তসলিমা নাসরিন: পোট্রেট অব এ সাইকোপ্যাথ- মনোবৈকল্যের প্রতিকৃতি।
লিখেছেন লিখেছেন হককথা ৩১ আগস্ট, ২০১৪, ০৯:১৩:৫৬ রাত
তসলিমা নাসরিন। একটি পরিচিত নাম। কারো কাছে বিখ্যাত আবার কারো কাছে কুখ্যাত। বাংলাদেশের একটি সাধারণ মুসলিম পরিবার থেকে উঠে আসা নারী চিকি’সক। ডাক্তার। তাকে অনেকটা ভাগ্যবতীই বলতে হয়, কেননা সেই ৮০‘র দশকে যখন এই দেশটায় নারী শিক্ষার হার ছিল শতকরা মাত্র ১৬ কিংবা ১৮ ভাগ,সেই তখনই তিনি উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়েছেন। নিজেকে তিনি একজন ডাক্তার হিসেবে গড়ে তুলেছেন। এর পেছনে তার মরহুম বাবা ডাক্তার রজব আলী এবং মরহুমা মা, তার আত্বীয় স্বজন, তার শিক্ষকমন্ডলী এবং সর্বোপরি, তার নিজের প্রচেষ্টা, সাধনা আছে, তা নি:সন্দেহে সত্য।
একজন ডাক্তার তৈরী করতে বাংলাদেশের মত গরীব একটি দেশের সরকারকে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। এ টাকা আসে গরীব জনগণের শ্রম থেকে। যে জনগণ বসরের অধিকাংশ দিনই আধা পেট খেয়ে থাকে কিংবা অভূক্ত থাকে, সে জনগণের টাকায় যখন কেউ নিজেকে একজন চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তোলেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই নৈতিক বিচারে ঐ জনগণের কাছে উক্ত চিকিৎসকের বিরাট দায় রয়ে যায়।
এ দায় মেটানোর বড় সুযোগ ছিলো তসলিমার সামনে। তিনি একজন ডাক্তার হিসেবে সরকারী চাকুরিতে নিয়োজিত ছিলেন। সরকারী চাকুরে হিসেবে বা বেসরকারী ভাবে তিনি বাংলাদেশের গরীব জনগোষ্ঠীকে তার পেশাগত জ্ঞান মেধা ও দক্ষতা দিয়ে সেবা দিতে পারতেন। যে পশ্চাৎপদ ও নির্যাতিতা নারী সমাজের প্রতি কৃত অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি এতটা সোচ্চার, সেই নারীদের একটা বিরাট অংশ বিনা চিকিৎসা, অপচিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। চিকি’সা খরচের অভাবে তারা পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবাটাও নিতে পারছেন না। এমন চিত্র পুরো দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামে-গঞ্জেই রয়েছে।
গাইনোকোলজীতে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তসলিমা পারতেন সেইসব বঞ্চিতা নারীদের সেবায় আত্বনিয়োগ করতে পারতেন। তিনি পারতেন কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক বা তেমন কোনো সেবা কেন্দ্র গড়ে তুলতে। এর মাধ্যমে তিনি এ দেশের সেবা বঞ্চিত নারী সমাজকে দিতে পারতেন জীবন বাঁচানোর মত সেবা। বাঁচাতে পারতেন অকালে ঝরে যাওয়া থেকে অনেক শিশুকে।
দু:খজনকভাবে তিনি সে পথে যান নি। তিনি বেছে নিয়েছেন এক হঠকারী পথ। তিনি তার জ্ঞান, তার লেখনী দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে চলেছেন নিজ দেশের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষের অন্তর। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ক‘দিন আগে মন্তব্য করেছেন, বলেছেন; ''কোরবানি ঈদের সময় গরু জবাই দেখতে দেখতে অথবা গরু জবাই করতে করতেই মুসলমানদের গলা কাটার অভ্যেসটা হয়েছে। আর এ কারনেই মানুষের গলা কাটাটা মুসলমানরা যত ভালো পারে, অন্যরা তত ভালো পারে না।''
তারও ক‘দিন আগে তিনি বলেছেন; ‘এখনই ইসলাম ত্যাগ করার উপযুক্ত সময়’! মজার ব্যাপারে তার মতে সেই ‘উপযুক্ত সময়ে’ও তিনি এখন পর্যন্ত ইসলাম ত্যাগ করার প্রকাশ্য কোনো ঘোষণা দেন নি!
কী অবাক করা কান্ড! কী স্ববিরোধিতা! তিনি যা বলেছেন তা যদি তার মনের কথা হতো, তা হলে তিনি এতদিন ইসলাম ত্যাগের প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে বাঙ্গালী হিসেবে তার আরবিভাষী ইসলামি নাম ‘তসলিমা’র বদলে তার বাংলা প্রতিশব্দ ‘নিবেদিতা’ রাখতে পারতেন, কিংবা ফারসি ‘নাসরিন’ শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে ‘গোলাপি রানী’ কিংবা ‘পুষ্পিতা রানী’ হিসেবে পরিচয় দেয়া শুরু করতেন। কিন্তু তিনি তা করেন নি। বরং তিনি এখনও তার ভাষায় ‘গলা কাটার ধর্ম’ ইসলামটাকেই ধরে রেখেছেন!
পঞ্চাশোর্ধা তসলিমা আগের মত পুরুষ স্তাবক পান কী না, তা জানি না। তিনি বোধ হয় তার নারী পুরুষ সমর্থকদের কাছ থেকে উপযুক্ত ও পর্যাপ্ত মনযোগ আগের মত পাচ্ছেন না। তসলিমার কাছে, একান্ত সান্নিধ্যে যে সব ‘বিখ্যাত পুরুষ’ (?) একটু আধটু গিয়েছেন, সুযোগ নিয়েছেন বা নেবার চেষ্টা করেছেন, তসলিমা পরবর্তিকালে তাদের সকলের পরিচয় প্রকাশ করে দিয়ে সেসব সাধু (?) পুরুষদের সমাজে তো নাজেহাল করেছেনই, এমনকি সেসব বুড়োদের ঘরের গিন্নীদের কাছে, তাদের আত্বীয় স্বজন, সন্তান সন্ততিদের কাছেও দারুণভাবে বিব্রত করেছেন। ফলে এখন আর কেউ তার কাছ ঘেঁষে না! ফলে তিনি আর আগের মত মনযোগ পাচ্ছেন না।
আর তা পাচ্ছেন না বলেই মনযোগ আকর্ষণের জন্য তিনি একের পর হৃদয় বিচূর্ণকারী মন্তব্য করে কোটি কোটি মুসলমানদের অন্তরকে ক্ষত বিক্ষত করে আলেচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে চাইছেন। থাকছেনও।
আল্লাহ, রাসুল, ইসলাম ও মুসলমানদের কটাক্ষ করে মুসলিম নামধারী একজন নারীর বক্তব্য লুফে নেবার মত মনোবিকারগ্রস্থ একটি মহল ও কিছু মিডিয়া মুখিয়ে আছে, তা তিনি জানেন। তাদের কল্যাণে তিনি মিডিয়া কভারেজ পান। পাচ্ছেনও। এটা তিনি জানেন বলেই এধরনের ঘৃন্য বক্তব্য একের পর এক করে চলেছেন।
এতে আরও অনেক মুসলমানের মত আমিও কষ্ট পাই। তসলিমার প্রতি আমার ব্যক্তিগত কোনো আকর্ষণ বা বিকর্ষণ নেই। সেই ১৯৭৬/৭৭ সালের সাপ্তাহিক চিত্রালী, রোববার আর বিচিত্রায় দেখতাম তসলিমা নাসরিন নামে ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন পাতায় পত্রমিতালির আবেদন থাকতো।
সেদিনও তসলিমা আমাকে আকর্ষণ করেন নি। আজ তো প্রশ্নই আসে না।
তবে আজ তিনি আমার মনযোগ কেড়েছেন, সেটা বলতেই হবে। পাড়ায় বা মহল্লায় যখন কোনো পাগলের উপস্থিতি ঘটে, তখন সেই একটা পাগলই যথেষ্ট পুরো মহল্লার সকলের মনযোগ কাড়তে।
তসলিমাও ঠিক তেমনি অনেকের মতই আমার মনযোগ কেড়েছেন এ কারণে যে, তার কারণে আশে পাশের অনেক মুসলিম নারী-পুরুষকে কষ্ট পেতে দেখি। এইসব ধর্মপ্রাণ নারী পুরুষের মনোকষ্টটাই আমার কষ্টের কারন।
তার লেখা পড়েছি, বিভিন্ন সময়ে তার বিভিন্ন মন্তব্য পড়ে বোঝার চেষ্টা করেছি এই মহিলার সমস্যাটা কোথায়? মরহুম ডাক্তার রজব আলী ময়মনসিংহ এলাকায় বহু লোকের চিকিৎসা করেছেন। কিন্তু নিজের ঘরে, নিজ আত্বজের ভেতরে যে ধীরে ধীরে এক মানসিক বৈকল্য বাসা বাঁধছে তা কী তিনি টের পান নি?
প্রশ্নটা মাঝে মধ্যেই মনে হয় এ কারণে যে, একজন টিপিক্যাল সাইকোপ্যাথ-এর যে আঠারোটি লক্ষণ থাকে, তার বেশীরভাগই তো তসলিমার পার্সোন্যালিটির মধ্যে ফুটে উঠেছে এই পরিণত বয়সে! তবে এর শুরুটা কিন্তু হয়েছে তার শৈশবে বা কৈশোরেই, পারিবারিক বলয়েই।
আধুনিক মনোবিজ্ঞানে Attention deficit hyperactivity disorder (ADHD) নামে একটা রোগ আছ্। রোগটা সন্মন্ধ্যে আমাদের সমাজে সচেতনতা নেই বললেই চলে। রোগটিকে অতি সংক্ষেপে চিত্রিত করা যায় এভাবে; ‘ Attention deficit hyperactivity disorder (ADHD) is one of the most common childhood disorders and can continue through adolescence and adulthood. Symptoms include difficulty staying focused and paying attention, difficulty controlling behavior, and hyperactivity (over-activity).’
তসলিমা কর্তৃক বারংবার মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করার এই অসুস্থ প্রবণতা দেখে আমার কেন যেন মনে হয় তিনি সম্ভবত এই রোগে আক্রান্ত, অথবা তিনি পুরোই সাইকোপ্যাথ। একজন দক্ষ মনোবিজ্ঞানীই তা ভালো বলতে পারবেন।
মানুষের মন বলে কথা। শরীর থাকলে সেখানে যেমন রোগ বাসা বাঁধতে পারে, তেমন মন থাকলেও মনে রোগ বাসা বাধবে, তাতে আশ্চর্যান্বিত হবার কী আছে? তাই তসলিমাকে অনুরোধ করি; কোলকাতা বা তার পাশে পাশে অনেক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন, তিনি তাদেরই কারো সাথে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন। এই বুড়ো বয়সে শরীর মন দুটোই সুস্থ রাখা দরকার। একজন ডাক্তার হিসেবে তসলিমারই সেটা সবচেয়ে ভালো জানার কথা বৈকি!
বিষয়: বিবিধ
২১৪৭ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তার এহেন কথা বার্তা নারীদেরই কথা এবং এটাতে তারা মৌনভাবেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে ।
নারী বিষয়টাই খুব স্পর্শকাতর। এভাবে আলোচনা উচিৎ নয়। প্লিজ আর এগুবেন না। প্লিজ।
আপনাকে ধন্যবাদ, থামিয়ে দেবার জন্য। এ বিতর্কে জড়িয়ে ও জবাবগুলো দেবার পর থেকে এক ধরনের অন্তর্জ্বালায় ভুগছিলাম। আপনাকে আবারও ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন