কিছু চমকপ্রদ তথ্য ও বিশ্লেষণ জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ প্রসঙ্গে- আপনাকে ক্ষণিকের জন্য হলেও চমকে দেবে, চিন্তার খোরাকও দেবে ইনশাআল্লাহ!
লিখেছেন লিখেছেন হককথা ১২ জুন, ২০১৪, ০৭:৪৫:২৮ সন্ধ্যা
জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ নিয়ে ভিন্ন মাত্রার এক আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। কিছু তথ্য আপনাকে চমকে দেবে। বিষয়টাকে নিয়ে প্রচলিত ধারনার বিপরিতে ভিন্নভাবে (এবং অবশ্যই সঠিকভাবে) ভাবতে আপনাকে বাধ্য করবে।
জিহাদ প্রতিটি মুসলমানের উপরে একটা বাধ্যতামুলক কাজ। জিহাদ হচ্ছে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়কে, জুলুম আর অবিচারের বিরুদ্ধে ইনসাফকে, মিথ্যা আর শঠতার বিরুদ্ধে সত্য আর সততাকে, হঠকারিতা ও অজ্ঞানতার বিরুদ্ধে জ্ঞান আর প্রজ্ঞাকে, বর্বরতার বিরুদ্ধে মানবিকতা, অশ্লীলতার বিরুদ্ধে শালীনতাকে প্রতিষ্ঠিত করা। এই জিহাদ নিয়েই যত অপপ্রচার। অপপ্রচার মুসলমানদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ সন্ত্রাসের। জিহাদিষ্টরা নাকি সন্ত্রাসী। অপপ্রচারের মাত্রাটা এতটাই ব্যাপক যে, মুসলমান ঘরের অধিকাংশ ছেলে-মেয়েদেরও জিহাদ নিয়ে এক বিরাট অজ্ঞতা রয়েছে। বিষয়টা খুবই দু:খজনক এবং লজ্জাস্করও বটে।
আল কুরআনে জিহাদের নির্দেশ এসেছে মোট ৪১ বার। মুসলিম জীবনের লক্ষ্যই হলো বিশ্বের সকল মতবাদের উপরে ইসলামী মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আর ইসলাম যে বিশ্বের সকল মতবাদের উপরে প্রতিষ্ঠিত হবে সে ঘোষণাও আল্লাহ পাক কুরআনুল কারিমে দিয়ে রেখেছেন।
এখন আসুন, কিছু চমকপ্রদ তথ্য দেই জিহাদ সন্মন্ধ্যে, যা আপনাকে ক্ষণিকের জন্য হলেও চমকে দেবে!
আগেই বলেছি, কুরআনে জিহাদের নির্দেশ এসেছে ৪১ বার। কিন্তু জিহাদের নামে অস্ত্রনির্ভর সন্ত্রাসের যে অভিযোগ মুসলমানদের উপরে আরোপিত হয়ে আসছে, সেই অস্ত্রের কোনো উল্লেখই কুরআনুল কারিমে করা হয় নি। তলোয়ার-এর বহুল প্রচারিত আরবি হলো সাইফ। এই সাইফ শব্দটি কুরআনে একটাবারের জন্যও আসে নি। তলোয়ারের বেশ কয়েকটি প্রতিশব্দ রয়েছে আরবিতে, যেমন; মুহান্নদ, হুসাম, সলিল, এগুলোও কুরআনুল কারিমে একটাবারের জন্যও উল্লেখ করা হয় নি।
এর বিপরিতে পুরো কুরআনে অন্তত সাতশত (৭০০) বার ইলাম এর কথা, তথা জ্ঞান-এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই জ্ঞান-ই হলো সেই অস্ত্র, যার মাধ্যমে মুসলমানরা জিহাদে আদিষ্ট হয়েছে। আর জ্ঞান কীভাবে, কখন, কোথায় ও কতটুকু প্রয়োগ করতে হবে, সেই জ্ঞান হলো; প্রজ্ঞা। এই প্রজ্ঞা বা হিকমাহ শব্দটি কুরআনে এসেছে ১৮ বার।
ইসলামকে জীবনের সার্বিক দিকে, সকল দিকে প্রতিষ্ঠা করাটাই হলো ইসলাম প্রতিষ্ঠা। পুরো জীবনকে আমরা যদি একটা পূর্ণাঙ্গ চক্রের সাথে তুলনা করি, তা হলে তা হয় ৩৬০ ডিগ্রি। নীচের ছবিটি দয়া করে দেখুন;
জীবনের সকল দিকে ইসলাম কায়েম মানেই হলো জীবনের ৩৬০ ডিগ্রিতেই ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা। জিহাদ মানে হলো; চেষ্টা সাধনা করা। জিহাদ শব্দটির বুৎপত্তিগত দিক বিবেচনায় নিলে আমরা দেখতে পাই এর মুল ধাতু হলো ‘জুহদ’। আর জুহদ মানে হলো; কোনো লক্ষ্য অর্জনে বার বার চেষ্টা সাধনা করা। কঠোর পরিশ্রম করা।
কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে, চেষ্টা সাধনার মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি দিকে, সমাজের প্রতিটি স্তরেই ইসলামি মতবাদ, চিন্তা ও জীবনধারাকে প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য মতবাদ, চিন্তা ও জীবনধারার উপরে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য একজন মুসলমান আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নে তার সকল ধন-সম্পদ, সময় ও মেধা দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে যাবেন। কঠোর পরিশ্রম করা ছাড়া এ লক্ষ্য অর্জন অসম্ভব। এই জন্যই বোধ করি আল্লাহ পাক তার কুরআনুল কারিমে ‘আমল’ বা ‘পরিশ্রম’ ‘কাজ’ শব্দটিও উল্লেখ করেছেন ৩৬০ বার! কি বিষ্মিত হচ্ছেন বুঝি? তা হবারই কথা। মহামহিম আল্লাহ পাকের কুদরত তো আমাদেরকে বিষ্মিত করবেই? সে সাথে তাঁর প্রতি আমাদের বিশ্বাস আর আস্থাও ইনশাআল্লাহ বাড়াবে বৈকি!
সুরা বাকারার ১৫১ নম্বর আয়াতটি গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখুন, সেখানে বলা হচ্ছে; যেমন, আমি পাঠিয়েছি তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে একজন রসূল, যিনি তোমাদের নিকট আমার বাণীসমুহ পাঠ করবেন এবং তোমাদের পবিত্র করবেন; আর তোমাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও তাঁর তত্ত্বজ্ঞান এবং শিক্ষা দেবেন এমন বিষয় যা কখনো তোমরা জানতে না।(২:১৫১)
আলোচ্য আয়াতটিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি আল্লাহ পাক রাসুলুল্লাহ সা: এর চারটি দায়িত্বের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করছেন। সেগুলো হলো যথাক্রমে;
১- যিনি তোমাদের নিকট আমার বাণীসমুহ পাঠ করবেন ( Knowledge of Ultimate Truth)
২- তোমাদের পবিত্র করবেন (characte rdevelopment / Cultural Revolution.)
৩-তোমাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও তাঁর তত্ত্বজ্ঞান (Academic Knowledge and Prudence)
৪-শিক্ষা দেবেন এমন বিষয় যা কখনো তোমরা জানতে না।
(Dissemination of Information)
এই চারটি দায়ীত্ব পালনের মাধ্যমেই তিনি তার উপরে যে মুল দায়িত্বটি ছিল; সকল মতবাদের উপরে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করা, সেটি সম্পাদন করেছেন।
তাঁর উম্মত হিসেবে, তাঁর অবর্তমানে এই ইসলামকে বিজয়ী করার দায়িত্ব আমাদের ঘাড়ে। সে কাজটিও করতে হবে ঐ চারটি দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই।
এখন কেউ একজন যদি প্রথম দায়িত্বটি পালনে অপারগতা প্রকাশ করে বলে বসেন, আল্লাহর আয়াত কীভাবে বিশ্ববাসীকে শুনিয়ে দিতে হবে সে ব্যপারটা আমার বোধগম্য নয়। আমি এ দায়িত্ব পালনে অপরাগ। তবে তার জন্য আল্লাহর জবাব হলো; আমি কুরআন বোঝা সহজ করে দিয়েছি কেউ কী আছে এ থেকে শিক্ষা নেবে? (সুরা আল ক্বামার-১৭)। অতএব দায়িত্ব পালনে অক্ষমতা প্রকাশের কোনো সুযোগ রাখা হয় নি।
