রাজনীতি বিমূখতাই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা!!!

লিখেছেন লিখেছেন হককথা ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৮:৩৩:০২ রাত



ঘটনাটি হলো, একটি সওদাগরী কোম্পানীর সামান্য বেতন ভূক্ত কর্মচারী, কেরানী, রবার্ট ক্লাইভ (১৭২৫-১৭৭৪) ইতিহাসে আমরা, এই গোলামরা, যাকে ‘লর্ড ক্লাইভ বলে জানি, তিনি যে রাতে মীরনকে দিয়ে নবাব সিরাজকে হত্যা করিয়েছিলেন, সে রাতে নাকি ঘুমুতে পারেন নি।

না, নবাব সিরাজের শোকে মুহ্যমান হয়ে নয়, বরং তিনি ঘুমুতে পারেননি ভয়ে, আতংকে; না জানি সকাল হলে যখন মুর্শিদাবাদের জনগন জানবে তাদের নবাবকে হত্যা করা হয়েছে, যখন তারা জানবে, সেই সাত সাগর তের নদী পাড়ী দিয়ে আসা এক বেনীয়া ইংরেজ কেরানী তাদের দেশের নবাবকেই হত্যা করেছে, তারা কি ভাবে নেবে এই সংবাদটিকে!

তারা বোধ হয় লাখে লাখে, দল বেঁধে ছুটে আসবে ইংরেজ কুঠির পানে, সবাই যদি মাত্র একটা করে ঢিলও ছোঁড়ে, তার পরেও তাদের আক্রোশ থেকে কোনমতেই জীবন বাঁচিয়ে ইংল্যন্ডে ফিরে যাওয়া যাবে না! এই আতংকেই তিনি সারা রাত ঘুমুতে পারেন নি।

সারা রাত তিনি ঘুমুতে না পারলেও লর্ড ক্লাইভ নাকি সকাল হতেই নিশ্চিন্তায়, নিরুপদ্রবে ঘুমিয়েছিলেন, সারাদিন তিনি ঘুমিয়েছিলেন।

ঘুমিয়েছিলেন কারন, সারা রাত জেগেছেন, ভয়ে, আতংকে। কিন্তু সকাল হতেই তিনি দেখলেন, মুর্শিদাবাদের জনগন তাদের নবাবের মৃত্যু সংবাদ শুনল বটে কিন্তু সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ল যার যার মত নিজের ধান্দায়।

রাখাল বালক প্রতিদিনের মতই গানের সূর তুলে গরুর পাল নিয়ে হাঁটা দিল মাঠ পানে। চাষী তার লাঙ্গল কাঁধে নিয়ে ছুটল জমি চাষে। ব্যবসায়ী, বণীক ছুটল তার সওদা নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ফেরী করতে। গৃহবধূরা ছুটলেন ঘাটে জল নিতে। রাস্তা রাস্তায় শিশুরা মেতে উঠল খেলায়।

মুর্শিদাবাদের দৈনন্দীন জীবন চিত্রের কোন ব্যতয় নেই। কোন উত্তাপও নেই। সবই যেন স্বাভাবিক! রাজনীতি নিয়ে মাথা না ঘামানো বাংলা, বিহার আর মুর্শিদাবাদের জনগন রাজনীতি থেকে সেদিনও মুখ ফিরিয়েই থাকল! লর্ড ক্লাইভ অবাক হয়ে এসব দেখলেন। তাঁর নিজের জবানীতেই তিনি বলেছেন;

‘এসব দেখে আমার মনে এই আশ্বাস জন্মাল যে, যে দেশের জনগন তাদের স্বাধীনতা নিয়ে এতটা উদাসীন, সে দেশে আমার মত ক্লাইভ-এর কোন ভয় নেই। আমি নিরাপদ!’

আসলেই, তিনি নিরাপদই ছিলেন। সেদিন মুর্শিদাবাদের লোকজন প্রত্যেকে যদি মাত্র একটি করে ইটের টুকরা হাতে নিয়ে ছুটে আসত ইংরেজ কুঠির পানে, তা হলে সেদিনই উদ্ধার হতো ভারতীয় মুসলমানদের স্বাধীনতা।

কিন্তু না, সেদিন তা হয়নি। জনগন বুঝে উঠতেই পারেনি নবাব সিরাজের হত্যাকান্ড নিছক একটা রাজনৈতি হত্যাকান্ড ছিল না বরং এটা ছিল বাংলার স্বাধীনতাকে হত্যা করা। এটা ছিল বাংলার স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে নেয়া!!

এটা নিছক একটা রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ছিল না বরং ছিল দেশটার ভাগ্য বিপর্যয়। জনগনের এই অসচেতনতা আর রাজনীতি বিমূখতাই সেদিনকার বিপর্যয়ের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। জাতীয় ব্যর্থতা। আর এই ব্যর্থতাই ঘটিয়েছে ভারতীয় মুসলমানদের জীবনে এযাবত কালের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি।

এর পরের ইতিহাস আর শ্রদ্ধেয় পাঠককে মনে করিয়ে দিতে হবে না। দীর্ঘ দুইটি শতাব্দীর গোলামীর জিঞ্জির আমাদের কাঁধে। আর মুসলমানদের হাত থেকে শাসন ক্ষমতা সেই যে গেছে, আজ পর্যন্ত তা আর ফিরে আসেনি। ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের ভাগ্য আজও ফেরেনি সেই ঘটনার পর থেকে! এ উপমহাদেশের মুসলমানরা এখনও স্বাধীন হয় নি। তারা এখনও পরাধীনই বটে! পরাধীনতার রুপ বদলেছে মাত্র।

বিষয়: বিবিধ

৪৫৮৮ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

358300
০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:০৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার পোষ্টটির জন্য ধন্যবাদ। এভাবেই আমরা এখনও স্বাধিনতা হারিয়ে চলছি।
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০১:৪১
297256
হককথা লিখেছেন : পড়া এবং মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
358314
০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:৫৭
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ঈমানদারের বেঈমানি আচরণের কারনেই তা সম্ভব হয়েছে এখনো তা হার হামেশা হয়েই চলেছে। দৃঢ় ঈনানের বলে বলিয়ান ঈমানদার ব্যক্তির বড়ই অভাব ধন্যবাদ আপনাকে
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০১:৪১
297257
হককথা লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও ইয়া শেখ, শেখ আল কারীম- যাজাকাল্লাহ খাইর।
358323
০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১১:৩৩
অয়ন খান লিখেছেন : অসাধারণ
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০১:৪১
297258
হককথা লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও।
358337
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০১:২৯
শেখের পোলা লিখেছেন : সঠিক কথা৷ এই সুযোগে ঐ বেনিয়ারা মুসলমানদে শিখিয়েছেে,রাজনীতি করা হারাম৷ধন্যবাদ৷
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০১:৪২
297259
হককথা লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ পড়া ও মন্তব্যের জন্য।
358351
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ১১:৫৩
হতভাগা লিখেছেন : একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানকে মানে না , মান্য করে বিধর্মীদের ।
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০১:৫৬
298592
হককথা লিখেছেন : দু:খজনক তবে সত্য বটে!
358359
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০১:৫৬
একটি সকাল লিখেছেন : বড় বড় ঘটনা ঘটে মীর জাফরের উত্তারাধীকারী নাটক করে, আন্দোলনের ছন্দ পতন, রাখাল গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে, সন্ধ্যা বেলায় গুনে দেখে গাভী ঠিক আছে।
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০১:৫৬
298593
হককথা লিখেছেন : যথার্থই বলেছেন ভাই। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File