জ্ঞান-এর তিন পর্যায়, জ্ঞানীর তিন স্তর। আপনার স্তরটি জেনে নিন।
লিখেছেন লিখেছেন হককথা ০৯ মে, ২০১৪, ১১:০৯:৫৫ রাত
জ্ঞানের তিনটি পর্যায় ও জ্ঞানীর তিনটি স্তর রয়েছে। একজন মানুষ যখন জ্ঞানের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে অবস্থান করে অর্থাৎ স্বল্প জ্ঞানের অধিকারী হয়, তখন সে অহংকারী হয়ে উঠে। সম্ভবত এর কারণ এটাই যে, সে সামান্য কিছু জেনেই মনে করে বসে, সে অনেক কিছুই জেনে গেছে। তার জানার বাইরে যে এখনও অনেক কিছুই বাঁকি রয়ে গেছে, সে বিষয়টিই তার কাছে অজ্ঞাত। মানে দাঁড়ালো; সে জানে না যে, সে জানে না। এ ধরনের লোক স্বভাবতই অহংকারী ও উদ্ধত হয়ে থাকে। এরাই বিদ্যাসাগর (আবুল হাকাম) হলেও এই অহংকারের কারণে তারা প্রকৃতপক্ষে নিকৃষ্টতম মুর্খে (আবু জাহেল)-এ পরিণত হয়।
যখন কোন ব্যক্তি জ্ঞানের গভীরে প্রবেশ করে, তখন তার সামনে এ বিষয়ট পরিষ্কার হয়ে যায় যে, তার জানার বাইরে আরও জ্ঞান আছে। তার নিজের জানার পরিধি ভীষণভাবে সীমিত। এটা হলো জ্ঞানের দ্বিতীয় পর্যায়। এরকম জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি বিনয়ী হয়ে উঠেন। তাদের আচার-আচরণ, কথা-বার্তা, লেন-দেন, চলা-ফেরায় সব সময় বিনম্রতা প্রকাশ পায়। একজন মানুষের পক্ষে আল্লাহভীরু হিসেবে গড়ে উঠতে তার জ্ঞানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা অর্জন পূর্বশর্ত। কেননা, জ্ঞানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা অর্জন না হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তিচরিত্র থেকে অহংকার, রিয়া, আত্বপুজা এসব দূরিভুত হয় না। আর এসব ত্রুটি বিদ্যমান থাকাবস্থায় কারো পক্ষেই মুত্তাকি হিসেবে গড়ে উঠা সম্ভব নয়। তাই জ্ঞানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা অর্জন একজন মুসলমানের জন্য অনিবার্যভাবে জরুরি।
আর ব্যক্তিচরিত্রে এই স্বচ্ছতা অর্জিত হয়েছে কি না, হলে কতটুকুই বা হয়েছে, তা বোঝা যায় তার চরিত্রে বিনম্রতার উপস্থিতি আছে কি না, সেটা দেখে। আল্লাহ পাক এরকম ব্যক্তির অবস্থান ও সম্মান বাড়িয়ে দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন। (মুজাদিলাহ: ১১)
আর তৃতীয় ও সর্বোচ্চ পর্যায়টি হলো; একজন ব্যক্তি জ্ঞানের এমন একটা পর্যায়ে এসে উপনীত হন যে, সাধারণ জনগণের দৃষ্টিতে তিনি অগাধ জ্ঞান অর্জন করার পরেও তার কাছে নিজের সীমাহীন অজ্ঞতা ধরা দেয়। অর্জিত জ্ঞানকে তিনি সামান্যই কেবল মনে করেন না, বরং তিনি এটাও বুঝে নেন যে, তার নিজের কোন জ্ঞানই নেই। বস্তুত কোন মানুষেরই নিজের কোনো জ্ঞান নেই। জ্ঞানের উৎস মানুষ নয়, হতে পারেও না।
এই বোধটাই তাকে এক উন্নত মহান সত্তা, যিনি সকল জ্ঞানের একমাত্র উৎস; তার উপস্থিতি সন্মন্ধ্যে অকাট্য বিশ্বাসে বদ্ধ করে। এর ফলে তিনি ভীত হয়ে পড়েন। আর আল্লাহপাকও সে কথা কুরআনুল কারিমে সুষ্পষ্ট করে বলেছেন যে; আর আল্লাহর বান্দাহদের মধ্যে একমাত্র জ্ঞানীরাই আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী ভয় করে (সুরা ফাতির : ২৮)। আর যারা আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী ভয় করে, তারাই তাঁর কাছে সর্বাপেক্ষা বেশী সম্মানিত (সুরা হুজুরাত: ১৩)।
তিন পর্যায়ের জ্ঞান, আর তার ধারক জ্ঞানীদেরও তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান। এবারে আপনি নীরবে, নিভৃতে একাকী বসুন। নিজের মনের ভেতরে, গভীরে ডুব দিন। নিজেকে বিচার করুন, নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনার জ্ঞান কোন পর্যায়ে পড়ে? আর জ্ঞানের এসব পর্যায়গুলো অনুযায়ী আপনার নিজের অবস্থানটাই বা কোথায়?
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: জ্ঞান বলতে কেবল পুঁথিগত বিদ্যা ও প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেটকেই বোঝানো হয় নি।)
বিষয়: বিবিধ
৩৫৯০ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ সংকলনটি উপহার দেবার জন্য।
ব্যাপারটা হচ্ছে মন্তব্য করার সময় হটাত মনে পড়ল - অনেক আগে কোন একটা বইতে পড়েছিলাম "ইমাম গাজ্জালি(রহঃ)মৃত্যুর সময় শয়তান এসে ঈমান ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিল। অনেক চেষ্টার পরও যখন বেরথ হল তখন শেষ বারের মতো বলল তুই আসলেই অনেক বড় জ্ঞানী অন্য কেউ হলে এতক্ষনে ঈমান ছিনিয়ে নিতাম। তোর থেকে আমাকে বেরথ হয়ে ফিরতে হচ্ছে। তো ইমাম গাজ্জালি(রহঃ)উত্তর দিলেন আমি কতটুকু জ্ঞানী সেটা আমার আল্লাহর কাছ থেকে প্রসংসা পেলেই চলবে তোর মতো শয়তানের কাছ থেকে প্রশংসার প্রয়োজন আমার নেই।" এখানে শিক্ষাটা হচ্ছে জীবনের অন্তিম মুহূর্তেও কোন ভাবেও রিপু আনা যাবেনা মনে। উনি যদি এক মুহূর্ত ভাবতেন যাক আমি আমার জ্ঞান দিয়ে শয়তানকে পরাজিত করেছি তাহলে রিপুর কারনে উনার আমল নষ্ট হত। এবং শয়তান চেয়েছিল প্রশংসার মাধ্যমে রিপু উস্কে দিতে।
আমার হতাথ মনে পড়ায় ঐ মন্তব্য টা করি।
তবে আপনার কথা টা আমি মানি। তখন ব্যাপারটা মাথায় আসেনি। আপনার প্রতি মন্তব্বে আজ কিছু শিখলাম।
মন্তব্য করতে লগইন করুন