হযরত যাকারিয়া আ: এর মুসাল্লা ও মরিয়াম আ: এর হুজরা এবং উম্মতের শিক্ষা-

লিখেছেন লিখেছেন হককথা ০৭ নভেম্বর, ২০১৫, ০৩:৪৭:০৯ দুপুর



এই সেই জায়গা যেখানে দাঁড়িয়ে আল্লাহর সম্মানিত নবী হযরত জাকারিয়া আ: নামাজ আদায় করতেন ও সন্তান চেয়ে দোওয়া করেছিলেন। আর পাশেই সেই ছোট্ট হুজরা, যেখানে মরিয়া আ: বসে ইবাদাত করতেন। সেখানেই আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁকে খাবার সরবরাহ করা হতো।

********************************************

একজন বন্ধা নারীর মনোকষ্ট কতটা, কতটা ব্যাপক ও তীব্র তা বোধ হয় কারো পক্ষেই ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভবপর নয়। এমনই একজন বন্ধা নারী ছিলেন হানা।

তিনি ছিলেন ইমরান; আল্লাহর একজন নেক বান্দাহর স্ত্রী, ইসা আ: এর মা-এর মা, তথা নানী। এই হানা ছিলেন হযরত যাকারিয়া আ: এর স্ত্রী আয়েশার বোন। সে সুত্রে যাকারিয়া আ: এর স্ত্রী আয়েশা ছিলেন মরিয়ম আ: এর খালা এবং তিনি (যাকারিয়া আHappy ছিলেন খালু।

আল্লাহর সম্মানিত বান্দা ইমরান এর স্ত্রী হানা আল্লাহর স্বিদ্ধান্তের উপরে সন্তুষ্ঠ ছিলেন বটে, তথাপি মানুষ হিসেবে সন্তান লাভের মানবিক ইচ্ছা যে তাদের মধ্যে ছিল না, তা নয়।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আ'লামিন তাঁর প্রিয় বান্দার মনোকষ্ট দুর করতে তাকে সন্তান দানের ইচ্ছা করলেন। হানা সন্তান সম্ভাবা হবার সাথে সাথে তিনি তাৎক্ষণিকভাবেই সে সন্তানকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে মানত করলেন, আসন্ন সন্তানকে তিনি আল্লাহর ঘর (বায়তুল মুকাদ্দাস) এর খেদমতে লাগাবেন বলে নিয়ত করলেন।

যথাসময়ে সন্তান প্রসব করলে দেখা গেল তিনি একজন কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। বিষ্মিতা হানা বলে উঠলেন; আরে, এ যে মেয়ে সন্তান! আল্লাহ তো ভালো করেই জানেন তিনি কি সন্তান প্রসব করেছেন (কুরআন ৩:৩৬)।

অতপর সেই কন্যা সন্তানের নাম রাখা হলো মরিয়াম। ইমরান এর স্ত্রী যেহেতু আগেই মানত করেছেন যে আল্লাহ তাকে সন্তান দান করলে তিনি সেই সন্তানকে আল্লাহর ঘরের খেদমতে উৎসর্গ করবেন, সেহেতু তিনি তাই করলেন। মরিয়ম আ: কে বায়তুল মুকাদ্দাসের খেদমতে লাগানো হলো।

শিশু মরিয়ম-এর দেখা শোনার জন্য একজন ত্বত্তাবধায়ক তো দরকার। কাকে নিযুক্ত করা হবে ত্বত্তবধায়ক হিসেবে? বহু লোক শিশু মরিয়মের ত্বত্তাবধায়ক হিসেবে নিজেকে নিযুক্ত করতে উৎসাহি হলো কারণ, মেয়েটি আল্লাহর এক নেক বান্দাহ ইমরান এর কন্যা, এমন কন্যার অভিভাবক নিযুক্ত হওয়াটাও তো ভাগ্যের ব্যাপার।

এ নিয়ে রীতিমত ঠেলাঠেলি, পাড়াপাড়ি, হট্টগোল লেগে গেল! শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো যে লটারি করা হবে, লটারির মাধ্যম যার নাম উঠবে তিনিই হবেন ঐ শিশুর অভিভাবক। লটারিতে নাম উঠলো বৃদ্ধ খালু যাকারিয়া আ: এর। হযরত যাকারিয়া আ: ও তাঁর স্ত্রী ততদিনে অতিশয় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা হয়ে পড়েছেন। এ দম্পতিও ছিলেন নি:সন্তান। এক নি:সন্তান দম্পতি, তদূপরি আল্লাহর সম্মানিত নবী, যাকারিয়া আ: এর সুযোগ্য ত্বত্তাবধানে শিশু মরিয়াম যথার্থ আল্লাহভীরু হিসেবেই গড়ে উঠতে লাগলেন।

মেয়েটি আল্লাহর ইবাদাতে এতটাই মশগুল থাকতো যে তার নাওয়া খাওয়ার দিকে কোন খেয়ালই থাকতো না। ফলে স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আ'লামিন ফেরেশতা দিয়ে মরিয়মের হুজরাতে খাবার পাঠাতেন। হযরত যাকারিয়া আ: নামাজ শেষে বা দিনের অন্য যে কোন সময়ে মরিয়মের ঘরে প্রবেশ করলেই সেখানে নানান ধরনের খাবার দেখতে পেয়ে বিষ্মিত হয়ে তাকে প্রশ্ন করতেন,

"মারইয়াম! কোথা থেকে এসব তোমার কাছে এলো?" আর এ প্রশ্নের উত্তরে মেয়েটি (মরিয়ম আHappy জবাব দিতেন; "এসব আল্লাহর নিকট থেকে আসে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক দান করেন।" (আল কুরআন-৩:৩৭)

একজন কিশোরীর মুখে এমন কথা শুনে, আল্লাহর উপরে একজন অল্পবয়স্ক কিশোরীর ইমান ও নির্ভরতার রুপ দেখে সন্তানহীন বৃদ্ধ যাকারিয়া আ: এর মনে পিতৃত্বের আকাংক্ষাটা আবার জেগে উঠে। তিনি জায়নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে দোওয়া করলেন;

হে, আমার পালনকর্তা! তোমার নিকট থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান কর-নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী। (আল কুরআন-৩:৩৮)

আল্লাহ রাব্বুল আ'লামিন তার নবীর দোওয়া কবুল করলেন এবং বৃদ্ধ বয়সেও তাকে এক নেক সন্তান; (হযরত ইয়াহইয়া আHappy দান করলেন।

এ ঘটনার শিক্ষাটা হলো এই যে, আমরা যারা নিত্য রিজিকের পেছনে ছুটেছি বা ছুটছি, তারা ভূল করেছি বা করছি। আমাদের উচিৎ রিজিকদাতার দিকে ছুটে চলা। আমরা যারা দ্বারে দ্বারে আমাদের আর্জি নিয়ে ঘুরি, তাদের উচিৎ এক আল্লাহর কাছেই চাওয়া, তার কাছেই আমাদের আর্জি নিবেদন করা। পরিবেশ যতই প্রতিকূল হোক না কেন, আল্লাহ চাইলেই আমাদের সকল চাওয়া পূর্ণ করে দিতে পারেন।

বিষয়: বিবিধ

৩৯৫৫ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

348793
০৭ নভেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:৪০
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ পিলাচ
০৭ নভেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:৪৯
289525
হককথা লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও।
348799
০৭ নভেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৫:১২
কুয়েত থেকে লিখেছেন : কাল রাত্রেই দেশ থেকে আসলাম কেমন আছেন..? অনেক অনেক ধন্যবাদ ভালো লাগলো। ফোন করবেন
০৭ নভেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৫:২৬
289530
হককথা লিখেছেন : আলহামদুল্লিাহ সালাম ইয়া শেখ। ইনশাআল্লাহ কথা হবে।
348801
০৭ নভেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৫:১৮
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

আল্লাহতায়ালা বলেন-
"উজীবু দা'ওয়াতাদ দায়ী ইজা দায়ান,
ফাল ইয়াসতাজীবু লী ওয়া ইউ'মিনু বী
লায়াল্লাহুম ইয়ারশুদূন" [বাকারা আয়াত ১৮৬]

"ওয়া ক্বদ্বা রব্বুকা... মাদ্হুরা""
[বানী ইসরা আয়াত ২৩-৩৯]

"ক্বলা রব্বুকুম.. [মু'মিন আয়াত ৬০]

"দোয়া কবুলের শর্ত" সম্পর্কে অজ্ঞ থাকলে দোয়ার সুফল কেমনে পাবো?

"অবশ্যই তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধাজ্ঞার ব্যবস্থা করবে। যদি তা না কর তাহলে তোমাদের মধ্যেকার অসৎ, অযোগ্য, অাল্লাহদ্রোহী ও নীচ প্রকৃতির লোকদেরকে তোমাদের শাসক বানিয়ে দেয়া হবে। অত:পর তোমরা সে শাসকের যুলুম থেকে মুক্তিলাভের জন্য অাল্লাহর নিকট দোয়া করবে কিন্তু তোমাদের দোয়া কবুল হবেনা।" [হাদীস- মুসলিম, মুসনাদু অাহমাদ]




সাধারণভাবে দোয়া কবুল হওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত:
১. হালাল উপায়ে জীবিকা অর্জন করতে হবে। খাদ্য-খাবার পোশাক পরিচ্ছদ সব হালাল আয়ের দ্বারা হতে হবে।
২. মা-বাবার হক আদায় করতে হবে। যারা মা-বাবার নাফরমানী করে। হাদীসে এসেছে তাদের দোয়া কবুল হয় না।
৩. সাধ্য অনুযায়ী আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করতে হবে। যারা আত্মীয় স্বজনের প্রতি লক্ষ্য রাখে না, তাদের হক আদায় করে না, তাদের দোয়া কবুল হয় না।
৪. কোনো মুসলমানের সাথে তিন দিনের বেশী কথা-বার্তা বন্ধ রাখা যাবে না। এ রকম লোকের দোয়া কবুল হয় না। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, মুসলমানের সাথে সু-সম্পর্ক থাকতে হবে।
৫. 'আমর বিল মা’রুফ এবং নাহি 'আনিল মুনকার করতে হবে।
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ
৬. গীবত বর্জন করতে হবে। গীবতকারীদের দোয়া কবুল হয় না। এই রোগে আমরা অনেকেই আক্রান্ত রয়েছি।
৭. হাছাদ বা পরশ্রীকাতরতা অর্থাৎ অন্যের ভাল দেখে মনে মনে হিংসা লাগা এবং সেটা ধ্বংস হওয়ার কমনা করা অন্যায়। মনের এই হিংসা পরিত্যাগ করতে হবে।
৮. বখিলী বর্জন করতে হবে। যতটুকু ব্যয় করা দরকার, সেখানেও ব্যয় না করে অর্থ জমা করে রাখার অভ্যাস বর্জন করতে হবে।
৯. দিল বা অন্তর তাজা রাখতে কুরআন তিলাওয়াত করা। খুব বেশী হাসি-তামাসা, ঠাট্টা-বিদ্রুপে লিপ্ত থাকলে দিল মরে যায়।
১০. দোয়া করে ফল পেতে তাড়াহুড়া না করা


জাযাকাল্লাহ....
০৭ নভেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৫:৩৪
289532
হককথা লিখেছেন : ধন্যবাদ
348816
০৭ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫৮
আফরা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খাইরান ।
০৭ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:২১
289546
হককথা লিখেছেন : বারাকাল্লাহু লিকি ওয়া লি।
348824
০৭ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৭ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:২০
289545
হককথা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও।
348847
০৭ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:০৮
শেখের পোলা লিখেছেন : উম্মুল মুমিমিন হজরত ফাতেমা রাঃ বর্ণিত এক হাদিশে বলা হয়েছে যে, তোমার জুতা ছিঁড়ে গেলেও এক জোড়া নতুনের জন্য আল্লাহর কাছেই চাও৷ ধন্যবাদ৷
০৭ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:২০
289544
হককথা লিখেছেন : যাজাকাল্লাহ খাইর। অনেক ধন্যবাদ।
348861
০৭ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১০:০১
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ সুন্দর পোষ্টটির জন্য শুকরিয়া।

ইমরান নবী ছিল কিনা সঠিক জানা নেই। আপনার মন্তব্য জানাবেন। আমি জানতাম ঈসা আঃ ও ইয়াহইয়া আঃ খালাতো ভাই, মানে জাকারিয়া আঃ এর স্ত্রী ছিলেন মারইয়াম এর বোন, আর জাকারিয়া আঃ ছিলেন ঈসা আঃ এর খালু। কিন্তু এখন আপনার থেকে শুনলাম মারইয়ামের খালু। বিষয়টি একটু খোলাসা করবেন প্লিজ।

০৭ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১০:৩৪
289561
হককথা লিখেছেন : ওয়াআলাইকুমস সালাম। আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। হযরত মরিয়ম আ: এর পিতা ইমরান নবী ছিলেন বলে আমার জানা নেই, মনেও হয় না। তবে তিনি একজন নেক বান্দাহ ছিলেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমার জানা ও বিশ্বাস মতে, হযরত জাকারিয়া আ: এর স্ত্রী আয়েশা এবং মরিয়ম আ: এর মা হানা, এঁরা দুজন আপন দু বোন। সে সুত্রে হযরত জাকারিয়া আ: ছিলেন হযরত মরিয়ম আ: এর খালু। মরিয়ম আ: ও হযরত ইয়াহইয়া আ: ছিলেন খালাতো ভাই বোন। আপনি আমার লেখাটা আরও একবার কী পড়বেন দয়া করে? কোথায় যেন একটু গন্ডগোল হচ্ছে বলে মনে হয়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File