সুরা বনী ইসরাইল ৯-১৬ আয়াতের সরল শিক্ষা। (ব্লগার ভিশু ভাই কর্তৃক দেয়া দায়িত্ব পালন। বিলম্বের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী)
লিখেছেন লিখেছেন হককথা ১৮ জুলাই, ২০১৪, ০৬:৩৬:২৮ সকাল
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আ'লামিন ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসুলিহিল কারিম।
আমার এক প্রিয় ভাই, ব্লগার ভিশু ভাই-এর দেয়া দায়িত্ব পালন করতেই সীমিত জ্ঞান আর যোগ্যতা দিয়ে আজ কুরআনে কারীমের সুরা বনী ইসরাইল এর ৯ নম্বর থেকে ১৬ নম্বর, এই মোট আটটি আয়াতের সংক্ষিপ্ত সরল শিক্ষা (আমি যে ভাবে বুঝেছি) পেশ করব ইনশাআল্লাহ।
আমার দায়িত্ব ছিলো ১৮তম রমজানে এই পোষ্টটা দেয়া, কিন্তু প্রবাসে প্রায় কুড়ি ঘন্টা রোজা পালন ও সেই সাথে অফিসের কাজ নিয়ে প্রচন্ড ব্যস্ততার কারণে যথাসময়ে হয়ে উঠেনি, বলে দু:খিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
এটা কোনো তাফসীর নয়। কারণ কুরআনের তাফসীর করার মত যোগ্যতা আমার নেই। আমার সীমাবদ্ধতার ব্যপারে আমি সচেতন। একজন সচেতন মুসলমান হিসেবে সাদামাটা যেটুকু বুঝেছি, সেটুকুই তুলে দিলাম সুধী পাঠকের উদ্দেশ্যে। ওয়ামা তাওফিক্বি ইল্লা বিল্লাহ।
কুরআন নাজিলের মাস এই রামাদ্বান। আর সেই কুরআন সন্মন্ধ্যেই এখানে বলা হচ্ছে। আল্লাহপাক আল কুরআনের পরিচয় ও তার সাথে মানুষের সম্পর্কটা কী, সে কথা সংক্ষিপ্ত কিন্তু সুষ্পষ্টভাবে এই ক‘টি আয়াতে তুলে ধরছেন।
প্রেক্ষাপট-
মক্কী যুগের একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে আল্লাহপাক তাঁর নিজ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা: সহ মুসলমানদের মদীনায় হিজরত করার নির্দেশ দেবেন, সেখানে প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা: এর নেতৃত্বে অহীর শিক্ষাকে ভিত্তি করে বিশ্বের প্রথম ও পূর্ণাঙ্গ একটি কল্যাণ রাষ্ট্র ‘ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থা’ পুরো বিশ্বসহ অনাগত মানবসভ্যতার জন্য মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করাবেন।
এ রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় হাতে কলমে দেখানো হবে আল কুরআনের বর্ণিত নীতি নৈতিক, বৈষয়িক, আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা-সংস্কৃতিক সামরিক ও রাজনৈতিক ইত্যাদি সকল ধরনের নির্দেশনাকে কীভাবে বাস্তবে প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করতে হয়। আর এই ডেমোনেষ্ট্রেশনটার পূরোভাগে থাকবেন স্বয়ং আল্লাহর রাসুল সা:।
