আক্বলমান্দ কে লিয়ে ইশারা-হি ক্বাফি!
লিখেছেন লিখেছেন হককথা ১৫ নভেম্বর, ২০১৫, ১০:২১:৫২ রাত
সেই ১২৯৯ সালের ২৭শে জুলাই এর কথা। তূর্কী ওসমান গাজী ইতিহাসের মাহেন্দ্রক্ষণের এ দিনটিতে সেলজুকদের পরাজিত করে নিজ বংশের শাসন চালু করেন ছোট্ট এক জনপদে। তিনি কী জানতেন যে তিনি ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন? তিনি জানতেন না, কারণ ভবিতব্য কেউই জানে না। তিনিও জানেন নি যে, তার সেদিনকার সেই শাসনক্ষমতা একদিন ইসলামের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জল অধ্যায়ের সূচনা করবে। তার সেই শাসন ব্যবস্থাকেই তারই পরবর্তি বংশধররা একদিন পরিণত করে বিশ্বের বিষ্ময়; ওসমানিয়া খেলাফত হিসেবে।
১২৯৯ থেকে শুরু করে পরবর্তি প্রায় ছয়টি শতক ধরে তীল তীল করে গড়ো তোলা এই শাসনব্যবস্থা বিশ্বে ভূ-রাজনৈতিক, আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক মানচিত্রকে বদলে দিয়েছে চীরদিনের জন্য। আজকের প্রবল শক্তিধর ইউরোপের বুকে কাঁপন তুলে ওসমানিয়া খেলাফত হাঙ্গেরি আর ভিয়েনার দরজায় কড়া নেড়ে নেড়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছে। কাঁপিয়েছে ইউরোপের পুরো জনপদকে। নিজেদের দোরগোড়ায় মুসলমানদের এই সরব উপস্থিতির কারণেই ইউরোপর সদা বিবাদমান গ্রুপ; যারা নিজেদের মধ্যে সারা জীবন লড়ে এসেছে, সেই তারাই মুসলিম তথা ওসমানিয়া খেলাফতকে ঠেকাতে একসাথে কাজ করেছে। এ যেন বাঘ আর ছাগলকে এক ঘাটে পানি খাওয়ানের মত অবস্থা। কিন্তু সেটাই বাস্তবে ঘটেছে।
দীর্ঘ ছয়শত বৎসর ধরে গড়ে তোলা এই খেলাফতকে ভেঙ্গে তছনছ করে দিতে ইহুদি বাবা ও মুসলিম মা‘র সন্তান কামাল পাশার সময় লেগেছিল মাত্র ছয়টি বৎসর। হ্যাঁ, ছয়টি বৎসর মাত্র! আর এই কাজটি সে করতে পেরেছিল, কারণ, তার হাতে ছিল রাষ্ট্রক্ষমতা, প্রশাসন। আরও ছিল নিষ্কর্মা মুসলিম আলেম নামধারী প্রতিপক্ষ; যারা মজহাবী ফেরকায় বিতর্ক উপভোগ করতো, যারা সরকার বা প্রশাসনের নৈকট্য পেতে ইমান ও আক্বিদা বিরোধি যে কোন ফতওয়া দিতে প্রস্তুত ছিল, যারা দুনিয়ার সামান্য খুদ কুঁড়োর বিনিময়ে আল্লাহর কুরআন আর রাসুল সা: এর আয়াতকে নির্দ্বিধায় বিকিয়েছে। আরও ছিল মুসলমান নামধারী এক বিশাল জনগোষ্ঠী, যারা ধর্ম কর্ম নিয়ে বেশ ছিল! তবে কেবল রাজনীতিতেই ছিল উদাসীন! এমনতর অবস্থা ছিল কামাল পাশার জন্য শাপে বর!
