আমার ইংলিশ সাংবাদিক নওমুসলিম বন্ধু, ওর জন্য দোওয়া করবেন।
লিখেছেন লিখেছেন হককথা ২০ মার্চ, ২০১৪, ০৩:৩০:৩৫ দুপুর
আমার এক ইংলিশ বন্ধু; Mike Hallowel, পেশায় সাংবাদিক, কলামিষ্ট, গ্রন্থকার ও লেখক এই তো কিছুদিন আগে মুসলমান হয়েছেন।মুসলমান হতে পেরে তিনি খুব খুশী, তবে বুড়ো বয়সে এসে মুসলমান হতে হলো দেখে তার আফসোসের সীমা পরিসীমা নেই। আফসোস; 'আগে কেন দাওয়াত পেলাম না' বলে!
মাইকের বড় ছেলেটা ব্রিটিশ আর্মির একজন সৈন্য হিসেবে প্রথমে ইরাকে ক বছর থেকে আসে, এর পরে আবার তার ডাক পড়ে। এবারে আফগানিস্থানে। এই ছেলেটাই ইরাক আর আফগানিস্থানে থাকাবস্থায় মুসলমানদের প্রতক্ষ্য সংস্পর্শে আসে। সাংবাদিক বাবার সন্তান; বাবার মতই অনুসন্ধিৎসু মন তার। চোখের সামনে হত্যা, জুলুম, নির্যাতন, বর্বরতার সাক্ষী হয়ে উঠে সে। তার নিজের মনের ভেতরেই বিদ্রোহ দানা বেঁধে ওঠে। ভিন্নভাবে ভাবতে শুরু করে তার সরকার, তার দেশের নীতি অবস্থান।
ক্রমে সে ভাবনায় জড়িয়ে নেয় নিজের, নিজেদের আদর্শিক দিকটিও। যুবক ছেলেটা গভীরভাবে ভেবে দেখে। খুব কাছ থেকে দেখে চলে মুসলমানদের জীবনচিত্র! নীরবে তাকে আলোড়িত করে যেতে থাকে। মাথার উপরে এ্যপাচি হেলিকপ্টার আর ট্রেঞ্চ থেকে ক্রমাগত চলে আসা মেশিনগানের আওয়াজ ছাপিয়ে তার মনে বাজতে থাকে নীরিহ মজলুম আফগান কৃষকের কন্ঠে ধ্বনিত হওয়া আজানের সূর। ঝড় তোলে। ঝড় তোলে মনের গোপন অলিন্দে। যেখানে না বুশ আর না ব্লেয়ার; কারো কোন প্রভাব খাটে।
যুদ্ধ থেকে ফিরে এসেই ছেলেটা তার বাবা; আমার বন্ধু, মাইকের সাথে বসে। দিনের পর দিন যুদ্ধের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে ছেলেটা আসলে বাবার কাছে ইরাকি ও আফগানি জনগণের উপরে পরিচালিত জুলুমের বর্ণনাই দিয়ে চলে। বলে চলে তার নিজের উপলব্ধীর কথা।
মাইক ছেলের কথার ফাঁকে ফাঁকে ভিন্ন কিছু খুঁজে পান। ছেলের চোখে ভিন্নতা দেখতে পান। যেন ভিন্ন কোন আলো! বাবার চোখ বলে কথা কি না!
দিনের পর দিন, রাতের পর রাত পিতা পুত্রের কথোপকথন চলে। এখানে রাজনীতির কোন কুটিল প্যাঁচ ছিল নো, ছিল না কুটনীতির কোন লেশ মাত্র। এক আত্বজের কাছে বসে আত্বারই প্রতিধ্বনি শুনেছেন তিনি।
সজল চোখে একদিন ছেলেটা যখন মাইকের কাছে দাড়ালো; মাইক বুঝতে পারলেন, এক সুনামীর আগমণ!
হ্যাঁ, ঠিকই বুঝেছেন তিনি। এক প্রলয়কারী সুনামী! ছেলে সজল চোখে জানিয়ে দিল যে, সে মুসলমান হতে চায়। বাবা-মা ছোট ভাইটি তার খুব আদরের, সে তাদের ছাড়তে চায় না, তবে সে আল্লাহকে, সত্যকেও না মেনে থাকতে পারবে না। অতএব, বাবা যেন ভূল না বোঝেন।
বাবা ভূল বোঝেন নি। বাবা ঠিকই পড়েছিলেন ছেলের মনে কথাটা। বুঝেছিলেন ছেলে তাকে বলার আগেই। ছেলেটা যখন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে এসেছে, তখনই বাবা বুঝেছেন, কোথাও কোন একটা পরিবর্তন ঘটেছে। বড় ধরনের একটা পরিবর্তন!
বাবা আপত্তি করেন নি। মা'ও নন। তোমার মত তুমি থাকো। একই বাড়ীতে, একই ছাদের নীচে অবস্থান। বাবা মা চেয়ে চেয়ে দেখেন বরফ ঝড় বয়ে যাওয়া কন কনে ভোরে ছেলেটা উঠে নামাজে বসে আছে। চোখ বুঁজে গভীর প্রত্যয়ে আল্লাহর কাছে ধর্ণা! হৃদয়ের আকুতি তুলে ধরার কি সম্মোহনী প্রচেষ্টা! পরিবর্তিত এক স্বচ্ছ জীবনের কী নিদারুন প্রস্রবণ!! একই হেঁসেলে যুবক ছেলেটার হালাল রান্না'র কি ব্যাগ্র আয়োজন! ঘড়ির কাঁটা মেপে চলা শৃংখলিত জীবনেও স্বাধীনতা, নিরাপত্তা আর শান্তির কি অপরুপ সংমিশ্রণ!
নিজ ঘরের ভেতর থেকে, নিজের আত্বজের আচারে আচরণে, মন মননে, বোধে বিশ্বাসে মাইক যে নতুন জীবনের অপরুপ প্রতিচ্ছবি দেখেছেন, সেটাই তাকে টেনেছে। টেনেছে মাইকের স্ত্রী মার্গারেটকেও। এর পরে এক রমজানে বুড়ো বয়সে এসেই ঘোষণা দিয়েছেন; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। মাইক হলেন মিকাইল, স্ত্রী মার্গারেট হলেন মরিয়ম। জীবন বদলে গেল। বদলে গেল চীরদিনের জন্যই।
মিকাইল একদিন ইফতারির পরে স্ত্রী মরিয়মকে সাথে করে এসেছিলেন আমার বাড়ী। ঘন্টা দুয়েক ছিলেন। তিনজনে বসে এক চমৎকার সন্ধা কেটেছিল সেদিন। আমিও একদিন গিয়েছিলাম উত্তর পূর্ব ই্ংল্যন্ডের ছোট্ট শহর Jarrow তে মিকাইলের বাড়ী।
উপরের ছবিটি সেদিন মিকাইলের স্ত্রী মরিয়মই তুলেছিলেন। ওদের জন্য, আর সেই সাথে এই অধমের জন্যও সুধী পাঠক দোওয়া করবেন, মিনতি রইল।
বিষয়: বিবিধ
১৬৫৪ বার পঠিত, ৩৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি জেনে শুনে আমার কোনো অমুসলিম বন্ধুকে কীভাবে আগুনে পোড়ার উপকরণ হতে দিব?
ধন্যবাদ আপনাকে পড়া ও সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
সুন্দর পোষ্টটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। একসময় যে হালাকু খান ধ্বংস করেছিলেন বাগদাদ। তার বংশেই আবার জন্ম হয়েছিল আওরঙ্গজেব এর মত মানুষের।
I'm inviting one of my colleagues to Islam. But Allah(swt) is the one and only, who give guidance.
Your post will inspire us.
মন্তব্য করতে লগইন করুন