দরবেশ ও দা'য়ী কবি মতিউর রহমান মল্লিকের জন্ম দিনে আসুন তার জন্য দোওয়া করি।

লিখেছেন লিখেছেন হককথা ০১ মার্চ, ২০১৪, ০৬:২১:৫১ সন্ধ্যা



আজ আমাদের প্রিয় কবি, প্রিয় শিল্পী, প্রিয় সংগঠক, প্রিয় নেতা, সবোর্পরি একজন প্রিয় মানুষ কবি মতিউর রহমান মল্লিক ভাই এর জন্ম দিন। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে ইসলামি ভাবধারার এই কবি এক অসামন্যা প্রতিভা, দূর্লভ সাহিত্যগুণ, বিষ্ময়কর মনন ও অন্তর্ভেদী দৃষ্টি নিয়ে জন্মেছিলেন।

দক্ষিণাঞ্চলের বাগেরহাটের বারুইপাড়া গ্রামে বাবা মুন্সি কায়েম উদ্দীন আর মা আসিয়া খাতুনের ঘরে জন্ম নেয়া এই ক্ষণজন্মা মানুষটি খুব বেশী দিন আমাদের মাঝে ছিলেন না। স্থানীয় মাদ্রাসায় পড়া শোনা শেষে বাগেরহাট পিসি কলেজ হয়ে ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ ডিগ্রী নেয়া মল্লিক ভাই যেন আর দশটি সাধারণ যুবকের মতই ছিলেন, অসাধারণত্ব কিছু নেই।

কিন্তু আজ আমরা বুঝি, বুঝতে বাধ্য হই, এই সাধারণত্বের মাঝেও তিনি অসাধারণ একজন মানুষ ছিলেন। অসাধারণ হয়ে উঠেছিলেন তিনি তার চিন্তা আর চেতনায়, দৃষ্টি আর দর্শনে, মননে ও মেধায়, বোধে ও বিশ্বাসের মাধ্যমে। ব্যতিক্রমি একজন হয়ে উঠেছিলেন জীবনাচার ও কর্মের মাধ্যমে।

১৯৫৬ থেকে ২০১০, মাত্র ৫৪টি বছর বা তার কাছাকাছি কিছু কাল। কিন্তু এই স্বল্প সময়েই তিনি বাংগালি মুসলমানদের জাতিয় চেতনায় এক নাড়া দিয়েছেন, যেন একাই ঘটিয়েছেন এক ভুমিকম্প, একাই বয়ে এনেছেন এক সুনামী! সংস্কৃতিক আগ্রাসনে দিশেহারা, নিষ্কৃয় এ জাতির সম্মুখে দিশা দিয়েছেন। আত্বপরিচয়ের সোপান তৈরীতে অসামান্য অবদান রেখেছেন। বাঙ্গালি জাতিকে তার দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হতে লিখেছেন;

রাঙ্গামাটির স্বপন সজীব সুখদ পাহাড়,

মন মাতানো নাফ নদীটির এপার ওপার,

তেঁতুলিয়ার একটানা পথ নানান খামার,

একটি হৃদয় মাঠের মত,

পল্লী গাঁয়ের বাটের মত,


জাতিয় দুর্যোগে এগিয়ে এসে সমাজ ও দেশের হাল ধরতে যুব ও তরুণ সমাজকে লক্ষ্য করে লিখেছেন;

“এই দুর্যোগে, এই দূর্ভোগে আজ

জাগতেই হবে, জাগতেই হবে তোমাকে”


একটি আদর্শবাদী কাফেলার সদস্যদের জন্য লিখেছেন-

“সংগঠনকে ভালবাসি আমি, সংগঠনকে ভালবাসি,

এ জীবনকে গড়বো বলে বারে বারে তার কাছে আসি।”


লিখেছেন একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য পানে অবিচল অটল থেকে জীবন পার করতে চাওয়া অকুতোভয় যুবকদের জন্য এক আবেগী ভাষার গাঁথুনিতে-

“আম্মা বলেন ঘর ছেড়ে তুই যাসনে ছেলে আর

আমি বলি খোদার পথেই হোক জীবন পার

নিজের জন্যে করলি না তুই কিছু-

আল্লাহ জানেন ঘুরিস কাদের পিছু

কি যে করিস, কোথায় থাকিস বুঝিনে কারবার।

আমি বলি খোদার পথেই হোক জীবন পার”


জন্মগত ভাবেই অবিশ্বাস্য সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে জন্ম নেয়া এ মানুষটি সংগঠনকে একটি ঘরের সাথে তুলনা করে সে ঘরের বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে লিখলেন;

“যা কিছু করতে চাও করতে পারো

অনুরোধ শুধু ওগো পর হয়ো না।

এ বুক ভাঙ্গতে চাও, ভাঙতে পারো

অনুরোধ শুধু এ ঘর ভেঙ্গো না।”


দরবেশ কবি, বিশ্বাস আর আদর্শের কবি ফররুখের পরে আধুনিক বাংলা সাহিত্যে কবিতা আর গানে দর্শন, আদর্শ আর এক আল্লাহতে অকৃত্রিম বিশ্বাসের কথা বৈরি পরিবেশে নি:সংকোচে এবং সাহসের সাথে উচ্চারণ করেছেন এ মানুষটি;

“তোমার সৃষ্টি যদি হয় এত সুন্দর-

না জানি তা হলে তুমি কত সুন্দর , কত সুন্দর।

সেই কথা ভেবে ভেবে কেটে যায় লগ্ন,

ভরে যায় তৃষিত এ অন্তর।

না জানি তা হলে তুমি কত সুন্দর , কত সুন্দর।”


নিজ সমাজ নিজের মাতৃভুমিতে আদর্শের যে দ্বন্দ, যে সংঘাত চলমান তার দিকে ইংগিত করে এ কবি অত্যন্ত যুক্তিগ্রাহ্য ভাষায় বিরুদ্ধবাদীদের প্রতি এক অতি আবেগি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন, লিখেছেন;

“কোন সাহসে চাও নেভাতে অগ্নিগীরি বলো?