কামাল পাশা ১৯২৩ সালে ইসলামি খেলাফতে বিলুপ্ত করে তুরষ্ককে আধুনিক গণতান্ত্রিক, সেক্যুলার রাষ্ট্র ঘোষণা করার পর থেকে ১৯২৮ এর সালের মধ্যে এক এক করে নামাজ, পর্দা, হিজাব, ইসলামি ক্যালেন্ডার, আরবি বর্ণমালা, আরবি শিক্ষা, মাদ্রাসা, শরীয়া আদালত, ওয়াকফ বোর্ড সব কিছুই বন্ধ করে দেয়। সে রাষ্ট্রিয় ক্ষমতা প্রয়োগ করে মসজিদগুলোকে বন্ধ করে দিয়ে সেগুলোকে পানশালা, নাইট ক্লাব হিসেবে রুপান্তর করে। ইসলামি পোশাক পরা, পুরুষদের দাঁড়ি রাখা, মুসলমানি করানো সব বন্ধ করে দেয়। এগুলো কী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকারক ছিলো? কিন্তু সে এসব ঘৃন্য কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে গেছে তুরস্ককে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ার উন্মাদনায়।
উন্মাদনা আরও ছিল। বেতনভূক্ত, আত্ববিকৃত বুদ্ধিজীবি ও মুক্তচিন্তক নামধারী কিছু দালালকে সে মাঠে নামিয়েছিল ইসলামকে নিন্দিত ও বিতর্কিত করার মিশনে। এসব দালালরা সারা দেশ চষে বেড়িয়েছে ইসলামের বিরোধিতা করার কাজে। তুরস্কের সকল প্রচারযন্ত্র এদের কথাকে, এদের ভাষণ বিবৃতিকে ফলাও করে প্রচার করেছে, ছড়িয়ে দিয়েছে সমাজের সর্বত্র। আর এরই বিপরিতে ইসলামের পক্ষে যে সব বুদ্ধিজীবি আলেম ওলামা দু'একটা কথা বলার চেষ্টা করেছে, রাতারাতি তারা সব গুম হয়ে যেতে শুরু করেছে। খুঁজে খুঁজে এসব আলেম ওলামাকে ধরে এনে হয় বিচারের নামে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে, আর না হয় তারা চীরদিনের মতই গুম হয়ে গেছে অজানা হাতের ইশারায়।
আসলে রাষ্ট্রকে নিরাপদ করতে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসব কর্মকান্ড সে করছে, এমনটা দাবী করলেও ব্যাপারটা কিন্তু কোনমতেই তেমন নয়, বরং সে এগুলো করেছিল ইসলামকে তুরষ্কের মাটি হতে উৎখাত করতে। সেটাই ছিল তার জীবনের মিশন, তার সকল কর্মকান্ডের পেছনে আসল উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্যকে কী সমকালীন আলেম ওলামা আর আপামর তূর্কী জনতা রুখে দিতে এক যোগে নিজেদের মধ্যে মজহাবী ও গোত্রীয় বিভেদ ভুলে এগিয়ে আসতে পেরেছিল? এর উত্তরটা অবশ্যই নেতিবাচক হতে বাধ্য। আর তাদের সেদিনকার সেই নিস্কৃয়তার খেসারত কেবল তূর্কিদের একাই দিতে হয় নি, দিতে হয়েছে পুরো মুসলিম উম্মাহকে। খেসারত দেবার সে প্রক্রিয়া আজও একইভাবে চলছে। আজও মুসলিম উম্মাহ সেদিনকার সেই নিষ্কৃয়তার খেসারত দিয়ে চলেছে।
ইতিহাসের এ বাস্তবতাকে সামনে রেখে এবারে আপনার নজরটা একটাবারের জন্য প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক দিকে নিয়ে আসুন। কিছু বুঝতে পারছেন কী? বৃদ্ধিমানদের জন্য ইশারা'ই যথেষ্ঠ। কথায় আছে না- Ôআক্বলমান্দ কে লিয়ে ইশারা-হি ক্বাফি!'
বিষয়: বিবিধ
১৮১৭ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জামায়াতের ৫৬১টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ
এ খবরটির ফলাফল ভেবে দেখেছেন???
যুদ্ধঘোষণা নয় কি??
যথোপযোগী তেজ্যোদীপ্ত বলিষ্ঠ লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার কথা থেকেই বলছি- "দীর্ঘ ছয়শত বৎসর ধরে গড়ে তোলা এই খেলাফতকে ভেঙ্গে তছনছ করে দিতে ইহুদি বাবা ও মুসলিম মা‘র সন্তান কামাল পাশার সময় লেগেছিল মাত্র ছয়টি বৎসর। হ্যাঁ, ছয়টি বৎসর মাত্র! "
তাহলে নিজেই বুঝুন ৬০০ বছরের বর্বর ইসলামী খেলাফত কতটা পঁচে গিয়েছিল যা মাত্র ৬ বছরেই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে চলে যায়।
আপনি আরো বলেছেন- "কামাল পাশা ১৯২৩ সালে ইসলামি খেলাফতে বিলুপ্ত করে তুরষ্ককে আধুনিক গণতান্ত্রিক, সেক্যুলার রাষ্ট্র ঘোষণা করার পর থেকে ১৯২৮ এর সালের মধ্যে এক এক করে নামাজ, পর্দা, হিজাব, ইসলামি ক্যালেন্ডার, আরবি বর্ণমালা, আরবি শিক্ষা, মাদ্রাসা, শরীয়া আদালত, ওয়াকফ বোর্ড সব কিছুই বন্ধ করে দেয়।"
হাঁ ঠিক তাই, মধ্যযূগীয় ইসলামী কালাকানুন সভ্য জগৎ এ টিকে থাকতে পারে না। অথচ দেখুন- ২০০ বছরের ইংরেজ শাসনের রেখে যাওয়া মুক্তচিন্তা, আধুনিক শিক্ষা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, আবিস্কার, ভাষা, বিচার, প্রশাসন, গনতন্ত্র ..... এখনো ভারতীয় উপমহাদেশে অক্ষত অটুট আছে।
তাই বলছি, শুধুশুধু অন্যকে বকাঝকা না করে নিজেদের পঁচে চেহাড়াটি আয়না দিয়ে দেখুন।
ধন্যবাদ।
এটা এ কারণেই হয়েছে বা হতে পেরেছে যে সমকালীন মুসলিম সমা্জ ইসলামি শিক্ষা ও আদর্শ হতে বহুদুরে সরে গিয়েছিল।
আপনি ভারতে ইংরেজ শাসনের মুক্ত চিন্তা, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কথা বলেছেন। আপনি কী জানেন যে, ইংল্যন্ড সহ ইউরোপের এই আধুনিকতা, বিজ্ঞানমনষ্কতা এসবই ইসলামের অবদান। তর্ক নয়, দয়া করে এ বিষয়ে একটু পড়া শোনা করুন, আমার এ মন্তব্যের যথার্থতা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধী করবেন।
প্রতি ৫০০ গজে মসজিদ, নামাজ, আজান, ব্লগার কতল, চাপাতি জেহাদ, আইসিস, বোকোহারাম, তালেবান, হেফাজত, জামাত, কোরাণ, কিতাব........ সব অটুট আছে। বরংচ আগের আরো বেশি ইছলামি জোশে বলিয়ান। তারপরও ইসলামি শিক্ষা ও আদর্শ মুখ থুবড়ে পরে যাওয়ার কারণ কি? অনুসন্ধান করে দেখুন, ইসমালী সরিষার ভিতর ভুত পেয়ে যেবেন।
আর সবচেয়ে হাস্যকর বিষয়টি হছ্ছে- ইউরোপ, আমেরিকা ইসলালী ঝুলির সব জ্ঞান, বিজ্ঞান উজার করে নিয়ে গেল!!!! অথচ মুমিনরা এত আল্লা/কোরাণ পূজা করেও ইসলামের গর্ভে আইসিস, বোকোহারাম, জামাত, হেফাজত, শরিয়া, আরবী ক্যাকলেন্ডার, মাদ্রাসা, কতল, কিসাস, নারী নির্যাতন, হত্যা, সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছু জন্ম দিতে পারে না।
আসলে গাধার পেটে গাধাই জন্মায়, এটা বুঝেন তো???
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন