেরিয়েছে।
তাই আগে মহিলাদের উপদেশ দেওয়া দরকার। কি বলেন?
যথার্থই বলেছেন। খুব খুব ভাল লেগেছে লেখাটা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন