ইসলামী আন্দোলনই বাংলাদেশের সর্বোত্তম রক্ষাকবচ
লিখেছেন লিখেছেন হককথা ১২ আগস্ট, ২০১৫, ০৩:৩৯:০৬ দুপুর
প্রখ্যাত ইংরেজ বাগ্মী Edmund Burke কে চেনেন না এমন ব্যক্তি খুব কমই আছেন। তাঁর অনেক লেখার সাথে আমরা অনেকেই কম-বেশী পরিচিত। মি: বার্ক এর একটা বিশ্ববিখ্যাত বই ; The Evils of Revolution.
যারা বইটা পড়েছেন, তারা জানেন কেন বইটা বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পেয়েছে। উক্ত বই’এর প্রচ্ছদেই মি: বার্ক তাঁর পাঠকদের উদ্দেশ্যে একটা প্রশ্ন করেছেন। প্রশ্নটা হলো এরকম What is Liberty without wisdom, and without Virtue? নীতিজ্ঞান আর প্রজ্ঞা বিবর্জিত স্বাধীনতা আসলে কি?
এ প্রশ্নের উত্তরটার জন্য তিনি কারো অপেক্ষাতেও থাকেন নি, নিজেই উত্তরটা দিয়েছেন এভাবে It is the Greatest of all possible evils. অর্থাৎ জ্ঞান, প্রজ্ঞা, আর আঈন বা নীতি বিবর্জিত স্বাধীনতা আর কিছুই নয়, সেটা হলো সকল অনিষ্ঠতার মূল। সকল সর্বনাশের মূল। ক্ষুদ্র ও সংকীর্ণ অর্থে, একজন ব্যক্তির জন্য, আর বৃহত্তর অর্থে, একটা দেশ, একটা জাতীর জন্য এই রকম স্বাধীনতা আর কিছূই নয়, তার বা তাদের ধ্বংসের কারণ।
মাত্র চল্লিশ বৎসর বয়সী এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তিকাল থেকে এ পর্যন্ত রাজনৈতিক গতীধারা বিচার করে দেখুন, যে সব ঘটনা এ দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থানকে নির্দেশ করেছে, অর্থনৈতিক গতীধারাকে প্রভাবিত করেছে, দেশের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি বহির্বিশ্বের সাথে আমাদের সম্পর্ককে রুপায়িত দিয়েছে, সেই সবের দিকে নজর দিন, দেখবেন তার বেশির ভাগই ছিল অপরিপক্ক, অপরিণামদর্শী আর অবিবেচনাপ্রসূত।
এ বিষয়ে আরও কিছু আলোচনা করার আগে প্রসঙ্গত ' মূর্খতা '’নিয়ে একটু আলোচনা করা দরকার। ' মূর্খতা ' আর কিছুই নয়, একটা মানসিক রোগ। মানবিক বিপর্যয়। সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয়। আর যখন এই মানবিক বিপর্যয়কে রোধ করার কোন সযতœ প্রয়াস থাকে না ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে , তখন তা হয়ে যায় একটা অপরাধ। অপরাধ এই কারণে যে, রোগটি অর্থাৎ ' মূর্খতা ' মানুষের আর সকল মানসিক দুর্বলতার পথকে উন্মুক্তই কেবল করে না বরং হাজারো চারিত্রিক ত্রুটির পথকেও ত্বরান্বিত করে দেয়। মানুষকে ' অমানুষ’ করে তোলে।
‘মূর্খতা’একজন ব্যক্তির চরিত্রে কিভাবে আসে? প্রশ্নটার উত্তর কিন্তু অতটা সহজ নয়, যতটা সহজ বলে মনে হয়। তবে একটা সহজ উত্তর বোধ হয় এমন হতে পারে যে, যখন ব্যক্তির চরিত্রে জ্ঞানর্জনের কোন প্রচেষ্টা থাকে না, এবং অর্জিত জ্ঞানানুযায়ী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিবেক’কে জাগ্রত করাসহ চরিত্র গঠনের কোন প্রয়াস থাকে না, তখনই ব্যক্তির চরিত্রে মূর্খতা বাঁসা বাঁধে।