সে কারণেই হিজরতের প্রস্তুতি হিসেবে কি না, আল্লাহ পাক প্রিয় রাসুল সা: কে নিয়ে গেলেন মেরাজ-এ। তাঁর সান্নিধ্যে তিনি তাঁকে মানব সমাজ ও জীবনের সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করার মত বিধি নিষেধ দিলেন, দিলেন আত্বিক ও মানসিক সাহস ও দৃড়তা। আল্লাহর বিশাল সৃষ্টি, তার পরিচালনা পদ্ধতি, জান্নাত-জাহান্নাম, শাস্তি পুরস্কারের বিধান, পূর্ববতি নবী রাসুলগণের সাথে স্বাক্ষাত ও কথোপকথন, এসবের ফলে একজন মানুষ; প্রিয় রাসুল সা: এর মনোজগতে যে বৈপ্লবিক প্রতিক্রিয়া ঘটেছে, তা আমাদের কাছে কল্পনাতীত বটে। তবে এটা মহাকুশলী আল্লাহর কৌশল হিসেবেই তিনি তাঁর রাসুলকে মেরাজে নিয়েছেন।
আর সে কৌশলের অংশ হিসেবেই প্রিয় রাসুল সা: এর একদল শীক্ষানবীশ সহযোগী থাকবেন, আল্লাহ পাকই নির্বাচিত করেছেন, আমরা তাদেরকেই জানি আসহাবে রাসুল বলে। নানান বয়সী নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-যুবকদের স্বমন্বয়ে গড়ে উঠা এই দলটি বিভিন্ন পেশা থেকে এসেছেন। তাঁদের মেধা-যোগ্যতা-দক্ষতা, আর্থসামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক স্তরের ভিন্নতা থাকলেও একটি ক্ষেত্রে তাদের সকলের মধ্যেই এক বিরাট ঐক্য ছিলো, আর সেটি হলো; তারা সকলেই জীবনের সকল কিছুর বিনিময়ে হলেও, শত কষ্ট স্বীকার করে হলেও আল্লাহ ও তার রাসুল সা: এর আনুগত্য থেকে এক তিল পরিমাণ সরে যেতে রাজী নন! এর জন্য তাঁরা নিজেদের সর্বস্ব ত্যাগ করতে হলে তাও করতে প্রস্তুত।
এই প্রস্তুতির প্রথম পরীক্ষা তাঁরা ইতোমধ্যেই দিয়েছেন মক্কার জীবনে শত কষ্ট-ক্লেশ আর অত্যচার-নির্যাতন সয়ে। তাঁদেরকেই আল্লাহপাক অচিরেই নিজেদের বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা-পরিজন, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাষাবাদ, জীবন জীবিকা, বাড়ী ঘর, জন্মভূমি, সবকিছুই ছেড়ে দিয়ে হিজরতের নির্দেশ দেবেন, নিয়ে যাবেন নতুন এক জনপদে। জনপদটি অজানা না হলেও সেখানে তাদের দিয়ে যে সমাজ প্রতিষ্ঠা করাবেন, তা এইসব লোকদের কাছে অজানা।
এরকম একটা প্রেক্ষাপটেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ কুদরতে মি‘রাজ সংঘঠিত হয় যেখানে তিনি তাঁর প্রিয় রাসুল সা: কে নিজ সান্নিধ্যে ডেকে নেন, এবং সর্বোত্তম মানের সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান ও তার অনুবর্তী হবার পুরষ্কার কেমন হবে? সেটার পাশাপাশি অবাধ্যতার পরিণাম পরকালের জীবনে কেমন হবে, তার একটা ডেমোনেষ্ট্রশনও তিনি তাঁর নবীকে দেখিয়ে দেন জান্নাত-জাহান্নাম ও এতদুভয়ের জীবন সচক্ষে দেখানোর মাধ্যমে।
মি‘রাজ থেকে ফিরে আসতেই প্রিয় রাসুল সা: এর উপরে এই সুরাটি নাজিল হয় এবং তিনি তা মক্কাবাসীর সামনে উপস্থাপন করেন। চতুর্থ আয়াতে উল্লেখিত ‘বনী ইসরাইল’ বাক্য থেকে সুরাটির নামকরণ করা হলেও এখানে একমাত্র বনী ইসরাইল জাতিই এর আলোচ্য বিষয় নয়, যদিও তাদের কথা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুরাটিতে পুরো মনুষ্য সমাজের সামনে আখেরাতের জীবনকে মেনে নেয়ার আহ্বানের পাশাপাশি পরকাল অস্বীকার করার ভয়াবহ পরিণতির কথাও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, সাবধান করে দেয়া হয়েছে।
আলোচ্য আয়াতের প্রথমটিতেই মুসলমানদের নিশ্চয়তা দিয়ে বলা হচ্ছে, তাদের জীবনের দিকনির্দেশনা হিসেবে যে গ্রন্থ; আল কুরআন দেয়া হয়েছে, তা যে পথ দেখায়, যে পথের সন্ধান দেয়, তা এমন একটা পথ যে, এ পথকে কখনই বিচ্যুত করা সম্ভব হবে না। এই পথ স্থায়ী ও অটল রইবার মত সকল গুণ সম্বলিত। যতক্ষণ কুরআনের অনুগামী রইবে মানুষ ততক্ষণ সে পথভ্রষ্ট হবে না। কুরআন তাকে যে পথের সন্ধান দেবে, সে পথ থেকে তাকে কেউই বিচ্যুত করতে পারবে না।
إِنَّ هَذَا الْقُرْآنَ يَهْدِي لِلَّتِي هِيَ أَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِينَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا كَبِيرًا (9)
এই কোরআন এমন পথ প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল এবং সৎকর্ম পরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্যে মহা পুরস্কার রয়েছে।
এই একই কথা বারংবার আল কুরআনে বলা হচ্ছে। যেমন; আন নাহল:৮৯, বাকারা: ১৮৫, আনকাবুত:৬৯, ইব্রাহিম:১, ইউনুস:৩৭। বস্তুত এরকম আরও ডজন ডজন আয়াত রয়েছে, যেখানে এই কথাটাই জোর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করে দেয়া হচ্ছে।
কিন্তু মানুষ ধৈর্য ধারণ করে যে এমন একটা অটুট পথ খুঁজে নেবে, তার উপরে ভিত্তি করে নিজেদের জীবন গড়ে নেবে, তা না করে সে দ্রুততার পথ অবলম্বণ করে, এই দ্রুততার পথ অবলম্বন করতে গিয়ে সে ধৈর্যচ্যুত হয়ে বাঁকা পথ বেছে নেয়। ন্যায়-অন্যায়ের ধার না ধেরে সে স্বল্পতম সময়ে নিজের মনের খায়েশ মেটাতে নেমে পড়ে। নিজের খেয়াল খুশী মত চলে বল্গাহীন অনিয়নন্ত্রিত জীবন যাপন শুরু করে। আর এর জন্য সর্বপ্রথমে সে পরকালকেই কার্যত অস্বীকার করে বসে। এদের জন্য সাবধানবাণী উচ্চারণ করে পরবর্তি আয়াতে বলা হচ্ছে;
وَأَنَّ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا (10
এবং যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, আমি তাদের জন্যে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করেছি।
এভাবে সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যে যেন তেন ভাবে মনের খায়েশ পূরণেই সে কল্যাণ মনে করে, মনে করে সে সফল। অবাধ্য হবার এই মনস্তাত্বিক কারণটিকে আল্লাহ পাক সুন্দর করে নির্দেশ করছেন এভাবে;
وَيَدْعُ الْإِنْسَانُ بِالشَّرِّ دُعَاءَهُ بِالْخَيْرِ وَكَانَ الْإِنْسَانُ عَجُولًا (11
মানুষ যেভাবে কল্যাণ কামনা করে, সেভাবেই অকল্যাণ কামনা করে। মানুষ তো খুবই দ্রুততা প্রিয়।
অথচ তার অধৈর্য হবার কোনো সঙ্গত কারণ ছিলো না। কারণ, সময়ের এ বিবর্তন, রাত্রি দিনের এই পরিক্রমা তো আল্লাহপাকই সৃষ্টি করেছেন। রাত্রি-দিনের বিপরিতমুখী অবস্থান ও তাদের সাথে জড়িয়ে থাকা সৃষ্টির উপাদান (যেমন সুর্য, চন্দ্র ও তারকারাজী ইত্যাদি ) সময়ের পরিক্রমায় বৈপরিত্য মানুষের জীবন ধারনের জন্য তাদের কাজ-কর্ম, আহার-নিদ্রা, বিশ্রাম, আয়-উপার্জনের সুবিধার্থেই করা হয়েছে। যেন এ বিবর্তনের সাথে সঙ্গতি ও ভারসাম্য বজায় রেখেই মানুষ নিজেদের সামষ্ঠিক কাজকর্ম পরিচালনা করতে এবং এ বিবর্তন, এর সৃষ্টিকৌশল থেকে শিক্ষা নেয়। স্রষ্টার শক্তি, কৌশল ও প্রজ্ঞার ব্যাপারে যেন সে কোনো সংশয়ের মধ্যে নিপতিত না হয়। আল্লাহর ভাষায়;
وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ آيَتَيْنِ فَمَحَوْنَا آيَةَ اللَّيْلِ وَجَعَلْنَا آيَةَ النَّهَارِ مُبْصِرَةً لِتَبْتَغُوا فَضْلًا مِنْ رَبِّكُمْ وَلِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ وَكُلَّ شَيْءٍ فَصَّلْنَاهُ تَفْصِيلًا
(12)
অর্থ- আমি রাত্রি ও দিনকে দুটি নিদর্শন করেছি। অতঃপর নিস্প্রভ করে দিয়েছি রাতের নিদর্শন এবং দিনের নিদর্শনকে দেখার উপযোগী করেছি, যাতে তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা স্থির করতে পার বছরসমূহের গণনা ও হিসাব এবং আমি সব বিষয়কে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করেছি।
বিবর্তনের এই প্রক্রিয়াটি কেবল রাত্রি দিনের মধ্যেই নয়, বরং মানুষের নিজ অস্তিত্বের মধ্যে, সমাজ ও সভ্যতার মধ্যেও আবর্তিত হয়। এ থেকে কেবল চিন্তাশীল ব্যক্তিরাই শিক্ষা নেয়, অথবা যারা এ বিষয়ে চিন্তা গবেষণা করে, তারাই এ থেকে শিক্ষা নিতে ও উপকৃত হতে পারে।
সৃৃষ্টির মধ্যে এরকম নিদর্শনের কথা কুরআনের আরও অনেক স্থানে আল্লাহপাক বলেছেন। যেমন, সুরা ইউনুস ৬৭, ৯২, সুরা রা‘দ ৩, সুরা হিজর ৭৭, সুরা বাক্বারা ১৬৪, সুরা আলে ইমরান ১৯০ ইত্যাদি।
এতকিছুর পরেও যদি মানুষ এ সব নির্দশনকে, এসব বিধি বিধানকে উপক্ষো করে নিজের খায়েশ মত চলে, আল্লাহর অবাধ্য হয়, তবে সে যেন মনে না করে যে, তার অবাধ্যতা হিসেবের বাইরে রয়ে যাবে এবং তাকে কোনো জবাবদীহির মুখোমুখি হতে হবে না। বরং তার প্রতিটি কাজের সুক্ষ হিসেব কড়ায় গন্ডায় আদায় করা হবে, তার প্রতিটি কাজের হিসাব রাখা হচ্ছে যা তারই সামনে উপস্থাপন করে বলা হবে;
َكُلَّ إِنْسَانٍ أَلْزَمْنَاهُ طَائِرَهُ فِي عُنُقِهِ وَنُخْرِجُ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كِتَابًا يَلْقَاهُ مَنْشُورًا
(13)
অর্থ- আমি প্রত্যেক মানুষের কর্মকে তার গ্রীবলগ্ন করে রেখেছি। কেয়ামতের দিন বের করে দেখাব তাকে একটি কিতাব, যা সে খোলা অবস্থায় পাবে।
বলা হবে; তুমি নিজেই তোমার হিসেবটা একবার দেখে নাও, পেড় দেখো তোমার কাজের হিসেবে নিকেশ কী লিপিবদ্ধ হয়েছে;
اقْرَأْ كِتَابَكَ كَفَى بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا (14)
অর্থ- পাঠ কর তুমি তোমার কিতাব। আজ তোমার হিসাব গ্রহণের জন্যে তুমিই যথেষ্ট।
এমনটা করা হবে যেন সে নিজেই বুঝে নিতে পারে তার কী ধরনের পরিণতি, প্রতিদান প্রাপ্য! প্রত্যেকে তার নিজ নিজ কৃত কর্মকান্ড অনুযায়ী ফল পাবে, কেউ কারো কোনো ভার বহন করবে না। সেদিন কোনো নেতা, পীর-ওস্তাদের উপরে দায় চাপিয়ে পার পাওয়া যাবে না। প্রত্যেককে তার নিজের কাজের দায় নিতে হবে।
مَنِ اهْتَدَى فَإِنَّمَا يَهْتَدِي لِنَفْسِهِ وَمَنْ ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّى نَبْعَثَ رَسُولًا
(15)
অর্থ- যে কেউ সৎপথে চলে, তারা নিজের মঙ্গলের জন্যেই সৎ পথে চলে। আর যে পথভ্রষ্ট হয়, তারা নিজের অমঙ্গলের জন্যেই পথ ভ্রষ্ট হয়। কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি দান করি না।
আর কোনো জনপদের লোকজন যদি সম্মিলিতভাবে বা সংখ্যাগুরু অংশ জেনে শুনে নিজেদের খেয়াল খুশীর অনুবর্তি হয়ে পড়ে, তখন আল্লাহ তাদের অবকাশ দিতে থাকেন। অবকাশ পেয়ে সমাজবাসী নিজেদের আরও বেশী করে বল্গাহীনতার দিকে, অবাধ্যতার দিকে ভাসিয়ে দেয়। ফলে সেখানে একটা Social Trend একটা Social Psychology গড়ে উঠে। তখন ঐ সমাজের অধিকাংশ লোকই পাপাাচরেই আনন্দ পায়, আল্লাহর নির্দেশের বিরোধিতা করা, তার অবাধ্য হওয়াতেই যেন তারা আনন্দ পায়। তাদের মন থেকে আল্লাহর ভয় উঠে যায়। নিজেদের সফলতা দেখে তারা আত্বতৃপ্তিতে ঢেকুর তুলতে থাকে, ঠিক এমন সময় আল্লাহ পাক তাদের পাকড়াও করেন।
وَإِذَا أَرَدْنَا أَنْ نُهْلِكَ قَرْيَةً أَمَرْنَا مُتْرَفِيهَا فَفَسَقُوا فِيهَا فَحَقَّ عَلَيْهَا الْقَوْلُ فَدَمَّرْنَاهَا تَدْمِيرًا
16
অর্থ- যখন আমি কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তার অবস্থাপন্ন লোকদেরকে উদ্ধুদ্ধ করি অতঃপর তারা পাপাচারে মেতে উঠে। তখন সে জনগোষ্টীর উপর আদেশ অবধারিত হয়ে যায়। অতঃপর আমি তাকে উঠিয়ে আছাড় দেই।
আর এর সবচেয়ে প্রকৃষ্ঠ উদাহারণ হলো বনী ইসরাইল তথা ইহুদি জাতি। ইয়াকুব আ: মুসা আ: থেকে শুরু করে ইসা আ: পর্যন্ত নবী রাসুলদের সাথে তাদের আচরণ ও পরণিতিতে তাদের উপরে বার বার নেমে আসা আল্লাহর আজাবের কথা কালামে পাক-এ আল্লাহপাক বার বার বর্ণনা দিয়েছেন। বিশ্ব ইতিহাসও তার স্বাক্ষী
আর বস্তুত আল্লাহ পাক যখন কোনো জাতিকে পাকড়ায় করেন, তখন তাদের কোনো পথ থাকে না। এটা একটা জাতির বেলায় যেমন সত্য, ঠিক তেমনি সত্য একজন ব্যক্তির বেলাতেও।
অতএব সময় থাকতেই যেন আমরা সাবধান হই।
আল্লাহপাক আমাদের সকলকে তার কুরআনুল কারিম থেকে শিক্ষা নেবার ও সেই শিক্ষানুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দেন, আমিন।
বিষয়: বিবিধ
১৮০৫ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Jajakalla khair.
A briliant note that easy to understand for everyone of us.
May Allah give us tawfiq to to act as Quran show us the correct path.
Many many thanks.
Jajakalla khair.
অাল্লাহ তাঅালা অামাদেরকে অামল করার তাওফিক দান করুক। অামিন।জাযাক অাল্লাহ খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন