ব্লগার ভিশু, পুষ্পিতা, রেহনুমা, মারিয়াম'সহ অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কলম যুদ্ধের এ জগত ত্যাগ করবেন না। ফিরে আসুন। আসুন, বিডি ব্লগকে রক্ষা করি।
লিখেছেন লিখেছেন হককথা ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১১:২৮:২৯ সকাল
দু‘টো দু:খজনক ঘটনা। এক; বিডি টুডে ব্লগের প্রতি সরকারী আক্রোশ ও তাকে বন্ধ করে দবার অপচেষ্টা আর দুই; ভিশু, পুস্পিতা, রেহনুমা, মারিয়াম এবং এবং আরও কিছু প্রিয় ব্লগারদের ব্লগ ছেড়ে যাওয়া অথবা নিষ্কৃয় হয়ে পড়া; দুটো ঘটনাই মর্মপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রচন্ড ব্যস্ততার মাঝেও এই দু‘টো কারণে শেষ পর্যন্ত ব্লগে বসতেই হলো, পোষ্টা লেখার জন্য।
ব্লগগুলো আজ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কেবল সীমাবদ্ধ নেই, বরং এগুলো তার চেয়েও বেশী কিছু হয়ে উঠেছে। পত্র-পত্রিকা-ম্যাগাজিন গুলো বিগত কয়েকটা দশক ধরে যে ভাবে গণমানুষের মগজ ধোলাই করেছে সত্য-মিথ্যা বিকৃত তথ্য দিয়ে, ইচ্ছামত সত্যকে বিকৃত করে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এর সাথে সাথে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া যুক্ত হওয়া এবং এই মিডিয়ার ব্যাপক বিস্তৃতির ফলে তথ্যবিকৃতির মাধ্যমে গণমানুষের মতামতকে পক্ষে বা বিপক্ষে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে একচেটিয়া মনোপলি প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল একটি গোষ্ঠীর।
ঘটনা চক্রে এই গোষ্ঠীটি কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী। এরা দেশ ও সমাজে প্রভাবশালী, তাই তারা নিজেদের আর্থসামাজিকসহ বিভিন্ন ধরনের কর্তৃত্ব ও প্রভাব সংহত করতে, অক্ষুণ রাখতে কিংবা অপকর্ম ঢাকতে, সত্যকে বিকৃত করতে, অপপ্রচার চালাতে কিংবা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বিকৃত তথ্য উপস্থাপনে পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়াকে ইচ্ছামত ব্যবহার করেছে। এমনকি দেশের সরকারও নিজেদের ক্ষমতা, প্রভাব খাটিয়ে এটিকে কাজে লাগিয়ে নিজেেেদর অপকর্ম ঢাকতে, ক্ষমতা প্রলম্বিত করা, দূর্ণীতি, অপকর্ম ধামাচাপা দেওয়া, বিরোধি পক্ষকে হেনস্থা করা‘সহ হেন কোনো কাজ নেই যে কাজে তারা মিডিয়াকে কাজে লাগায়নি।
সম্প্রতি ব্লগ নামক সোস্যাল মিডিয়া চালু হবার ফলে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে এসে দাঁড়িয়েছে তাক্ষণিকভাবে ম্যাস-কমিউনিকেশনের মোক্ষম মাধ্যম হিসেবে। এর ফলে হলুদ সাংবাদিকতার বীষময় ফল হতে জনগণ অনেকটাই বাঁচতে পারছে। ইল্কেট্রনিক মিডিয়া ও পত্র পত্রিকায় ফরমায়েশমত খবর বানিয়ে (!) এবং তা বিক্রি (!) করে খাওয়া অনেক সাংবাদিকেরই ভাত মারা যাবার জোগাড়! সচেতন জনগণ তাক্ষণিকভাবে খবরাখবর আদান প্রদান ও নিজেদের মতামতকে তুলে ধরার জন্য ব্লগকে মোক্ষম মাধ্যম হিসেবে বেছে নেবার পেছনে ঐ সব অপসাংবাদিকতার বিরুদ্ধে এক নীরব প্রতিবাদী মানসিকতাই কাজ করেছে।
মোদ্দা কথা হলো, শিক্ষিত জনগণের এক অংশ, বিশেষ করে, তরুণ যুবক সম্প্রদায়ের এক বিরাট অংশই ব্লগীয় সংস্কৃতিতে ঝুঁকে পড়েছে। কে, কখন এ মাধ্যমটিকে কী উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবেন, সেটা তার নিজের স্বিদ্ধান্তের উপরে নির্ভর করছে। তবে ব্লগ হচ্ছে সেই ময়দান যেখানে একজন কলম যোদ্ধা নিজ ঘরে বসে যে কেবল ইসলামের কথা তুলে ধরতে পারে তা‘ই নয়, এমনকি বৃদ্ধিবৃত্তিকভাবে পুরো ভার্চুয়াল জগত জুড়ে ইসলামের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তার জবাবটাও দিতে পারে।
আজকের তরুণ প্রজন্ম নিজ বাবা-মা, নিজেদের বন্ধু-বান্ধবদের সাথে যতটা সময় না কাটাচ্ছে, তার চেয়ে বেশী সময় কাটাচ্ছে একা একা বিভিন্ন ওয়েব সাইটে। এইসব ওয়েব সাইটের মধ্যে ব্লগের সংযোগ রয়েছে, ব্লগও তারা পড়ে। তারা ব্লগের মাধ্যমেই নিজেদের মধ্যে যোগযোগ করে।
নিকট অতিতেই এরকম উদাহারণ রয়েছে। সামহোয়ার ইন ব্লগ নামে ইসলাম বিদ্বেষী বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে ঢাকার শাহবাগে জড়ো হওয়া তরুণ যুবকদের নিয়ে গড়ে উঠা গণজাগরণ মঞ্চের কুশীলবরা। তার পরের ইতিহাসতো সকলেরই চোখের সামনেই রয়েছে।
যাদের সচেতন দৃষ্টি আছে, তারা ইতোমধ্যেই দেখতে পাচ্ছেন যে, বিডি ব্লগের কারণে দিনে দিনে উক্ত সামহোওয়ার ইন ব্লগ তথা সামু ব্লগটি প্রায় বিলুপ্তির পথে এসে দাঁড়িরেয়ছে। যে কোন সময়েই আপনি খেয়াল করে দেখুন না কেন, দেখবেন তার আর আগের মত ব্লগার নেই।
অনেক ব্লগারই সামু ছেড়ে বিডি টুডেসহ বিভিন্ন ব্লগে গিয়ে ভীড় করেছে এসবি/বিডি ব্লগের অনেক ডাঁকসাইটে ব্লগারের ব্লগ পোষ্ট ইসলাম বিদ্বেষী মহলের শরীরে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলো। আমরা ব্লগে গুটি কতক ব্লগারের দেয়া অনুসন্ধানী ও তথ্যবহুল পোষ্টের মাধ্যমে সরকার ও ইসলাম বিরোধী গোষ্ঠীর নেয়া জাতীয় সার্বভৌমত্ব, মুল্যবোধ ও চেতনাবিরোধী পদক্ষেপের কথা জানতে পারি।
আজ সেই সব ব্লগারের অনেকেই আর এ্যকটিভ নেই ব্লগে। তাদের লেখা থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। বঞ্চিত হচ্ছে জাতি।
এই ব্লগেরই একজন সাধারণ ব্লগারের কথা বলি। তার লেখা একটা জাতিয় পত্রিকায় কলাম আকারে প্রকাশ হচ্ছিল। সে লেখাগুলোই অনেক পাঠককেও টেনেছে। একজন দায়িত্বশীল ও সচেতন ব্যক্তি, যিনি আজ একটি জেলা জজ পদে চাকুরিরত, তিনি ঐ লেখাগুলো ফটোকপি করে ভার্সিটির প্রায় শত শত ছাত্র-ছাত্রীকে সরবরাহ করেছেন। পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি জেলার জেলা প্রশাসক ঢাকায় পত্রিকাটির সম্পাদককে ফোন করে লেখকের সব ক‘টি লেখা চেয়ে নিয়ে সেই সুদুর কানাডা এবং অষ্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত তাঁর সন্তানদের পাঠিয়েছেন পড়ার জন্য। আনাচে কানাচে এরকম শত শত নয় বরং হাজার হাজার মানুষের মধ্যে পরিবর্তন হচ্ছে, তারা মটিভেটেড হচ্ছেন, সে খবর আমরা সচরাচর পাই না।
ফেসবুকের মত সোস্যাল মিডিয়া ও বাংলা ব্লগের কারণে বাংলাদেশের সমাজে একেবারে গভীরে এ ধরনের সাংস্কৃতিক পরিবর্তন হচ্ছে। মুক্তমনা ও প্রগতিশীলতার নামে যেমন অশ্লীলতার প্রসার ঘটছে, অনৈসলামিক ভাবধারার বিকাশ ঘটছে তেমনি এরই পাশাপাশি ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতিরও প্রসার প্রচার ঘটছে।
যে অপশক্তি মুসলিম প্রধান এই দেশে এই ইসলামি কালচারের প্রসার প্রচারের গতী থামিয়ে দিয়ে অশ্লীলতা ও অনাচার ছড়িয়ে দেবার মাধ্যমে সমাজের বারোটা বাজাতে চায়, তারা সঙ্গত কারণেই চাইবে না তাদের কোনো প্রতিপক্ষ থাকুক, বরং তারা চাইবে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে। কিন্তু তাদের দুরভিসন্ধীমূলক লক্ষ্য অর্জনের বিরুদ্ধে কেউ যদি দাঁড়িয়ে যায়, তা সে ভিশু বা ইমরান, পুষ্পিতা, রেহনুমা কিংবা মরিয়াম যেই হোন না কেন, তারা তাদেরকে তাড়াতে চাইবেই এ জগত থেকে। বন্ধ করতে চাইবে তাদের মুখ।
এরই অংশ হিসেবে বার বার বিডি টুডে‘র মত বাংলা ব্লগ তথাকথিত মুক্তমনা ও বাক স্বাধীনতা রক্ষায় বদ্ধপরিকর (!) সরকার বার বার বন্ধ করে দিতে চায়।
ঠিক এরকম একটা সময়ে সংশ্লিষ্ঠ ব্লগের পাশে না দাঁড়িয়ে যদি কোনো ব্লগার নিজেকে গুটিয়ে নেন, তা হলে সেটা হয়ে উঠে হৃদয় বিদারক, দু:খজনক একটা ঘটনা। মনে রাখতে হবে যে, কলম হাতে ধরা মানে হলো যুদ্ধে নামা। গোলা বারুদ নিয়ে যুদ্ধের দামামা বাজে, আওয়াজ হয়, সেখানে ত্বরিত ফলও পাওয়া যায়, কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধ চলে ধীরে, খুবই ধীরে। জনম ভরে, অনেকটা অলক্ষ্যেই।
অস্ত্র হাতে অর্জিত যুদ্ধের ফল সহাসাই বদলে দেয়া যায়, কিন্তু কলম নিয়ে চলা যুদ্ধে অর্জিত ফল বদলাতে এক জনম নয়, হাজার বসরেও সম্ভব হয় না। সক্রেটিস, এরিস্টেটল কিংবা প্লেটোর কলমের ফসল আজও বিশ্ব টেনে চলেছে।
একইভাবে ইবনে সীনা, ইবনে খালদুন, ফারাবী, রুমী কিংবা ইবনে তাইমিয়া এদের কার তরবারীর কতটা জোর ছিল তা বিশ্ব টের না পেলেও তাদের কার কলমে কতটা জোর ছিলো, তা কিন্তু তাদের ইন্তেকালের হাজার বসর পরে এসেও বিশ্ব আজও ঠিকই টের পাচ্ছে হাড়ে হাড়ে।
এই জণ্যই বোধ করি বলা হয় অসির চেয়ে মসী বড়ো বেশী শক্তিশালী! দার্শনিক ভল্টেয়ার যথার্থই বলেছিলেন ‘To hold a pen is to be at war’ অর্থাৎ, কলম ধরার মানেই হলো যুদ্ধে নামা। শক্তিশালী সেই অস্ত্র; মসী তথা কলম হাতে নিয়ে কলম যোদ্ধাদের স্থানই হলো ব্লগ, বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধের আধুনিক ময়দান।
ইসলামি দর্শনে সামরিক যুদ্ধের ময়দান বলুন আর বৃদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধের ময়দান বলুন, ইসলামের যথার্থতা তুলে ধরতে মাঠে নামা একজন যোদ্ধা কখনই তার ময়দান ছেড়ে যেতে পরেন না। আল্লাহ রাস্তায় যুদ্ধে নামা একজন যোদ্ধা সেটা তার কল্পনাতেও আনতে পারেন না। অতএব নিষ্কৃয় ব্লগারদের প্রতি অনুরোধ, দয়া করে ফিরে আসুন, কলম হাতে তুলে নিন, এটাই এখন সময়ের দাবী।
বিষয়: বিবিধ
২০১৬ বার পঠিত, ৪১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ব্লগার হককথা ভাইয়ের সাথে আমারও সবার প্রতি বিনয়ী অনুরোধ--
দয়া করে ফিরে এসে কলম হাতে তুলে নিন । ।
অনেক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা আপনার জন্য।
ধন্যবাদ আপনার পোস্টের জন্য।
আমি জানিনা আপনারা অভিমান করেছেন নাকি ব্যাস্ত।
পোস্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনার সাথে একমত "কলম হাতে ধরা মানে হলো যুদ্ধে নামা। গোলা বারুদ নিয়ে যুদ্ধের দামামা বাজে, আওয়াজ হয়, সেখানে ত্বরিত ফলও পাওয়া যায়, কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধ চলে ধীরে, খুবই ধীরে। জনম ভরে, অনেকটা অলক্ষ্যেই। "
জাযাকাল্লাহ খায়ের
•► আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদের ভালবাসেন [ আলে ইমরান : ১৫৯ ]
•► নিশ্চয় আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালবাসেন [ মায়িদা : ৪২ ]
•► আর যারা সবর করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন [ আলে ইমরান : ১৪৬ ]
•► আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন [ আল-মুমতাহেনা : ৮ ]
যাজাকাল্লাহ খাইর -
আমি একমত, ভাল ব্লগারদের লেখাকে মুল্যায়ন করলে তারা যাবেনা, অবশ্যই থাকবে। অনেক ধন্যবাদ
জবাবদিহিতার অনুভূতি হোক আমাদের লেখার প্রেরণা।
ফিরে আসুক কলম যোদ্ধারা।
আল্লাহ আপনার হাতকে আরো শক্তিশালী করুন এই দোয়া করছি।
আপনার মেইল পেয়ে যারপরনাই খুশী হলাম। জবাবের অপেক্ষা করুন......
মন্তব্য করতে লগইন করুন