একইভাবে কেউ যদি দ্বিতীয় দায়িত্বের ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করে বলে; কী করে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে পরিশুদ্ধ (চরিত্র তৈরী ও সংস্কৃতির পরিশুদ্ধী) করতে হবে তা আমার জানা নেই, আমি অপারগ। তবে তার বেলাতেও আল্লাহ পাকের সেই একই জবাব; আমি কুরআন বোঝা সহজ করে দিয়েছি কেউ কী আছে এ থেকে শিক্ষা নেবে? (সুরা আল ক্বামার-২২)। কিন্তু এবারে একই আয়াত ব্যবহার করেন নি তিনি, প্রথমটি এসেছে সুরা কামারের ১৭ নম্বর আয়াতে, আর দ্বিতীয়টি ২২ নম্বর আয়াতে উল্লেখিত হয়েছে।
এইভাবে এক এক করে আমরা যদি পরবর্তি দু‘টি দায়িত্বের বেলাতে একইভাবে অক্ষমতা প্রকাশ করি, তার প্রতিটি ক্ষেত্রেই আল্লাহ পাকের একই উত্তর। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই আল্লাহ পাক আলাদা আলাদা আয়াতে সেই জবাবটি এনেছেন, সুরা কামারের ৩২ ও ৪০ আয়াত দু‘টি দ্রষ্টব্য।
চারটি দায়িত্বের কথা বলার পাশাপাশি তার যথাযথ জ্ঞান যে আল কুরআন থেকেই নিতে হবে কেননা কুরআন প্রতিটি বিষয়কে স্পষ্ট করে দিয়েছে (সুরা হিজর ১-২)। আর সেই সুস্পষ্ট বিষয় বোঝার জন্য কুরআনটাও যে সহজ করে দেয়া হয়েছে, সে কথাও বলা হয়েছে ৪ বার!
জীবনের প্রতিটি অংগণে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, তথা জীবনের ৩৬০ ডিগ্রিতেই উক্ত চারটি দায়িত্ব পালন করতে হবে। অংকের হিসেবে চারটি দায়িত্বের মধ্যে যদি জীবনের এই ৩৬০ ডিগ্রিকে সমভাবে ভাগ করে দেই, তা হলে কি দাঁড়ায়? ৩৬০/৪ = ৯০।
দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাধা বিপত্তি, ব্যর্থতা আসতে পারে। ভয়-ক্ষয়, দু:খ-কষ্ট-ক্লেশ আসতে পারে। আসেও। সে ক্ষেত্রে একজন প্রকৃত মুজাহিদের কাজ কী? আল্লাহ তাকে ধৈর্য ধরতে বলেছেন। সবর করতে বলেছেন। আর তিনি এই সবর শব্দটিও কুরআনে মোট ৯০ বারই উল্লেখ করেছেন! কী অবাক করা কান্ড! আল্লাহু আকবর!
(সংক্ষেপিত)
বিষয়: বিবিধ
২৫১৫ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমাদের ক্বুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরতে হবে শক্ত করে , তাহলে আমরা পথভ্রষ্ট হব না । এটা ছিল নবীজীর উপদেশ বিদায় হজের সময়।
I'm in a hurry.
পরে পড়ে অবশ্যই কমেন্ট করবো ইনশাআল্লাহ!
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
মনগড়া ব্যাখা, কোরান শরীফের সুবিধা
জনক অংশ নিয়ে ব্যাখ্যা। তাবলীগরা এ ধরনের
কথা বলে। আপনার লেখা অনুসারে কোন নবী বা রসূল এ পথে ছিলেন না।
আমার প্রশ্ন হলো, আমিও তো কুরআন বোঝা ও জানার কথাই বলছি। সেটা অপ্রাসাঙ্গিক হলো কী করে? কোনটা অপ্রাসঙ্গিক? আমি 'জিহাদ' প্রসঙ্গে বলেছি, বলেছি সবরের কথা, বলেছি জিহাদের অস্ত্র হিসেবে ইলমের কথা, এ সবই তো কুরআন প্রসঙ্গেই। তা হলে অপ্রাসঙ্গিক কোনটা, জানালে উপকৃত হতাম। আরও বলেছেন ৩৬০ ডিগ্রি ছবিটার কথা, বলেছেন, এটা মন গড়া। মনগড়াই তো। আমি জীবনের সার্বিক দিককে বোঝাতে যেয়ে ৩৬০ ডিগ্রির চবিটা এনেছি। তো এটা অমসুলক হলো কি করে? জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় সর্বদিকব্যাপী বোঝাতে এই ছবিটাকে ব্যবহার করা হয়, আমিও করেছি। তো এতে অন্যায় হলোটা কোথায়?
আপনার দ্বিতীয় জবাবে আপনি বলেছেন এটা মনগড়া ব্যাখ্যা। কোনটা মনগড়া ব্যাখ্যা? আমি তো কোনো ব্যাখ্যাই করিনি। আমি কেবল কুরআরন কিছু শব্দের সংখ্যা উল্লেখ করেছি। বলেছি জিহাদ শব্দটি ৪১ বার এসেছে। আপনি যদি ৪২তম জিহাদ শব্দ পেয়ে থাকেন, তা হলে জানাবেন। বলেছি সবরের কথা, সেটা ৯০ বার এসেছে, আপনি যদি সবর শব্দটির ৯১তম উপস্থিতি দেতে পান, তো দয়া করে দেখাবেন। আপনি যদি আমল শব্দটির ৩৬১ তম উপস্থিতি দেখাতে পারেন, তবে দয়া করে দেখাবেন। বলেছেন 'কুরআন শরীফের সুবিধাজনক অংশ নিয়ে ব্যাখ্যা' কী দারুণ কথা বললেন আপনি! কুরআন শরীফের 'অসুবিধাজনক' অংশ তা হলে কোনটা? দয়া করে জানাবেন। আরও বলেছেন 'তবলীগরা এ ধরনের কথা বলে' আমার জানা মতে তাবলীগরা এরকম কোনো কথা বলেণন, আপনার নজরে যদি থাকে সেরকম কোনো উদাহারণ, তা হলে দয়া করে আমাকে এই ব্লগেই জানাবেন, তাতে বড় উপকার হবে, আমার একটা বড়রকমের ভূল ভাংবে! তাবলীগি ভাইদের ছয় উসুল এর কোথাও তারা এ ধরনের কোনো কথা বলেনি। আপনি কোথায় পেলেন? 'আপনার লেখা অনুসারে কোনা নবী রাসুল এ পথে ছিলেন না' বলে আপনি কোন পথের কথা বলেছেন, তা আমার বোধগম্য নয়। বুঝিয়ে বললে ভালো হতো। বলেছেন 'আপনার সাথে একমত না'। আপনাকে একমত হতে হবে, তেমন তো কোনো কথা নেই। অযথাই আপনি পেরেশান হচ্ছেন ভাই। দয়া করে যে পড়েছেন, সে জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
এবাে কুরআনে
One things bother me now a days when I see our Muslim brothers totally agree with the post like this, and then they again support Islam haters BAL policy.
Isn't it a double standard!!!
You are doing a good job.May Allah azza wa jal accept our jihad in every way!
Brother, Most Muslims of this age still holds passion, love, belongingness to Islam and flare of Iman deep in their heart, thats why they cannot refrain themselves from agreeing with such post. Then what happens? They goes back to the same folks whome no right minded Muslim can associate with! This is because;
1. We muslims, have not manage to alter the thought process of majority people,
2. We have not managed to creat an islamic thought process parallel to the contemporay way of thinking,
3. We muslims failed to creat a social psychology (because we fialed to create and maintain islamic culture)
Theses are the most three basic requierments to initate a change the society. Unfortunately we islamist, even the Islamic Movements, largley failed in these fields.
The result is quiet simple; muslims are not coming on board , even though, they do not have much to differ with us in principle!
Sorry brother,if I have taken a bit of your time! I could not resist myself from sharing my views on the question you raised.
চমৎকার বিশ্লেষণ করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার এই দোওয়া আল্লাহ পাক কবুল করে নিন। আমাকেও এই দোওয়ার মধ্যে শামিল রাখবেন ভাই, মিনতি রইলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন