মসজিদের শ্রী বৃদ্ধিতে মুসলমানদের ভাগ্য ফেরে না।

লিখেছেন লিখেছেন হককথা ৩০ নভেম্বর, ২০১৫, ০২:১৬:১৩ রাত



প্রিয় রাসুল সা: হিজরত করে ইয়াসরীব-এ এলেন। তাঁর উটনী তাঁকে বহন করে নিয়ে চললো। কোথায় তিনি নামবেন, সে সন্মন্ধ্যে কারো কোন ধারণাই নেই। এমনকী, সেটা জানা ছিল না স্বয়ং আল্লাহর হাবীব সা: এর নিজেরও।

ভক্তি, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার আতিশয্যে ইয়াসরীবের অনেকেই এসে তাঁর উটনীর সামনে দাঁড়ালেন, বিনীত অনুরোধ জানাতে থাকলেন; ইয়া রাসুলুল্লাহ, আপনি নামুন, এই যে আমার বাড়ী, আমাদের মহল্লা, এসবই আপনার, আপনি আমাদের আতিথ্য গ্রহণ করুন।

কিন্তু তিনি সা: তাঁর উটনীর পিঠে সওয়ার হয়ে একে একে ইয়াসরীবের বনু সালেম, বনু বায়াদা, বনু সায়েদা, বনু খাযরাজ, বনু হারেস এমনকি তাঁর মামাদের বংশ বনু আদী ইবনে নাজ্জার এর মহল্লা অতিক্রম করে যেতে থাকলেন। প্রতিটি মহল্লার সামনে দিয়ে অতিক্রম করার সময় সেই মহল্লার লোকজন, নেতৃস্থানীয়রা সেই একই নিবেদন জানাতে থাকলেন আর প্রতি উত্তরে প্রিয় রাসুল সা: তাঁদের সে অনুরোধের একই জবাব দিতে থাকলেন; ‘এ উষ্ট্রীকে তাঁর ইচ্ছামত যেতে দাও। কেননা আমাকে যথাস্থানে পৌছে দেবার জন্য তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’ অবশেষে বনু মালিক ইবনে নাজ্জার-এর বাসস্থানের কাছে এসে প্রিয় রাসুল সা: এর উটনী বসে পড়লো।

জায়গাটা ছিল সাহল ও সুহাইল নামক এতিম দুই সহোদরের। এখানেই আল্লাহপাক নিয়ে এলেন আর এক এতিম, দেশছাড়া মুহাম্মদ সা: কে। এই জায়গাটাই উপযুক্ত মূল্য দিয়ে কিনে নেয়া হয়। শুরু হয় মসজিদ স্থাপনের কাজ। মসজিদে নববী। দৈর্ঘে ৩৫ গজ ও প্রস্থে ৩০ গজ, সর্বমোট ১০৫০ বর্গগজের ভূখন্ডে পাথর আর কাদা মাটির দেয়াল, খেজুর গাছের কান্ড দিয়ে খুঁটি আর প্রায় অর্ধেকটায় ঐ একই খেজুর গাছের পাতা দিয়ে ছাউনি, এভাবেই হয়ে গেল মসজিদ। প্রথম মসজিদ। মসজিদ-এ নববী। ছিল না কোন ভবন, কোন কার্পেট কিংবা তোরণ দ্বার, একটু খানি বৃষ্টি হলেই এর মেঝেতে কাদা হয়ে যেতো!

এক হাজার পঞ্চাশ বর্গগজের এই মসজিদটিই বিশ্বকে বদলে দিয়েছে। কারণ, এ মসজিদ কিছু মানুষকে এমনভাবে প্রশিক্ষীত করেছিল, এমনভাবে তাঁদের ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র গড়ে দিয়েছিল যে, তাঁরা মাত্র একটি দশকের মধ্যে এক হাজার পঞ্চাশ বর্গগজের সেই শিক্ষাকে ভিত্তি করে দশ লক্ষ বর্গমাইল এলাকায় সত্য আর সুন্দরের আলো ছড়ালেন। মাত্র চারটি দশকের মধ্যে সে আলোয় উদ্ভাসিত হলো পঁয়ত্রিশ লক্ষ বর্গমাইলের এক বিশাল জনপদ! সে আলোয় ভেঁসে গেল দুই সুপার পাওয়ার; রোমান আর পারস্য সা¤্রাজ্যের হাত ধরে বিশ্বের বুকে জেঁকে বসা জাহেলিয়াত। বদলে গেল বিশ্ব চীরদিনের মত।

আজ পুরো বিশ্ব জুড়ে কোটি কোটি মসজিদ। মনোহরী অট্টালিকা, চোখ ধাঁধাঁনো মসজিদ। সে সব মসজিদে উপচে পড়া ভীড়, বিশ্বে দেড়শত কোটি মুসলমান। অথচ সেই মুসলমানরাই কি না বিশ্বকে বদলাতে পারছে না! বিশ্বকে বদলাব কী, তাদের নিজেদেরই কী মঞ্জিল ঠিক আছে?

আমাদের বাংলাদেশে এক ঢাকা শহরেই রয়েছে ছয় হাজারেরও বেশী মসজিদ। পুরো বাংলাদেশে রয়েছে দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার তিনশত নিরানব্বইটি মসজিদ। মাত্র ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের এই বদ্বীপটিতে প্রতি এক বর্গমাইলে রয়েছে চারটিরও বেশী মসজিদ। কি অবাক কান্ড! মদীনার জীর্ণ-শীর্ণ সেই একটি মাত্র মসজিদই ৩৫ লক্ষ বর্গমাইলের মানুষকে পথের দীশা দিতে পেরেছিল, মুক্তি, শান্তি-প্রগতি আর প্রবৃদ্ধির ঠিকানা দিতে পেরেছিল! আর মাত্র এক বর্গমাইল এলাকায় অবস্থিত চার চারটি আলীশান আট্টালিকায় সুশোভিত মসজিদও আমাদের শান্তি, সুখ, স্থিতি-প্রগতী আর প্রবৃদ্ধি দেবে কী, বাপ দাদার সুত্র ধরে প্রাপ্ত ইসলামটাও ধরে রাখতে পারছে না!

এ দেশ, এ জাতি এবং এ ভুখন্ডের ভবিষ্যৎ নিয়ে যারা ভাবেন, তাদের এ কথাটা আজ খুব গভীরভাবে ভাবতে হবে। বুঝতে হবে, সদৃশ্য, সূরম্য অট্টালিকাময় মসজিদ সাঁজিয়ে কিছু হবে না, যদি না মসজিদে উপচে পড়া মুসল্লীদের চরিত্র বদলায়। আর চরিত্র বদলের জন্য যে মূল উপাদান; জ্ঞান, সেখানেই তো এদের সবচেয়ে বড় অভাব লেগে আছে, লেগে আছে এক মহামারী!

মুসলমানদের ইজ্জত আর মুক্তি, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন মসজিদকে সাঁজানোর মধ্যে নয়, বরং মসজিদের শিক্ষা আর দর্শনে নিজেদের চরিত্রকে সাঁজানোর মধ্যেই নিহিত রয়েছে। আর সেই উন্নত চরিত্র অর্জনের চাবিকাঠীটাও রয়েছে নিরন্তর জ্ঞান সাধনার মধ্যেই।

বিষয়: বিবিধ

১৬৬৮ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

352084
৩০ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০২:২৩
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
৩০ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০২:২৫
292319
হককথা লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ পড়া ও মন্তব্যের জন্য।
352091
৩০ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ০৬:৪৭
সাইফুল ঈদগাহ কক্স লিখেছেন : "মুসলমানদের ইজ্জত আর মুক্তি, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন মসজিদকে সাঁজানোর মধ্যে নয়, বরং মসজিদের শিক্ষা আর দর্শনে নিজেদের চরিত্রকে সাঁজানোর মধ্যেই নিহিত রয়েছে।" ভালো লাগলো। অনেক ধন্যবাদ।
৩০ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:৪৪
292341
হককথা লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও।
352093
৩০ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ০৬:৫৪
নাবিক লিখেছেন : কেয়ামতের আলামত
৩০ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:৪৫
292342
হককথা লিখেছেন : প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা: তেমনটাই বলেছেন।
352106
৩০ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:১৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কারন মসজিদ এখন মানুষের কেন্দ্র নয় স্রেফ নামাজ পড়ার স্থান।
৩০ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:৪৫
292343
হককথা লিখেছেন : যথার্থ বলেছেন।
352150
৩০ নভেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:৩০
সন্ধাতারা লিখেছেন : Salam, valuable analysis. We need to be changed internally. Jajakallahu khair.
৩০ নভেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৫:১৬
292371
হককথা লিখেছেন : পড়েছেন এবং মূল্যবান মন্তব্য করেছেন, সে জন্য ধন্যবাদ।
352157
৩০ নভেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৫:০৪
কুয়েত থেকে লিখেছেন : পৃথিবীর পরিবর্তন হতে হলে মসজিদ ভিত্তিক সমাজ পরিচালিত হতে হবে আর এখন সমাজ ভিত্তিক মসজিদ পরিচালিত হচ্ছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছে সমাজপ্রতিরা যাদের এসলামের সঠিক জ্ঞান নেই। লেকাটি ভালো লাগলো আপনাকে ধন্যবাদ।
352166
৩০ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:০৫
হককথা লিখেছেন : পৃথিবীর পরিবর্তন হতে হলে মসজিদ ভিত্তিক সমাজ পরিচালিত হতে হবে আর এখন সমাজ ভিত্তিক মসজিদ পরিচালিত হচ্ছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছে সমাজপ্রতিরা যাদের এসলামের সঠিক জ্ঞান নেই। Rose Rose Rose Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File