চোখ রাঙ্গিয়ে যায় কি রোখা জোয়ার টল মল?

বৈশাখী ঝড় পাগলপারা, বাধন হারা,

ভ্রুক্ষেপহীন আগলভাঙ্গা রুদ্র রাঙ্গা,

চলার ধাঁধায় বাধায় বাধায় তারপরে সে ঝঞ্ঝ্ াহলো।

মৃত্যুকে যে কঠিন হৃদয় করলো বিজয়

অমর হবার হাতছানি পায়, হাতছানি দেয়-

তারে আবার ভয় দেখাবার সুযোগ কোথায়? তুমিই বলো”



এ অমোঘ প্রশ্নটির কী কোন জবাব আছে অবিশ্বাসীদের কাছে?

আর সবার শেষে সেই বিখ্যাত গান, গান তো নয়, যেন এক মর্মভেদী স্মরণিকা, স্মরণ করিয়ে দেয় তার শ্রোতাকে এক অনন্ত জীবনের কথা, অনিবার্য গন্তব্যের কথা-

“পৃথিবী আমার আসল ঠিকানা নয়,

মরণ একদিন মুছে দেবে সকল রঙ্গিন পরিচয়”


তার হাতে গড়া সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠী আর সে সুত্র ধরে একই ধারাবাহিকতায় গড়ে ওঠা শত শত সংস্কৃতিক গোষ্ঠী, সংস্কৃতি কর্মী ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের এ পরিধিতেই কেবল নয়, বরং সে সীমানা ছাড়িয়েও গান কবিতা আর সংস্কৃতির মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে এ অমোঘ স্মরণীকাটি, ছড়িয়ে দিচ্ছে তাওহিদের আওয়াজ, ভাতৃত্ব আর বৃহত্তর মানবতার সুমহান আহ্বান।

এমন একজন সংগঠক, এমন একজন শিল্পী, একজন কবিকে, এমন মানুষকে কী ভোলায় যায়? না তাকে ভুলে থাকা যায়?

মরহুম এ কবির জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করি, আল্লাহ তার সকল ভুল ত্রুটিকে ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাত নসীব করুন।

বিষয়: বিবিধ

১৭০৮ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

185059
০১ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৩
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম, জাজাকাল্লাহুল খাইরান, অনেক সুন্দর পোস্ট-আমার আজও মনে পড়ে সেই ২০০৫সালের কথা কুমিল্লা জেলার লাঙ্গলকোট থানার মাহিনী হাইস্কুল মাঠে তার সাথে এ্কই মঞ্চে আমার মত নগন্য বালক অভিনয় করেছিল।
০১ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৭
136988
হককথা লিখেছেন : আপনি আসলেই সৌভাগ্যবান। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষই মল্লিক ভাই এর কাছে ঋণী। আল্লাহ পাক তাকে জান্নাত নসীব করুন।
185061
০১ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৫
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : মরহুম এ কবির জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করি, আল্লাহ তার সকল ভুল ত্রুটিকে ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাত নসীব করুন।আমীন
০১ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৮
136990
হককথা লিখেছেন : আমিন ইয়া রব।
185110
০১ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:৩৮
আবু আশফাক লিখেছেন : -
কেউ না করুক
আমি করবো কাজ
আমি হতাশ হবো না
ভেঙ্গে পড়বো না.............
আজও মনে পড়ে।
আল্লাহ তার সকল ভুল ত্রুটিকে ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন। আমীন
০১ মার্চ ২০১৪ রাত ০৯:৫৮
137101
হককথা লিখেছেন : আমিন ইয়া রাব।
185174
০১ মার্চ ২০১৪ রাত ১০:৪৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ পোষ্টটির জন্য।
মতিউর রহমান মল্লিক ভাইয়ের অন্যতম একটি অবদান অনেকদিন পর বাংলাসাহিত্যে হামদ ও নাত রচনা। নজরুল,ফররুখ ও গোলাম মুস্তাফা এর পর বাংলায় হামদ ও নাত রচনা কমই হয়েছে। শিল্পি খালিদ হুসাইন তার গাননিয়ে সিডি বের করছেন।
০২ মার্চ ২০১৪ রাত ১২:২৬
137169
হককথা লিখেছেন : শিল্পি খালিদ হুসাইন তার গাননিয়ে সিডি বের করছেন।

আনন্দেন এ খবরটি জানা ছিল না, ধন্যবাদ আপনাকে।
185209
০১ মার্চ ২০১৪ রাত ১১:২৩
সজল আহমেদ লিখেছেন : আমীন।
০২ মার্চ ২০১৪ রাত ১২:২৬
137170
হককথা লিখেছেন : ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
185270
০২ মার্চ ২০১৪ রাত ১২:৪৬
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুন।
০২ মার্চ ২০১৪ রাত ১২:৫২
137174
হককথা লিখেছেন : আমিন ইয়া রাব।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File