জ্ঞান অর্জন না করে মানুষ মূর্খ থাকে জানি, কিন্তু জ্ঞানর্জন করেও যে মানুষ মূর্খ থাকে, সে বিষয়ে আমরা ক‘জন সচেতন? জ্ঞানার্জন করেও মানুষ তার জ্ঞানানুসারে নিজ বিশ্বাস ও কর্মের পরিসরকে সংশোধন না করে, তবে সে মূর্খ। প্রিয় রাসুল সা: এর জামানায় এরকমই একজন শিক্ষিত ' আবুল হাকাম’ই (বিদ্যাসাগর) ছিল ' আবু জেহেল’ বা চরম মূর্খ।
আবু জেহেল কেবলমাত্র একজন ব্যক্তিই ছিল না। সে ছিল তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় প্রচলিত শাসক শ্রেণীর প্রতীক। তখনকার যুগে সেই সমাজব্যবস্থার মধ্যে থেকে তা সংশোধন বা সমাজটাকে বদলানোর যে কোন প্রচেষ্টার মানেই ছিল, প্রতিষ্ঠিত কায়েমী শক্তি ও তার প্রতীক আবু জেহেলদের সাথে সংঘাতে জড়ানো।
আর সেটাই হয়েছে রাসুল সা: এর নেতৃত্বে। প্রিয় রাসুল সা: যে সমাজ বিপ্লব করেছেন, তার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সংঘাত লেগে ছিল। সেটা কোন স্বার্থের সংঘাত ছিল না। সেটা ছিল নিরেট আদর্শিক সংঘাত। আবু জেহেল তার আদর্শের মধ্যেই নিজের ও তার অনুসারীদের স্বার্থ দেখেছিল। তাই রাসুল সা: এর সাথে সংঘাতে জড়ানোর মধ্যে আবু জেহেল ও তার অনুসারীদের স্বার্থ জড়িত ছিল, সেটা বাস্তব সত্য।
এক্ষেত্রে প্রিয় রাসুল সা: বিপ্লবের সুত্রপাতটা করলেন কিভাবে? তিনি তাঁর অনুসারীদের বিবেককে জাগ্রত করা শুরু করলেন তাঁদেরকে শিক্ষিত করার মাধ্যমে । যুক্তি, তত্ব আর তথ্য দিয়ে তাদের জ্ঞানের জগতকে সমৃদ্ধ করলেন। ফলে অচিরেই যুক্তি, শানীত বিবেকবোধ, জ্ঞান ও আদর্শ ভিত্তিক উত্তম চরিত্রের একটা দল তৈরী হয়ে গেল।
শোষিত ও উপেক্ষিতরাই ছিলেন এই দলটিতে, দু’একজন ব্যতিক্রম ছাড়া। এদের সাথেই বড়ই তাচ্ছিল্যভরে, বড়ই ' হামবড়া’ ভাব নিয়ে টক্কর দিতে এগিয়ে এলো আবু জেহেল, তথা শাসক শ্রেণী। এর পরের ইতিহাস সবারই জানা!
এটাকে আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে শাসক আর শোষিতের দ্বন্দ। সমাজবিজ্ঞানীরা এটাকে প্রথম বিচারে এমনভাবেই দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তুগভীর দৃষ্টিকোণে পুরো বিষয়টাকে বিচার করলে একটা ভিন্ন চিত্রই ভেঁসে উঠে চোখের সামনে; এটা ছিল মূলত জ্ঞান আর অজ্ঞানতার, সত্য আর মিথ্যার দ্বন্দ। আদর্শের দ্বন্দ।
এই দ্বন্দ চিরন্তন। বর্তমানে বাংলাদেশে ইসলাম আর ইসলামপন্থীদের সাথে ক্ষমতাসীন সরকারের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে বাম-রাম ও নাস্তিকরা যে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস শুরু করেছে, সেটা আসলে ইসলামের বিরুদ্ধে একটা আগ্রাসন।
পঁচাশি ভাগ মুসলিম জনসংখা নিয়ে সারা মুসলিম বিশ্ব থেকে আলাদা এক কোণে পড়ে থাকা বাংলাদেশ থেকে ইসলাম উচ্ছেদের জন্যই এ আগ্রাসন। দেশটাকে ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে ইসলাম শুন্য করা, কিংবা নিদেন পক্ষে ' মিশর’এর ধাঁচে ফেরআউনের দেশ হিসেবে গড়তেই এ আগ্রাসন। বিশ্বায়নের দিনে একটি সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠদের আদর্শ, বোধ-বিশ্বাসকে ধুলিস্যাৎ করে দিয়ে তদস্থলে ভিন্নধর্মী এবং ভিন্ন কোন আদর্শভিত্তিক সংস্কৃিতর চাষাবাদ, তার সম্প্রসারণ ও প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশটার আদর্শিক পরিচিতিটাকেই বদলে দেবার লক্ষ্যে অত্যন্ত সুকৌশলে পরিচালিত হচ্ছে এ আগ্রাসন।
