বই। এক অব্যর্থ মারণাস্ত্র !

লিখেছেন লিখেছেন হককথা ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৪:০২:১০ রাত



বই। দুই অক্ষরের একটি শব্দ, কিন্তু প্রকতৃপক্ষে এটি এমন এক অব্যর্থ মারণাস্ত্র, এমন এক ভয়ংকর অস্ত্র, যা যুগে যুগে বিশ্ব ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দিয়েছে!

সক্রেটিসের বই যেন প্রাচীন গ্রীক সমাজের যুবকরা না পড়ে সে জন্য গ্রীক সরকার যারপরনাই চেষ্টা করে গেছে। তাদের ভয় ছিলো, সক্রেটিসের বই পড়ে, তার বক্তৃতা বিবৃতি শুনে তাদের সমাজের যুবকরা বিভ্রান্ত (!) হচ্ছে। এই বিভ্রান্ত যুবকরাই শেষ পর্যন্ত গ্রীক সমাজের বিরুদ্ধে বিপ্লব করে ফেলবে! এই ভয়েই শেষ পর্যন্ত তারা সক্রেটিসকে হত্যাই করে ফেলল!

মোঙ্গলরা আব্বাসীয় সম্রাজ্যে আক্রমণ চালিয়ে বাগদাদের কয়েক লক্ষ লোককে হত্যা করেছিল। পুরো বাগদাদকে তারা শ্বশ্মান বানিয়ে দিয়েছিলো। তারা মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ক্ষতি যেটা করেছিলো, তা হলো, তারা কয়েক লক্ষ বই সম্বলিত 'দারুল হিকমাহ' নামের বিশ্বের সবচেয়ে বড় লাইব্রেরীটা ধ্বংস করেছিলো। তারা মানব সভ্যতার মহামূল্যবান বইগুলো এক এক করে ফোরাতে ফেলেছিলো। ফোরাতের স্রোত বন্ধ হয়ে গিয়েছলো বই এর স্তুপের কারনে! দীর্ঘদিন ফোরাতের সেই পানি বাগদাদবাসী ব্যবহার করতে পারেনি, কারণ তা ঐসব বই এর কালি আর মন্ডতে বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল!

মোঙ্গলরা সেই কয়েকলক্ষ বই এ জন্যই ধ্বংস করেছিলো যে, তারা শুনেছিলো, তখনকার দিনের দুই বিশ্বপরাশক্তি, দুই সুপার পাওয়ার; রোমান সভ্যতা, পারস্য সভ্যতার ধ্বংস করতে পেরেছিলো যে যাযাবর পশ্চাতপদ বর্বর আরবরা, তাদের মূল শক্তি নিহিত ছিলো এই বই'র মধ্যেই। এ কারণেই তাদের সমস্ত রাগ ছিলো বই এর উপরে!

বস্তুত তাদের বিশ্বাস আর ধারনা অমূলক ছিলো না। মুসলমানরা একটামাত্র বই এর মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিপ্লবটা সাধন করতে পেরেছিলো। সেই বই তথা আরবি ভাষায় সেই কিতাবটা হলো; আল কুরআন। মহাবিষ্ময়কর আল কুরআন! এটা এমন একটা্ বই যে এর মধ্যে বিন্দুমাত্র সন্দেহ-সংশয় নেই, থাকার উপায়ও নেই।

এই একটি মাত্র বই'ই বর্বর অশিক্ষিত ও পশ্চাতপদ আরব জাতিকে মহাক্ষমতাধর করে তুলেছিল। এতটা ক্ষমতাধর যে, তারা ছয় হাজার বসরের ঐশ্বর্য ও শক্তিসমৃদ্ধ পারস্য সম্রাজ্যকে, সাড়ে চার হাজার বসরের ঐতিহ্যবাহী মহাশক্তিধর রোমান সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করে তাদের উপরে নিজেদের কর্তৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলো!

সঙ্গত কারণেই মোঙ্গল তাতার'রা ভীত ছিল নিজেদের ক্ষমতা, নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে, তাই তারা মুসলিম রাজ্য ও সম্রাজ্য ধ্বংস করার পাশাপাশি তাদের সমাজ থেকে সব বইগুলো ধ্বংস করে দিয়েছিলো।

ইতিহাস কিন্তু সেই মোগল, সেই বর্বর তাতারদের থেকে প্রতিশোধ নিয়েছে। বাগদাদ আক্রমণ ও সেখানে তাদর দ্বারা পরিচালিত পৈশাচিক ধ্বংসযজ্ঞের মাত্র চল্লিশ বসরের মধ্যেই তাতার মোগলরা নিজেদের অজান্তেই ইসলামের কাছে, ইসলামের কিতাব, তথা বিষ্য়কর গ্রন্থ, বিষ্ময়কর বই; আল কুরআনের কাছে নিজেদের সমর্পণ করে দেয়! মোগলরা, তাতাররা মুসলমান হয়ে যায়!

এর কারণটা কী ছিলো? এর একমাত্র দৃশ্যমাণ কারণ এটা ছিলো যে, তারা প্রায় এগারো লক্ষ মুসলমানকে হত্যা ও তাদের সমাজ, তাদের সমস্ত বইপত্র ধ্বংস করার পরে যে গুটিকতক মুসলমানকে বাঁচিয়ে রেখেছিলো তাদের হাতে, তারা বেশিরভাগই তাদের হাতে বন্দীনি নারী, মুসলিম নারী।

এই নারীদের প্রায় সবাই ছিলেন শিক্ষিতা। তারা প্রত্যেকেই নিজেদের মন মগজে শত শত বই এবং মহাবিষ্ময়কর গ্রন্থ; আল কুরআনের শিক্ষাকে ধারণ করে রেখেছিলেন।

তাতাররা বই ধ্বংস করেছিলো, বাগদাদের এগারো লক্ষ বই পাঠককে হত্যা করেছিলো বটে, কিন্তু তার পরেও যে গুটিকতক বই পাঠক/পাঠিকাকে নিজেদের বিকৃত লালসা মেটানোর জন্য বাঁচিয়ে রেখেছিলো, সেই মাত্র গুটিকতক বই পাঠিকার হাতে মাত্র চল্লিশ বসরের মধ্যে তারা তাদের লালিত ঐতিহ্য, সাম্রাজ্য সভ্যতাকে বিসর্জন দেয়। স্বতস্ফুর্তভাবে মুসলমান হয়ে যায়! কী অসাধরণ ক্ষমতা বই এর! ভাবতে গেলেও বিস্ময়ে বিমূঢ় হতে হয়।

আর আজ, মুসলমান তরুণ যুবকদের মধ্যেই বই পড়ার প্রবণতা সবচেয়ে কম! কী লজ্জা! কী নির্মম পরিণতি! কী নিদারুণ মানসিক বিকৃতি!!

মুসলমান যুবক তরুণদের এ শোচনীয় মানসিক বিপর্যয় নিয়ে ভাবতে গেলে ক্রোধে-আক্রোশে, অনুতাপে আর অনুশোচনায় চেতনা বিবশ হয়ে আসে যেন, চোখ ফেটে অশ্রু বেরিয়ে আসে, চোখ ভিজে যায়!

কবে এরা বুঝবে যে, নিজেদের বিপর্যকর অবস্থা কাটিয়ে উঠতে হলে, নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে ও করাতে হলে সকল কিছুর আগে আশ্রয় নিতে হবে বই এর কাছে, ডুবতে হবে বই এর সাগরে, এর পাতায় পাতায় বিচরণ করে বেড়াতে হবে সারাটা জীবন। নিজেদের সজ্জিত করতে হবে 'বই' নামক মারণাস্ত্র দিয়ে।

কবে তারা এ বাস্তবতা বুঝবে? কবে এ জাতির বোধোদয় হবে?

বিষয়: বিবিধ

১৮১৫ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

304266
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৫:২১
মোঃ মাসুম সরকার আযহারী লিখেছেন : আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। খুব সুন্দর লিখেছেন। ভাল লেগেছে। অসংখ্য ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ১০:২২
246115
হককথা লিখেছেন : ওয়াআলাইকুমস সালাম। পড়েছেন এবং মন্তব্য করেছেন এ জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
304268
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৫:৫৬
সিরাজ ইবনে মালিক লিখেছেন : একমত,ভাল লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে।
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ১০:২৩
246116
হককথা লিখেছেন : আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
304306
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০২:৫৫
সালাম আজাদী লিখেছেন : মানুষ বলে গুগলের যামানায় বই পড়ে জানার দরকার নেই, কিন্তু তারা বোঝেনা সেটাও পড়া শুনার আধুনিক রূপ। সেটার ও ধারে কাছে যুবকরা না যায় তার জন্য ১০০১ টা সোশ্যাল মিডিয়া করা হলো। যাতে করে গোটা জেনারেশানে 'চ্যাটি জেনারেশানে' রূপান্তরিত হয়। জাযাকাল্লাহু খায়রান আখী আল কারীম Thumbs Up
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০৩:৪০
246154
হককথা লিখেছেন : বারাকল্লাহু লাক ইয়া আখী
304319
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৪:৫৯
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। গুরুত্বপূর্ণ লিখাটির জন্য বারাকাল্লাহু ফিক।
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১০:৫৫
246178
হককথা লিখেছেন : ওয়আলাইকুমস সালাম। ধন্যবাদ পড়া ও মন্তব্যের জন্য।
332429
২৯ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০১:৪২
কুয়েত থেকে লিখেছেন : কবে এ জাতির বোধোদয় হবে? যখন আল কুরআন গবেষনা করবে। ধন্যবাদ আপনাকে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File