এ আগ্রাসন সন্মন্ধ্যে বাংলাদেশের ইসলামি আন্দোলন, জামায়াত-এ-ইসলামী বহু আগে থেকেই বলে এসেছে, কিন্তু এসব ইসলামি নেতারা কানে নেননি তা, উল্টো স্বাধীনতাবিরোধি আখ্যা দিয়েছেন।
আমাদের ইসলামপন্থী ও বাংলাদেশী জাতিয়তাবাদে বিশ্বাসী জনগোষ্ঠি, যারা ওরস, পীর পুজা ও মাজহাবী দ্বন্দ, বিতর্ক নিয়ে দিন রাত মাথার ঘাম ফেলে চলেছেন, তারা জ্ঞান আর প্রজ্ঞা নির্ভর দেশপ্রেমকে অবজ্ঞা করে মূর্খতা নির্ভর অন্ধ দেশপ্রেমের চর্চা করেছেন। আর তারই খেসারতই দিতে হচ্ছে জাতিকে আজ।
অথচ তারা যদি আর একটু প্রজ্ঞার পরিচয় দিতেন, ' মূর্খতার ' বিপরিতে জ্ঞান আর দূরদর্শীতার চর্চা করতেন, তা হলে অতি সহজেই আজকের এ আগ্রাসনকে ঠেকানো যেত। কিন্তু তা হয়নি। বিবেক আর প্রজ্ঞার জয় হয়নি হঠকারীতার বিপরিতে।
এখনও সময় আছে। এখনও যদি এ দেশের মুসলমানরা ছোটখাটো মতভেদ ভুলে ইসলামের বিরুদ্ধে চলমান আগ্রাসণকে রুখতে এগিয়ে আসে, তবে এ সব রাম-বাম আর ইসলাম বিদ্বেষী গোষ্ঠী ছুঁচো ইঁদুরের মত পালাবে চোখের পলকে। দেশের অধিকাংশ মানুষ যদি দল ও মতের উধ্যে উঠে সততা ও আদর্শকে প্রাধান্য দেয়, তা হলে আজ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত অসত, নীতিহীন শ্রেণী বিতাড়িত হতে বেশি সময় লাগবে না। এরা বিদেয় হলে ক্ষমতাকেন্দ্রীক অসততা ও নীতিহীনতাহেতু যে প্রাশাসনিক ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে দেশে, সেটাও দূর হবে সহসাই।
এ কারণেই সবার আগে, দেশপ্রেম আর স্বাধীনতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে জ্ঞান, তীক্ষè নীতিবোধ আর প্রজ্ঞার আলোকে। সমাজ, রাষ্ট্র ও প্রশাসনের সর্বস্তরে স্বৎ, নীতি ও আদর্শবানদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
অধূনা বাংলাদেশে একমাত্র জামায়াত-এ-ইসলামি ও তার অংগ সংগঠনের নেতা কর্মী এবং এর বাইরে কিছু কিছু ইসলামমনা ব্যক্তির মধ্যেই কেবল এই নীতিবোধ, প্রজ্ঞা আর জ্ঞানভিত্তিক দেশপ্রেমের অস্তিত্ব দেখতে পাচ্ছি আমরা। তাদের মধ্যেই সততা, নীতি ও আদর্শের প্রতি নিষ্ঠাপূর্ণ চর্চা দেখতে পাচ্ছি।
তাই আমাদের বিশ্বাস, এই বাংলাদেশের স্বাধীনতার একমাত্র গ্যারান্টি হলো ইসলামপন্থী সংগঠনসমূহ। বাংলাদেশ জামায়াত এ ইসলামি এদের পূরোভাগে রয়েছে। ইনশাআল্লাহ তেমনটাই থাকবে। এ দেশের স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্ব একমাত্র এদের হাতেই নিরাপদ। দেশবাসীকে এ বাস্তবতা উপলব্ধী করতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৯৪৬ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক সুন্দর লেখনি, চালিয়ে যান, সাথে আছি। ধন্যবাদ
সুন্দর লেখনি। ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন